পঞ্চদশ অধ্যায়
কৃষ্ণের বরলাভ
কৃষ্ণ কহিলেন, “হে ধর্ম্মরাজ! দেবাদিদেব এই কথা কহিলে, আমি তাঁহাকে নমস্কার করিয়া প্রীতিপ্রফুল্ল চিত্তে কহিলাম, ‘ভগবন্! আমি তোমার নিকট ধর্ম্মে দৃঢ়তা, রণস্থলে শত্রুনাশের ক্ষমতা, পরম যশঃ, বল, যোগ, লোকপ্রিয়তা, তোমার সন্নিকর্ষ ও অসংখ্য পুত্ত্র প্রার্থনা করি।’ তখন ভগবান্ শঙ্কর আমার বাক্য শ্রবণগোচর করিয়া কহিলেন, ‘বাসুদেব! তুমি যাহা প্রার্থনা করিলে, মৎপ্রদত্ত বরপ্রভাবে তাহা অবশ্যই সফল হইবে।’
“অনন্তর জগন্মাতা ভবানী আমাকে সম্বোধন পূর্ব্বক কহিলেন, ‘বাসুদেব! ভগবান্ শঙ্করপ্রদত্ত বরপ্রভাবে তোমার অভিলাষানুরূপ পুত্ত্র উৎপন্ন হইবে; এক্ষণে তুমি আমার নিকট আটটি বর প্রার্থনা কর, আমি প্রসন্নমনে তাহা প্রদান করিব।’ তখন আমি তাঁহাকে প্রণাম করিয়া ব্রাহ্মণের প্রতি প্রসন্নতা, পিতার অনুগ্রহ, শত পুত্ত্র, উৎকৃষ্ট ভোগ, কুলানুরাগ, মাতার নিকট প্রসন্নতা, শান্তি ও কার্য্যনৈপুণ্য এই আটটী বর প্রার্থনা করিলাম। পার্ব্বতী কহিলেন, ‘বৎস! তুমি যাহা প্রার্থনা করিলে, তাহা অবশ্যই সিদ্ধ হইবে। আমার বাক্য কখন মিথ্যা হইবার নহে। এতদ্ভিন্ন তুমি অমরতুল্য প্রভাব, সত্যানুরাগিতা, ষোড়শ সহস্র ভার্য্যা, তাহাদিগের অনুরাগ, অক্ষয় ধনধান্য, বন্ধুগণের প্রীতি ও মনোহর শরীর লাভ করিবে এবং তোমার আবাসে প্রতিদিন সপ্ত সহস্র অতিথি ভোজন করিবে।’
“হে ধর্ম্মরাজ! ভগবান্ মহাদেব ও দেবী পার্ব্বতী ইভয়ে আমাকে এইরূপ বর প্রদান করিয়া প্রমথগণের সহিত তথা হইতে অন্তর্হিত হইলেন। তিনি আমাকে বরদান করিয়া অন্তর্হিত হইলে, আমি সেই তেজঃপুঞ্জকলেবর দ্বিজবর উপমন্যুর নিকট গমন পূর্ব্বক সমুদায় বৃত্তান্ত কীর্ত্তন করিলাম। তিনি দেবাদিদেব মহাদেবকে নমস্কার করিয়া আমাকে সম্বোধন পূর্ব্বক কহিলেন, ‘কেশব! দেবাদিদেব মহাদেবের তুল্য দেবতা আশ্রয়দাতা ও যোদ্ধা আর কেহই নাই।'”