হেনমতে দাসীপণে আছেন বিনতা।
মহাবীর গরুড়ের জন্ম হৈল হেথা।।
ডিম্ব ফাটি বাহির হইল আচম্বিতে।
দেখিতে দেখিতে কায় লাগিল বাড়িতে।।
প্রাতঃ হৈতে ক্রমে যেন সূর্য্যতেজ বাড়ে।
বনে অগ্নি দিলে যেন দশদিক বেড়ে।।
কামরূপী বিহঙ্গম মহাভয়ঙ্কর।
নিশ্বাসে উড়িয়া যায় পর্ব্বত-শিখর।।
বিদ্যুত আকার অঙ্গ, লোহিত লোচন।
ক্ষণমাত্রে মুণ্ড গিয়া ছুঁইল গগন।।
যুগান্তের অগ্নি যেন দেখে সর্ব্বজনে।
সুরাসুর কম্পমান তাহার গর্জ্জনে।।
অগ্নি হেন জানি সবে করি যোড় কর।
অগ্নির উদ্দেশে স্তব করিল বিস্তর।।
অগ্নি বলে, আমারে এস্তুতি কর কেনে।
আপনা সংবর বলি বলে দেবগণে।।
দেবতার স্তবে অগ্নি কন হাস্য করি।
অকারণে ভীত কেন দৈত্য-কুল-অরি।।
আমি নহি কাশ্যপেয় বিনতা-নন্দন।
সর্ব্বলোক-হিতকারী হিংস্রক-হিংসন।।
না করিহ ভয় কেহ থাক মম সঙ্গে।
আনন্দিত হয়ে সবে দেখহ বিহঙ্গে।।
অগ্নির বচন শুনি যত দেবগণ।
যোড়হাত করি করে গরুড়ে স্তবন।।
হেন রূপ দেখি তব অতি ভয়ঙ্কর।
সংবর করুণা করি বিনতা-কোঙর।।
তোমার তেজেতে দেখ চক্ষু যায় জ্বলি।
ভীষণ গর্জ্জনে লাগে কর্ণদ্বায়ে তালি।।
কশ্যপের পুত্র তুমি হও দয়াবান্।
নিজ তেজ সংবরহ কর পরিত্রাণ।।
দেবতার স্তবে তুষ্ট হৈল খগেশ্বর।
আশ্বাসিয়া সংবরিল নিজ কলেবর।।
তবে পক্ষিরাজ বীর অরুণে লইয়া।
আদিত্যের রথে তারে বসাইল গিয়া।।
বিষম সূর্য্যের তেজে পোড়ে ত্রিভুবন।
অরুণের আচ্ছাদনে হৈল নিবারণ।।
মুনিগণ বলে, কহ ইহার কারণ।
কোন্ হেতু ত্রিভুবন দহিছে তপন।।
সৌতি বলে, যেইকালে দেব জনার্দ্দন।
সুরগণে সুধারাশি করেন বণ্টন।।
গোপনে বসিয়া রাহু অমৃত খাইল।
দিবাকর নারায়ণে দেখাইয়া দিল।।
সূর্য্যের বচনে তবে দেব নারায়ণ।
চক্রেতে অসুর মুণ্ড করেন ছেদন।।
সূর্য্যের হইল পাপ তাহার কারণে।
ক্রোধে রাহু গ্রাসে তাঁরে পাপগ্রহ দিনে।।
সূর্য্যের হইল ক্রোধ যত দেবগণে।
ডাকিয়া বলিনু আমি সবার কারণে।।
সবে দেখে কৌতুক, আমারে করে গ্রাস।
এই হেতু সৃষ্টি আমি করিব বিনাশ।।
আপনার তেজেতে পোড়াব ত্রিভুবন।
এত চিন্তি মহাতেজ ধরিল তপন।।
দেবগণ নিবেদিল ব্রহ্মার গোচর।
ত্রৈলোক্য দহিতে তেজ কৈল দিনকর।।
ব্রহ্মা বলে, ভয় নাহি কর দেবগণ।
ইহার উপায় এক করিব রচন।।
কশ্যপের পুত্র হবে বিনতা-উদরে।
রবি-তেজ নিবারিবে সেই মহাবীরে।।
ততদিন কষ্ট সহি থাক সর্ব্বজনে।
এত বলি প্রবোধিয়া গেল দেবগণে।।
ভারতের পুণ্যকথা পুণ্যজন শুনে।
পাঁচালী-প্রবন্ধে কাশীরাম দাস ভণে।।