হর বলে, হরিণাক্ষি! কেন দেহ তাপ।
মোর সহ কভু তব নাহিক আলাপ।।
ত্রৈলোক্যের মধ্যে যত আছে মহাপ্রাণী।
সবার ঈশ্বর আমি, শুন বরাননি।।
ব্রহ্মার পঞ্চম শির নখেতে ছেদিল।
বহুকাল সেবি বিষ্ণু অভয় পাইল।।
ইন্দ্র যম বরুণ কুবের হুতাশন।
সব লোকপাল করে মোর আরাধন।।
জ্ঞানযোগে মৃত্যু আমি করিলাম জয়।
আমার নয়নানলে কাম ভস্ম হয়।।
মহামায়া বল যারে ত্রৈলোক্যে মোহিনী।
বিষ্ণু-অংশ জাত গঙ্গা ত্রিপথ-গামিনী।।
দাসী হয়ে সেবে মোর চরণ-অম্বুজে।
মনোমত বর লভে, মোরে যেই ভজে।।
ত্যজ মান মনোরমে করহ সম্ভাষ।
আমারে ভজিলে হবে সিদ্ধ অভিলাষ।।
কন্যা বলে, যোগী তোরে জানিনু এখন।
তোরে মহেশ্বর বলি ডাকে সর্ব্বজন।।
ব্যর্থ জপ তপ তোর ব্যর্থ যোগ ধ্যান।
ব্যর্থ তোর পঞ্চ-মুখে রাম-নাম গান।।
ব্যর্থ জটাভার রাখ ব্যর্থ তুমি যোগী।
ভণ্ডতা করিয়া লোকে বলাহ বৈরাগী।।
হর বলে, মনোরমে! কর অবধান।
তব অঙ্গ দেখি মোর হরিল যে জ্ঞান।।
করিলাম এক দাম দহন নয়নে।
কোটি কাম জ্বলিতেছে তব চক্ষুকোণে।।
তপ জপ যোগ ধ্যান জ্ঞানের বৈরাগ্য।
এ সকল কর্ম্ম যদি হয়, শ্রেষ্ঠ ভাগ্য।।
এই বাঞ্ছা হয়, তুমি করহ পরশ।
আলিঙ্গন দেহ তুমি হইয়া হরষ।।
যতেক করিনু তপ জপ হরি নাম।
জটা ভস্ম দিগ্বাস শ্মশানেতে ধাম।।
তার সমুচিত ফল মিলাইল বিধি।
এতকালে পাইলাম তোমা হেন নিধি।।
সর্ব্বকর্ম্ম সমর্পণ করিনু চরণে।
কৃপা করি আলিঙ্গন দেহ বরাননে।।
হরবাক্য শুনি হাসি বলে হয়গ্রীব।
অপ্রাপ্য দ্রব্যের কেন বাঞ্ছা কর শিব।।
সর্ব্ব কর্ম্ম ত্যজিবারে পারে যেই জন।
অন্যমনা না হবে, আমাতে একমন।।
কায়-মনোবাক্যে করে আমারে ভজন।
সে জনেরে যাচি আমি দিব আলিঙ্গন।।
শিব বলে, কন্যা এই সত্য অঙ্গীকার।
আজি হৈতে তোমা বিনা নাহি জানি আর।।
ত্যজিলাম সর্ব্ব কর্ম্ম ভার্য্যা-পুত্রগণ।
সেবিব তোমার পদ দেহ আলিঙ্গন।।
নারী বলে, কত মোরে করহ ছলন।
কেমনে ত্যজিবা তুমি ভার্য্যা-পুত্রগণ।।
এক ভার্য্যা রাখিয়াছ জটার ভিতর।
আর ভার্য্যা করিয়াছ অর্দ্ধ কলেবর।।
হর বলে, হরিণাক্ষি কেন হেন কহ।
ত্যজিয়া কপট মোরে কর অনুগ্রহ।।
কি ছার সে নারী পুত্র, নাম লহ তার।
শত শত গঙ্গা দুর্গা নিছনি তোমার।।
দাসী হয়ে সেবিবে সে, আমি হৈব দাস।
কৃপা করি বরাননে পূর মোর আশ।।
যদি তুমি নিশ্চয় না দিবা আলিঙ্গন।
তোমার সম্মুখে আমি ত্যজিব জীবন।।
নেউটিয়া মোর পানে চাহ চারুমুখে।
হের, মরি ত্রিশূল মারিয়া নিজ বুকে।।
এত বলি ত্রিশূল নিলেন ভূতনাথ।
হাসিতে হাসিতে তবে বলেন শ্রীনাথ।।
বুঝিলাম গঙ্গাধর! তোমার যে জ্ঞান।
কামে বশ হয়ে চাহ ত্যজিবারে প্রাণ।।
ধৈর্য্য ধর, ত্যজ খেদ, চিত্ত কর স্থির।
দিব আলিঙ্গন, তুমি না ত্যজ শরীর।।
নাহি জান বিশ্বনাথ আমার হৃদয়।
ভকত-জনেরে আমি দানি যে অভয়।।
যে জন যেমন কাম মাগে মোর স্থান।
দিই তারে অবশ্য না হয় কভু আন।।
বিশেষে আমাকে পূর্ব্বে মাগিয়াছ তুমি।
অর্দ্ধ অঙ্গ দিব অঙ্গীকার কৈনু আমি।।
এত বলি আলিঙ্গন দিতে জগন্নাথ।
আইস বলিয়া বিস্তারেন দুই হাত।।
আলিঙ্গনে যুগল-শরীর হৈল এক।
অর্দ্ধ ভস্ম-ভূষা হৈল, কস্তূরী অর্দ্ধেক।।
অর্দ্ধ জটাজূট, অর্দ্ধ চিকুর চাঁচর।
অর্দ্ধেক কিরীটী, অর্দ্ধ ফণি-ফণাধর।।
কস্তূরী তিলক অর্দ্ধ, অর্দ্ধ শশিকলা।
অর্দ্ধ-গলে হাড়মালা, অর্দ্ধে বনমালা।।
মকর-কুণ্ডল কর্ণে, কুণ্ডলী-কুণ্ডল।
শ্রীবৎস-লাঞ্ছন অর্দ্ধ শোভিত গরল।।
অর্দ্ধ মলয়জ, অর্দ্ধ ভস্ম কলেবর।
অর্দ্ধ কটি বাঘাম্বর, অর্দ্ধ পীতাম্বর।।
এক পদে ফণী, অন্যে কনক নূপুর।
শঙ্খ-চক্র করে শোভে, ত্রিশূল ডম্বুর।।
শিব-দুর্গা বিষ্ণু-লক্ষ্মী, চারি মূর্ত্তি হেরি।
কাশীদাস করে আশ, তরি ভব-বারি।।
চারি মূর্ত্তি হেরিলেই মিলে চারি ফল।