পরেশ বৈদ্য নয়াবাজারে একটা কাপড়ের দোকানে কাজ করে। বত্রিশ ভাজা কাজ। সকালে দোকান ঝাড় দিয়ে তার দিনের শুরু হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত খদ্দেরদের সে কাপড় দেখায়, বিকিকিনি করে। ক্যাশ দেখে দুপুরে তার এক ঘণ্টার ছুটি। এই এক ঘণ্টায় সে রান্নাবান্না করে। তার রান্নার হাত ভাল। দোকানের মালিক আজিজ মিয়া তার হাতের রান্নার বিশেষ ভক্ত। অনেককেই তিনি বলেছেন, হিন্দুটা রান্ধে ভাল। বিশেষ করে মাষকলাইয়ের ডাল। বাংলাদেশে এত ভাল মাষকলাইয়ের ডাল আর কেউ যদি রানতে পারে তাহলে আমি কান কেটে ফেলব।
আজিজ মিয়া পরেশ বৈদ্যকে খুবই পছন্দ করেন। মানুষটা সৎ। তার কোন দাবি দাওয়া নাই। থাকা খাওয়া এবং মাসে মাত্র তিনশ টাকায় এমন বিশ্বাসী লোক পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আজিজ মিয়া প্রায়ই ভাবেন পরেশের বেতন বাড়িয়ে পাঁচশ করে দেবেন। সেটা সম্ভব হচ্ছে না। দোকানে হাটবার ছাড়া বিকিকিনি একেবারেই নাই। নয়াপাড়া অতি অজ জায়গা। অঞ্চলটাও দরিদ্র। গামছা ছাড়া কাপড় কেনার সামর্থ্যও মানুষের নেই।
বেতন বাড়াতে না পারলেও ভদ্র ব্যবহার দিয়ে আজিজ মিয়া সেটা পুষিয়ে দেন। দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যাবার সময় তিনি পরেশকে সঙ্গে নিয়ে যান, বাড়িতে পাশে বসিয়ে যত্ন করে খাওয়ান। খাওয়া দাওয়ার শেষে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করেন। পরেশ দোকানে ফিরে যায়। রাতে সে দোকানেই ঘুমায়।
আজিজ মিয়ার চার মেয়ে। বড় দুটা বিবাহযোগ্য। তাদের জন্যে পাত্র খোঁজা হচ্ছে। মন মত পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। পরেশ বৈদ্য হিন্দু না হয়ে মুসলমান হলে তিনি অবশ্যই তার বড় মেয়ে পরীবানু খানমের সঙ্গে তার বিবাহ দিতেন। পরেশ যদি এখন মুসলমান হয় তাহলে তিনি বিবেচনা করবেন। শুধু পরেশের বয়স একটু বেশি। চল্লিশের উপর। তবে পুরুষ মানুষের জন্য বয়স কিছু না। মেয়েদের বয়সটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুরুষের না।
তিনি বিষয়টা নিয়ে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন। তাঁর স্ত্রী খাদিজা বেগম হতভম্ব হয়ে বলেছেন, মালাউনের সাথে মেয়ে বিবাহ দিতে চান? কী বলেন আপনি?
মুসলমান হবার পরে বিবাহ করবে। ইসলাম ধর্মীয় মতে বিবাহ।
কচ্ছপ খাওইন্যার সাথে মেয়ের বিবাহ ছিঃ।
মুসলমান হবার পরে তো আর কচ্ছপ খাবে না।
এইসব আপনি ভুলে যান। কর্মচারীর সাথে মেয়ের বিবাহ! আল্লাহ মাফ করুক। ছেলের শিক্ষা নাই দীক্ষা নাই। আপনার মেয়ে কলেজে ভর্তি হইছে।