০১. আপনার নাম

আপনার নাম?

মিঠু মিত্র।

বাবার নাম?

স্বৰ্গত পিনাকী মিত্র।

আপনার কোনও পোশাকি নাম আছে?

না, আমার একটাই নাম।

বয়স?

তেত্রিশ বছর।

ঠিকানা?

এই ফ্ল্যাটই আমার ঠিকানা।

এই ফ্ল্যাট ছাড়া আপনার আর কোনও বাড়ি নেই?

আছে।

কৃষ্ণনগরে। আমার বাবা করেছিলেন। কিন্তু সেটা ভাড়াটেদের দখলে। তারা ভাড়াও দেয় না।

বাড়ির ট্যাক্স কে দেয়?

আমিই দিই।

আপনি কোথায় চাকরি করেন?

এলাহাবাদ ব্যাঙ্কে।

ব্রাঞ্চ?

রসা রোড।

কী চাকরি করেন?

অ্যাকাউন্স অফিসার।

কতদিন চাকরি করছেন?

প্রায় দশ বছর।

একই ব্রাঞ্চে?

না। তিনটে ব্রাঞ্চে ঘুরে ফিরে।

আপনার ম্যারিটাল স্ট্যাটাস?

সিঙ্গল।

কখনও বিয়ে হয়েছিল?

হয়েছিল।

কার সঙ্গে?

মিতালি ঘোষ। ডিভোর্স হয়ে গেছে।

বিয়েটা ভেঙে গেল কেন?

মিতালি আমাকে পছন্দ করত না।

কেন করতেন না?

সেটা তারই জানার কথা।

অপছন্দের কথাটা তিনি কবে প্রকাশ করেন?

বিয়ের রাতেই।

অপছন্দ হলে তিনি আপনাকে বিয়ে করলেন কেন?

আমাদের বিয়ে কিছুটা অ্যাক্সিডেন্টাল।

কীরকম?

ওর বাবা বরুণ ঘোষের লাং ক্যান্সার হয়েছে বলে একজন বড় ডাক্তার সন্দেহ প্রকাশ করেন। মিতালি তার একমাত্র সন্তান, তিনি বিপত্নীক ছিলেন। সুতরাং তিনি খুব তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। হাতের কাছে আমাকে পেয়ে আমার সঙ্গেই বিয়ে দেন।

বরুণ ঘোষের সঙ্গে আপনার বিয়ের আগে পরিচয় ছিল?

সামান্য ছিল। আমার ব্রাঞ্চে ওঁর অ্যাকাউন্ট ছিল। প্রায়ই আসতেন। আমি তখন ক্যাশে বসতাম। সেই সূত্রেই পরিচয়।

মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পক্ষে পরিচয়টা যথেষ্ট নয় কিন্তু।

সেটা আমি অস্বীকার করছি না।

বরুণ ঘোষ কি নিজেই আপনার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন?

হ্যাঁ। আপনিও সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান?

না। আমার বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। উনি ওঁর অসুখের কথা বলে আমাকে রাজি করান।

কিন্তু আমরা যতদূর জানি বরুণ ঘোষের ক্যান্সার হয়নি।

না। সেটা পরে ধরা পড়ে। কিন্তু তখন ক্যান্সার হয়েছে বলেই তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল।

দেখুন, আমরা পুলিশের লোক। সহজ সরলভাবে কোনও কথা বিশ্বাস করি না। আমাদের কাছে খবর আছে, বিয়ের ব্যাপারে আপনারই আগ্রহ ছিল বেশি। কারণ বরুণ ঘোষের টাকা এবং বিষয়সম্পত্তি। তার মেয়ে মিতালিও ছিল সুন্দরী এবং মেধাবী। আপনার যা স্ট্যাটাস তাতে বরুণ ঘোষের মতো একজন ধনী লোক তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে আপনার সঙ্গে দিতে চাইবেন এবং তার জন্য চাপাচাপি করবেন এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা?

না, স্বাভাবিক ঘটনা নয়, আমিও জানি। কিন্তু তখন সিচুয়েশনটা স্বাভাবিক ছিল না। উনি নাচার হয়েই বিয়েটা দেন।

আমি যদি বলি, আপনি ওঁর মেধাবী ও সুন্দরী মেয়েটিকে বিয়ে করে ওঁর বিরাট সম্পত্তি গাপ করার জন্য ওঁকে ব্ল্যাকমেল করেছিলেন?

ব্ল্যাকমেল। কীভাবে ব্ল্যাকমেল করব?

সেটা আস্তে আস্তে জানা যাবে। তদন্তের তো মোটে শুরু।

আগেই বলেছি বরুণবাবুর সঙ্গে আমার পরিচয় গভীর ছিল না। ব্যাঙ্কের সূত্রে পরিচয়। তাকে ব্ল্যাকমেল করার প্রশ্নই ওঠে না।

এই বিয়েতে যে মিতালির আপত্তি ছিল, তা কি আপনি বিয়ের আগে জানতে পেরেছিলেন?

না।

মিথ্যে কথা। বিয়ের আগে মিতালিই আপনাকে টেলিফোন করে জানান যে, এই বিয়েতে তিনি রাজি নন।

না তো, এরকম ঘটনা ঘটেনি।

শুধু তাই নয়, মিতালি আপনাকে একটা চিঠিও লিখেছিলেন।

আমি কোনও চিঠি পাইনি।

মিতালি ঘোষের বন্ধুরা কিন্তু সাক্ষী দেবে। তারা জানে।

আমি সত্যি কথাই বলছি।

ইউ আর এ কুল কাস্টমার। এই ফ্ল্যাটটা কার?

আমার।

এটা কি বিয়ের আগেই কিনেছিলেন?

হ্যাঁ।

ফ্ল্যাট কেনার টাকা কে দিয়েছিল?

ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে কিনেছিলাম। ইনস্টলমেন্ট ফেসিলিটি ছিল।

মিথ্যে কথা। আমরা জানি, ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা আপনি আদায় করেছিলেন বরুণ ঘোষের কাছ থেকে।

কিন্তু আমার লোনের রেকর্ড ব্যাঙ্কে আছে।

সে টাকা তুলে আপনি হয়তো ফিক্সড ডিপোজিট করে রেখেছেন বা শেয়ারে খাটিয়েছেন। আমরা সবই জানতে পারব।

বরুণ ঘোষের কাছ থেকে আমি টাকা নিইনি।

বিয়ের রাতে মিতালি আপনাকে কী বলেছিলেন?

বলেছিল আমাকে তার পছন্দ নয়।

আপনি তখন কী করলেন?

আমি খুবই অসহায় ফিল করলাম। আমি তাকে বলেছিলাম যে, পছন্দ না হয়ে থাকলে আমার দিক থেকে তার কোনও ক্ষতি হবে না।

মিথ্যে কথা। আপনি তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে উপগত হয়েছিলেন।

না। কখনওই নয়। তার সঙ্গে আমার শারীরিক সম্পর্কই হয়নি।

আপনারা এই ফ্ল্যাটে কতদিন একসঙ্গে বসবাস করেছেন?

একসঙ্গে বসবাস করিনি৷ ফুলশয্যার রাত থেকেই মিতালি আর আমি আলাদা ঘরে শুতাম। মাসখানেক বাদে মিতালি স্থায়ীভাবে চলে যায়।

আপনার হাইট কত?

পাঁচ ফুট সাড়ে এগারো ইঞ্চি।

ওজন?

আটাত্তর কেজি।

মিতালিদেবীর গয়নাগুলি আপনি তার কাছ থেকে কেড়ে রেখে দিয়েছিলেন কেন?

গয়না! তার গয়নার খবরই আমি রাখি না।

আপনারা দু’জন যুবক-যুবতী একসঙ্গে এক ফ্ল্যাটে থাকতেন, তবু আপনাদের মধ্যে সেক্স রিলেশন হয়নি এটা কি আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে বলেন?

বলি। কারণ ঘটনাটা সত্যি।

আপনার রান্নাবান্না কে করে?

আমি নিজেই করি।

সবকিছু করেন?

আমার কোনও কাজের লোক নেই। নিজেই সব করি।

তরকারি বা মাছ কুটতে পারেন?

পারি।

তরকারি কী দিয়ে কাটেন? বঁটি?

না। ছুরি দিয়ে।

কীরকম ছুরি?

কিচেন নাইফ।

দেখুন তো, এরকম ছুরি?

না, অত বড় নয়।

এর চেয়ে কতটা ছোট হবে?

আরও দু’ইঞ্চি ছোট।

আপনি কি জানেন মিতালিদেবী ঠিক এরকমই একটা কিচেন নাইফে খুন হয়েছেন?

জানি।

কীভাবে জানলেন?

কাগজে পড়েছি। আপনি কী মিন করতে চাইছেন?

আচ্ছা, মিতালিদেবী কি কখনও আপনাকে বলেছিলেন যে, তিনি অন্য কাউকে ভালবাসেন?

না তো!

ভাল করে ভেবে দেখুন।

এরকম কথা বললে আমার মনে থাকত।

বিয়ের সময় আপনার বয়স কত ছিল?

পঁচিশ-ছাব্বিশ।

আর মিতালিদেবীর?

আঠারো-উনিশ। তখন ও ডাক্তারি পড়ছিল।

আপনার কি কোনও প্রেমিকা আছে?

না।

মাত্র তেত্রিশ বছর বয়স, নামমাত্র বিয়ে, তবু কেউ জোটেনি?

না।

ণা? অথচ এর আগে পুলিশের জেরার উত্তরে আপনি বলেছেন যে, আপনার দুজন বান্ধবী আছেন।

বান্ধবী আর প্রেমিকা এক নয়।

তফাতটা কী?

অনেক তফাত।

তাদের মধ্যে একজনের নাম কি শিখা বরুয়া?

হ্যাঁ।

আর একজনের নাম মন্দিরা সেন?

হ্যাঁ।

এদের সঙ্গে আপনার কোনও অ্যাফেয়ার নেই?

না।

বিশ্বাস করতে বলছেন?

বলছি।

ঠিক আছে। ডিভোর্সের পরই আপনার স্ত্রী বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। ফর হায়ার স্টাডিজ। কোথায় গিয়েছিলেন আপনি জানেন?

শুনেছি আমেরিকায়।

আপনি বিদেশে তার ঠিকানা জানতেন?

ন্‌না।

জানতেন না। তা হলে তাকে যে আপনি গাদা গাদা চিঠি লিখতেন সেগুলো তার কাছে কীভাবে পৌঁছোত?

আমি তাকে চিঠি লিখতাম না।

হাসালেন মশাই। তার সুটকেসে আপনার একাধিক চিঠি পাওয়া গেছে।

আমি তাকে চিঠি লিখিনি।

কখনও নয়?

না।

আচ্ছা আপনার শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?

প্রথম দিকে ভালই ছিল। মিতালি আমাকে ছেড়ে ওঁর কাছে চলে যাওয়ায় উনি খুব দুঃখিত হয়েছিলেন। মিটমাটের চেষ্টাও করেছিলেন। তখন আমার সঙ্গে প্রায়ই দেখা করতেন, দুঃখ প্রকাশ করতেন। মিতালি শেষ অবধি ডিভভার্সের মামলা করায় উনি ভেঙে পড়েন। শুনেছি তখন থেকেই ওঁর হার্টের দোষ দেখা দেয়। তখন থেকেই আমাদের দেখাসাক্ষাৎ কমে যেতে থাকে।

আপনি কি বরুণ ঘোষকে সেসময়ে ব্রেট করেছিলেন?

না তো! থ্রেট করব কেন?

আপনি কি কুংফু ক্যারাটে জানেন?

খানিকটা শিখেছিলাম।

কেন শিখেছিলেন?

এমনি, শখ করে।

নাকি মস্তান হওয়ার জন্য!

মস্তান!

অবাক হচ্ছেন? বাসব হালদার নামে একজন লোককে তার দু’জন বন্ধুসহ আপনি একডালিয়ায় মারধর করেছিলেন। তারা আপনার বিরুদ্ধে পুলিশে ডায়েরি করেছিল। পুলিশ আপনাকে গ্রেফতারও করে। ঠিক কি না?

হ্যাঁ। বাসব হালদার নিজেই একজন গুন্ডা। একডালিয়ায় আমার একজন বন্ধু ভাড়াবাড়িতে থাকত। তাকে তুলে দেওয়ার জন্য বাড়িওলা বাসবকে লাগায়। বাসব তাকে প্রায়ই হ্যারাস করত, এমনকী তার বোনকে পর্যন্ত রাস্তা-ঘাটে টিজ করা শুরু করে। তখন বাধ্য হয়ে

বাসব হালদার গুন্ডা ছিল, এ কথা আপনিই বলছেন। তা হলে বলুন, গুন্ডাকে পেটাতে পারে আরও একজন গুন্ডাই, তাই না?

আমি গুন্ডামি করিনি, অন্যায়ের প্রতিকার করেছিলাম মাত্র।

রবিন হুড? অ্যাঁ! আপনি নিজেকে হিরো বলে প্রমাণ করতে চাইছেন নাকি? তা হলে বলি, আপনার বিরুদ্ধে আরও একটা পুলিশ কেস ছিল। প্রিন্স গোলাম মহম্মদ রোডে ন্যাটা দাসকে আপনি মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। বেচারা মারাও যেতে পারত। এফআইআর-এ আছে আপনি তাকে গুলিও করেছিলেন।

আমি! আমি কী করে গুলি করব? আমার কোনও বন্দুক পিস্তল নেই।

ধীরে, মশাই, ধীরে। গুলি আপনি করেছিলেন ঠিকই, তবে শেষ অবধি সেটা প্রমাণ হয়নি। প্রমাণ হয়নি বলেই ধরে নেবেন না যে আপনি নিরপরাধ। অনেক ক্রাইমই প্রমাণ হয় না। ন্যাটা দাসকে আপনি কেন মেরেছিলেন?

আমার জ্যাঠামশাই তাকে বিশ্বাস করে কিছু ডলার ভাঙাতে দিয়েছিলেন। টাকাটা সে মেরে দেয়।

কীরকম জ্যাঠামশাই?

গ্রাম সম্পর্কের। ওঁকে ছেলেবেলা থেকেই চিনি। জাহাজে চাকরি করতেন।

ন্যাটা দাসও কি গুন্ডা ছিল?

নিশ্চয়ই। পুলিশের রেকর্ডে তার বিরুদ্ধে অনেক কেস।

আপনি কি তাকে খুন করতে চেয়েছিলেন?

না। শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম।

খুনের একটা টেন্ডেন্সি আপনার কি বরাবর ছিল?

না।

তা হলে আপনি আসলে একজন হিরো? দুঃখের বিষয় এরকম একজন হিরোর মূল্য মিতালিদেবীই টের পেলেন না। যাকগে, বরুণ ঘোষের কথায় আসা যাক। আপনি তাকে কীভাবে ব্ল্যাকমেল করতেন বলুন তো!

ব্ল্যাকমেলের প্রশ্নই ওঠে না।

ওঠে। তার আগে জিজ্ঞেস করি, ব্ল্যাকমেল কথাটার অর্থ আপনি জানেন তো! গুপ্ত কথা ফাস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা বা সুবিধা আদায়। আপনি বরুণ ঘোষের অন্তত একটা গুপ্ত খবর জানতেন।

কী?

ওঁর বেনামা অ্যাকাউন্ট। রুদ্র সেন, পিনাকী শর্মা আর হরিপদ হাজরা–এই তিনটে ফিকটিশাস নামে ওঁর আরও তিনটে অ্যাকাউন্ট ওই ব্রাঞ্চে ছিল। আপনি কি তা জানতেন না?

জানতাম।

এটা কি গুপ্ত খবর নয়?

এটা ম্যালপ্র্যাকটিস। ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য কেউ কেউ করে। কিন্তু তেমন মারাত্মক অপরাধ নয় বলে গুরুত্ব না দিলেও চলে।

তা হলে কি বলতে চান, আপনি বরুণ ঘোষ সম্পর্কে আরও গুরুতর কোনও গুপ্ত কথা জানতেন?

না। তার সঙ্গে আমার পরিচয় সামান্য।

আপনি কি জানেন আমরা তার কিছু ডায়েরি পেয়েছি, যাতে তিনি লিখে গেছেন যে, তাকে কেউ নিয়মিত ব্ল্যাকমেল করত?

না। আমার এসব জানার কথা নয়।

যদি বলি ব্ল্যাকমেলার হিসেবে তিনি আপনার কথা ডায়েরিতে লিখে গেছেন?

হতেই পারে না। তিনি তেমন মিথ্যেবাদী ছিলেন না।

ইউ আর এ কুল কাস্টমার। জানেন তো, বড় ক্রিমিনালরা খুব কুল হেডেড হয়? যাকগে, ডায়েরি তো কোর্টেই প্রোডিউস করা হবে। বরুণবাবুর কাছ থেকে পণ হিসেবে আপনি কত টাকা নিয়েছিলেন?

এক পয়সাও নয়।

আচ্ছা, এবার বেশ ভেবে বলুন তো, বিয়ের রাতে মিতালিদেবী ঠিক কী ভাষায় বলেছিলেন যে তিনি আপনাকে পছন্দ করেন না। ভেবে বলুন।

খুব সাধারণভাবে বলেছিল।

বিয়ের রাতে না ফুলশয্যার রাতে?

ফুলশয্যার রাতে।

কী বলেছিলেন?

বলেছিল, আমি এ বিয়ে মানি না।

বেশ রাগ করে বলেছিলেন কি?

খুব ঠান্ডা গলায় বলেছিল।

তখন আপনার কীরকম রি-অ্যাকশন হয়েছিল? আপনি কি ইনসান্টেড ফিল করেছিলেন?

হ্যাঁ।

আর তাই আপনার ভিতর জিঘাংসা জেগে উঠেছিল?

ও কথা কেন বলছেন?

কারণ তারপরই আপনি তাকে অ্যাটাক করেন এবং রেপ করেন। আপনি কি জানেন যে স্ত্রীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে জোর করে মিলিত হলে সেটা রেপ-এর পর্যায়ে পড়ে। যদিও এদেশে সেটা বেআইনি নয়।

তখন জানতাম না, কিন্তু এখন জানি। কিন্তু আমি সেই অপরাধটা করিনি।

আপনার ভিতরে অপরাধপ্রবণতা আছে, আপনি কুংফু ক্যারাটে জানেন, আপনার ইগো প্রবল। এসব কন্ডিশনগুলো আপনার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। মিতালিদেবী তার এক বন্ধুকে ঘটনাটা পরদিনই জানিয়েছিলেন।

তা হলে মিতালি বা তার বন্ধু কেউ একজন মিথ্যে কথা বলেছে।

বরুণ ঘোষ কবে মারা গেছেন আপনি জানেন?

মাসখানেক আগে।

কীভাবে জানলেন? বরুণ ঘোষের খবর কি কাগজে বেরিয়েছিল?

লোকের মুখে শুনেছি।

সেই লোক কে, মনে আছে?

ভাবলে মনে পড়বে হয়তো।

একজ্যাক্ট ডেটটা জানেন?

মনে নেই। তবে নভেম্বরের মাঝামাঝি বোধহয়।

কীভাবে মারা যান?

থ্রম্বসিস বোধহয়। ওরকমই শুনেছিলাম।

আপনার সঙ্গে তার শেষ কবে দেখা হয়েছিল?

মনে নেই, বোধহয় উনি আমেরিকা যাওয়ার আগে।

আমার নাম শবর দাশগুপ্ত। খুবই বিচ্ছিরি নাম। তবে মা বাবা নামটা শখ করে রেখেছিলেন, কী আর করা যাবে বলুন!

ঠিকই তো।

এমনকী নামটার অর্থও আমি ভাল করে জানি না। বাংলায় আমার বিদ্যের দৌড় খুবই কম। তবে যতদূর জানি শবর মানে ব্যাধ। তাই কি?

বোধহয়।

হাঃ হাঃ। একদিক দিয়ে আমার নামটা খুবই সার্থক। ব্যাধ মানে শিকারি তো? আমিও একজন ভাল শিকারি। আমার শিকার অবশ্য ক্রিমিনালরা। আই ক্যান অলওয়েজ স্মেল এ রটন র‍্যাট। হাঃ হাঃ।

আপনার কথা কি শেষ হয়েছে?

আরে না। গলা শুকিয়ে গিয়ে থাকলে আপনি একটু ঠান্ডা জল খেয়ে নিন বরং। আচ্ছা, মিতালিদেবী কবে খুন হন সে তো আপনি নিশ্চয়ই জানেন।

হ্যাঁ, গত শনিবার।

শনিবার মিতালি ঘোষ একটা পার্টি দিয়েছিলেন। জানেন?

জানি।

জানবেনই তো। আপনি তো সেই পার্টির একজন ইনভাইটিও ছিলেন।

না।

ছিলেন না? যাকগে, তবে আপনি সেই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন তো?

আমি পার্টি জেনে যাইনি।

এমনিই গিয়েছিলেন?

হ্যাঁ।

কার্টসি ভিজিট?

না। মিতালির সঙ্গে আমার দেখা করার দরকার ছিল।

সে তো বটেই। তাকে আপনি খুন করতে গিয়েছিলেন?

মিতালিকে খুন করে আমার কী লাভ?

মোটিভের কথা বলছেন? মোটিভ সবসময়ে তো আর মেটেরিয়ালিস্টিক হয় না। পুরনো অপমান, আহত অহং, সূক্ষ্ম জেলাসি, পরশ্রীকাতরতা, হেল্পললস লাভ, হোপলেস রিলেশন–কত কারণ থাকতে পারে। আপনিই বলুন না আপনার মোটিভ কী ছিল?

আমি খুনটা করিনি মিস্টার দাশগুপ্ত।

সে কথা থাক। বলুন, পার্টিটা কোথায় হচ্ছিল?

নীচের তলায়। হলঘরে।

চমৎকার সিচুয়েশন, তাই না! নীচের তলায় পার্টি চলছিল, গোলমালে আপনি ওপরে উঠে গিয়ে ঘাপটি মেরে মিতালিদেবীর শোয়ার ঘরে লুকিয়ে রইলেন। তারপর পার্টি শেষ করে একটু ড্রাঙ্ক এবং হাই অবস্থায় মিতালিদেবী যখন ওপরে উঠে এলেন, তখন–না মশাই, এরকম গোন্ডেন সিচুয়েশন ভাবা যায় না।

কিন্তু আপনি ভুলে যাচ্ছেন, আমার সঙ্গে নীচের তলায় কয়েকজনের দেখা হয়েছিল। তারা আমার চেনা। পার্টি হচ্ছে দেখে আমি যে ফিরে আসি তা তারা জানে।

হ্যাঁ। আমরা তাদের স্টেটমেন্ট পেয়েছি। কিন্তু কথাটা হল, স্পট অব ক্রাইমে আপনাকে দেখা গিয়েছিল। ইউ ওয়্যার দেয়ার। তাই না?

তা তো বটেই।

মিতালিদেবীর সঙ্গে কি আপনার দেখা হয়েছিল?

হয়েছিল।

মানে মার্ডারের সময়ে তো? আহা মশাই, ঝেড়েই কাশুন না।

মিতালিকে আমি খুন করিনি।

করেছেন, করেছেন। যাকগে, সব তথ্যই বেরিয়ে আসবে।