০১. ক্যাপ্টেন বৰ্কেন

ক্যাপ্টেন বৰ্কেন হাত দিয়ে অন্যমনস্কভাবে টেবিলে শব্দ করতে করতে মনিটরের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। পেছনে মৃদু একটা শব্দ শুনে মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখেন, মহাকাশযানের শিক্ষানবিশ ক্রু রিরা কন্ট্রোলরুমের পেছনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন একটু অবাক হয়ে বললেন, তুমি এখানে?

মহামান্য ক্যাপ্টেন, আমাকে এখানে ডিউটি দেওয়া হয়েছে।

ক্যাপ্টেন হাত নেড়ে পুরো ব্যাপারটি উড়িয়ে দেবার মতো করে বললেন, কন্ট্রোলরুমে এখন কোনো কাজ নেই রিরা। তুমি এখন বিশ্রাম নিতে যেতে পার।

ক্যাপ্টেন বৰ্কেন এই মহাকাশযানের দলপতি, তার সাধারণ কথাই আদেশের মতো। রিরার মাথা নুইয়ে অভিবাদন করে চলে যাবার কথা ছিল, কিন্তু সে একটু ইতস্তত করে বলল, আর কিছুক্ষণ এখানে থাকার অনুমতি চাইছি মহামান্য ক্যাপ্টেন।

ক্যাপ্টেন বৰ্কেন একটু অবাক হয়ে কমবয়সী এই মেয়েটির দিকে ভালো করে তাকালেন। কিশোরীর মতো মুখ, হালকা-পাতলা ছিপছিপে শরীর, ছোট করে ছাঁটা বাদামি চুল। বড় বড় চোখে কৌতূহল এবং একধরনের নিস্পাপ সারল্য। জীবনে প্রথমবার মহাকাশযানের দীর্ঘ অভিযানে এসে তার চোখে-মুখে একধরনের উত্তেজনার ছাপ, যেটি অনেক কষ্ট করে ঢেকে রেখে সে একধরনের শান্ত ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন মনিটর থেকে পা নামিয়ে হালকা গলায় বললেন, কন্ট্রোলরুম হচ্ছে মহাকাশযানের সবচেয়ে আনন্দহীন এবং সবচেয়ে একঘেয়ে জায়গা। তুমি এখানে থেকে কী করবে?

আমার কাছে এটি অত্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক জায়গা মহামান্য ক্যাপ্টেন। আমাদের একাডেমিতে এসব শিখানো হয়েছে। কিন্তু এই প্রথমবার আমি সত্যিকারের কন্ট্রোলরুম নিজের চোখে দেখছি!

ক্যাপ্টেন বৰ্কেন মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, এস, তা হলে কাছে এসে দেখ!

রিরা মেয়েটি সতর্ক পা ফেলে মনিটরের কাছাকাছি এগিয়ে আসে। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন তার পাশের চেয়ারটি ঘুরিয়ে তাকে বসার জায়গা করে দিয়ে বললেন, নাও, এখানে বল।

মহাকাশযানের ক্যাপ্টেনের পাশে বসার সুযোগ পেয়ে রিরার চোখে-মুখে কৃতজ্ঞতার একটা স্পষ্ট ছাপ পড়ল। সে মাথা ঝুঁকিয়ে বলল, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মহামান্য ক্যাপ্টেন।

এর মাঝে ধন্যবাদ দেবার কিছু নেই। তুমি নতুন এসেছ বলে সবকিছু এরকম মনে হচ্ছে—দেখতে দেখতে অভ্যাস হয়ে যাবে। একাডেমিতে তোমাদের অনেক আইনানুন। শিখিয়েছে না?

শিখিয়েছে মহামান্য ক্যাপ্টেন।

তুমি দেখবে আমরা এগুলো নিয়ে এখানে মাথা ঘামাই না।

রিরা একটু অবাক হয়ে ক্যাপ্টেন বৰ্কেনের দিকে তাকাল, ক্যাপ্টেন বৰ্কেন একটু হেসে বললেন, সব মানুষের নিজের একটা নিয়ম থাকে। আমার মহাকাশযানের নিয়মটা খুব সহজ।

সেটি কী মহামান্য বর্কেন?

মহাকাশযানটাকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব নিয়মগুলো করা হয়েছে সেজন্য। এই নিয়মগুলো অল্পবিস্তর শর্ট সার্কিট করে যদি মহাকাশবানকে আরো সহজে চালানো যায়, আমার আপত্তি কোথায়?

রিরা মুখে এক ধরনের গাম্ভীর্য এনে বলল, আমাদের একাডেমিতে আপনার সম্পর্কে অত্যন্ত উচ্চ ধারণা পোষণ করা হয় মহামান্য ক্যাপ্টেন। আমার খুব সৌভাগ্য যে আমি আপনার মহাকাশযানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।

ক্যাপ্টেন বৰ্কেন শব্দ করে হেসে বললেন, আমি খুব নিশ্চিত না যে, তুমি সপ্তাহখানেক পরে এই কথা বলবে। আইনকানুন নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না সত্যি, কিন্তু কাজকর্ম নিয়ে আমি খুব খুঁতখুঁতে! কয়দিন পরেই টের পাবে।

ক্যাপ্টেন বর্কেনের হালকা কথাবার্তা শুনে রিরা এর মাঝে খানিকটা সহজ হয়ে এসেছে এই প্রথমবার তার মুখে হালকা হাসির একটা ছাপ পড়ল, বলল, আমি সেটা টের পাবার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি ক্যাপ্টেন বৰ্কেন।

চমৎকার। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন আঙুল দিয়ে টেবিলে শব্দ করতে করতে বললেন, মহাকাশযানের সমস্যাটা কী জান?

কী মহামান্য ক্যাপ্টেন?

এর সবকিছু নিজে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই কন্ট্রোলরুমের মূল যে প্রসেসর, সেটা তোমার কিংবা আমার মস্তিষ্ক থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। কাজেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এখানে কারো কিছু করার নেই। কিন্তু–

ক্যাপ্টেন বৰ্কেন কথা থামিয়ে দিয়ে অন্যমনস্কভাবে মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। রিরা ধৈর্য ধরে ক্যাপ্টেন বর্কেনের দিকে তাকিয়ে রইল; ক্যাপ্টেন বৰ্কেন একটা নিশ্বাস ফেলে রিরার দিকে তাকিয়ে বললেন, কিন্তু এখানে সব সময় খুব সতর্ক থাকতে হয়, এমন বিচিত্র সমস্যা হতে পারে, যেটা কেউ আগে কোনো দিন চিন্তা করে নি। এখন পর্যন্ত একটি অভিযানও হয় নি যেখানে আমাকে বিচিত্র কিছু করতে হয় নি।

মহামান্য ক্যাপ্টেন।

বলো।

আপনার কি মনে হয় আমাদের এই অভিযানে বিচিত্র কোনো অভিজ্ঞতা হতে পারে?

নিশ্চয়ই হতে পারে রিরা।

সেটি কি বিপজ্জনক কিছু হতে পারে? রিরা তার গলায় একটা স্বাভাবিক ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করলেও সেখানে আশঙ্কাটুকু গোপন থাকল না।

ক্যাপ্টেন বৰ্কেন মৃদু হেসে বললেন, বিপজ্জনক তো হতেই পারে রিরা—লক্ষ লক্ষ মাইলের নির্জন মহাকাশে কত কী ঘটতে পারে। কিন্তু তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

রিরা সোজা হয়ে বসে বলল, আমি ভয় পাচ্ছি না মহামান্য ক্যাপ্টেন।

ক্যাপ্টেন বৰ্কেন হাসি গোপন করে বললেন, অবিশ্যি তুমি ভয় পাচ্ছ না রিরা। আমি জানি তুমি সাহসী মেয়ে। সাহসী না হলে কেউ মহাকাশযানের অভিযাত্রী হয় না।

দুজন বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। মহাকাশযানটি প্রায় নিঃশব্দ, খুব চেষ্টা করলে তার শক্তিশালী ইঞ্জিনের মৃদু গুঞ্জন শোনা যায়। রিরা একটু ইতস্তত করে বলল, মহামান্য ক্যাপ্টেন, আপনাকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করতে পারি?

হ্যাঁ, জিজ্ঞেস কর।

আমাদের এই মহাকাশযানে করে আমরা নাকি একটা বিপজ্জনক কার্গো নিয়ে যাচ্ছি?

ক্যাপ্টেন বৰ্কেন একটু অবাক হয়ে বললেন, তুমি কোন কার্গোর কথা বলছ রিরা?

এই মহাকাশযানে করে নাকি একটা নীলমানবের দল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?

হ্যাঁ। আমাদের মহাকাশযানে সতের জন নীলমান আছে। ক্লড উপগ্রহের যুদ্ধে এরা ধরা পড়েছে।

এরা নাকি অত্যন্ত ভয়ংকর?

ক্যাপ্টেন বর্কেন একটু হেসে বললেন, আমরা যে জিনিসটা জানি না সেটাকেই মনে করি ভয়ংকর। নীলমানব সম্পর্কেও সেটা সত্যি তাদেরকে ভয়ংকর ভাবার কারণ হচ্ছে আমরা তাদের সম্পর্ক খুব বেশি জানি না। কদাচিৎ আমরা তাদের ধরতে পারি, এই প্রথমবার একসাথে সতের জনকে ধরতে পেরেছি।

কিন্তু সেজন্য আমাদের নাকি ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতে হয়েছে?

ক্যাপ্টেন বর্কেন মাথা নাড়লেন, হ্যাঁ, সেটা সত্যি। নীলমানব নতুন কিছু অস্ত্র তৈরি করেছে, যেগুলো খু্ব শক্তিশালী। তাদের মহাকাশযানের টেকনোলজিটাও ভিন্ন।

মহামান্য ক্যাপ্টেন, আমরা কি নীলমানবকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি?

না, করি না। মানুষের বিবর্তন হয় স্বাভাবিকভাবে। নীলমানব নিজেদের মাঝে জোর করে বিবর্তন এনেছে। তাদের চোখ ইনফ্রারেড থেকে শুরু করে আলট্রাভায়োলেট পর্যন্ত সংবেদন করে ফেলেছে। তাদের রক্ত কপারভিত্তিক, তাই তাদের গায়ের রঙ হালকা নীল। আমি যতদূর জানি তারা ফুসফুসের আকার অনেক বড় করেছে, বাতাসে কম অক্সিজেনেও বেঁচে থাকতে পারে। শরীরের ভেতরে নাকি নতুন নতুন পরিবর্তন এনেছে।

রিরা একটু শিউরে উঠে বলল, কী সর্বনাশ!

এগুলো হচ্ছে কাঠামোগত পরিবর্তন। আমি শুনেছি এদের চিন্তার জগৎটাও অনেক ভিন্ন। মানুষের মতো এরা বিচ্ছিন্ন না, এদের পুরো দলটি একসাথে কাজ করে।

সেটা কীভাবে সম্ভব?

আমরা সেটা এখনো জানি না, বোঝার চেষ্টা করছি। সতের জনের এই দলটাকে মূল বিজ্ঞান একাডেমিতে পৌঁছে দিতে পারলে অনেক কিছু জানা যাবে। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, আমি সিকিউরিটি ডিভিশনকে বলেছিলাম, পুরো দলটিকে ঘুম পাড়িয়ে শীতল ঘরে নিয়ে যেতে। তা হলে আমাদের ঝামেলা খুব কম হত, কিন্তু বিজ্ঞান একাডেমি রাজি হয় নি।

কেন রাজি হয় নি মহামান্য ক্যাপ্টেন?

এই মহাকাশযানে করে যখন নেওয়া হবে.তখন তারা কী করে বিজ্ঞান একাডেমি সেটা দেখতে চায়। তারা কীভাবে কথা বলে, কীভাবে সময় কাটায় ব্যাপারটা নিয়ে গবেষণা করবে।

রিরা একটু অবাক হয়ে বলল, এর মাঝে গবেষণা করার কী আছে মহামান্য ক্যাপ্টেন?

ক্যাপ্টেন বর্কে একটু হেসে বললেন, নীলমানরা অসম্ভব সাহসী, অসম্ভব একরোখা, প্রায় খ্যাপা ধরনের প্রাণী। তারা মহাকাশযান থেকে বের হয়ে যাবার চেষ্টা করবেই কীভাবে চেষ্টা করবে সেটাই দেখতে চায়।

রিরার মুখে আতঙ্কের একটা ছাপ পড়ল, বলল, সর্বনাশ! যদি সত্যি বের হয়ে যায়?

ক্যাপ্টেন বৰ্কেন হাসলেন, বললেন, এত সোজা নয়। ওদের পুরো ঘরটা চব্বিশ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমি ছয় জন নিরাপত্তা প্রহরীকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে–অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে সাথে সাথে গুলি করার অনুমতি আছে।

রিরা সাবধানে একটা নিশ্বাস ফেলল। খানিকক্ষণ দেয়ালের বিশাল মনিটরটির দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে ক্যাপ্টেন বর্কেনকে জিজ্ঞেস করল, মহামান্য ক্যাপ্টেন, নীলমানবেরা কী ভাষায় কথা বলে?

তাদের নিজেদের ভাষা রয়েছে। একসময় তো নীলমানবেরা মানুষই ছিল, তাই আমাদের ভাষার সাথে মিল আছে। কথা শুনলে মোটামুটি বোঝা যায়।

ওরা এখানে কী নিয়ে কথা বলছে?

প্রথম কয়েকদিন লক্ষ করেছিলাম একেবারে দৈনন্দিন কথাবার্তা। মেঝেতে দাগ কেটে কী একটা খেলা খেলছে, অনেকটা দাবার মতো। বসে বসে সেটা খেলে।

কোনোরকম দুশ্চিন্তা নেই?

থাকলেও কথায় বার্তায় সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই। খুব চাপা স্বভাবের।

ওদের মাঝে কি মেয়ে আছে?

আছে। ছেলেমেয়ের ব্যাপারটা আমাদের মতোই, সব কাজে সমান সমান। এখানে সতের জনের মাঝে আট জনই মেয়ে। দলটার যে নেতৃত্ব নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে সেও একজন মেয়ে। কমবয়সী একরোখা ধরনের।

মহামান্য ক্যাপ্টেন, আমি কি তাদের দেখতে পারি?

যখন তোমার ডিউটি দেওয়া হবে, তখন তো দেখবেই। কাছে থেকে দেখবে। এখন দেখতে চাইলে এই মনিটরে দেখ।

ক্যাপ্টেন বৰ্কেন একটা সুইচ টিপে দিতেই বড় মনিটরে অবরুদ্ধ একটা ঘরের ছবি ফুটে উঠল। ঘরের ভেতর সতের জন নানাবয়সী নীলমানব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। একজন মাথার নিচে হাত দিয়ে শুয়ে নিষ্পলক চোখে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে, মুখে গভীর একটা বিষণ্ণতার ছাপ। গায়ের রঙ হালকা নীল, দেখে মনে হয় বুঝি কোনো একটি অশরীরী প্রাণী। দুজন মেঝেতে দাগ কাটা ছকের দু পাশে বসে খেলছে—খেলাটি প্রাচীন দাবার মতো, খুঁটি নেই বলে খাবারের জন্য দেওয়া শুকনো রুটির টুকরো কেটে কেটে খুঁটিগুলো তৈরি করেছে। খেলোয়াড় দুজন গালে হাত দিয়ে ভাবছে। তাদের ঘিরে আরো কয়েকজন। নিচু গলায় কথা বলছে। দেখে মনে হয় কীভাবে খেলতে হবে, সে বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছে।

বন্ধ ঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে আছে বেশ কয়েকজন। একজন নিচু গলায় একটা গান গাইছে। গানের কথাগুলো বোঝা যায় না কিন্তু সুরটুকু খুব বিষণ্ণ এবং করুণ, বুকের ভেতর এক ধরনের হাহাকারের মতো অনুভূতি হয়। রিরা এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে নীলমানবদের দলটির দিকে তাকিয়ে রইল। এই মানুষগুলো আসলে ভয়ংকর একরোখা, দুর্ধর্ষ এবং নৃশংস। কিন্তু চুপচাপ নিঃশব্দে বসে থাকতে দেখে সেটি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। একাডেমিতে মানুষের এই অপভ্রংশ সম্পর্কে তাদেরকে পড়ানো হয়েছে, তাদের সম্পর্কে রিরার এক ধরনের বিচিত্র কৌতূহল ছিল, মনিটরে সরাসরি দেখতে পেয়ে সে বিস্ময়াভিভূত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল।

রিরা তখনো জানত না তার জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটবে এই নীলমানবদের নিয়েই।