১৭তম অধ্যায়
ইন্দ্রের পুনঃ স্বৰ্গরাজ্যলাভ
“তখন বৃত্ৰনিসূদন পুরন্দর সুলক্ষণসম্পন্ন ঐরাবতে আরোহণপূর্ব্বক অগ্নি, বৃহস্পতি, যম, বরুণ ও কুবের প্রভৃতি দেবগণে পরিবৃত এবং গন্ধর্ব্ব ও অপ্সরাগণকর্ত্তৃক সংম্ভূয়মান হইয়া পুনরায় ত্ৰিভুবনমধ্যে আগমন করিলেন এবং স্বীয় সহধর্মিণী শচীর সহিত সম্মিলিত হইয়া পরমাহ্লাদে প্রজাপালন করিতে লাগিলেন। পরে ভগবান আঙ্গিরা শচীপতির সমীপে সমুপস্থিত হইয়া অথর্ব্ববেদোক্ত-মন্ত্রপাঠ্যপূর্ব্বক তাঁহাকে পূজা করিলেন। সুররাজ তদ্দর্শনে সাতিশয় সন্তুষ্ট ও হৃষ্ট হইয়া বর প্রদান করিলেন, “হে মহাত্মন! তোমার অথর্ব্বাঙ্গিরস নাম অথর্ব্ববেদে প্রসিদ্ধ হইবে এবং তুমি সর্ব্বত্ৰ যজ্ঞভাগপ্রাপ্ত হইবে।” শতক্ৰতু এই বলিয়া অঙ্গিরাকে অর্চ্চনাপূর্ব্বক বিদায় করিলেন; অনন্তর দেবগণ ও তপোধনসমুদয়কে যথাবিধি পূজা করিয়া পরমহ্লাদে প্রজাপালন করিতে লাগিলেন।
ইন্দ্র-শচী-দৃষ্টান্তে যুধিষ্ঠিরাদির সান্ত্বনা
“হে মহারাজ ধর্ম্মানন্দন! সুররাজ ইন্দ্র এইরূপে ভাৰ্য্যাসমভিব্যাহারে দুঃখভোগ করিয়া শক্রগণের বধাকাঙক্ষায় অজ্ঞাতবাস করিয়াছিলেন। অতএব আপনি মহাত্মা ভ্রাতৃগণ ও যশস্বিনী দ্রুপদনন্দিনীর সহিত মহাবনে ক্লেশভোগ করিয়াছিলেন বলিয়া কোনক্রমে দুঃখিত হইবেন না। দেবরাজ যেমন বৃত্ৰকে সংহার করিয়া স্বীয় আধিপত্য প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, তদ্রূপ আপনিও শত্রুবিনাশ করিয়া অবশ্যই রাজ্যলাভ করিবেন। যেমন ব্ৰহ্মদ্বেষী পাপাত্মা নহুষ অগস্তের শাপে স্বর্গভ্রষ্ট হইয়াছেন, তদ্রুপ কৰ্ণ, দুৰ্য্যোধন প্রভৃতি আপনার অরাতিগণ অচিরকালমধ্যেই উৎসন্ন হইবে। অনন্তর আপনি স্বীয় ভ্রাতৃচতুষ্টয় ও পতিপরায়ণা পাঞ্চালীসমভিব্যাহারে নির্ব্বিঘ্নে সসাগরা ধরার একাধিপত্য করিবেন।
“হে মহারাজ! সৈন্যসকল মিলিত হইলে জয়াভিলাষী ভূপতির শত্রুবিজয়-উপাখ্যান শ্রবণ করা অবশ্য কর্ত্তব্য। এই নিমিত্ত আমি আপনার নিকট এই উপাখ্যান কীর্ত্তন করিলাম। যে মহাত্মাগণ এই উপাখ্যান শ্রবণ করেন, তাহারা বিজয়ী ও সমৃদ্ধিশালী হয়েন। হে ধর্ম্মানন্দন! দুরাত্মা দুৰ্য্যোধনের অপরাধে ও ভীম-অর্জ্জুনের পরাক্রমে অচিরাৎ মহাত্মাক্ষত্ৰিয়গণের বিনাশ হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। হে যুধিষ্ঠির! যে ব্যক্তি নিয়মপূর্ব্বক এই ইন্দ্রবিজয় উপাখ্যান পাঠ করে, সে অরাতিভয়বিমুক্ত, অপত্যসম্পন্ন, নিরাপদ ও দীর্ঘায়ু হইয়া স্বচ্ছন্দে কালব্যাপনপূর্ব্বক পরকালে স্বৰ্গলাভ করিতে পারে এবং সর্ব্বত্র জয়লাভ করিয়া থাকে, কুত্ৰাপি পরাভূত হয় না।”
মহারাজ যুধিষ্ঠির শল্যের এই আশ্বাসবাক্য শ্রবণানন্তর যথাবিধি পূজা করিয়া কহিলেন, “হে মহাভাগ! আপনাকে অবশ্যই কর্ণের সারথ্যকাৰ্য্য সম্পাদন করিতে হইবে। আপনি সেই সময়ে কর্ণের তেজোনাশ ও অর্জ্জুনকে রক্ষা করিবেন।”
শল্য কহিলেন, “আমি অবশ্যই আপনার বাক্যানুরূপ কাৰ্য্য করিব। আর অন্য অন্য যেসকল কাৰ্য্য সম্পন্ন করিতে সমর্থ হইব তাহার অনুষ্ঠানেও অণুমাত্র ত্রুটি করিব না।” মদ্রাধিপতি শল্য এই বলিয়া পাণ্ডবগণকে আমন্ত্রণপূর্ব্বক সসৈন্যে দুৰ্য্যোধনসমীপে গমন করিলেন।