টাইগার বাই দ্য টেল
০১.
কেন্ হল্যান্ড এক মনে ফুটপাথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিল। মেয়েটি তার আগে আগে হেঁটে যাচ্ছিল। পরণে সাদা সিফনের ফ্রক, ছিপ ছিপে গৌরবর্ণ, লম্বা। কে মেয়েটির মন্থর গতিতে চলা নিবিষ্ট মনে দেখতে লাগল। সে কোনদিনও মেয়েদের শরীরের দিকে এভাবেনজর দেয়নি যতদিন থেকে তার অ্যানের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে ততদিনের মধ্যে। কে নিজেকে প্রশ্ন করল, আমার একি হল? আমি যে খারাপ হয়ে যাচ্ছি পার্কারের মতই। একটা সন্ধ্যে মেয়েটার সঙ্গে কাটানো খুব রোমাঞ্চকর ব্যাপার একথা সে মনে মনে ভাবল, পূর্ব স্বগতোক্তির পরেই। মন সেই জিনিসের জন্য কষ্ট অনুভব করে না, সে জিনিস চোখে দেখা যায় না পার্কার একথা প্রায়ই বলে। ঠিক কথাই। অন্য মেয়েদের দিকে গিলে খাবার মত চোখ করে তাকায় একটু আধটু ফষ্টিনষ্টি প্রতিটি বিবাহিত লোকই করে। অ্যান এসব কথা জানতেও পারবে না। কেন সেই বা তাকাবে না?
কেন্ বহু চেষ্টা করে মনটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিল, কারণ অ্যান সেদিন সকালেই তাকে চিঠি লিখেছে। সে জোর করে মনের রাশ চেপে ধরল, কারণ মেয়েটা রাস্তার ওপারে গিয়েই চোখের আড়াল হয়ে গেল। কবে নাগাদ অ্যান ফিরতে পারবে তার ঠিক নেই একথা সে চিঠিতে লিখেছে। অ্যান মায়ের কাছে গেছে পাঁচ সপ্তাহ আগে, অ্যানের মায়ের অর্থাৎ কেনের শাশুড়ীর শরীর তখনও সারেনি। সে নিজের মনে বলল বুড়ি শাশুড়ীদের এতদুরে থাকার কোনও মানে হয় না। জামাইদের দূরবস্থার একশেষ হয়,কারণ মায়েদের শরীর খারাপ হলে মেয়েদের গিয়ে দেখাশুনা করতে হয়। নিজের সবকিছু নিজেকেই করে নিতে হবে, যতদিন বৌ শাশুড়ীর কাছ থেকে না ফেরে। অ্যান কাছে না থাকায় সে চোখে সর্ষেফুল দেখছে। এখন কেনের মনে হচ্ছে পাঁচ সপ্তাহ যেন পাঁচ মাস। কেন যখন অফিসের স্টাফ ফ্লোকরুমে ঢুকলো। পার্কার বলে উঠল, এই যে এলেন বিয়ে করা ব্যচেলর! সে টাইয়ের গিট ঠিক করছিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, প্রশ্ন করল কবে ফিরছে অ্যান?শাশুড়ীর শরীর এখনো ঠিক হয়নি, কেউত্তর দিল, ও কবে ফিরবে অ্যানই জানে। পার্কার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, তোমাকে দেখে মাঝে মাঝে আমার হিংসা হয়। একেক সময় মনে হয় আমার মত খুশী বোধ হয় আর কেউ হবে না, যদি আমার বউ মাস খানেক গিয়ে কোথাও থাকে। তখন আমি ওর ওপর ভীষণ রেগে যাই, চৌদ্দ বছর বৌয়ের সঙ্গে ঘর করার পরও একথা মনে হয়। কেন যে এই ফাঁকে জমিয়ে ফুর্তি করে নিচ্ছনা। আরে ভাই, তুমিতো এদিক দিয়ে ভাগ্যবান, আয়নায় নিজের চিবুকটি ভাল করে দেখতে দেখতে পার্কার মন্তব্য করল। কেন পার্কারকে ধমকে উঠল, তুমি বাজে আলোচনা থামাবে কিনা?
পার্কার তার পেছনে লেগে আছে, যখন থেকে অ্যান তার মায়ের কাছে গেছে। পার্কার তাকে নাছোড়বান্দার মত অনুরোধ করে, হয় কোন বান্ধবীর সঙ্গে সে ফুর্তি করুক না হয় রোজ রাতে কোন নাইট ক্লাবে যাক।তোমায় একটু সতেজ করা দরকার, পার্কার বলে উঠল, তুমি অল্প বয়সে ফুরিয়ে যাচ্ছ। সীগাল হল তোমার জন্য একমাত্র উপযুক্ত স্থান। ওটা খুব ভাল জায়গা, বুড়ো হেমিংওয়ে বলেছিল। সেখানে ভাল ভাল মেয়ে সস্তায় মেলে, মদও সস্তা, ভাল ভাল খাবারও সুবিধাজনক দামে পাওয়া যায়। আমি নিজে এখনও যাইনি। শরীর-মন দুটোই ভাল থাকে একথা সর্বৈব সত্য যদি মুখ বদলানোর মত অন্য মেয়েছেলে নিয়ে মাঝেমধ্যে ফুর্তি করা যায়। কেন বলল, আমায় নিয়ে টানাটানি কোরো না, তুমি রোজ অন্য মেয়েছেলে জুটিয়ে মজা লুটো, কারণ তোমার এ ব্যাপারে প্রচুর শখ আছে। আমি বেশ সুখে আছি, একজনকে নিয়েই।
বেলা বাড়ার পর ভেতরে ভেতরে কে একটা প্রচণ্ড তাগিদ অনুভব করতে লাগল সীগালে যাবার জন্য। মুখে অবশ্য পার্কারকে একথা বলল। এই চঞ্চলতা একসপ্তাহ ধরেই তাকে ব্যতিব্যস্ত করছে একথা সত্য। দরজায় দাঁড়িয়ে প্রত্যহ অ্যান তাকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাত বিয়ে হওয়ার পর থেকেই যখন সে অফিস থেকে ফিরত।
কেনের মন খুশীতে ভরে উঠত, অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় যখন সে অ্যানের চেহারাটা কল্পনা করত। সব বদলে গিয়েছে এই পাঁচটি সপ্তাহে। এখন একঘেয়ে ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, ক্লান্ত দেহমন নিয়ে প্রত্যহ খালি বাংলোয় ফিরে আসা। সুন্দরী পণ্যা মেয়েদের ভিড়, উজ্জ্বল নিয়ন আলোয় নাচগান খানাপিনা সবই চলছে সীগাল নাইট ক্লাবের ভেতরে, পথে যেতে যেতে বহুদিন তা কেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সে ভেতরে একদিনও ঢোকেনি সাহসের অভাবে। তার পক্ষে অশোভনীয় ওখানে যাওয়া, কারণ সে একজন ব্যাংকের পদস্থ অফিসার। নিজে নিয়ন্ত্রণে মনটাকে ফিরিয়ে আনতে চাইল জোর করে যখন সে লাঞ্চে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছিল। একা বাড়ি গিয়েই সে সময় কাটাবে যতই অপ্রীতিকর লাগুক। ঠিক দেখা হয়ে গেল পার্কারের সঙ্গে যখন সে টুপি আনতে যাচ্ছিল ফ্লোকরুমে। পার্কার জিজ্ঞাসা করল, মনস্থির করেছ? তোয়ালেতে পার্কার তখন ভেজা হাত মুছছিল। বল কি করে সময় কাটাবে আজ রাতে? কাজ চালাবে নাকি কোন বান্ধবী টাইপের মেয়েকে দিয়ে অথবা গান গেয়ে, মেয়েছেলে নিয়ে মদ খেয়ে ফুর্তি করবে? একটু হেঁটে দিতে হবে লনের ঘাসগুলি, কারণ ওগুলো বড় হয়েছে কেন্ উত্তর দিল, সোজা বাড়ি ফিরব অফিস থেকে।
সন্ধ্যেটা উনি মাটি করবেন ঘাস ছেটে আর বৌ বাপের বাড়ি গিয়ে বসে আছে। পার্কার গম্ভীর মুখে বলল। আর কিছু তোমার বলার নেই। কেন তুমি ভুলে যাচ্ছ, তোমার নিজের প্রতি একটা কর্তব্য আছে হল্যান্ড, একথা তোমায় সিরিয়াসলি বলছি, এমন ভাল সুযোগ আর কোথায় পাবে? এর পর বৃদ্ধ-অথর্ব হয়ে যাবে। চুটিয়ে ফুর্তি করে নাও যে কদিন সুযোগ পাচ্ছ। বয়স তোমার আর বাড়বেনা দেখছি, কে মৃদু তিরস্কারের সুরে বলল। ছেলেমানুষী কোর না চুপ কর পার্কার। কবরের নীচে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে আমার যখনই বুঝব–তখন বাড়ি ফিরে ঘাস ছাটার চিন্তা করবো-পাকার উত্তর দিল, আমার যেন বয়স আর না বাড়ে ঈশ্বরের কাছে তাই প্রার্থনা করি।
অফিস থেকে কেন্ যখন বেরোল মন তখন তার দোটানায় পড়েছে। আলোড়ন তুলতে লাগল তার মনের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে যে কথাগুলো পার্কার বলেছে। সে যদি এভাবে চলে সত্যিই বুড়িয়ে যাবে। জীবন তো সামনের দিকেই এগোচ্ছে। এমন কি অপরাধ হবে আজ রাতে যদি সে সীগাল থেকে ঘুরে আসে? জানতেই পারবে না অ্যান কিছু। সে ওখানে আজ যাবেই, ভাবতে ভাবতে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠল কে।
মেয়েদের সঙ্গে প্রমোদ করবে, মদ খাবে, তারপর তাজা মন নিয়ে বাড়ি ফিরে আসবে। নাইট ক্লাবে গিয়ে ফুর্তি করা ঢের ভাল, ভূতের মত একা একা ফাঁকা বাংলোয় সময় কাটানোর থেকে।
কেন্ পার্কারকে বাড়ি নিয়ে এল অফিস ছুটির পর। বুঝলে কে, বিয়েটা করে ঠিক করেছি কিনা এখনো বুঝতে পারছি না, পার্কার বলল আরাম করে চেয়ারে বসার পর। বৌয়েরা বুঝতেই চায়না যে আমাদেরও কোন স্বাধীনতা বলে বস্তু থাকতে পারে। হুইস্কি গ্লাসে ঢেলে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে কেন্ বলল, আবার বকবক শুরু করলে? পার্কার গ্লাসটা কেন্ত্রে হাত থেকে নিয়ে জানতে চাইল, কতদিন হল অ্যান বাপের বাড়ি গিয়েছে?
কেন্ উত্তর দিল পাঁচ সপ্তাহ হবে। পার্কার জানতে চাইল তোমার শ্বাশুড়ীর কি হয়েছে। তার অসুখটা কি ধরণের। বেশী বয়েস হলে মানুষের যে সব উপসর্গ দেখা দেয় সেই রকম কিছু বোধ হয় কেউত্তর দিল। আবার বলল একমাস এরকম চলবে মনে হয়। বাইরের কেউ জানতে পারবে, শুধু তুমি আর আমি জানব পার্কার এক চোখ টিপে প্রশ্ন করল, আজ রাত্রে একটু শরীরের আনন্দ উপভোগ করবে নাকি?
কেন্ বলল, আমি ঠিক তোমার কথা ধরতে পারছি না। এক মেয়েমানুষের কাছে গিয়ে আমি সন্ধ্যেটা কাটাই, তোমাকে খুলে বললাম, পার্কার বলল। এসব ব্যাপার আমার স্ত্রী কিছুই জানে না। মেয়েমানুষটার কাছে আমি তখনই কাটাই যখন আমার স্ত্রী বাপের বাড়িতে ওর মাকে দেখতে যায়। পার্কারের মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল কেন্। তার বাক্যস্ফুর্তি হচ্ছিল না। আমায় এ রাস্তা বাতলে দিয়েছে হেমিংওয়ে, পার্কার সহাস্যে বলল।
কোন ভয় পেয়ো না, জানাজানি হবে না তোমার কোন কিছু।
মেয়েটির ব্যবসা হল তাদেরই সঙ্গ দেওয়া যারা একা একা মাল খেয়ে সন্ধ্যের পর সময় কাটায়, ঠিক তোমারই মত। বাড়ি ফেরার আগে ওকে অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে দিলেই হবে, যদি তুমি ওকে নিয়ে সন্ধ্যের পর কোথাও বাইরে আনন্দ করে আস। নির্ভয়ে ওর অ্যাপার্টমেন্টে বসে সময় কাটাতে পার যদি বাইরে কোথাও না যেতে চাও। কেউ ঘুনাক্ষরেও জানতে পারবে না। ওখানে সবরকম ব্যবস্থাই আছে তোমাকে খুশী করার মত। বলে পার্কার পার্স খুলল। এই নাও, এখানে ওর নাম ঠিকানা ফোন নং সব লিখে দিলাম, পার্স থেকে একটা কার্ড বের করে উল্টো পিঠে মেয়েটার নাম ঠিকানা লিখে দিয়ে পার্কার কেনের সামনে রেখে দিল।
ওর নাম কে কার্সন। পার্কার বলল তুমি যাবার আগে একবার ফোন করে যেও। তুমি ওর সঙ্গে দেখা করতে চাও আগে একবার ফোনে জানিয়ে দেবে। তোমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাবে ফোন করার পরে। তোমার ঠিক পুষিয়ে যাবে, ওর দর একটু বেশী। ফায়ারপ্লেসের দিকে কার্ডটা ছুঁড়ে মারল কে, বলল ওসব আমার দরকার নেই। সিনেমা দেখে এসো ওকে নিয়ে আজ রাতে। পার্কার চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে বলল, বোকামী করছ কেন? ভবিষ্যতে কাজে লাগবে কার্ডটা তুলে রাখ। ঘর ছেড়ে বিদায় জানিয়ে বের হয়ে গেল পার্কার। রিভার সাইড ৩৩৩৪ লেখা কার্ডটা তুলে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখল কে উঠে গিয়ে। ফায়ার প্লেসের আগুনের মধ্যে কুটি কুটি করে কেন্ কার্ডটা ছিঁড়ে ফেলে দিল কিছুক্ষণ উল্টে-পাল্টে দেখার পর। নব ঘুরিয়ে রেডিও চালাল, আরাম কেদারায় বসে আরো দু-এক টোক হুইস্কি গলায় ঢালল, চেয়ারে রাখা কোটটা তুলে নিয়ে শোবার ঘরে চলে আসার পর। কেন্ নব ঘুরিয়ে রেডিও বন্ধ করে দিল, গুরুগম্ভীর ভাষণ শোনা যাচ্ছে রেডিওতে হাইড্রোজেন বোমার বিপদ সম্পর্কে। ভাষণ দিচ্ছেন কোন এক বিশেষজ্ঞ। বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল জানালা দিয়ে। কখন বিদায় নিয়েছে তার ভিতরের ইচ্ছাটা, লনের ঘাস ছাটার বিষয়ে। রিসিভার তুলল, কে কিছুক্ষণ, ইতস্ততঃ করার পর। ৩৩৩৪ রিভার সাইড, মনে আছে তখনও ফোন নম্বারটা। একটি মেয়ের গলা ভেসে এল উল্টোদিক থেকে হ্যালো? কে জানতে চাইল, মিসেস কার্সন নাকি?
আপনি কে বলছে? ঠিক বুঝতে পারছি না তো, মেয়েটি বলল।
কেন্ বলল, আমার এক বন্ধু আপনার পরিচয় দিয়েছেন আপনি আমার নাম বললে চিনতে পারবেন না।
মেয়েটা হেসে বলল, ও বুঝতে পেরেছি। আসতে চান আমার কাছে? কেন বলুন তো এত লজ্জা পাচ্ছেন?
ঠিকানাই তো আপনার জানি না, কে বলল, যেতে তো চাইই। গাড়ি আছে আপনার সঙ্গে মেয়েটি জানতে চাইল। বলল, আমি একেবারে ওপরের তলায় থাকি।
কেন্ উত্তর দিল হ্যাঁ গাড়ি আছে আমার। যেখানে গাড়ি রাখবেন সেখানে কোণের দিকে একটা পার্কিং প্লেস আছে, আমি যে বাড়িটায় থাকি। মেয়েটি বলল, গাড়ি বাইরে রাখবেন না। আমি আসছি না নাগাদ কে বলল।
ওপরে সোজা উঠে আসবেন, সদর দরজা খোলা আছে দেখবেন আমি অপেক্ষায় থাকব। ছটা নাগাদ দেখা হবে, এবার ফোন ছাড়লাম।
মুখ মুছল কেন্ রুমাল বার করে। এখন কি করবে, কে ভাবল বাইরের ঘরে এসে। একদিনের তো ব্যাপার, গিয়ে দেখাই যাক না, নিজের মনেই বলল কে, বেশ কিছুক্ষণ দোটানায় কাটানোর পর। থর থর করে কাঁপছে তার হাত অনুভব করল যখন সে টাকা গুণতে লাগল পার্স থেকে গায়ে কোট চাপানোর পরে।
.
০২.
সদর দরজা খোলা দেখল কে যখন সে পঁচিশ নম্বর বাড়ির সামনে দাঁড়াল লেসিংটন অ্যাভিনিউতে পৌঁছে। প্রবেশ করল ভিতরে নির্দ্বিধায়।
মেক্রিস্টি, গে হর্ডান, ইউ বার্কলে, গ্লোরে গোল্ড, কেকার্সন, সব নাম লেখা বাসিন্দাদের, লেটার বক্সের গায়ে একতলায় সারি দিয়ে।
কেন্ বুঝতে পারল না আর এগোনো ঠিক হবে কিনা, হঠাৎ তার নার্ভ ফেল করল সেইতস্ততঃ করতে লাগল একমুহূর্ত। ঘরে ফিরে যাই ঘরের ছেলে, ভেতরে ঢুকে কি হবে, নিজের মনেই একবার বলে ফেলল। আর যথেষ্ট নেশা হয়েছে কেন্ তা বুঝতে পারছে, হয়ত ফিরেই যেত যদি না সে হুইস্কি খেত বাড়ি থেকে বেরোনোর আগেই। একথা একদম সত্যি। বল ফিরে এল তার মনে, ততক্ষণাৎ, মনে পড়ল তার পার্কারের অভয় বাণী। কোন কারণ নেই তার এত ভাবনার, যেহেতু রোজই পাকার মেয়েটার কাছে আসে। উপরে উঠতে লাগল কে সাহসে ভর করে। থমকে সে দাঁড়িয়ে পড়ল, দরজা খোলা এবং বন্ধ হবার শব্দ পেয়ে, যখন সে বেশ কয়েকটি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেছে। আবির্ভাব হল এক ব্যক্তির, সিঁড়ির মাথার একটু আগেই, ফিরে চলে যাই সে ভাবল।
একহাতে ঘন লোমওয়ালা একটা পিকনিজ কুকুর ধরা, অন্য হাতে একটা টুপি, টাক পড়তে শুরু করেছে মাথায়, মোটা-বেঁটে একটি লোক সিঁড়ির মাথায় এসে দাঁড়িয়েছে, এমন একটি লোকের সঙ্গে তার দৃষ্টি বিনিময় হল।
আমি নামব পরে, আপনি, আগে উঠে যান লোকটি বলল নরম মেয়েলী গলায়, পিছিয়ে গেল কেকে উঠতে দেখে। জিজ্ঞেস করল কেকে আমার সঙ্গে কি আপনি দেখা করতে এসেছেন?
কেন্ উত্তর দিল, না উপরতলায় যাব আমি। সে এসে দাঁড়াল লোকটার পাশে আরও কয়েকধাপ উঠে। জানোয়ারটা বেশ চমৎকার দেখতে তাইনা? লোকটি বলল কুকুরের গায়ের ঘন লোমে হাত বুলিয়ে। সোনার কাপ পেয়েছে ডগ শোতে এ মাসে, লোকটি জানাল।
কেন্ বলল অস্বস্তি ভরা গলায়, হ্যাঁ খুবই চমৎকার দেখতে আপনার কুকুরটি। কেনের দিকে কুকুরটা কুতকুতে লাল লাল চোখে তাকাল। কে ওপরে উঠে গেল আর কথা না বাড়িয়ে। পেছন ফিরে তাকাল সে কিছু একটা মনে করে সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছার পর। তারই দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে লোকটি,কুকুর কোলে নিয়ে, সিঁড়ি দিয়ে নামেনি সেই মোটা লোকটি তখন পৰ্য্যন্ত। ফিক্ করে হাসল লোকটি, যখন দৃষ্টি বিনিময় হল কেনের সঙ্গে এক অজানা আশঙ্কায় তার বুকটা কেঁপে উঠল, লোকটির হাসি সে সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারলনা। মিশে আছে এক নিষ্ঠুর ধূর্ততা লোকটির হাসির মধ্যে। তাকিয়ে রয়েছে কুকুরটা তার দিকে প্রভুর দৃষ্টি অনুসরণ করে, এটা সে লক্ষ্য করল।
কলিং বেল টিপল কেন্, এগিয়ে গিয়ে দেখল সবুজ রংঙের দরজা সামনেই। খুলে গেল দরজা ভেতর থেকে, কলিংবেল টেপার সাথে সাথেই। একটি মেয়ে তার সামনেই এসে দাঁড়াল কে দেখল। সর্বাঙ্গ সুন্দরী মেয়েটি, অবশ্যই গায়ের রঙ ঈষৎ চাপা, সত্ত্বেও। কোনমতেই তেইশ চব্বিশের বেশী হতে পারে না মেয়েটির বয়স,বুঝতে পারল কে একনজরে দেখেই।কাঁধ পৰ্য্যন্ত নেমে এসেছে মেয়েটির ঘন কালো লম্বা চুল। হাসল মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে।
লাল গাঢ় লিপস্টিক মাখানো তাঁর দুটি পাতলা ঠোঁটে, নীল রংয়ের মনি তার দুটি বড় বড় চোখের। আবার সচল করে তুলল কেরে ভীত-সন্ত্রস্ত স্নায়ুকে যখন মেয়েটি বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি উপহার দিল। মেয়েটি একপাশে সরে দাঁড়িয়ে কেকে বলল, ভেতরে আসুন।
এটা বসার ঘর, ভেতরে ঢুকে চারিদিকে তাকিয়ে কে বুঝতে পারল। ঘরখানা বেশ বড়। বড়কোচ চামড়ার একটা তার সামনে রয়েছে। ফায়ার প্লেস এককোনে রয়েছে। কিছু ফুল সাজিয়ে রাখা আছে ম্যান্টলপিসের ওপর একটা পাত্রে, টেবিলে রেডিওগ্রাম ঢাকা, একটা ডিনার টেবল, বাদাম কাঠের তৈরী, মদের বোতল রাখার একটি ছোট ক্যাবিনেট, একটি টেলিভিশন সেট, একটি রেডিও গ্রাম, আর আছে ঘরে তিনটে বড় আরাম কেদারা।
লঘু পায়ে মেয়েটি এগিয়ে এল ক্যাবিনেটের দিকে, দরজা বন্ধ করে দিয়ে, যেখানে মদের বোতল রাখা আছে। মেয়েটির কোমরের তলদেশ হাঁটলে দোলে, কে লক্ষ্য করল। কেরে প্রতিক্রিয়া কি হয় আড়চোখে মেয়েটি তা দেখতে লাগল। ভাল করে বসে আরাম করুন। ভেবে নিন এটা আপনার নিজের বাড়ি মেয়েটি বলল, এত জড়সড় হয়ে বসে আছেন কেন? আমি আপনার কোন ক্ষতি করবনা। কোন ভয় পাওয়ার কারণ নেই আমাকে দেখে। আমি আসলে এ সব জায়গায় আসতে অভ্যস্ত নই। তোমায় দেখে মোটেই ভয় পাচ্ছি না। এ সব জায়গায় কেনই। বা আসতে যাবে আপনার মত লোক, একথা সত্য, খিলখিল করে হেসে উঠে মেয়েটি বলল। কোন প্রয়োজন নেই আপনার আমাদের মত মেয়েদের কাছে এসে।
বৌয়ের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি হয়েছে বুঝি? আসল ব্যাপার খুলে বলুন তো, মেয়েটি জানতে চাইল। ঠিক তা নয়, কে বলল, মেয়েটির হাত থেকে গ্লাস নিয়ে তার দুকান তেতে ঝাঝা করতে লাগল। হঠাৎ মুখ ফসকে প্রশ্নটা বেরিয়ে গেছে, এ কথা জানতে চাওয়া আমার উচিৎ হয়নি, মাপ করবেন, মেয়েটি গ্লাস হাতে এসে তার পাশে বসে বলল। আমার মোটেই ব্যক্তিগত ব্যাপার জানতে চাওয়া উচিৎ হয় নি। মেয়েটি আরও বলল আপনার মত কেউ, আমার এখানে আসে না, সেজন্য প্রশ্ন করলাম।
কেন্ খুব খুশী হল মেয়েটির স্পষ্টবাদীতায়। বেশ চনমনে হয়ে উঠল তার মেজাজটা মদে চুমুক দিয়ে।
ধীরে ধীরে তাকে আকৃষ্ট করছে মেয়েটির, হাবভাব চলা ফেরা। এর মত সুন্দরী নয় তবে প্রায় এ রকমই দেখতে একটি মেয়ে তাদের ব্যাঙ্কে কাজ করে। তার যেন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে যে মেয়েটি পণ্যা। মেয়েটি জানতে চাইল, এক পায়ের উপর আর একটি পা ভাঁজ করে বসে, খুব তাড়া নেইতো আপনার?
ঠিক গুছিয়ে উত্তর দিতে পারল না কে, আমতা আমতা করে বলতে লাগল, না মানে, ঠিক তা নয়।
এখানে যারা আসে তারা যেমনি হুটপাঠ করে আসে তেমনি লুটপাঠ করে চলে যায় তাই জানতে চাইছি, আপনি কি এখানে কিছুক্ষণ থাকবেন? মেয়েটি বলল। তারা সবাই তাড়াতাড়ি চলে যায় হয়ত বাড়িতে বৌয়ের কথা ভেবেই, মেয়েটি বলল ওরা এ ভীষণ ঘেন্না হয় আমার।
সবাই যে কারণে আসে আমিও সে কারণেই এসেছি, বহুকষ্টে কে আস্তে আস্তে বলে ফেলল। প্রথমে বলল, আমি মানে ইয়ে।
টাকা পয়সার কথাটা আগে সেরে ফেলি কেমন, যা আশা করে এসেছেন তা নিশ্চয়ই পাবেন, মেয়েটি একপলকে তার মুখের দিকে তাকিয়েই বলল, এবং একটু হাসল। কি, খুব বেশী হবে কি? আমি কুড়ি ডলার করে নিই। দশ ডলারের দুটি নোট কেন্ পার্স খুলে বের করে তার হাতে দিল এবং বলল মোটেই বেশী না।
চল আমরা বাইরে থেকে ঘুরে আসি, মেয়েটি নোট দুটি নেবার পর কে বলল। মেয়েটি জানতে চাইল, কোথায় যাবেন বলুন। আমি চাইনা কোন চেনা জানা লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে যা কে বলল, ভেবেছিলাম নাইট ক্লাবেই যাব। আমি আপনাকে রু রোজে নিয়ে যাচ্ছি, মেয়েটি বলল, সে নিয়ে আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে না। আমি বাজী রাখতে পারি যে ওখানে আপনার কোন চেনাজানা বন্ধুর সঙ্গে দেখা হবেনা।
কেন্ বলল, তুমি তৈরী হয়ে এস, ঠিক আছে, আমি এখানে অপেক্ষা করছি। সবাই যা হোক ছোঁক করে তা বলার নয়, আপনার মত অদ্ভুত মানুষ আমি আগে দেখিনি, মেয়েটি একথা বলল। কেন আপনি এত লাজুক? কি কারণ এত সঙ্কোচের?
কেন্ অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, তুমি যাও ও কিছু নয়। সাজ-সজ্জা করে মেয়েটি অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তৈরী হয়ে এল। মেয়েটি বলল, আমায় চুম্বন কর, দুহাতে তার গলা জড়িয়ে ধরল। এখনও অনেক সময় আছে, কেরে দিকে তাকিয়ে বলল, কেনের ঠোঁট মেয়েটির ঠোঁটে গাঢ় হয়ে চেপে বসল। বাইরে বাতাস জোরে বইছে।
মেয়েটি ট্যাক্সিতে যেতে যেতে কেকে প্রশ্ন করল। নাচতে সে ভালবাসে কিনা? তুমি কি নাচতে খুব ভালবাস কে জিজ্ঞাসা করল। আমি নিশ্চয়ই ভালবাসি? কোথা থেকে কি হয়ে গেল, আমার কপাল পুড়ল, একসময় নাচই ছিল আমার প্রধান জীবিকা, মেয়েটি উত্তর দিল, সেজন্য নাচ আমার খুবই প্রিয়।
আমার নাচের পেশা শেষ হয়ে গেল যখন, আমার নাচের পার্টনারকে হারালাম। আগে রোজই আমি নাচতাম রোজ ক্লাবে, এখন সেখানেই যাচ্ছি।
কেন্ জানতে চাইল, তোমার নৃত্যসঙ্গীর খবর কি?
সে গম্ভীর ভাবে বলল, ও আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছে কোন একজনের সঙ্গে বেশীদিন টিকে থাকতে ও অভ্যস্ত ছিল না। তোমার নীচের তলায় একজন মোটা মতন ভদ্রলোক থাকেন উনি কে? কে প্রসঙ্গ পালটে প্রশ্ন করল, সে বুঝতে পারলনা জেনে মেয়েটির ব্যথার জায়গায় আঘাত করেছে। আমি তারই কথা বলছি যিনি পিকনিজ কুকুর নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কে নাক কুঁচকে বলল, ওর কথা আর বোলোনা লোকে ওকে যাচ্ছেতাই বলে। তুমি তাহলে ওকেই দেখেছে। কোন না কোন অজুহাতে ও পথ আটকে দাঁড়াবে, সিঁড়ি দিয়ে নামা ওঠার সময় দেখা হলেই, ওর নাম র্যাফায়েল সুইটি। কুকুরকে নিয়ে গাল-গল্প জুড়ে দেবে। কথা বলার ছুতোর ওর অভাব নেই। দুজনে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে নেমে পড়ল, ট্যাক্সি যখন ব্লু রোজের সামনে এসে দাঁড়াল।
খুব জোরে বাজ পড়ল কাছাকাছি কোথাও, সঙ্গে সঙ্গে আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো কে যখনই দরজার বেল টিপল। শুনতে পেলে? চমকে উঠে সেই শব্দ শুনে জিজ্ঞেস করল কেন্।
বাতাস ঠাণ্ডা হবে জোরে বৃষ্টি নামলে, আকাশ সন্ধ্যে থেকেই মেঘাচ্ছন্ন, বেশ ভাল লাগবে কে উত্তর দিল।
গুড ইভনিং-মিস কার্সন, একটি লোক দরজা খুলে একপাশে সরে দাঁড়িয়ে বলল। খুব ব্যস্ত নাকি? কে বলল–গুড ইভনিং জো।
আপনার টেবিল খালি আছে ভেতরে যান মিস কার্সন, লোকটি আপাদ মস্তক কেনের দিকে নিরীক্ষণ করে বলল, কে বলল, আমি একটু ব্যস্তই আছি। বিশাল ঘরের এককোণে একটি টেবিলের ধারে দুজনে মুখোমুখি বসল যখন কেকে সঙ্গে নিয়ে ঘরের চারিদিকে কেন্ এতক্ষণে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখল। সে চায়না কারো সঙ্গে তার দেখা হয়ে যাক্ সেই কারণে তার চোখে মুখে অস্বস্তির ছাপ ফুটে উঠেছে। কেনের মত একজন উচ্চপদস্থ ব্যাঙ্ক কর্মচারীকেকারও চেনার কথায়, এখানে যারা আসে তাঁরা সবাই মজালুঠতে আসেতারা অন্য জগতের বাসিন্দা,এখানে মজালুঠতে এসেছে, সুতরাং তার চিন্তাই অমুলক। কে ভাল করে পর্যবেক্ষণের পর বুঝতে পারল।
কেনের বুঝতে বাকী রইল না, তাদের আয়ের পথও খুব ভদ্র নয় এবং প্রত্যেকেই এরা অসংযত জীবন-যাপন করে। দরজা ঠেলে এক স্বাস্থ্যবান নিগ্রো ঘরের ভেতর এসে দাঁড়াল। কে ওয়েটারকে দুপেগ মার্টিনি অর্ডার দেবার পর, তারপর দরজার দিকে তাকাল। ডানচোখের নীচে একটা বড় কাটা দাগ গাল পৰ্য্যন্ত নেমে এসেছে, এমন একটি নিগ্রো যুবক তাঁর দৃষ্টি কেড়ে নিল যুবকটির মাথার চুল ছোট করে ছাঁটা, এবং তার উচ্চতা প্রায় ছফিট। কে নিগ্রো যুবকটিকে লক্ষ করে বলল হ্যালো স্যাম। অনেকগুলো সোনা বাঁধানো দাঁতে হাসল নিগ্রো যুবকটি কে কে দেখতে পেয়ে, কে লক্ষ্য করল।
কে বলল, ওর রাম, স্যাম ভার্সি এই বার আর রেস্তোরাঁর মালিক। বছর পাঁচেক আগের কথা, অল্প কিছু টাকা পুঁজি নিয়ে স্যাম এই রেস্তোরাঁটা খুলেছিল। ও একসময় জো লুইয়ের বক্সিং পার্টনার ছিল।
এত জাঁকজমক ছিলনা আগে যখন আমি প্রথম এখানে নাচতে শুরু করি। স্যামের সম্বল ছিল একটা পিয়ানো, আর অল্প কয়েকটা টেবিল চেয়ার, টিমটিম করে আলো জ্বলত। স্যাম, আজ প্রচুর টাকার মালিক, কি বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে, কে সংবাদটা জানাল।
কেন্ বলল লোকটাকে দৈত্যের মত দেখতে। কে উঠে দাঁড়াল, ওয়েটার মার্টিনী দিয়ে যেতে এক টোক গলায় ঢালার পর, চল রেস্তোরাঁয় যাওয়া যাক্। আমার খুব খিদে পেয়েছে। কেকে উদ্দেশ্য করে কে বলল।
একটি অপূর্ব সুন্দরী যুবতী খাওয়া শেষ করে শ্লথ গতিতে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বেঁস্তোরায় বসে প্রন ওমলেট খেতে খেতে কে নজরে পড়ল। একরাশ সোনালী চুল মাথার ওপর চুড়ো করে বাঁধা। দুধের মত শ্বেতবর্ণ মেয়েটি, তার পরিধানে লো কাট ইভনিং গাউন। পান্নার মত সবুজ মেয়েটির চোখের রঙ, তাও লক্ষ্য করল কেন্। কেনকে সম্মোহিত করে ফেলল এক অদ্ভুত মোহ।
কেন্–কে কে নীচু স্বরে প্রশ্ন করল, মেয়েটিকে চেনো? কে, গম্ভীর স্বরে জবাব দিল, ওর নাম গিল্ডা ডোরম্যান, ভাল ভাবেই চিনি। আমার জীবনের এই পরিণতি হতনা, যদি ওর মত গানের গলা আর সুন্দর চেহারা হত। কে খাওয়া শেষ করে বলল, এবার একটু নাচা যাক এস। কে বলল, আমার কপাল পুড়েছিল ওই গিল্ডার জন্য। চমৎকার দেখতে ওকে তাইনা? নামকরা গণিকা ও, এই শহরের। তোমার সঙ্গে একটু নাচি এস, ও সব প্রসঙ্গ থাক্। কে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল। কে ফেরার সময় ট্যাক্সিতে, কের সঙ্গে ঘনিষ্ট ভাবে বসে বলল, কোনদিন ভুলবনা আজকের এই সন্ধ্যার কথা! মায়াময় হাসি উপহার দিয়ে কে তার দিকে চোখ তুলে তাকাল, এবং জানতে চাইল কে এখনই বাড়ি ফিরে যাবে কিনা?
কেন্ বলল– না, আমি মনস্থির করে ফেলেছি, এখুনি বাড়ি ফিরবনা। তুমি নিশ্চয়ই বিবাহিত তাই না? কে জানতে চাইল এবং বলল চল বাড়ি যাই। আমি, নিশ্চিত বলতে পারি, তোমার স্ত্রী এখন বাড়ি নেই এজন্য বাজি ধরছি। কেন প্রশ্ন করল, একথা জানার কোন প্রয়োজন আছে কিনা? কে অনুতপ্ত গলায় বলল, ওকথা বলা আমার উচিৎ হয়নি। কিছু মনে করো না। আজকের এই সন্ধ্যার কথা আমিও কোনদিন ভুলব না। এক নতুন ছন্দ এনে দিলে তুমি আমার জীবনে অবশ্যই যদিও কয়েক মুহূর্তের জন্য। আমি জানতে চাইছি, তোমার অন্য কোন বান্ধবী আছে কিনা? আমি তোমায় চিরদিনের মত বেঁধে ফেলব, যদি তুমি অন্য কোথাও বাঁধা পড়ে না থাক। আমি আর একজনের কাছে বাঁধা আছি কে, কে উত্তর দিল। কেন্ অন্য কথা ভাবতে শুরু করল আর কিছু বলল না। হঠাৎ একটি লোক বেরিয়ে এল উল্টো দিকের গলি থেকে, যখন তাঁরা। ট্যাক্সিতে চেপে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে আসছিল। লোকটির মাথায় টুপি ছিল না, মুখ চোখ সুশ্রী, পাতলা গঠন, লম্বা গাড়ির হেডলাইটের আলোয় কেন লক্ষ্য করেছিল।
লোকটা যেন আঁধারের বুকে মিলিয়ে গেল হঠাৎ বড় বড় পা ফেলে। কেনের বারে বারে সেই লোকটার কথাই মনে পড়ছিল, যদিও সেই মুহূর্তে তাকে চিনতে পারেনি।
কে কে কেন্ প্রশ্ন করল, এই লাইনে কতদিন আছ? কে তার দিকে বড় বড় চোখ মেলে তাকিয়ে বলল, এক বছর। কিন্তু সউপদেশ দিয়ে আমায় দয়া দেখাতে হবে না তোমায় অনুরোধ করছি কে বলল। আমার দুকান পচে গেছে, একথা শুনতে শুনতে যে আমার মত মেয়ের এ লাইনে আসা উচিৎ হয়নি।
কেন্ বলল, একটা কথা বলতে চাই, তবে আমি জ্ঞান দিচ্ছিনা, তুমি কি পারনা ফিরে আসতে নাচ-গানের লাইনে, অবশ্য যদি একটু চেষ্টা কর।
কে উত্তর দিল, আর ফিরে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই বর্তমানে, যদিও ফিরে যেতে পারি। ভাল পার্টনারের অভাব তার অন্যতম কারণ। কেকে জিজ্ঞাসা করল তুমি কোথায় কাজ করছ? একবার ভাল করে নিরিক্ষণ করল কেন্ উত্তর দেবার আগে। তাকে খুঁজে বের করা বেশ সহজ হবে, যদি সে কোথায় কাজ করে বলে দেয়, কারণ এই শহরে মাত্র তিনটে ব্যাঙ্ক আছে। যারা নিজেদের কর্মস্থলের যাবতীয় খোঁজখবর এই গণিকাদের কাছে দিয়েছে, তারাই ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েছে এবং বিপদে পড়েছে, এমন অনেক লোকের খবর কে জানে।
খুব সতর্ক গলায় কে জবাব দিল, আমি একটা ছোটখাট অফিসে কাজ করি।
তুমি খুব ভয় পেয়েছে আমার প্রশ্ন শুনে, তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কে উত্তর দিল। তোমার কোন ক্ষতি করব না, ভয় পেয়োনা কে হেসে উত্তর দিল।
তোমার মত ভদ্রলোকের পক্ষে এতটা ঝুঁকি নেওয়া উচিৎ নয়, কে একটু সরে বসে বলল।
কেন্ কিছু উত্তর না দিয়ে চুপ করেছিল।
কি উল্টোপাল্টা বকছ, জোর করে মুখে হাসি টেনে কেন বলল। কে বলল, সত্যি কথাই বলছি, বাইরে সন্ধেটা হঠাৎ একটা অচেনা অজানা মেয়ের সঙ্গে কাটিয়ে গেলে। হয়তো কোন কারণে মনটা একটু বিষণ্ণ ছিল, ভাল চাকরি কর, তুমি একজন বিবাহিত পুরুষ, না কাজটা ঠিক করনি। একদম অন্য ধরণের মেয়ে আছে সেখানে আমি থাকি। তুমি কোন প্রকারেই মুক্তি পেতে না যদি তাদের কারুর পাল্লায় পড়তে।
আমি নিজের ইচ্ছেতেই এসেছি, তোমার ঠিকানা আর ফোন আমার এক বন্ধু দিয়েছিল। কে কে সম্বোধন করে কে বলল।
কে বলল, বন্ধুটি তোমার বিশেষ উপকার করেনি, ঝুঁকি নেবার আগে পাঁচবার ভাববে যা করবে ভেবেচিন্তে করবে, একথা আমার বাবা সব সময় বলতেন। আমিও তোমায় একই কথা বলছি।
কে বলল, ভুলে যেও একেবারে আজকের রাতের কথা।
ভুলেও যেন আমার কাছে এসো না, ভবিষ্যতে যদি কখনও মন খারাপ হয়। আমি তোমার সঙ্গে কখনই দেখা করব না যদি আস।
ট্যাক্সি যখন কের বাড়ির গেটে এসে থামল। কে ভাড়া মিটিয়ে কের হাত ধরে নেমে পড়ল। পূর্বের সেই ভাল লাগার অনুভূতিটা মুছে গেছে, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে কে বুঝতে পারল। সে কেকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে গেলেই ভাল করত, কে যেন তাকে মনের ভিতর থেকে ইঙ্গিত দিতে থাকল। শীঘ্রই একটা অচিন্ত্যনীয় কিছু ঘটতে চলেছে, কে যেন বুঝতে পারল।
কেন্ পুনরায় সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগল কের পিছু পিছু যদিও সে একটা বিশ্রী অস্বস্তি বোধ করছিল।
সে তাদেরই ফেরার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে, পথ আটকে পিকনিজ কুকুর কোলে নিয়ে সেই র্যাফায়েল সুইটি। তারা তিন তলার ল্যাভিংয়ে পৌঁছেই দেখতে পেল। গরগর আওয়াজ তুলল, কটমট করে লাল লাল চোখে কুকুরটা কেকে দেখে। হেসে র্যাফায়েল সরে দাঁড়াল তার আগে কুকুরটিকে ধমকে দিল লিও চুপ।
কুকুরটি ভাবে ওকে এ বাড়ির দারোয়ান রাখা হয়েছে, দেখতে ছোট হলে কি হবে। লোকটি বলল।
ভেতরে ঢুকে পড়ল কে আর কে দরজা খুলে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারলে কে বেঁচে যায়। ওর এখন খুব খারাপ লাগছে। চুম্বন করল কে হঠাৎ এগিয়ে এসে তার গলা জড়িয়ে ধরে মুখে কে কিছু বলতে পারল না, কিন্তু খুব অসাদৃশ্য বোধ করল। জামাটা আমি একটু ভেতরের ঘর থেকে পালটে আসছি, তুমি একটু বোস। কে বলল।
দরজা বন্ধ করে কে ভেতরের ঘরে ঢুকে গেল কে চেয়ারে বসে একটা সিগারেট ধরাল। সমগ্র সত্ত্বার উপর তার অস্বস্তি বোধটা চেপে বসেছে। অমার্জনীয় অপরাধ করেছে সে আজ সন্ধ্যায়, একি করে বসল সে ক্ষণিকের উত্তেজনা বশে?
কি বিশ্বাসঘাতকতা করল সে স্ত্রীর প্রতি। জীবনে সে আর অ্যানের দিকে মুখ তুলে তাকাতে পারবে না। অ্যান যদি একথা জানতে পারে। রাত পৌনে একটা বাজে, সে হাতঘড়ি দেখল। আগেই বাড়ি ফিরে যাবে কিনা সে ভাবল। কে ফিরে আসার আগে। এ প্রান্ত থেকে আকাশের ও প্রান্ত চিরে ফালাফালা করে দিল কেউ, কেনের মনে হল হঠাৎ যখন বিদ্যুৎ চমকাল।
ঘরের জানলার বন্ধ কাঁচগুলো থর থর করে কেঁপে উঠল পর মুহূর্তেই কান-ফাটানো বাজ পড়ার শব্দে। এবার সে কে-কে বলে বিদায় নেবে। শুরু হয়েছে বৃষ্টি, কেন্ উঠে দাঁড়াল আর অপেক্ষা না করে। কোন সাড়া পেল না সে ভেতর থেকে। যদিও সে শোবার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে কে-কে ডাকল। সাড়া দিলনা কেউ ভেতর থেকে। কে, আমি বাড়ি যাচ্ছি, আবার ডাকল সে, কেন্ দরজায় টোকা দিল মিনিট খানেক অপেক্ষা করে। সাড়া মিলল না ভিতর থেকে। এ ঘরের আলোটা হঠাৎ নিভে গেল। পুড়ে গেছে হয়তো ফিউজ। তার ডাকে কেউ সাড়া দিল না, আবার কে ডাকল কে? ভয় পেতে লাগল কে ভীষণ। দরজা মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে কেউ ফাঁক করল সামান্য শব্দ সে শুনতে পেয়েছে, এ ঘরে কেউ পা টিপে টিপে ঢুকেছে এইমাত্র শোবার ঘরের দরজা খুলে। তার একথা মনে হল।
কেউ যেন দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে কেন্ স্পষ্ট শুনতে পেল, এ ঘরের দরজা খোলার শব্দ হল তার আগেই,কে পকেট থেকে লাইটার বের করে জ্বালল। তার গায়ের লোম উত্তেজনায়-ভয়ে খাড়া হয়ে উঠল।
সে শোবার ঘরে ঢুকল লাইটার জ্বালিয়ে। দুহাত মাথার ওপর রেখে কে সামনে খাটের বিছানার উপর শুয়ে আছে। রক্তের ঢাল গড়িয়ে পড়ছে মেঝের উপর। কের বুকের বাঁদিকে এক তাজা গভীর ক্ষত, কেন্ কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখতে পেল। বিছানা, জামা সব তার রক্তে ভিজে গেছে। এক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে রইল কের দিকে, নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে তার পা দুটো যেন অসাড় হয়ে গেছে।
হঠাৎ একটা ছোট টর্চ লাইট দেখতে পেল খাটের পাশে টেবিলের ওপর, যখন বিদ্যুৎ বেশ জোরে চমকালো, কে হল্যান্ড তার পূর্বে অন্ধকার ঘরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। টর্চটা হাত বাড়িয়ে তুলে নিলো কে, ক্ষতস্থান ভালো করে পরীক্ষাকরল,সুইচ টিপে আলো জ্বালার পর।
কেন্ তার নাম ধরে ডাকতেই কের দুচোখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠল। তখনও তার সামান্য জ্ঞান ছিল। তারপর মাথাটা ঢলে পড়ল, শিথিল হয়ে গেল তার সারা শরীরের পেশী, হাতের বন্ধ মুঠো খুলে গেল, দুচোখ উল্টে গেল।
কাঁচা রক্ত মাখানো ফলায় এমন একটি বরফ কাটা গাঁইতি কার্পেটের ওপর পড়ে থাকতে দেখল কে যখন সে মেঝেতে টর্চের আলো ফেলল। কে এ বিষয়ে নিঃসন্দেহ হল যে কেকে হত্যা করা হয়েছে ঐ অস্ত্র দ্বারা।
কি করা উচিৎ এখন আমার? পুলিসের কাছে গিয়ে সব বলব, নিজের মনেই কে বলে উঠল। পুলিস এই অভিযোগেই তাকে গ্রেপ্তার করবে কেকে সেই খুন করেছে, পুলিস তার কোন কথাই বিশ্বাস করবে না। কেন জানি না একথা পরক্ষণেই তার মনে হল। প্রধান সাক্ষী হিসাবে তাকে খুনের মামলায় জড়াবে, পুলিস তাকে ছাড়বে না যদিও আসল অপরাধী ধরা পড়ে, আর যদি সে পুলিসের সন্দেহের বাইরে ও থাকে। একথা কে মনে হল।
প্রত্যেকেই ব্যাপারটা জানবে, ব্যাংকের কতৃপক্ষ এবং আন। কেরে বুকের ভেতরটা শুকিয়ে গেল কথাটা মনে হতেই। খবরের কাগজের প্রথম পাতার শিরোনাম হয়ে উঠবে কে, যদি তেমন কিছু ঘটে। কেন্, পতিতা খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়ল, কারণ সে লুকিয়ে তার কাছে যেত, স্ত্রী বাপের বাড়ি গেলেই, একথা সবাই বলাবলি করবে। কে যেন তার ভিতর থেকে নির্দেশ দিল পালিয়ে যেতে।
তুমি এখন নিজের কথা ভাব, মৃতার জন্য এখন আর তোমার করার কিছু নেই, যেহেতু কে মারা গেছে। পালাও এখান থেকে যত শীঘ্র সম্ভব।
কেনের বুকটা কেঁপে উঠল তখনই মনে পড়ল, যে তার এখানে উপস্থিতির কোন প্রমাণ আছে কিনা? না, এখানে প্রমাণ রেখে কিছুতেই তার যাওয়া চলবে না, বোকার মত যদিও পুলিসের ভয় আছে। রান্নাঘর থেকে প্রথমে ফিউজ বঙ্গটা বের করল টর্চের আলো ফেলে। আলো জ্বলে উঠল পুলিসের হাতে তার নাম লেখা টুপিটা পড়লেই সর্বনাশ হত, তাই বসার ঘর থেকে কে টুপিটা নিয়ে এল।
কেন্ রুমাল বের করে ফিউজ বক্সটা ভাল করে মুছে ফেলল। চারটে পোড়া সিগারেটের টুকরো বসার ঘরে অ্যাসট্রে থেকে বের করে পকেটে পুরে ফেলল। চারটে সিগারেট সে ধ্বংস করেছে সন্ধ্যে থেকে এখন পর্যন্ত। এখানে সে দুবার এসেছে।
কে টেলিফোনের রিসিভারটা পকেট থেকে রুমাল বার করে ভাল করে মুছে ফেলল। এবার সে নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি যেতে পারে। কোথাও আর তার আঙুলের ছাপ পাওয়া যাবে না। উত্তেজনায় আর ভয়ে তার বুক কাঁপছে, সে শোবার ঘরে চলে এল পা টিপে টিপে।
আলোয় ভরে গেল দেয়ালের সুইচবোর্ড যখন সে টর্চ নিয়ে ঘরে ঢুকল। সারা ঘর আলোময় হয়ে গেল কে টর্চের সুইচ টিপতেই। টর্চটা নিভিয়ে ভাল করে সম্পূর্ণ টর্চটা মুছে ফেলল রুমাল দিয়ে অতি সাবধানে। তার পূর্বে আবার একবার তাকাল নিশ্চল দেহটার দিকে। একটু পরেই সে দেখতে পেল কার্পেটে পড়ে থাকা ক্ষুদ্র অস্ত্রটি যখন সে খাটের পাশে টেবিলের উপর টর্চটাকে পূর্বের মতই রাখতে গেল। তার মনে আর কোন কিন্তু নেই যে নীলহাতল লাগানো ঐ বরফ কাটা গাঁইতি দিয়েই কের মৃত্যু টানো হয়েছে। সে নিজের মনেই চিন্তা করল, ওটা কি সঙ্গে নিয়েই খুনী এঘরে ঢুকেছি? না, তা নয়, পরক্ষণেই তার মন যেন বলে উঠল। ওটা নিয়ে খুনী কাজ শেষ হবার পরই চলে যেত, যদি সে ওটা হাতে নিয়ে আসত। খুনী কোন পথ দিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকল, এটাই এখন বেশী গবেষণার বিষয়।
জানালা বেয়ে খুনী নিশ্চয়ই ওঠেনি। কোন এক ফাঁকে সে সামনের দজা খুলে ভেতরে ঢুকে বসেছিল। নিশ্চয়ই বাড়তি চাবি ছিল তার নিজের কাছে।
কি লাভ তার এসব ভেবে কেন্ ভাবল। এবার বাড়ি ফেরা যাক্। প্রায় দুটো বাজে, কেন্ ঘড়ির দিকে তাকাল। আর দেরী করে কি লাভ, বৃষ্টি আর হচ্ছে না ঝড়ও থেমে গেছে এইকথা ভেবে কেন্ সেই দরজার দিকে এগোতে গেল। এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠল। রিসিভার তুলে, কানে ঠেকাল, কিছু বলল না। তোলার আগে সে কিছুক্ষণ টেলিফোনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
আমি স্যাম বলছি, ওপাশ থেকে পুরুষালি গলায় সে সম্বোধন জানাল, হ্যালো কে!
এ সেই স্যাম ভার্সি, কিছুক্ষণ পূর্বেই-যাকে কেন্ রুবরাজে দেখে এসেছে। এটা কে বুঝতে পারল স্যাম যাতে তার নিঃশ্বাসের শব্দটুকুও না পায় এজন্য প্রাণপণে সে শ্বাস চেপে রইল। তুমি কথার জবাব দিচ্ছ না কেন? স্যাম অধৈর্য গলায় জানতে চাইল। রিসিভারটা কে কাঁপা হাতে নামিয়ে রাখল, তারপর।
দ্বিতীয়বার যাতে চেষ্টা করলেও ফোন না বাজে এজন্য চেয়ারের ওপর পড়ে থাকা খবরের কাগজের একটা কোনা ছিঁড়ে রিসিভার এবং ঘন্টার মাঝখানে চেপে বসিয়ে দিল। কে একবার ভালো করে চারিদিক দেখে নিল, তারপর দরজা খুলে নিশ্চিন্ত মনে বেরিয়ে গেল, সে নিঃসন্দেহ যে তার উপস্থিতির কোন প্রমাণ এখানে নেই।
নীচের তলায় সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসতেই বুকটা তার কেঁপে উঠল। কেনের গতিরোধ করে দাঁড়াল পিকনিজ কুকুরটা যখনই তাঁর চোখে চোখ পড়ল এক সেকেন্ডের মধ্যে, কারণ ভেতরে আলো জ্বলছে, ঘরের দরজা খোলা ছিল র্যাফায়েল সুইটির। তারপর কুকুরটার চোখে চোখ পড়তেই বাইরে বেরিয়ে এল। র্যাফায়েল সুইটি নিজেই বেরিয়ে এল ভেতর থেকে ঐখানে দাঁড়িয়ে পড়েছিল কেন্, কেরে দিকে একপলক তাকাল র্যাফায়েল, তারপর নীচু স্বরে বলল, কুকুর বাছারা সবাই ঘরে শুতে গেছে, লিও ঘরে যাও।
এটাকে নিয়ে আর পেরে উঠছি না মশায়, র্যাফায়েল কেকে পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হেসে বলল। আরও বলল, আমার অবস্থা কাহিল কুকুর সামলাতে গিয়ে প্রায় দুটো বাজে রাত অনেক হল, বৃষ্টিটা ধরে গেছে, খুব দেরী না হলে একবার ভিতরে আসুন না একটু ড্রিংক করে যাবেন, র্যাফায়েল, কেকে অনুরোধ জানাল।বুঝতেই পারছেন একা একা সময় কাটে না।
কুকুরটাকে এখনও বিছানায় শোয়াতে পারছি না, কি ঝামেলার ব্যাপার। কুকুরটাকে উবু হয়ে কোলে তুলে নিল সুইটি একথা বলতে বলতে।
শুকনো ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে, কোমর চেপে ধরে কে উত্তর দিলনা, ধন্যবাদ, সিঁড়ি দিয়ে সে দ্রুতপায়ে নামতে লাগল তারপর।
সুইটি রেংলিয়ে ভর দিয়ে ঝুঁকে বলল, একটা লালচে-বাদামী বিশ্রী দাগ আপনার কোটে লেগে আছে মশাই কি লক্ষ্য করেছেন? ভেতরে আসুন দুমিনিটে আমি দাগ পরিষ্কার করে দেব, আমার কাছে জামার দাগ তোলার জিনিস আছে। কে উদ্ধশ্বাসেনামতে লাগল, সুইটিয়ের কথায় কান না দিয়ে। সামনে একটা হল ঘর একতলায় তার ওপাশে সদর দরজা। একটা মেয়ের সঙ্গে ধাক্কা খেল সে হলঘরে ঢুকতেই, মেয়েটি উল্টোদিক থেকে আসছিল। কে পেছনে সরে গেল, চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। মাথার কাত হয়ে যাওয়া টুপিটা ঠিক জায়গায় বসিয়ে মেয়েটা বলল, চোখ খুলে চলতে পারেন না। এগিয়ে যেতে হবে ধাক্কা মেরে। সুইচ জ্বালাল মেয়েটি কথা শেষ করেই। আলোয় ভরে গেল সারা হলঘরটি।
এই বাড়ির বাসিন্দা মেয়েটি এবং কের মতই একজন গণিকা। কেন্ একনজরেই বুঝতে পারল। কালো পোশাক পরা, চোখ দুটি গ্রানাইট পাথরের মত কঠোর দেখতে ফর্সা, গোলগাল।
কেনকে আহ্বান জানাল মেয়েটি, পেশাদারী হাসি ছড়িয়ে, এখনই বাড়ি ফেরার তাড়া কিসের, এখন এ রাতের শৈশবকাল, ব্যাপারটা কি?
মেয়েটা তার পথ আগলে দাঁড়াল কে পাশ কাটিয়ে যাবার উদ্যোগ করতেই এবং বলল, আমি তোমায় ইচ্ছে করে ধাক্কা দিইনি, মাপ কর। এত লজ্জা কেন, আরে এসোইনা মেয়েটা আর একবার বলল। ভাল মদ খাওয়াব, তোমায় ভাল করে আরাম দেব, চল! কেন্ মরীয়া হয়ে সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেল মেয়েটাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে, জোরে বলল পথ ছাড়!
মেয়েটা চেঁচিয়ে উঠল, খবরদার আমার গায়ে হাত দেবে না বলছি। মেয়েটা পেছন থেকে তাকে গালাগালি করতে লাগল সে শুনতে পেল কে এগিয়ে চলল প্রতিবাদ না করেই।
.
০৩.
ঠাণ্ডা বাতাস বইছিল, বৃষ্টিও পড়ছিলো অল্প অল্প কে রাস্তায় বেরিয়ে দেখল, মেঘের আড়ালে চাঁদ উঁকি দিচ্ছে যে ঘনকালো মেঘে আকাশ ঢেকেছিল সেগুলো ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।
আমায় ঐ বাড়ি থেকে পরপর দুজন বেরোতে দেখেছে, তারা নিশ্চয়ই পুলিসের কাছে আমার চেহারার বিবরণ দেবে, তারপর সবকটা খবরের কাগজে সেই বর্ণনার কথা সবিস্তারে ছাপা হবে। কে নিজের মনে মনে বলতে লাগল, কি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লাম। মোটিভ না থাকলে পুলিস আমায় খুঁজে বার করবে কি করে। আমার তো কোন মোটিভ নেই। এই চিন্তা পরমুহূর্তেই তার মাথায় এল, আর পুলিসই বা আমায় খুনের সঙ্গে জড়াতে যাবে কেন? ও ছিল একটা গণিকা, কে তো আর সম্ভ্রান্ত মহিলা নয়, পুলিস অত্যন্ত সংকটে পড়বে, গণিকা খুনের রহস্য ভেদ করতে।
আবার ভাবল, যদি সেই মেয়েটা যার সঙ্গে ধাক্কা লেগেছিল একতলার হলঘর অথবা সুইটি যদি কোন কারণে ব্যাঙ্কে আসে তখন কি হবে? এ বিষয়ে তার মনে সংশয় জাগল।
আর হাত-পা অসাড় হয়ে এল কথাটা মনে হতেই।
তখনও কি ওরা আমায় চিনতে পারবে কেন ভাবল।
কেন্ নিজের মনকে সান্ত্বনা দিল, ব্যাঙ্কে ওরা হানা দেবে বলে মনে হয়না। সর্বদা অবশ্য চারিদিকে নজর রাখতে হবে, আমায় সতর্ক থাকতে হবে। আমি কাউন্টার ছেড়ে কেটে পড়ব আমায় দেখতে পাবার আগেই, যদি ওরা কখনও ব্যাঙ্কে আসে।
কদিন সে চোখ কান খোলা রেখে চলতে পারবে। কমাস, কবছর! সে নিজেকে প্রশ্ন করল, যতদিন চাকরী করব ততদিন কি এই আতঙ্কে থাকতে হবে? আমায় ভয়ে ভয়ে এই দুঃস্বপ্ন নিয়ে কাটাতে হবে? কে আতঙ্কিত হয়ে উঠল কথাটা ভেবে।
পথে-ঘাটে যে কোন জায়গায় তাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে তখন, শুধু তো ব্যাঙ্কেই নয়। আমি একমুহূর্তই দিবারাত্রি শান্তিতে থাকতে পারবনা। বিভীষিকাগ্রস্ত হয়েই কি আমার দিন কাটবে? থানা, পুলিস, আদালত র্যাফায়েল সুইটি সেই মেয়েটা সব সময় আমায় আতঙ্কে রাখবে? তাহলে একটাই উপায় আছে অন্য কোন শহরে ব্যাঙ্কের একটা শাখায় বদলী নিয়ে চলে যাওয়া। বিক্রী করে দিতে হবে হয়ত এখন বাড়িটা। অন্য কোন চাকরি খুঁজতে হবে ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে, বর্তমানে অন্য কোন উপায় চিন্তা করতে পারছি না এছাড়া।
অ্যানও নিশ্চয়ই এরকম একটা ব্যাপার জেনে যাবেই। অ্যানের চোখে সবকিছুই ধরা পড়ে, কে অনেক কিছু ব্যাপার এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি অ্যানের কাছে বিয়ের পর থেকে এখনও পর্যন্ত কিছুই গোপন রাখতে পারেনি। একবার নিজেরই ভুলের ফলে ক্যাশে চল্লিশ হাজার ডলার কম পড়েছিল। নিজের পকেট থেকে সে গচ্চা দিয়েছিল, কিন্তু ব্যাপারটা অ্যান, পরে কিভাবে জেনে গিয়েছিল। নিজের মনে বলে উঠল কেইস আমি কি বোকা? কপালে কড়াঘাত করল। মেয়েটার কাছে কেন যে গিয়েছিলাম, এই বলে কে আফশোষ করল। কেনই বা ফেরার পথে আবার ওর ফ্ল্যাটে ঢুকলাম। বিদায় জানাতে পারতাম তো রাস্তা থেকেই।
সব কথা কি পুলিসের কাছে গিয়ে খুলে বলব, এখন আমি কি করব?
ভেতর থেকে কে যেন তাকে বলল পরমুহূর্তেই, সে একটা কাণ্ডজ্ঞানহীন গর্দভ। ঝামেলা বাড়বে বই কমবে না যদি সে পুলিসের কাছে গিয়ে সব খুলে বলে। এখন অ্যানের কথা মনে রেখে নিজেকে শক্ত রাখা উচিৎ। সে তাহলে সন্দেহের বাইরে থাকবে। সব ঝামেলা মিটে যাবে, তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাওয়া উচিৎ।
সে কথা মনে পড়তেই তার বুকটা আবার কেঁপে উঠল, কের আস্তানায় আসার সময় গাড়ি পার্ক করবার জায়গায় তার গাড়িটা পার্ক করেছিল। একজন আধবয়সী লোক যে সব গাড়ি পার্কিং করা থাকে তার নম্বর নোট করে রাখে। সে সামনেই একটা ছোট গুমটির ভেতর বসে আছে। সে তার খাতায় নম্বর টুকে নিয়েছে যখন কে গাড়ি পার্ক করেছে। এটাই তার বিরুদ্ধে একটা বড় প্রমাণ হতে পারে, কেনের মনে হল।
অনেক রাত হয়ে গেল এবার বাড়ি যাবেন তো?
সেই আধবুড়ো লোকটি বলে উঠল কেন্ যখন গুমটি ভেতর ঢুকল। কেন্ উত্তর দিল, হ্যাঁ, এবং সামনের টেবিলের ওপর খাতার পাতায় তার গাড়ির নম্বর লেখা আছে, আঁড়চোখে দেখল। কে চটজলদি খাতাটা তুলে নিয়ে হিপ পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল, যে মুহূর্ত লোকটা চেয়ার ছেড়ে উঠে জানলা দিয়ে উঁকি মেরে আকাশ দেখতে লাগল।
লোকটা টেবিল হাতড়াতে হাতড়াতে বলল, আপনার গাড়ির নম্বর বলুন, টিক্ মেরে দিই। আবার বলল আরে খাতাটা যে ওখানে ছিল কোথায় গেল?
কেন্ ধীর পায়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল, কোন মন্তব্য না করে। দরকারের সময় হাতের কাছে একটা জিনিসও পাই না। আপনার নম্বরটা বলুন স্যার, আঁড়চোখে কেন্ দেখল টি এক্স এল ৩৩৪৫ একটা প্যাকার্ড গাড়ি সামনেই পার্ক করা রয়েছে। সে নির্দ্বিধায় বলল আমার নম্বর টি এক্স এল ৩৩৪৫ লোকটা খবরের কাগজের এককোণে নম্বরটা লিখে রেখে বলল এখানেই লিখে রাখি পরে খাতায় তুলে নেবো।
নিজের গাড়ির কাছে নিশ্চিন্ত মনে পৌঁছে গেল কেন, গুমটি থেকে বেরোবার পূর্বে আধডলার পার্কিং ফি দিল লোকটাকে, কাঁপা হাতে দরজা খুলে সীটে বসল চোখের নিমেষে বড় রাস্তায় এসে পড়ল গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে ফুল স্পীড তুলল।
কেনের প্রথমেই মনে পড়ল তার স্যুটের কথা, পরদিন যখন সকালে সে ঘুম থেকে উঠল। র্যাফায়েল সুটিরও নজর এড়ায়নি যে তাতে রক্তের দাগ লেগেছে। পুলিসের রসায়নবিদরা ঠিক জানতে পারবে যে রক্তের দাগ কের দেহরই, যতই জল দিয়ে প্যান্ট বোওয়া হোক না। কে গোয়েন্দা উপন্যাস পড়ে এসব জানে। নিজের জুতোজোড়া কেন্ উল্টে-পাল্টে দেখল। চায়ের জল হিটারে চাপাবার পর। রক্ত জমে আছে দেখল বাঁ পায়ের জুতোর চামড়ার নীচে। ঐ দাগটা লেগেছে যে রক্ত ঢাল কের মৃতদেহ থেকে কার্পেটের উপর গড়িয়ে এসেছিল, কেন্ নিশ্চয়ই কোনসময় তার ওপর পা রেখেছিল। এবাড়ি থেকে জুতোজোড়া ও স্যুট যে কোন ভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে। সবার অজান্তে চুপিসাড়ে ও দুটো রেখে আসবে। স্যুট আর জুতোজোড়া যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে সে কিনেছিল। নিজের পরিত্যক্ত দাগ লাগা সুটটা সে রেখে দেবে হ্যাঙ্গারে ঝোলানো অসংখ্য স্যুটের মধ্যে। আলাদা প্যাকেট করে ওদুটো সে নিয়ে যাবে। সে রেখে আসবে জুতোও ঐ ভাবে। কিন্তু রেখে আসার পর?
কিন্তু অ্যান ফিরে এসে তার স্যুট না দেখতে পেয়ে নিশ্চয়ই সন্দেহ করবে। আরেকটা স্যুট কিনতে হবে ঠিক ঐরকম দেখতে, অ্যানের সন্দেহ মোচন করার জন্য। একই দোকান থেকে অবিকল আগের মত একজোড়া জুতোও তাকে কিনতে হবে।
কেনের কোন রকম অসুবিধা হল না পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে।
আপনার সঙ্গে দুটো প্যাকেট ছিল না? সেলসম্যান ছেলেটি নতুন স্যুট কিনে দোকান থেকে বেরোবার সময় প্রশ্ন করল। যেন খুবই অবাক হয়েছে এমনভাবে করে কে বলল, কই না তো! আমার হাতে কোন প্যাকেট ছিল না, আমার মনেহয় আপনি ভুল দেখেছেন।
.
০৪.
পরদিন পার্কারের সঙ্গে দেখা হতেই সে প্রশ্ন করল, কেমন ফুর্তি করলে কেন্ কাল রাতে তাই বল। কে উত্তর দিল তোমার মত আমার স্বভাব ওরকম বদ নয়। খেয়ে-দেয়ে সকাল সকাল শুয়ে পড়েছি কাল রাত্রে, বাগানের আগাছা সাফ করেছি সন্ধ্যের পর কিছুক্ষণ পর্যন্ত।
আরে বাবা বলেই ফেলোনা, পার্কার বলল, ওসব গুল-তাপ্পি দিয়ে কোন লাভ হবে না। আমি কাউকেই বলব না, ভয় পেয়ো না। বল ওকে তোমার কেমন লাগল? গলার আওয়াজ স্বাভাবিক রেখেই কে বলল, গতকাল আমি কোথাও যাইনি, তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়েছি। আমি তো তোমায় আগেই বলেছি পার, এখন বিশ্বাস কর আর নাই কর। অবশ্য বলার সময় কেনের বুকে জোরে শব্দ হচ্ছিল। তোমার কথাই মানতে হচ্ছে, পার্কার বিরস মুখে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। একটু রসিকতা করছিলাম তোমার সঙ্গে, এজন্য কিছু মনে কোরো না। দেখি, এখন একবার কে-কে ফোন করি। ও কি করছে এখন জানতে ইচ্ছে করছে। আজ কি খুব তাড়া আছে ওর কাছে যাবার, এত সকাল সকাল? এখনই। একটা হিমস্রোত কেনের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল। কাউন্টার ছেড়ে ফোনের বুথের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে পার্কার বলল, দেখা যাক একবার ফোন করে। কোন বাইরের পার্টিকে ঘরের ভেতর এনে বসিয়েছে মনে হয়। ও নিশ্চয়ই রাগ করবে না এখন ফোন করলে, কারণ এখন লাঞ্চ টাইম। নিজের কাউন্টারে বাইরে বসে কে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। পার্কার যেন কথা বলতে বলতে হঠাৎ চমকে উঠল কে তা লক্ষ্য করল। পার্কার প্রায় ছিটকে বেরিয়ে এল। বুথের ভেতর থেকে রিসিভার রেখে দিয়ে।
পুলিস কের আস্তানা ঘিরে ফেলেছে। সর্বনাশ হয়েছে পার্কার রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছে কেকে বলল। কেন্ কাঁপা গলায় প্রশ্ন করল, পুলিশ! তার মানেটা কি? কি করছে ওখানে পুলিস?
পার্কার উত্তর দিল, হয়তো রেইড করেছে। ওর ওখানে বিকালে গেলে হয়তো ঝামেলায়। পড়তাম, খুব জোর বেঁচে গেছি। মেঝেতে কেনের কলমটা ছিটকে পড়ে গেল ভয়ে। আর উত্তেজনায় সেটা সে কুড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করল তুমি কি করে জানলে যে ওরা পুলিস।
সিটি পুলিসের লেফটেন্যান্ট অ্যাডামস ফোনটা ধরেছিল তার কথাতেই জানতে পারলাম, ব্যাটা আবার জানতে চাইছিল আমি কে? কোথায় থাকি এইসব।
কেন্ জানতে চাইল, তুমি কি ওকে তোমার নাম ঠিকানা এসব দিয়েছ নাকি? ওসব বলে আমি ঝামেলায় পড়ি আর কি? পাকার উত্তর দিল, তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি? ওরা এখানে হানা দেবেনাকি আমার গলা শুনে।তুমি কি মতামত দিচ্ছ?হাজার চেষ্টা করলেও তার থেকে এখন আর পরিত্রাণ নেই জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললেও কে বুঝতে পারল। তবুও পার্কারকে বলল, এখানে ওরা ধাওয়া করতে আসবে কেন? ফোনটা কোথা থেকে এসেছিল পুলিস নিশ্চয়ই টেলিফোন বুথে ফোন করে জানবে। তারপর এখানে এসে হাজির হবে যখন সুইটির কাছে তার চেহারার বিবরণ পাবে। পুলিস নিশ্চয়ই ওখানে গেছে, হয়তো কেউ কের উপর হামলা করেছে অথবা নিশ্চয়ই ডাকাতি হয়েছে, নয়তো বা কেউ ওকে খুন করেছে। পার্কার নিজের চেয়ারে বসতে বসতে মন্তব্য করল। দুজনে চুপচাপ কাজ করে আরো কিছুক্ষণ কাটিয়ে দিল। মন বসাতে পারছে না তাঁরা কাজে কোনমতেই। পরিণতি কি হতে পারে একথা ভেবে কেনের শরীর ঘামে ভিজে উঠল, কারণ ভীষণ ঝামেলার মধ্যে সে বন্দী হয়ে পড়েছে বলেই মনে হয়।
হঠাৎ পার্কার তাকে নীচুস্বরে ডাকল। শুনছ কেন্? দেখ লম্বা-চওড়া নোকটাকে দেখে পুলিসের লোক বলে মনে হচ্ছে, দরজার দিকে তাকাও, পার্কার বলল। দরজার কাছে বসে থাকা ম্যাসেঞ্চারের সঙ্গে সত্যিই দশাশই চেহারার একটি লোক কিছু কথা বলছে। কেন্ পার্কারের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখতে পেল। যে কেউ তাকে পুলিসের লোক বলে ভাববে তাঁর মাংসল মুখ তাঁর ছোট ছোট কুতকুতে চোখজোড়া দেখলে, যদিও লোকটার পরিধানে ইউনিফর্ম নেই।
পার্কারের গলা এবারে কেঁপে উঠল, আচ্ছা ফোন করার সময় আমায় কেউ দেখেনি তো? লোকের সময় কোথায় বল? যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত, আর বুথ এ দরজার বাইরে, কে কখন ফোন করল কে জানবে বল, দেখবেই বা কি করে কে উত্তর দিল। দ্যাখো ব্যাটা এদিকেই আসছে! বৌকে ফোন করছিলাম বলে দেব চটপট যদি আমায় জিজ্ঞেস করে। আস্তে আস্তে তাদের কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়াল সেই পুরুষালী চেহারার লোকটি। আমি সার্জেন্ট ডোনোভান,সিটি পুলিসের তরফ থেকে আসছি, প্রথমে পার্কার, তারপর কে আবার পার্কারের দিকে তাকিয়ে কথাটি সে বলল।
এখান থেকে আধঘণ্টা আগে কি কেউ একটা ফোন করেছিল, অথবা যে করেছিল তাকে কি কেউ আপনারা দেখেছেন? সার্জেন্ট জানতে চাইল। না আমি কাউকে দেখিনি স্বাভাবিক গলায় বলল কেন্। আমি কি সেই ফোনের কথা বলছেন, যেটা আমি আধঘন্টা আগে আমার স্ত্রীকে করেছি, পাকার হঠাৎ উপযাচক হয়ে বলল। পার্কারের দিকে কটমট করে তাকিয়ে ডোনোভান বলল আপনার স্ত্রীকে ফোন করার কথা আমি জানতে চাইছি না। আমি বলছি আর কাউকে বুথে ঢুকতে দেখেছেন কিনা? অর্থাৎ অন্য কেউ। কিছুক্ষণ আগে একজন বয়স্ক লোক একটি মেয়েকে নিয়ে বুথে ঢুকেছিলেন বটে। পার্কার যেন নিবিষ্ট চিন্তা করে সার্জেন্টকে বলল, তখন আমরা খুব ব্যস্ত ছিলাম, সে প্রায় একঘন্টা আগের কথা। আর কেউ তারপর ঢুকেছে কিনা বলতে পারি না।
একটা মনগড়া গল্প পার্কার কেন যে বলল, কে জানে?
আসলে বুথে কোন লোকই ঘণ্টাখানেকের মধ্যে কোন মেয়েকে নিয়ে ঢোকেনি। আপনার স্ত্রীকে ঠিকই ফোন করার সময় পেয়েছেন বস্তেতার মধ্যেও তীক্ষ্ণ চোখে পার্কারকে দেখতে দেখতে ডোনোভান বলল।
সার্জেন্ট আপনি ঠিকই বলেছেন, তো হাসি হেসে পার্কার বলল। ডোনোভান লাইটার জ্বেলে একটা দোমড়ান সিগারেট পকেট থেকে বের করে অগ্নিসংযোগ করল। কেকে বলল তারপর, আপনি দেখেছেন কি কাউকে?
কেন্ শান্তভাবে বলল, না আমি কাউকে দেখিনি। ভেবে বলুন ভাল করে সার্জেন্ট বলল।
আমি কাউকে ঐ টেলিফোন বুথে ঢুকতে দেখিনি, ভাল করে চিন্তা করেই বলছি, কে বলল।
ডোনোভান দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে গেল হতাশভাবে হাঁটতে হাঁটতে। মন্তব্য করে গেল, কেউ কিছু জানে না, কেউ কিছু দেখেনা বিচিত্র এই শহরের মানুষ।
অল্পের জন্য এ যাত্রা বেঁচে গেলাম পার্কার পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছতে মুছতে বলল। এখন নিশ্চিন্ত হলাম। বল দেখি লোকটাকে কেমন কজা করলাম, একথা তোমায় বলতেই হবে।
তখন দু-হাঁটু, কেনের থরথর করে কাঁপছে ও বলল এখনই শেষের কথা বলা যায় না।
একটা সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা কিনে চোখের সামনে মেলে ধরতেই দেখতে পেল বড় বড় অক্ষরে প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে খবরটা, যখন সে মোড়ের মাথায় এসে বাড়িতে ঢুকছিল।
বরফ কাটা গাইতির আঘাতে প্রাক্তন নর্তকী নিহত, পতিতালয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ড
কেনের তখন এমন মানসিক অবস্থা নেই যে সমস্ত খবরটা বিশদভাবে পড়ে।
তার প্রতিবেশীনি মিসেস ফিল্ডিং হঠাৎ তার সামনে এসে দাঁড়ালেন যখন সে ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে গিয়ে সবেবাড়ির গেট খুলেছে। অফিস থেকে এই ফিরলেন মিঃ হল্যান্ড? তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত জরীপ করে ভদ্রমহিলা জিজ্ঞাসা করলেন।
ক্লান্ত গলায় জবাব দিল কেন্ হ্যাঁ, বাড়ির গেট খোলার পর। বাড়িতে ফেরা হচ্ছে দেরী করে কেমন, যেহেতু বাড়ির গিন্নী এখন অনুপস্থিত।কাল রাতে তো দুটোর পরে বাড়ি ফিরেছেন। মুচকি হেসে বললেন মিসেস ফিল্ডিং। হঠাৎ চমকে উঠল কেরে বুকের ভিতরটা তার মন্তব্য শুনে। অন্য কারোর সঙ্গে হয়তো ভুল করে ফেলছেন, আপনার বোধহয় ঠিক মনে নেই কাল রাত্রে দুটোর পর না তো! আমি ঠিক এগারোটার সময় শুতে গেছি কাল রাত্রে।
আমি কাল রাত্রে দুটো পর্যন্ত জানালার পাশে বসেছিলাম, সেজন্যই বলছি, মিসেস ফিল্ডিং হঠাৎ বিরক্ত হয়ে জবাব দিলেন। আশ্চর্যভাবে প্রশ্ন করলেন তাই নাকি হল্যান্ড? উহ আমি সম্পূর্ণ ঠিক কথাই বলছি। আমি স্বচক্ষে দেখলাম আপনি গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে ঢুকলেন।
মাপ করবেন, আমার এখন দাঁড়িয়ে কথা বলার শক্তি নেই। আমি ভীষণ ক্লান্ত, আপনি অন্য কাউকে হয়তো দেখেছেন, আমি আবার একই কথা বলছি, আমার সময় কম, আজকে আবার চিঠি লিখতে হবে অ্যানকে কেনকে বললেন মিসেস ফিল্ডিং তাঁর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, নিশ্চয়ই মিঃ হল্যান্ড। অ্যানকে আমার ভালবাসা জানাবেন।
শ্রান্ত হয়ে সশব্দে কেন্ একটা চেয়ারে বসে পড়ল ভেতরে ঢোকার পর। তার হৃৎপিণ্ড তখনও কাঁপছে। কেন অগাধ জলে পড়বে এবং এখনই ষোলকলা পূর্ণ হবে যদি পুলিস খুঁজতে খুঁজতে তার বাড়ি পর্যন্ত চলে আসে এবং মিসেস ফিল্ডিংকে যদি জিজ্ঞাসাবাদ করে। কেন্ হুইস্কি ঢালল আলমারী থেকে বোতল বার করে। তারপর ধীরে ধীরে গ্লাসে চুমুক দিতে লাগল শোবার ঘরের বিছানায় বসে। এবং নিজের কথা ভাবতে লাগল।
সে স্পষ্ট টের পাচ্ছে চারপাশ থেকে একটা অদৃশ্য জাল গুটিয়ে আসছে এবং তার মধ্যে সে জড়িয়ে যাচ্ছে। মনোযোগ দিয়ে আবার সে সান্ধ্য দৈনিকটার পাতা খুলে পড়তে লাগল। আজ খুব ভোরবেলায় তার নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্টে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় একদা রোজ নাইট ক্লাবের সাড়া জাগানো নর্তকী কে কার্সনকে। কের মৃতদেহটি সবার আগে দেখতে পায় তার পরিচারিকা যখন সে অ্যাপার্টমেন্টে আসে। একটি গভীর ক্ষতচিহ্ন মৃতদেহের বুকে ঠিক হৃৎপিণ্ডের ওপর পুলিস দেখতে পায়। রক্তের দাগ লাগা একটি বরফ কাটা গাঁইতি কাছেই পড়েছিল। মিসেস কার্সনের মৃত্যু ঘটানো হয়েছে ঐ গাঁইতি দিয়ে, এটাই পুলিসের ধারণা।
সার্জেন্ট জ্যাক ডোনোভানকে এই খুনের তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে পুলিসের পক্ষ থেকে। পুলিস কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত পেয়েছে তার বিবৃতি অনুযায়ী।
মিস কার্সন খুন হবার আগে মাঝরাতের কিছু পরে একটি লোকের সঙ্গে বাড়ি ফিরে আসেন, পুলিস এ সংবাদ জানতে পেরেছে আশেপাশের লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দীর্ঘকায় বলিষ্ঠ চেহারার একটি লোক পরণে ছিল ধূসর রঙের স্যুট। উক্ত লোকটিকে অনেকে মিস কার্সনের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেও দেখেছে রাত দুটো নাগাদ। এই অজ্ঞাত পরিচয় লোকটির খোঁজ করছে পুলিস।
কেনের দুহাত তখন ঠকঠক করে কাঁপছে সে আর পড়তে পারল না। দুহাতে মুখ ঢেকে বসে রইল কাগজটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে। রক্তের দাগ লাগা সুটটা যে দোকানে রেখে এসেছি এ পর্যন্ত ঠিকই করেছি, কিন্তু আমি একটা রাম বোকা। কোন ভরসায় আবার ঐ রকমই একটা স্যুট কিনতে গেলাম!নতুন কেনা সুটটা পরে বেরোলেই পুলিস সন্দেহ করবে। আবার পুরনো স্যুটটা না দেখতে পেলে অ্যান কিছু একটু ভাববেই, কেনের অবস্থা এখন ঠিক শাঁখের করাতের মতই। মনে হচ্ছে পুলিস পেছনে ধাওয়া করবেই, আমি এখন কি করব?
এখান থেকে কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে যার? কে নিজেকেই প্রশ্ন করল। গাধা কোথাকার, কোথায় তুমি পালাবে। একথা কে যেন তার মনের ভেতর থেকে বলে উঠল। ধৈৰ্য্য ধরে অপেক্ষা করা ছাড়া এখন কোন উপায় নেই, নার্ভ শক্ত রাখতে হবে। ঝামেলা হয়তো এতেই কেটে যাবে। অ্যানের মুখের দিকে তাকিয়েও তোমায় এটুকু করতে হবে, তার ওপর নিজের চিন্তাতো আছেই। বাইরের ঘরে এসে বসল কেন্ স্যুট আর জুতোজোড়া ওয়ার্ডরোবো রেখে, তুর পূর্বে গ্লাসে সে শেষ চুমুক দিয়ে উঠে দাঁড়াল। মনে তো হচ্ছে না দুদিনের মধ্যে এই ঝামেলা মিটবে। কারণ আর দুদিন পর অ্যান ফিরে আসবে। হয়তো অ্যান আসার আগেই তাকে জেলে ঢুকতে হবে।
কেন্ জানালা দিয়ে তাকাল, বাইরে গাড়ির শব্দ কানে যেতেই। দুজন লোক গাড়ি থেকে নেমে তার বাংলোর গেটের দিকে এগিয়ে আসছে। যে গাড়িটা তার বাড়ির সামনেই থেমেছে তার ভেতর থেকে সে দেখতে পেল তাদের মধ্যে একজনকে সে চেনে, সে সিটি পুলিশের সার্জেন্ট ডোনোভান।
.
০৫.
সিটি পুলিসের হোমিসাইড ডিপামেন্টের লেফটেন্যান্ট অ্যাডামস অকুস্থলে এসে হাজির হলেন। ঠিক সাতঘণ্টা বাদে, যখন কে হল্যান্ড ২৫ নং লেসিংটন এভিনিউ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল। ফটোগ্রাফার, পুলিসের ডাক্তার আর ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্ট নিয়ে ডোনোভান বহুক্ষণ আগেই হাজির হয়েছিল। লেফটেন্যান্ট অ্যাডামস কে অপরাধী থেকে শুরু করে অন্যান্য অধস্তন কর্মচারী সকলেই ভয় পায়, যেহেতু সে কড়া ধাতের লোক, এমনকি ডোনোভানও পর্যন্ত।
অ্যাডমস এগিয়ে মৃতদেহের ডানহাতের শিরা ধরে নিজের মনেই বলে উঠলেন, অবশ্য তখনও কে কার্সনের মৃতদেহ শোবার ঘরেই পড়েছিল।
তিনি বললেন, অন্ততঃ ছ-সাত ঘণ্টা আগে এর মৃত্যু ঘটানো হয়েছে। সার্জেন্ট ডোনোভান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, লেফটেন্যান্ট ঐ বরফ কাটা গাঁইতিটা দেখুন। মেঝের ওপর একটা ছোট বরফ কাটা গাঁইতি পড়ে আছে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে অ্যাডমস দেখতে পেল। কড়া গলায় বদমেজাজী লেফটেন্যান্ট বলে উঠল, কি করব আমি ওটা দিয়ে। লাজুক হাসি হেসে ডোনোভান বলল, না। ওটা দিয়েই এ মেয়েটাকে খুন করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। দৃঢ় বিস্ময়ে কপালে চোখ তুলে অ্যাডমস বলল, বাঃ সত্যিই তোমার বুদ্ধি আছে, ওটা দিয়ে কি নখ কাটার জন্য? না খুন করবে বলে ওটা ওখানে ফেলে রেখে গেছে। বুঝেছ গর্দভ?
ধমক খেয়ে ডোনোভান চুপ করে গেল। অ্যাডমস হঠাৎ ঘরের ভেতর পায়চারি করতে করতে বলে উঠল, কি কি খোঁজ খবর দিতে পার এই মেয়েটি সম্পর্কে? মাত্র বছর খানেক হল মেয়েটি এই লাইনে এসেছে এটুকু খবর পেয়েছি। আগে নাচত রু রোজ নামে একটি রেস্তোরাঁয়। তবে পথে-ঘাটে ও কোনোদিন নোংরামি করেনি।
অ্যাডমস গম্ভীর গলায় নির্দেশ দিল দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে কাছে এসে বস। অ্যাডমসের কাছে এসে দাঁড়াল ডোনোভান দরজা ভেজিয়ে দিয়ে। এমন কিছু অ্যাডমস এখন তাকে বলবে যা তার শুনতে ভাল লাগবেনা, এটুকু সে মনে মনে চিন্তা করল। অ্যাডমস জানতে চাইল, খবরের কাগজের লোকেরা এখনো খবর পেয়েছে কিনা?
ডোনোভান উত্তর দিল, লেফটেন্যান্ট। লেফটেন্যান্ট অ্যাডমস ভালভাবেই জানে, ডোনোভান খবরের কাগজ সম্পর্কে ভীতিগ্রস্থ। একবার প্রকারান্তরে ডোনোভানকে দোষারোপ করা হয়েছিল। অতীতে স্থানীয় দুটি কাগজে পুলিসের বিরুদ্ধে সমালোচনা ছাপা হয়েছিল তাতে পুলিসের নিষ্ক্রিয়তারও উল্লেখ ছিল। অ্যাডমস বলল যদিও খবরের কাগজের লোকেরা সবই জানতে পারবে তবে বিকেলের পূর্বে নয়।
এই একটা প্রথম খুন হল এই শহরে বহুদিন পরে। আমাদের ছেড়ে দেবে না সেজন্য খবরের কাগজগুলো। মরে গিয়ে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেল নচ্ছার মেয়েটা, যতদিন বেঁচে ছিল কেউ পাত্তা দিত না। সরকারী প্রশাসনে একটা ডিনামাইট ফাটবে জেনো এই খুনটা হবার ফলে, অবশ্য তুমি জান না বা জানার দরকার নেই যে পর্দার আড়ালে এই মুহূর্তে কি ঘটবে।
এর ফলে প্রশাসনের অনেক লোক চাকরিচ্যুত হবে। ভোটাররা লিন্ডসে বার্টকে ভালবাসে। ওর পেছনেসরকারীসমর্থন আছে। ও বহুবছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গণ্যমান্যদের বিপদে ফেলার জন্য। এই কেষ্টবিদের একজন আমাদের কমিশনার সাহেব। বার্ট আবার তাকে পছন্দ করে না। অনেক পতিতালয় আছে এই লেসিংটন অ্যাভিনিউতে, কিন্তু কমিশনার সাহেব মাত্র কিছুদিন আগে খবরের কাগজে বিবৃতি দিয়েছে, আমাদের শহরের মত পরিষ্কার জায়গা আর নেই। বার্ট কিন্তু এই খুন হবার জন্য তার বিরুদ্ধে হাতিয়ার শান দেবে। তাই আগে থেকেই বলে দিচ্ছি মৃত গণিকাটিকে যা-তা ভেবো না, অ্যাডমস একটু থেমে হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বলল।
ডোনোভান তোমাকেই এই কেসটা নিতে হবে, কারণ খবরের কাগজে রোজ লেখালেখি হবে যতদিন না এর সমাধান হয়। এই কেসের ব্যর্থতা বা সফলতা সবই তোমার প্রাপ্য। অবশ্য তোমার প্রয়োজনমত সাহায্য তুমি পাবে। আমার কথা বুঝতে পারলে? ডোনোভান ঘাড় নেড়ে উত্তর দিল, ঠিক আছে লেফটেন্যান্ট। শালা কাজে লাগার পর থেকে আমাকে জ্বালাচ্ছে, মনে মনে অ্যাডমসকে গালাগালি দিল ডোনোভান। এই শহরে অনেক লোকজন আছে, তাদের মধ্যে যে কেউ ওকে মারতে পারে। সুতরাং খুনীকে ধরা এই কেসে খুব সহজ কাজ নয়, একথা তোনোভান জানে। আমার অদৃষ্ট খারাপ বলে এই দায়িত্ব আমার ঘাড়ে চাপল। যাতে আমাকে অকৃতকার্যতার জন্য বরখাস্ত করা যায়।
আমি অসহায়ভাবে একটা রাজনৈতিক ঝামেলার মধ্যে পড়ে গেলাম।