০১. পাঠান-রাজত্ব – প্রথম পরিচ্ছেদ

মহম্মদ ইবন বক্তিয়ার খিলিজির শেষজীবন

নদীয়া জয় করিয়া মহম্মদ ইবন বক্তিয়ার যে সকল বিপদে পড়িয়াছিলেন, তবকাৎ-ই-নাসিরী-প্রণেতা মিনহাজ তাহার বর্ণনা দিয়াছেন। নদীয়া-জয়ের সময়ে যে দুইজন সৈনিক মহম্মদ বক্তিয়ারের সহচর ছিলেন, মিনহাজ তাহাদেরই মুখে সমস্ত বৃত্তান্ত শুনিয়াছিলেন। ইবন বক্তিয়ার নবদ্বীপ বিজয়ের পরে গৌড়ের এদিক্‌ সেদিক্‌ লুণ্ঠন করিয়া লক্ষণাবতী ও হিমালয়ের মধ্যবর্ত্তী কোন স্থানের অধিবাসী মেচ্‌জাতীয় একজন নায়ককে মুসলমানধর্ম্মে দীক্ষিত করেন এবং তাঁহাকে ‘আলি’ উপাধি দেন। আলি মেচের উপদেশে তিনি দশ সহস্র সৈন্য লইয়া তিব্বত জয়ের জন্য রওনা দেন। পথে বর্দ্ধনকোট-সম্মুখে বিশালতোরা বেগবতী নদী। এই নদীর কূল ধরিয়া তিনি দশদিনের পথে পর্য্যটন করিয়া একটা প্রকাণ্ড সেতুর সাক্ষাৎ পান। এই সেটু ২০টি পাষাণনির্ম্মিত খিলানের উপর স্থিত। ইবন বক্তিয়ার সেই সেতু পার হইয়া চলিলেন। দুইজন সেনাপতিকে সেতুরক্ষার জন্য রাখিয়ে গেলেন, ক্রমাগত ১৬ দিন চলিয়া গিয়া একটু দুর্গ-রক্ষিত নগর আক্রমণ করেন, তথায় শুনিতে পান, ২৫ ক্রোশ দূরে একটি স্থান (করমপত্তনে) ৫০,০০০ তুরষ্ক সৈন্য বিদ্যমান আছে, তথায় বহু ব্রাহ্মণ বাস করেন এবং তথায় বৎসরে অনেক সহস্র টাঙ্গন ঘড়া বিক্রয়ের একটা বাজার বসে। কেহ কেহ মনে করেন, উহা আধুনিক দিনাজপুরে জেলার নেক-মর্দ্দনের হাট। মহম্মদ ইবন বক্তিয়ার ভয় পাইয়া অগ্রসর হইলেন না–ফিরিয়া আসিতে বাধ্য হইলেন। খাদ্যের ভয়ানক কষ্ট হইল। শত্রুরা সমস্ত ক্ষেত নষ্ট করিয়া ফেলিয়াছিল। সৈন্যগণ ঘোড়া মারিয়া সেই মাংস খাইতে লাগিল। ইবন বক্তিয়ার কামরূপ ফিরিয়া আসিয়া শুনিলেন, তাঁহার রক্ষকগণ ঝগড়া করিয়া চলিয়া গিয়াছে এবং শত্রুরা বেগমতী নদীর সেই বিশাল পাষাণ নির্ম্মিত সেতুর দুইটি থাম ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছে। তিনি নিকটবর্ত্তী এক দেবমন্দির আক্রমণ করেন। সেখানে দুই তিন হাজার মন স্বর্ণনির্ম্মিত দেবপ্রতিমা ছিল। শত্রুবেষ্টিত হইয়া তিনি ঐ মন্দিরে বন্দীর মত হইয়া রহিলেন, বহুকষ্টে তাঁহার সৈন্যগণ প্রাচীরের একদিক্‌ ভাঙ্গিয়া নদীর জলে ঝাঁপাইয়া পড়িল। তীরভূমি হইতে শত্রুর শর তাহাদের ধ্বংসক্রিয়া সাধন করিতে লাগিল। মুসলমান বীর বহুকষ্টে অতি অল্পসংখ্যক পরিকর লইয়া রক্ষা পাইলেন এবং আলি মেচের সাহায্যে দেবকোটে উপস্থিত হইলেন। তথায় পীড়িত হইয়া পড়েন এবং ১২০৫-৬ খৃষ্টাব্দে প্রাণত্যাগ করেন। কেহ কেহ বলেন মহঃ ইঃ বক্তিয়ারের অধীন নারান্‌কোই স্থানেই শাসনকর্ত্তা আলিমর্দ্দন খিলজি সুবিধা পাইয়া রোগশয্যায় তাঁহাকে নিহত করেন। বহুসংখ্যক সৈন্যক্ষয়ের জন্য তাঁহার প্রতি তাঁহার দলের লোকের আর কিছুমাত্র অনুরাগ ছিল না। মৃত্যুকালে তিনি নিঃসহায় ও বান্ধবহীন অবস্থায় দুর্গতির চরম সীমায় উপস্থিত হইয়াছিলেন। পরের দেশের সর্ব্বনাশ সাধন করিয়া আলেয়ার আলোর মত সে স্বল্পস্থায়ী যশঃপ্রভা তাঁহাকে গৌরব দান করিয়াছিল তাহার বিনিময়ে তিনি কি লাভ করিলেন?–পার্ব্বত্য প্রদেশে অশেষ বিড়ম্বনা, পরাজয়জনিত লাঞ্ছনা, স্বজনধ্বংস ও অকালমৃত্যু। মহঃ ইঃ বক্তিয়ারের দ্বারা সমস্ত বাঙ্গলাদেশ মুসলমানাধিকৃত হয় নাই। এমন কি নবদ্বীপকে ফিরিয়া জয় করিতে হইয়াছিল। এই সময়ে সম্ভবতঃ কেশবসেন (লক্ষণের পুত্র) গৌড় শাসন করিতেছিলেন এবং মুসলমানদের হাত হইতে দেশ রক্ষা করিতে না পারিয়া পূর্ব্ববঙ্গ আশ্রয় করিয়াছিলেন। বিক্রমপুরে স্বর্ণগ্রাম রাজধানী করিয়া সেনবংশীয়েরা আরও এক শতাব্দীর উর্দ্ধকাল পূর্ব্ববঙ্গে রাজত্ব করিয়াছিলেন।
ইহার কোন সময়ে সেন বংশের এক শাখা লাহোর ও কাশ্মীরে যাইয়া তথায় রাজ্য লাভ করিয়া থাকবেন।

মহম্মদ শিরান–১২০৫-১২০৮ খৃঃ

মহঃ ইবন বক্তিয়ার খিলজির প্রিয়পাত্র মহম্মদ শিরান বঙ্গদেশের রাজা বলিয়া নিজেকে প্রচার করেন। এই ব্যক্তি এরূপ দুর্দ্ধর্ষ ছিলেন যেন, একাই অশ্বারোহণপূর্ব্বক লক্ষণাবতীর নিকট কোন জঙ্গলে ১৮টি হাতী ঠেকাইয়া রাখিয়াছিলেন। তাঁহার অদ্ভুত সাহস দেখিয়া তিব্বতে অভিযানের পূর্ব্বে ইবন বক্তিয়ার তাঁহাকে গৌড়ের শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত করিয়া গিয়াছিলেন। প্রভুর মৃত্যুর পর সামন্তগণ ও নেতারা একত্র হইয়া মহম্মদ শিরানকে রাজপদ প্রদান করেন। রাজা হইয়া তিনি প্রথমেই প্রভুহত্যায় অভিযুক্ত আলিমর্দ্দনকে পরাস্ত করিয়া কারাগারে নিক্ষেপ করেন। কারাধ্যক্ষকে ঘুষ দিয়া আলিমর্দ্দন পলাইয়া মুক্তিলাভপূর্ব্বক দিল্লী যাইয়া কুতুবদ্দিনের অনুগ্রহ লাভ করিয়াছিলেন। কুতুবুদ্দিন এই সময়ে সাম্রাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি গড়িবার প্রয়াসী হইয়া অযোধ্যার শাসনকর্ত্তা কাএমাজ রোমীকে পূর্ব্বাঞ্চলের যুদ্ধ-বিগ্রহের ভার প্রদান করেন। গঙ্গোত্রীর শাসনকর্ত্তা সম্রাট্‌-সৈন্যদের সহযোগিতা করিয়া দেবকোটের শাসনকর্ত্তৃত্ব প্রাপ্ত হন। অপর অপর সেনাপতিরা দিল্লীশ্বরের অধীনতা স্বীকার না করিয়া কাএমাজ রোমীর সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহ চালাইয়াছিলেন, কিন্তু পরাস্ত হইয়া কুচবিহারের দিকে পলায়নপর হন। ইঁহাদের মধ্যে আত্মকলহ উপস্থিত হয়, মহম্মদ শিরা এই কলহের ফলে নিহত হন। মহম্মদ শিরান ১২০৫ হইতে ১২০৮ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত রাজত্ব করিয়াছিলেন। তাঁহার সময়ে কুতুবুদ্দিন দিল্লীশ্বর ছিলেন (১২০৫-১২১০ খৃ;) কিন্তু তিনি দিল্লীশ্বরের অধীনত্ব স্বীকার করেন নাই।
শিরানের মৃত্যুর পর আলিমর্দ্দন খিলজি দিল্লীশ্বরের সনদ লইয়া বঙ্গদেশের মসনদ দখল করেন (১২০৮-১২১১ খৃঃ)।

আলিমর্দ্দন সুনতান আলাউদ্দিন–১২০৮-১২১১ খৃঃ

শিরানের মৃত্যুর পর আলিমর্দ্দন খিলজি দিল্লীশ্বরের সনদ লইয়া বঙ্গদেশের মসনদ দখন করেন (১২০৮-১২১১ খৃঃ)।
কুতুবুদ্দিনের মৃত্যুর পর আলিমর্দ্দন শ্বেতচ্ছত্রধারণপূর্বক নিজেকে স্বাধীন নৃপতি বলিয়া ঘোষণা করেন। এইবার তাঁহার কতকটা বুদ্ধিভ্রংশ হইয়াছিল, এ পর্য্যন্ত তিনি অক্লান্ত-কর্মা যোদ্ধা এবং রাজনীতিকুশল বুদ্ধিমান লোক বলিয়া পরিচিত ছিলেন। এখন সমস্ত ন্যায়সঙ্গত গণ্ডী অতিক্রম করিয়া তাঁহার গর্ব্ব আকাশস্পর্শী হইল। তিনি প্রকাশ্য দরবারে আপনাকে পারস্য, তুর্কিস্থান এবং দিল্লীর বাদশাহগণ হইতে শ্রেষ্ট বলিয়া প্রকার করিতে লাগিলেন এবং “তাঁহার অধিকার হইতে বহু দূরে অবস্থিত খোরাসান, ইরাক, গজনী, গোব ও ইস্‌ফাহানের অধিকার প্রত্যর্থিগণকে প্রদান করিতেন।” এই সকল রাজ্য তাঁহার অধিকার-বহির্ভূর,–শুনিলে চটিয়া যাইতেন। একদা পারস্য দেশের এক বণিক্‌ স্বীয় বহুমূল্য দ্রব্যাদি-বোঝাই জাহাজ জলমগ্ন হওয়াতে তাহার নিকট সাহায্যের প্রার্থী হন। আলাউদ্দিন তাঁহাকে ইসপাহানের শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত করিয়া প্রধান মন্ত্রীকে এক ফরমান প্রস্তুত করিতে আদেশ দেন। এই উপহাস-যোগ্য নির্ব্বুদ্ধির ফল হইতে তাঁহাকে মন্ত্রী বুদ্ধি-কৌশলে রক্ষা করিয়াছিলেন। এই সকল বুদ্ধিহীনতা অবশ্য পার্শ্ববর্ত্তী রাজাদের বিরক্তিকর হইয়াছিল–তথাপি তাহা উপহাস-যোগ্য মনে করিয়া কেহ কোন প্রতিকূলতা করে নাই। কিন্তু তিনি কিছুদিন পরে অতিশয় নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার আরম্ভ করিয়াছিলেন; তাঁহার অত্যাচার শুধু আঢ্য ও সম্ভ্রান্ত হিন্দুদিদের উপর সীমাবদ্ধ রহিল না, তিনি অবিচারের খিলজিবংশীয় অনেক বড় লোককে হত্যা করিলেন। তাঁহাদের বংশধরগণের চক্রান্তে ১২১১ খৃষ্টাব্দে তিনি নিহত হন। আলিমর্দ্দনের হত্যার পর হসাম উদ্দিন ইউয়জ নামক ইবন বক্রিয়ারের পারস্যবাসী কোন প্রিয় সেনাপতি ‘গিয়াসউদ্দিন” উপাধি ধারণ করিয়া গৌড়ের মসনদ অধিকার করেন, ইহার পূর্ব্বে তিনি গঙ্গোত্রীর শাসন কর্ত্তা ছিলেন।

গিয়াসউদ্দিন ইউয়জ–১২১১-১২২৬ খৃঃ

কথিত আছে পারশ্য দেশের দুই দরবেশ ইঁহার ভাবী সৌভাগ্যসম্বদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করিয়া ইঁহাকে ভারতবর্ষে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। ইনি সিংহাসনে আরূঢ় হইয়া কামরূপ, ত্রিহুত ও পুরী জয় করেন। কিন্তু যদিও বীর্য্যবত্তায় ইনি ন্যূন ছিলেন না, ইঁহার রাজত্বের অধিক সময়ই লোকহিতকর কার্য্যে ব্যয়িত হইয়াছে। ইনি গৌড়ের অনেক রম্য অট্টালিকা নির্ম্মান করেন, তথায় অতি মনোজ্ঞ ও বিশাল এক মসজিদ, একটি বড় বিদ্যালয় ও অতিথিশালা প্রস্তুত করিয়া বীরভূম হইতে দেবকোট পর্যন্ত এক বিস্তৃত রাজপথ নির্ম্মান করেন। দশ বৎসর কাল ইনি শান্তির সহিত শাসন করিয়াছিলেন এবং ধনী ও দরিদ্র সর্ব্বশ্রেণীর প্রতি সমভ্যবে ন্যায়পরতা প্রদর্শন করিয়াছিলেন, কিন্তু শেষ ইনি আর দিল্লীতে রাজস্ব পাঠাইতেন না, দিল্লীশ্বর আলতামাস ক্রুদ্ধ হইয়া বঙ্গে অভিযান করেন। নির্ব্বিবাদে বিহার অধিকার করিয়া তিনি বঙ্গের দিকে আসিতেছিলেন, সে সময়ে গিয়াসউদ্দিন গঙ্গার সমস্ত জলযান দখন করিয়া সম্রাটের আসিবার পথ বন্ধ করিয়া ফেলেন। যাহা হউক একটি সন্ধি হইয়া এই কলহের মিটমাট হইয়া গেল। বঙ্গাধিপ দিল্লীশ্বরকে ৩৮টি হাতী এবং বহুলক্ষ টাকা দিয়া তাঁহার অধীনত্ব স্বীকার করেন। আলতামাস মুলক্‌ আলাউদ্দিনকে বিহারের শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত করিয়া দিল্লীতে প্রত্যাবর্ত্তন করেন। কিন্তু সম্রাট্‌ যাইতে না যাইতেই গিয়াসউদ্দিন সন্ধির সর্ত্ত ভঙ্গ করিয়া বিহার করিয়া করিয়া প্রকাশ্যে বিদ্রোহী হন। আলতামাসের পুত্র যুবরাজ নাসিরুদ্দিন অযোধ্যা হইতে এক বিপুল বাহিনী সংগ্রহ করিয়া তদ্‌বিরুদ্ধে যাত্রা করেন। এই যুদ্ধে গিয়াসউদ্দিন নিহত হন। গিয়াসউদ্দিন অতি উদারচরিত্র এবং ন্যায়পরায়ন রাজা ছিলেন। এমন কি আলতামাস পর্য্যন্ত বলিতেন, “ইনি প্রকৃতই সুলতান হইবার যোগ্য।” ১২ বৎসর ব্যাপী রাজত্বের পর ১২২৬ খৃষ্টাব্দে ইঁহার মৃত্যু হয়।

নাসিরুদ্দিন মহমুদ–১২২৬-১২২৮ খৃঃ
হাসামুদ্দিন খিলিজি–১২২৮ খৃঃ, কয়েক মাস
ইখ্‌তিয়ার উদ্দিন–১২২৮-২৯ খৃঃ
আলাউদ্দিন জানি–১২৩০-১২৩১ খৃঃ
সেক উদ্দিন–১২২৩-১২৩৩ খৃঃ

যুবরাজ নাসিরুদ্দিন বঙ্গের রাজা হইয়া শ্বেতচ্ছত্র ও রাজদণ্ড-ব্যবহারের অনুমতি প্রাপ্ত হন। তিনি অতি দক্ষতার সহিত রাজদণ্ড চালনা করিয়াছিলেন। ১২২৮ খৃষ্টাব্দে ইঁহার মৃত্যু হয়, তখন খিলিজি সামন্তেরা বিদ্রোহী হইয়া বঙ্গদেশে অরাজকতা আনয়ন করে। আলতামাস পুনরায় স্বয়ং বাঙ্গলাদেশে আসিয়া সেই বিদ্রোহ নিবারণ করেন। বিদ্রোহীর নেতা হাসামুদ্দিন খিলিজি অতি অল্প সময়ের জন্য বঙ্গের মসনদ অধিকার করিয়াছিলেন। এই বৎসরের জন্য ইখ্‌তিয়ার উদ্দিন বঙ্গেশ্বর হইয়াছিলেন।
আলতামাস মুলক্‌ আলাউদ্দিনকে বঙ্গের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন, ইনি চার বৎসর রাজত্বের পর পরলোকগত হন। তৎপরে সেক উদ্দিন তুরুক রাজা হইয়া তিন বৎসর রাজ্যাশাসনপূর্ব্বক বিষ খাইয়া প্রাণত্যাগ করেন (১২৩৩ খৃঃ)।

তোগান খাঁ–১২৩৩-১২৪৪ খৃঃ

ইহার পরের বঙ্গাধিপ তোগান খাঁ তাতারদেশীয় লোক ছিলেন, ইঁহাকে তরুণবয়স্ক, সুশ্রী ও নানাগুণে ভূষিত দেখিয়ে আলতামাস ইঁহার পক্ষপাতী হইয়াছিলেন। ইনি প্রথমতঃ রোহিলখণ্ডে, পরে বিহার এবং সর্ব্বশেষে বাঙ্গলার শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত হইয়াছিলেন। যখন আলতামাস বাদসাহের কন্যা রিজিয়া দিল্লীর মসনদ প্রাপ্ত অন, তখন তোগান খাঁ তাঁহার নিকটা অনেক উপঢৌকনসহ একজন বাগ্মী দূত প্রেরণ করেন। রিজিয়া বঙ্গেশ্বরের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ দেখাইয়া তাঁহাকে ওমরাহগণের মধ্যে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ পদ দান করেন এবং বঙ্গের মসনদে স্থায়িরূপে ইঁহার আসন স্বীকার করেন। রাজত্বের প্রথম দিকে ইনি ত্রিহুত বিজয় করেন, তৎপরে দিল্লীশ্বর মামুদের শাসন বিশৃঙ্খল ও শিথিল দেখিয়া কড়া-মানিকপুর বঙ্গের অধিকারভুক্ত করিলেন।

তোগান খাঁ ও তমুর খাঁ; উভয়ের রাজত্ব–১২৪৪-১২৪৬ খৃঃ

তোগান খাঁর সঙ্গে গঙ্গাবংশীয় অনঙ্গ ভীমদেবের পুত্র নৃসিংহদেবের প্রথম যুদ্ধ একটি স্মরণীয় ঘটনা। নৃসিংহদেব তোগান খাঁর অনুপস্থিতিতে লক্ষণাবতী আক্রমণ করিয়া রাজভাণ্ডার লুণ্ঠন করিয়া চলিয়া যান। প্রতিশোধ লইবার জন্য তোগান খাঁ জাজনগর আক্রমণ করেন। কিন্তু প্রবলপরাক্রান্ত কলিঙ্গরাহ ও সামন্ত নামক তাঁহার সেনাপতির রণকৌশলে তোগান খাঁ পরাস্ত হইয়া ফিরিয়া আসেন। এই দুরবস্থায় বঙ্গেশ্বর দিল্লীতে সাহায্য প্রার্থণা করিয়া দূত প্রেরণ করেন। এখানে বলা উচিত প্রথমতঃ তোগান খাঁ উড়িশ্যার কটাসিন দুর্গ আক্রমণ করেন, প্রতিশোধের জন্য নৃসিংহদেব লক্ষণাবতী আক্রমণ করিয়াছিলেন। (১২৪৩-৪৪ খৃঃ।) দিল্লী হইতে তমুর খাঁ অনেক সৈন্য লইয়া বঙ্গে আগমন করেন। বঙ্গেশ্বর এই রাজকীয় সৈন্যের সাহায্যে কলিঙ্গরাজের বিরুদ্ধে অভিযান করিয়া এবারও ব্যর্থকাম হন। পরন্তু তোগান খাঁর উপর তমুর খাঁ জুলুম করিতে আরম্ভ করিয়া নিজেকে লক্ষণাবতীর অধীশ্বর বলিয়া ঘোষণা করেন। কোন একদিন প্রভাত হইতে দ্বিপ্রহর পর্য্যন্ত লক্ষণাবতীর বক্ষের উপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মুসলমান সৈন্যের বিবাদ নগরবাসীদের একটা উপভোগ্য বিষয় হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। তোগান খাঁর লোকেরা তাঁহাকে পরিত্যাগ করে, এবং তমুর খাঁই ক্ষেত্র-নায়ক হন। শেষে একটা সন্ধি হইয়া এই স্থির হইল যে তমুর খাঁ রাজধানীর যত হস্তী, অশ্ব ও রাজভাণ্ডার তাহা লইয়া যাইবেন কিন্তু তোগান খাঁ বঙ্গের অধিপতি থাকিয়া যাইবেন। তাবকাৎ-ইনাসিরী লেখক মিনহাজ এই তোগান খাঁর সঙ্গে অনেক দিন ছিলেন এবং পূর্ব্বোক্ত সন্ধি অনেকটা তাঁহারই চেষ্টায় হইতে পারিয়াছিল। তমুর খাঁ প্রায় দুই বৎসর লক্ষণাবতী শাসন করিয়াছিলেন, সেই সময়ে তোগান খাঁ স্বীয় সৈন্যগণ দ্বারা পরিত্যক্ত হইয়া দূরে অবস্থিতি করিতেছিলেন। কেহ কেহ বলেন তোগান খাঁর রাজত্বকালে সুপ্রসিদ্ধ চেঙ্গিস খাঁ ৩০,০০০ সৈন্য লইয়া গৌড় আক্রমণ করিয়াছিলেন। গঙ্গাবংশীয় রাজগণ এই সময়ে প্রবল হইয়া মুসলমানদিগকে বারংবার পরাজিত করিয়াছিলেন, দ্বিতীয় নৃসিংহদেবের তাম্রশাসনে প্রথম নৃসিংহদেবের এই বিজয়ের কথা-উপলক্ষে লিখিত হইয়াছে–“তাহার অমিত বিক্রমে রাঢ় ও বরেন্দ্রীয় যবনাঙ্গনাগণের কজ্জলরাগমিশ্রিত অশ্রু-সুধা-ধবল-গঙ্গা-প্রবাহকে কালিন্দীর ন্যায় শ্যামায়মানা করিয়াছিল।”

মুলুক যুজবেক (মুগীস উদ্দিন)–১২৪৬-১২৫৮ খৃঃ

পরবর্ত্তী রাজা মুলুক যুজবেক সম্রাট আলতামাসের একজন তাতার দেশীয় দাস ছিলেন। ইনি দিল্লীর সম্রাটগণের প্রীতিলাভ করিয়া পরমুহূর্ত্তেই তাঁহাদের বিপক্ষতা করিয়াছিলেন। ইনু ষড়যন্ত্রী, অকৃতজ্ঞ ও স্বেচ্ছাচারী ছিলেন। তিনি সম্রাজ্ঞী রিজিয়া ও সম্রাট বাইরাম সাহ ইঁহাদের উভয়ের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। নানাভাগ্যবিপর্য্যয়ের পর বঙ্গের মসনদ পাইয়া ইনি সর্ব্বপ্রথমই প্রতিশোধ লইবার জন্য জাজপুরে অভিযান করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বারের যুদ্ধে কলিঙ্গরাজের পরাজয় হইল। কিন্তু তৃতীয় বার যুববেক ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্থ হইয়া পরাস্ত হইলেন। তাঁহার সমস্ত হস্তী শত্রুহস্তগত হইল। তন্মধ্যে তই মূল্যবান একটি শ্বের হস্তী ছিল। এই পরাজয়ের পর তিনি দিল্লী হইতে সৈন্য সাহায্য পাইয়া আর একবার গোপনে কলিঙ্গ্রাজের রাজধানী আক্রমণ করিয়া ভাণ্ডার লুণ্ঠন করিয়া লইয়া আসিলেন। বিজয়োল্লাসে যুববেক দিল্লীশ্বরের অধীনতাপাশ ছিন্ন করিয়া রক্ত, শ্বেত ও কৃষ্ণ–এই ত্রিবর্ণের চন্দ্রাতপ ব্যবহার এবং সম্রাট মুগীসউদ্দিন উপাধিধারণপূর্ব্বক নিজেকে স্বাধীন বলিয়া ঘোষণা করিলেন। তৎপরে তিনি অযোধ্যা-জয়ার্থ অভিযান করিতে কৃতসঙ্কল্প হন। কামরূপ-পতি পরাস্ত হইলে ইনি তাঁহার ধনরত্ন লুণ্ঠন করেন। তদবস্থায় কামরূপের রাজা মুগীশউদ্দিনের অধীনতা স্বীকারপূর্ব্বক তাঁহাকে বাৎসরিক প্রভূত রাজস্ব দিতে প্রতিশ্রুত হইয়া দূত প্রেরণ করেন, পরন্তু বঙ্গেশ্বরের নামাঙ্কিত মুদ্রা নিজরাজ্যে চালাইতেও স্বীকৃত হন। কিন্তু বিজয়দৃপ্ত মুগীশউদ্দিন এই সন্ধির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিলেন। উপায়ান্তর না দেখিয়া হিন্দুরা পার্শ্ববর্ত্তী সমস্ত শষ্যক্ষেত্র ধ্বংস করিয়া ফেলিল এবং নদীর বাঁধ ভাঙ্গিয়া দিয়া তাহাদের দুর্গম দেশ জলমগ্ন করিয়া ফেলিল। এইবার মুগীশউদ্দিন শত্রুহস্তে পড়িয়া নিতান্ত লাঞ্ছিত হইলেন। হস্তিপৃষ্ঠে পলায়নপর বঙ্গেশ্বরকে সকলেই লক্ষ্য করিতে সুবিধা পাইল; একটি মারাত্মক বাণে বিদ্ধ হইয়া তিনি শয্যাশায়ী হইলেন। মুমূর্ষুকালে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে জীবিত বা নিহত পুত্রের মুখ দেখিতে চাহিলেন। কামরূপের রাজা এই প্রার্থনা মঞ্জুর করিয়া দিলেন। পুত্র বন্দী হইয়া সমীপবর্ত্তী হইল, অশ্রুসিক্ত চক্ষে তাঁহাকে দেখিতে দেখিতে তাঁহার প্রাণবায়ু বহির্গত হইল। (১২৫৮ খৃঃ।)

জালালুদ্দিন–১২৫৮, এক বৎসর; আর্সলন খাঁ–১২৫৮, ১২৬০-১২৬১ খৃঃ

১২৫৮ খৃষ্টাব্দে দিল্লীশ্বরের সনদ পাইয়া জালালুদ্দিন মসুদ লক্ষণাবতীর শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত হইলেন। কিন্তু তিনি মাত্র এক বৎসর ঐ পদে নিযুক্ত ছিলেন। কড়ার শাসনকর্ত্তা আর্সলন সহসা এক বিপুল বাহিনী লইয়া লক্ষণাবতী আক্রমণ করেন, জালালুদ্দিন নিহত হন (১২৫৮ খৃ;)। আর্সলন খাঁ দুই বৎসর মাত্র বঙ্গের গদি দখল করিয়াছিলেন। ১২৬০ খৃঃ অব্দে তাঁহার মৃত্যু হয়। রাখালদাসবাবু এই সময়ের মধ্যে ইজুদ্দিন বল্‌বন নামক আর একজন বঙ্গেশ্বরের নাম উল্লেখ করিয়াছেন।

তাতার খাঁ–১২৬১-১২৬৬ খৃঃ

আর্সলন খাঁর পুত্র মহম্মদ তাতার খাঁ* সিংহাসনে অভিষিক্ত হইয়া সকলের অনুরাগ আকর্ষণ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। তিনি সম্রাট বুলবনকে বহুবিধ উপঢৌকন পাঠাইয়া তাঁহাকে বশীভূত করেন। এই উপঢৌকনের মধ্যে রেশমী কাপড় ও মস্‌লিন বহু পরিমানে ছিল, তাহা ছাড়া ৬৩টি হস্তী এবং বহু অর্থ রাজস্বস্বরূপ পাঠাইয়াছিলেন। বুলবন তাঁহার রাজত্বের সূচনায় এই সুপ্রচুর ভেট পাইয়া উহা একটা শুভচিহ্ন বলিয়া মনে করিয়াছিলেন এবং তাতারের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত হইয়াছিলেন। তাতার খাঁ ১২৭৭ খৃঃ অব্দে প্রাণত্যাগ করেন।
তাতার খাঁর মৃত্যুর পর সম্রাট তদীয় বিশ্বস্ত ও প্রিয় অনুচর তোগ্রেলকে বঙ্গের অধিকার প্রদান করেন। তোগ্রেল সিংহাসনে অভিষিক্ত হইয়া উড়িষ্যা আক্রমণ করেন। তথা হইতে ফিরিয়াই নিজেকে স্বাধীন নৃপতি বলিয়া ঘোষণা করেন এবং ইহাও প্রচার করেন যে সম্রাট বেলিনের মৃত্যু ঘটিয়াছে। তখন দিল্লীশ্বর পীড়িত ছিলন। তাঁহার প্রিয়তম অনুচরের এই অকৃতজ্ঞতা ও দুর্ব্যবহারে একান্ত ব্যথিত হইয়া তিনি পীড়িত থাকা সত্ত্বেও তাঁহার মৃত্যুর মিথ্যা সংবাদ না রটে এই জন্য নিজে রাজধানীতে প্রকাশ্যভাবে দেখা দিতে লাগিলেন এবং তোগ্রেলকে চিঠি লিখিলেন। তোগ্রেল মগীসুদ্দিন খেতাব গ্রহণ করিয়া স্বাধীন নৃপতি হইয়াছেন, তিনি সে চিঠি উপেক্ষা করিলেন। সম্রাট তাঁহার বিরুদ্ধে দুইবার দুইজন সেনাপতি পাঠাইলেন, কিন্তু তোগ্রেল (মগীসুদ্দিন) তাঁহাদিগকে পরাস্ত করিলেন। সম্রাট স্বয়ং বঙ্গদেশে আসিয়া লক্ষণাবতীর দিকে অভিযান করাতে কতকটা ভয় পাইয়া কতকটা লজ্জায় পড়িয়া, বঙ্গেশ্বর তাঁহার অর্থসম্পদ লইয়া যাজনগরে আশ্রয় লইলেন। সম্রাট চলিয়া গেলে পুনরায় গৌড়ে ফিরিবেন এই উদ্দেশ্য ছিল। সম্রাট গৌড়ে হিসামউদ্দিন নামক সেনাপতিকে বঙ্গের মসনদে বসাইয়া যাজনগরে মগীসুদ্দিন তোগ্রেলকে আক্রমণ করিতে অভিযান করিলেন। তোগ্রেল এমন চতুরতার সহিত পলায়ন করিতে লাগিলেন যে দিল্লীশ্বর কোথায়ও তাঁহার সন্ধান পাইলেন না। তিনি বহু চেষ্টার পর একদল বণিকের মুখে সংবাদ পাইয়া অতর্কিতভাবে তাঁহাকে আক্রমণ করিয়া নিহত করেন। দিল্লীশ্বরের এই অভিযানে স্বর্ণগ্রামের দনুজ রায় তাঁহাকে অনেক সাহায্য করিয়াছিলেন। সম্রাট স্বয়ং তোগ্রেলের হস্তী ও ধনসম্পদ আত্মসাৎ করিয়া গৌড়ে প্রত্যাবর্ত্তনপূর্ব্বক তাঁহার অন্তঃপুরের মহিলা ও শিশুদিগের শিরচ্ছেদের আদেশ করিলেন এবং তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা নাসিরুদ্দিনকে কখনও দিল্লীশ্বরের বিদ্রোহিতা না করেন (যিনিই দিল্লীর রাজতন্ত্রের মালিক হউন না কেন) এই শপথ গ্রহণ করাইয়া বঙ্গের মসনদে স্থাপিত করেন (১২৮০ খৃঃ)।

নাসিরুদ্দিন বগড়া খাঁ–১২৮২-১২৯১ খৃঃ

নাসিরুদ্দিনের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মহম্মদের অকস্মাৎ মৃত্যু হওয়াতে বৃদ্ধ সম্রাট অত্যন্ত বিচলিত হইয়া তাঁহাকে দিল্লীতে আসিতে লিখিলেন। তাঁহাকে নিজের কাছে ডাকাইয়া আনিয়া বলিলেন, “আমি বৃদ্ধ ও শোকবিচলিত হইয়াছি, যদিও মহম্মদের পুত্র খসরুই এই রাজ্যের প্রকৃত উত্তরাধিকারী, তথাপি সে অতি তরুণবয়স্ক, এত বড় রাজ্যের ভার সে বহন করিতে পারিবে না। আপাততঃ বঙ্গের শাসনের ভার অপর কাহারও উপর দিয়া তুমি কতকদিন এইখানেই থাক। আমি বেশীদিন বাঁচিব না। তুমি একটা ব্যবস্থা করিয়া রাজ্য রক্ষা করিল।
কিন্তু সম্রাট একটু একটু করিয়া ভাল হইতে লাগিলেন। নাসিরুদ্দিনের আর দিল্লীতে থাকিতে ভাল লাগিল না। রাজ্যের যাহা হয় হইবে, এই মনে স্থির করিয়া, মৃগয়ার ছল করিয়া বঙ্গদেশে ফিরিয়া আসিলেন।
পুত্রের এই ব্যবহারে সম্রাট অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইলেন, তিনি মহম্মদের পুত্র খসরুকে আনাইয়া তাঁহাকেই তাঁহার উত্তরাধিকারী পদে নির্দ্দিষ্ট করিয়া ৮০ বৎসর বয়ঃক্রমে পরলোকে গমন করিলেন (১২৮৬ খৃঃ)।
খসরু আইনতঃ উত্তরাধিকারী হইলেও, দিল্লীর আমিএরা তাঁহার দাবী উপেক্ষা করিয়া বঙ্গেশ্বর নাসিরুদ্দিনের অষ্টাদশবয়স্ক পুত্র কায়কোবাদকে সিংহাসনে অভিষিক্ত করিলেন। এই বালক কুসঙ্গীদের হাতে পড়িয়া বিলাসস্রোতে গা ঢালিয়া দিলেন। নাজিমুদ্দিন নামক মন্ত্রীই সর্ব্বেসর্ব্বা হইয়া রাজ্য শাসন করিতে লাগিলেন। রাজা মন্ত্রীর কুপরামর্শে অতি নিষ্ঠুরভাবে খসরু ও কয়েকজন মন্ত্রীকে হত্যা করেন।

—————
* রাখালদাস বাবু তাতার খাঁর পরে শের খাঁ ও আমিন খাঁ এই দুই ব্যক্তির নাম এক যোগে ১২৬৬ খৃঃ হইতে ১২৭৮ খৃঃ নির্দ্দেশ করিয়া তাঁহাদের রাজত্বের কাল উল্লেখ করিয়াছেন।