বেদাঙ্গসূত্র
উপনিষদগুলি যেমন নিছক আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে বিচ্ছেদের যুগ সূচনা করে সংহিতা ও ব্রাহ্মণ সাহিত্যের সঙ্গে নিশ্চিত পার্থক্য এবং পরবর্তী নূতন দার্শনিক সন্ধানের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল, তেমনি উপনিষদের উত্তরসূরী বেদাঙ্গগুলিও পূর্ববর্তী যুগের সমগ্র ধর্মীয় সাহিত্যের সঙ্গে অপর একটি বিপুল বিচ্ছেদ সূচনা করেছিল। উপনিষদগুলির মত এই ছেদ সার্বভৌম নয় কেননা অতীত ঐতিহ্যের সঙ্গে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। তবে বেদাঙ্গ–বা বিশিষ্ট আঙ্গিকের জন্য ‘সূত্র’ রূপে অভিহিত–সাহিত্যধারার ক্ষেত্রে এই ছেদ অনেক বেশি মৌলিক, কারণ সূত্ৰ-সাহিত্য অপৌরুষের নয়, মানুষের রচিত সাহিত্য-রূপেই এগুলি স্পষ্ট স্বীকৃতি পেয়েছে। বেদধ্যয়নে সহায়ক রচনারূপে বেদাঙ্গের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ষড়বিংশ ব্রাহ্মণে।
প্রধান বেদাঙ্গগুলি মোট ছয় ধরনের : ব্যাকরণ, ছন্দ, নিরুক্ত, শিক্ষা, জ্যোতিষ ও কল্প। কল্পসূত্রগুলি আবার চারভাগে বিন্যস্ত–শৌত, গৃহ্য, ধর্ম ও শুল্ক। বেদাঙ্গকে অবশ্য কার্যকরীভাবে আমরা দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করতে পারি। :-(ক) ধর্মসংক্রান্ত-এর মধ্যে শ্রৌত, গৃহ্য ও ধর্মসূত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং (খ) পার্থিব-এর মধ্যে রয়েছে শুন্থসূত্র, শিক্ষা, ছন্দ, ব্যাকরণ, জ্যোতিম ও নিরুক্ত। এছাড়াও আমরা কয়েকটি সহায়ক রচনাধারার উল্লেখ করতে পারি–প্রায়শ্চিত্ত,পরিশিষ্ট। শ্ৰাদ্ধকল্প ইত্যাদি।