কাতর হৃদয় অতি, শ্রীবৎস ধরণীপতি,
পড়সীরে জিজ্ঞাসে বারতা।
কহ সবে সমাচার, কোথা চিন্তা সে আমার,
না হেরিয়া পাই মনে ব্যথা।।
রাজার বচন শুনি, পড়সী কহিছে বাণী,
ওহে ধীর পণ্ডিত সুজন।
কহি শুন বিবরণ, এই ঘাটে এক জন,
আইল ধনাঢ্য মহাজন।।
তাহার কর্ম্মেতে ঘটে, তরণী আটক ঘাটে,
বিধাতা তাহারে বিড়ম্বিল।
সতী যে জন হইবে, পরশে তরী ভাসিবে,
তেঁই নারী সবারে ডাকিল।।
গৌরব করিয়া সাধু, লইয়া কাঠুরে বধূ,
ক্রমে ক্রমে তরী ছোঁয়াইল।
না ভাসিল সেই তরী, পুনঃ পুনঃ যত্ন করি,
তোমার চিন্তায় লয়ে গেল।।
চিন্তা সতী পরশিতে, ভাসে তরী হরষেতে,
চিন্তায় ধরি লৈল তরিতে।
ছাড়িয়া সে দিল তরী, করি অতি তাড়াতাড়ি,
চিন্তাদেবী লাগিল কান্দিতে।।
বজ্র সম বাণী শুনি, মূর্চ্ছাগত নৃপমণি,
লোটায়ে পড়িল ধরাতলে।
ক্ষণেকে চেতন পায়, বলে রাজা হায় হায়,
কেন হেন ঈশ্বর করিলে।।
আমার কর্ম্মের পাশ, রাজ্য ত্যজি বনবাস,
নারী সঙ্গে আইনু কাননে।
ধন রত্ন যত আনি, সকলি হরিল শনি,
অবেশেষে ছিনু দুই প্রাণে।।
তাহাতে করিল আন, দুই জন দুই স্নান,
শনি দুঃখ দিল বুহ মোরে।
বিষাদে তাপিত মন, এই চিন্তা অনুক্ষণ,
ভয়ে রক্ষা কে করিবে তারে।।
এত চিন্তি নরপতি, শোকেতে কাতর অতি,
চলিল নদীর তটে তটে।
জিজ্ঞাসিল জনে জনে, স্থাবর জঙ্গমগণে,
মনুষ্য যতেক দেখে বাটে।।
বিবিধ কানন মাঝ, খুঁজিলেন মহারাজ,
চিন্তার না পাইল উদ্দেশ।
বহু দেশ নানা স্থানে, নদ নদী উপবনে,
ভ্রমে রাজা পেয়ে বহু ক্লেশ।।
ক্ষুধা তৃষ্ণা অনাহারে, মহাকষ্টে নৃপবরে,
শেষমাত্র ছিল প্রাণ তাঁর।
শুন ধর্ম্ম মহাশয়, সকল দৈবেতে হয়,
সর্ব্ব কর্ম্ম ইচ্ছা বিধাতার।।
চিত্তানন্দ নামে বনে, রাজা গেল সেইস্থানে,
তথাকারে সুরভি আশ্রম।
অপূর্ব্ব বিচিত্র শোভা, সুরাসুর মনোলোভা,
তথা যেতে সভয় শমন।।
নানা পশু নানা পক্ষ, এক স্থানে লক্ষ লক্ষ,
ভক্ষ্য ভোজ্য রঙ্গে এক স্থল।
বিচিত্র তড়াগ বাপী, পুষ্করিণী কতরূপী,
তাহে শোভে কনক কমল।।
অপূর্ব্ব কাননশোভা, নানা পুষ্প মনোলোভা,
ঋড়ঋতু শোভিত তথায়।
কেহ কারে নাহি ডরে, সুখে সবে ঘর করে,
নিঃশঙ্কে রহিল তথা রায়।।
রাজা পুণ্যবান অতি, জানিয়া গোমাতা সতী,
তথায় হইল উপনীত।
কাশীরাম সাদ গায়, বিফলে জনম যায়,
ভজ হরি, ভবে নাহি ভীত।।