সেরিনা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি
বইমেলা ২০১৫
.
উৎসর্গ
আজান ইব্রাহীম খান
এবং
তার গর্বিত বাবা মা
আসাদুজ্জামান খান ও
শবনব শহীদ শুচি
.
ভূমিকা
তখন মাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে, দেশে সবকিছুর খুব অভাব, কোনো কিছু পাওয়া যায় না। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম দেশটি রাশিয়ান বই দিয়ে ভরে গেছে। কী সুন্দর বই, বিশ্ব সাহিত্যের যে অসাধারণ বই কখনো পড়ার কথা কল্পনাও করিনি সেই বই আমাদের হাতের নাগালে।
আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। হঠাৎ করে একটা বই হাতে এল, বইয়ের নাম, গ্রহান্তরের আগন্তক। বইটি সায়েন্স ফিকশন, কিছু গল্পের সংকলন, পড়ে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। সেই বইটি আমাকে এতই মুগ্ধ করল যে তার একটি গল্প ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণকে নাট্যরূপ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি.এস.সি.-তে নাটক হিসেবে মঞ্চস্থ করেছিলাম। যারা সেই নাটকে অভিনয় করেছিল, যারা কলাকুশলী ছিল তাদের প্রায় সবাই এখন খুব বড় বড় মানুষ হয়ে পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে আছে!
গ্রহান্তরের আগন্তক বইটিতে আরেকজন অসাধারণ লেখকের একটি গল্প ছিল, তার নাম আলেক্সান্ডার বেলায়েভ। (সেই গল্পের মূল চরিত্র ছিল একটি হাতী, তাই সেটাকে নাটকে মঞ্চস্থ করার কথা মাথায় আসেনি!) আলেক্সান্ডার বেলায়েভের লেখা উভচর মানব আমার পড়া প্রথম পূর্ণাঙ্গ সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস। সেই উপন্যাসটি যেভাবে আমার মনে দাগ কেটেছিল সেরকম আর কোনো উপন্যাস কাটেনি। (আমি তখন জানতাম না এই অসাধারণ লেখক মারা গিয়েছিলেন না খেতে পেয়ে, নাৎসী জার্মানীর দখল করা একটি অবরুদ্ধ শহরে। তার দেহ সমাহিত হয়েছিল নাম চিহ্ন হীন একটি গণকবরে।
বহুদিন পর সেরিনা লিখতে গিয়ে আমার বার বার আলেক্সান্ডার বেলায়েভের কথা পনে পড়ছে। এরকম একটি সায়েন্স ফিকশন যে লেখা যেতে পারে সেটি আমি তার কাছেই শিখেছি।
মুহম্মদ
জাফর ইকবাল
১.২.২০১৫
.
পূর্ব কথা
ছোট স্টেশনটা ছবির মতো সুন্দর। প্লটফর্মের উপর ছোট একটা লাল ঘর, তার পিছনে ঘন সবুজ গাছের সারি। ওপরে গাঢ় নীল আকাশ সেই আকাশে সাদা শরতের মেঘ। স্টেশনের পাশ দিয়ে একটা মাটির সড়ক গ্রামের দিকে চলে গেছে। সড়কের দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ, সেই গাছের নরম ছায়ায় একটা কিশোরী লাল একটা ফুল হাতে নিয়ে ট্রেনটির দিকে তাকিয়ে আছে। ট্রেনের জানালা দিয়ে, এই অপূর্ব দৃশ্যটির দিকে তাকিয়ে থেকে শামীম নিজের মনে বলল, “বাহ! কী সুন্দর।”
ট্রেনের অন্য কোনো যাত্রীর এই দৃশ্যটি চোখে পড়েছে বলে মনে হল, কারণ এই মাত্র সবাই খবর পেয়েছে সামনে একটা মালগাড়ী লাইন থেকে ছিটকে পড়েছে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সেগুলোকে টেনে সরানোনা হচ্ছে। ততক্ষণ সবাইকে এখানে বসে থাকতে হবে। সময়টা এক দুই ঘন্টা হতে পারে সাত আট ঘন্টাও হতে পারে। সে কারণে যাত্রীদের ভেতর বিরক্তি, হতাশা, আতংক এবং ক্ষোভের জমা হয়েছে। কোনো একটা বিচিত্র কারণে শামীমকে তার কিছুই স্পর্শ করল না, সে হালকা মেজাজে উঠে দাঁড়িয়ে মাথার ওপরে রাখা তার ব্যাকপেকটা টেনে নামাতে থাকে।
তার পাশে বসে থাকা মানুষটি অবাক হয়ে শামীমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী করেন?”
শামীম বলল, “নেমে যাই।”
মানুষটি চোখ কপালে তুলে বলল, “নেমে যান?”
“হ্যাঁ। গ্রামটা একটু ঘুরে আসি।”
মুহম্মদ জাফর ইকবাল “যদি এর মাঝে রেল লাইন ঠিক হয়ে যায়? ট্রেন ছেড়ে দেয়?”
“দিলে দিবে। পরের ট্রেনে আসব।”
“এই ছোট স্টেশনে ট্রেন যদি না থামে?”
“লোকাল ট্রেনে চলে আসব। বাস টেম্পু কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
মানুষটার কাছে তবু ব্যাপারটা গ্রহণযোগ্য মনে হল না। পাশাপাশি বসে এতোক্ষণ শামীমের সাথে কথা বলে এসেছে, শামীম পাস করা ডাক্তার, ডাক্তারী না করে বিদেশে ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করে দেশে চলে এসেছে, পরিবারের কেউ দেশে থাকে না এ-রকম একটা মানুষ হঠাৎ ট্রেন থেকে একটা ছোট গ্রাম্য স্টেশনে কোনো কারণ ছাড়াই নেমে পড়বে সেটা তার পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন। এর ভেতরে কোনো একটা জিনিস নিশ্চয়ই ভুল হচ্ছে কিন্তু কোন জিনিসটা ভুল সে ঠিক বুঝতে পারছিল না!
শামীম মানুষটার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়ল। প্রাটফর্মের এক কোনায় টিউবওয়েল চেপে তার শ্যাওলা গন্ধের ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে এক ধরনের আরামের শব্দ করে ব্যাকপেকটা ঘাড়ে নিয়ে সড়কটার দিকে এগিয়ে যায়। লাল ফুলের কিশোরী মেয়েটা তখনো গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে, সে সন্দেহের চোখে শামীমের দিকে তাকাল। তাদের গ্রামে সাধারণত এরকম মানুষ আসে না।
শামীম মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী খবর?”
মেয়েটি শামীমের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না, বরং তার চোখে সন্দেহ ঘনীভূত হল। শামীম হাল ছাড়ল না, বলল, “তোমার নাম কী?”
কোনো উত্তর নেই।
“কোন ক্লাসে পড়?” এবারেও উত্তর নেই।
“তোমাদের গ্রামের নাম কী?” এবারেও কোনো উত্তর নেই। শামীম এবারে হাল ছেড়ে দিয়ে সড়কের নরম ধূলায় পা ডুবিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। কয়েক পা হেঁটে চোখের কোনা দিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখল মেয়েটি একটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে তার পিছু পিছু হেঁটে আসছে। শামীমকে নিয়ে একটু কৌতূহল আবার অপরিচিত মানুষ বলে খানিকটা জড়তাও আছে।
গ্রামের সড়ক ধরে হেঁটে হেঁটে সে একটা বড় দিঘীর কাছে পৌঁছাল। দিঘীর পাশে বিশাল একটা গাছ, গাছের শিকড় বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। শামীম গাছের ছায়ায় মোটা একটা শিকড়ের উপর আরাম করে বসে পড়ল। তার পিছনে পিছনে হেঁটে আসা কিশোরী মেয়েটাও কাছাকাছি একটা শিকড়ের ওপর বসে পড়ল। প্রশ্ন করলে মেয়েটি যেহেতু প্রশ্নের উত্তর দেয়
তাই শামীম এবারে আর প্রশ্ন করার চেষ্টা করল না। চোখে চোখ পড়তেই সে একটু হাসার চেষ্টা করল।
মেয়েটা হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কই যান?”
অত্যন্ত কঠিন প্রশ্ন, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব না, কারণ সে আসলে কোথাও যাচ্ছে না! মেয়েটা তার প্রশ্নের উত্তরে সন্তুষ্ট হবে না জেনেও শামীম বলল, “আমি কোথাও যাই না।”
“তাহলে এখানে কী করেন?”
“কিছু করি না। বসে আছি।”
ঠিক কী কারণ জানা নেই শামীমের কথা শুনে মেয়েটা ফিক করে হেসে দিল। মনে হয় একজন বড় মানুষ কিছু না করে শুধু বসে আছে ব্যাপারটা এই মেয়েটার কাছে খুবই হাস্যকর একটা ঘটনা। শামীম অবশ্য এখানে আসার মতো কিছু খুঁজে পেলো না কিন্তু সেও শব্দ করে হাসল। হাসি খুব চমৎকার একটা বিষয়, একটা হাসিতে সব দূরত্ব নিমেষে দূর হয়ে যায়। মূহুর্তে মেয়েটা সহজ হয়ে গেল, সব কিছু বুঝে ফেলেছে সেরকম ভঙ্গী করে মাথা নাড়ল, বলল, “বুঝেছি।
“কী বুঝেছ?”
“আপনি পত্রিকার লোক। আমাদের গ্রামের খবর পত্রিকায় লিখবেন।”
মুহম্মদ জাফর ইকবাল শামীম হাসল, বলল, “না, আমি পত্রিকার লোক না! তোমাদের গ্রামে পত্রিকায় লেখার মতো খবর আছে?”
মেয়েটা খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, “কালাম চাচার গাইয়ের একটা বাছুর হয়েছিল তার দুইটা মাথা।”
শামীম মাথা নাড়ল, “এটা মনে হয় খবরের কাগজে ছাপা হওয়ার মতই খবর।” জিজ্ঞেস করল, “আর কিছু?”
“মতি চোরা যখন গরু চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ল তখন তার মাথার চুল কামিয়ে মুখে আলকাতরা মাখিয়ে সারা গ্রামে ঘুরিয়েছে।”
“আর কিছু?”
“স্বামীর সংসারে অশান্তি সেই জন্যে সকিনা খালা গলায় দড়ি দিয়েছিল।”
শামীম একটা নিশ্বাস ফেলল, দেশের আনাচে-কানাচে এরকম কতো দুঃখের কাহিনী না জানি লুকিয়ে আছে। মেয়েটা আংগুলে গুনে গুনে তাদের গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো দিতে থাকে। শামীম অন্যমনস্ক ভাবে শুনতে শুনতে দূরে তাকিয়ে থাকে। বিশাল দিঘীটার এক পাশে কিছু দুরন্ত ছেলে দাপাদাপি করছে। গ্রামের মহিলারা দিঘীতে বাসনপত্র ধুতে এসেছে। কাপড় কাঁচছে। সড়ক দিয়ে রাখালেরা গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ বসে থেকে শামীম উঠে দাঁড়াল। মেয়েটাও উঠে দাঁড়াল, জিজ্ঞেস করল, “কই যান।”
“একটু হেঁটে দেখি।”
শামীম সড়কের নরম ধূলায় পা ডুবিয়ে হাঁটতে থাকে, মেয়েটাও তার পাশে পাশে হাঁটে-এবারে আর নিরাপদ দূরত্বে থেকে নয়, পাশাপাশি। মেয়েটা আঙুল দিয়ে দূরে দেখিয়ে বলল, “ঐ দিকে আমার বাড়ি।”
“তোমার বাড়িতে কে কে আছে?”
“বাবা আছে। ভাই আছে বুবু আছে।”
“মা?”
“মা-ও আছে।” বলে মা থাকার পরও মায়ের কথা না বলার জন্যে মেয়েটা একটু অপরাধীর মতো হাসল। সড়কটা ধীরে ধীরে সরু হয়ে আসে। সড়কের দুই ধারে বড় বড় গাছ সড়কটাকে আবছা অন্ধকারে ঢেকে ফেলে। সড়কের এক পাশে খানিকটা জলা জায়গা, তার কাছাকাটি আসতেই বেশ কয়েকটা ব্যঙ পানিতে লাফিয়ে পড়ল। শামীম একটু চমকে উঠল এবং সেটা দেখে মেয়েটা হি হি করে হাসতে শুরু করল।
দুইজন আরো একটু এগিয়ে যায়, সড়কের এক পাশে একটা ছোট ডোবা এবং সেখানে হঠাৎ কী যেন খল-বল করে ওঠে। এবারে মেয়েটা চমকে উঠল তারপর ডোবার কাছে গিয়ে উঁকি দিয়ে বলল, “মাছ!”
শামীম জিজ্ঞেস করল, “কী মাছ?”
“জানি না। বড় মাছ।”
“এই ছোট ডোবাতে বড় মাছ আছে?”
মেয়েটা যুক্তিতর্কের দিকে গেল না, বলল, “বাবারে ডেকে আনি। কোঁচ দিয়ে মাছটারে ধরবে।”
কোঁচ জিনিষটা কী শামীম বুঝতে পারল না, কিন্তু সেটা যাই হোক সেটা দিয়ে, কী ভাবে মাছটাকে ধরবে সেটা দেখার জন্যে শামীমের একটু আগ্রহ হল। সে বলল, “যাও ডেকে আন।”
মেয়েটা বাবাকে ডাকতে ছুটে গেল, শামীম ডোবার পাশে পা ছড়িয়ে বসে অপেক্ষা করতে থাকে। পানিতে তাকিয়ে বড় মাছটা দেখার চেষ্টা করল, কিন্তু কিছু চোখে পড়ল না। কিছুক্ষণের মাঝেই মেয়েটা তার বাবাকে ডেকে আনে, বাবা কমবয়সী শক্ত সামর্থ্য একজন মানুষ, তার হাতে একটা কোঁচ এবং সেটা দেখে শামীম চমকে উঠল। কোচ হচ্ছে একটা বর্শা, তবে এই বর্শায় ফলা একটি নয়, অনেকগুলো। এটা দিয়ে একটা মাছকে গেঁথে এফোঁড় ওফোড় করে ফেলবে চিন্তা করেই শামীমের গা গুলিয়ে এল। তারপরেও দৃশ্যটা দেখার জন্যে শামীম দাঁড়িয়ে রইল। মেয়েটার বাবা খুব সাবধানে ডোবার দিকে নেমে যেতে থাকে। মেয়েটি তার বাবাকে জায়গাটা দেখিয়ে দেয় কেমন করে মাছটিকে গেঁথে ফেলা হবে দেখার জন্যে শামীম দাঁড়িয়ে গেল। মানুষটি তীক্ষ্ম চোখে দেখতে দেখতে নিঃশব্দে এগিয়ে যেতে থাকে তখন হঠাৎ ডোবার কিনারে পানিটা আবার খল-বল করে উঠে। কোঁচ হাতে মানুষটি তার সমস্ত শক্তি দিয়ে মাছটিকে কোচে গেথে ফেলার পূর্ব মুহূর্তে শামীম অমানুষিক গলায় চিৎকার করে উঠল, ”না!”
শেষ মূহূর্তে মানুষটি থেমে অবাক হয়ে শামীমের দিকে তাকাল। পানিতে যেখানে খল-বল করে উঠেছে শামীম সেখানে স্পষ্ট দেখেছে ছোট একটা শিশুর হাত নড়ে উঠেছে। শামীম তীর থেকে ছুটে এসে ডোবার পানিতে নেমে এল, যেখানে পানি খল-বল করছে শামীম সেখানে ছুটে এসে হাত ডুবিয়ে দেয়, তার হাতে জ্যন্ত কিছু নড়ে উঠল, শামীম সেটাকে ধরে উপরে তুলে আনে। সবাই বিস্ফারিত চোখে দেখল, তার হাতে ছোট একটা মানব শিশু, পেট থেকে আমব্লিক্যাল কর্ডটা ঝুলছে।
শামীম শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে উপরে তুলে আনে, শিশুটি তখনো নড়ছে। কেঁচ হাতে মানুষটা চাপা গলায় বলল, “ইয়া মাবুদ!”
শামীম বলল, “আমার ব্যাগটা খোলেন। একটা টাওয়েল আছে বের করেন তাড়াতাড়ি।”
বাবা ধরার আগেই মেয়েটা ব্যাকপেকটার জিপ টেনে খুলে ভেতরে হাতড়ে একটা টাওয়েল বের করে আনে। শামীম দ্রুত বাচ্চাটাকে টাওয়েলে
পেঁচিয়ে বলল, “এখানে হাসপাতাল কোথায় আছে?”
কোচ হাতে মানুষটা বলল, “হাসপাতাল নাই।”
“ক্লিনিক? মেডিকেল সেন্টার?”
“নাই। সদরে একজন ডাক্তার বসে–” শামীম বলল, “আমার ডাক্তার দরকার নাই। আমি ডাক্তার।”
মেয়েটা জিজ্ঞেস করল, “বেঁচে আছে?”
“হ্যাঁ।“
“পানিতে ডুবে বেঁচে আছে কেমন করে?”
শামীম বলল, “আমি জানি না।”
মেয়েটা শামীমের বুকে চেপে ধরে রাখা শিশুটিকে দেখার চেষ্টা করতে করতে বলল, “ছেলে না মেয়ে? ছেলে না মেয়ে?”
শামীম বলল, “খেয়াল করি নি।”
মেয়েটা বলল, “মেয়ে। মনে হয় মেয়ে।”
দেখতে দেখতে তাদের ঘিরে মানুষের ভীড় জমে গেল একজন বলল, “এইটা কার বাচ্চা?”
আরেকজন বলল, “বাচ্চাকে পানিতে ফেলেছে কেন?”
আরেকজন বলল, “কেন পানিতে ফেলেছে আপনি বুঝেন নাই? বার্লি খেয়ে বড় হয়েছেন?”
আরেকজন বলল, “কিন্তু কে? এই বাচ্চার মা কে?”
“সেইটা আপনাকে বলবে?”
তখন বেশ কয়েকজন হঠাৎ করে বাচ্চাটাকে দেখতে চাইল, বলল, “দেখি বাচ্চাটারে দেখি?”
শামীম বলল, “বাচ্চাটাকে পরে দেখা যাবে-এখন তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। এক্ষুনি।”