১৪শ অধ্যায়
কৌরব-পাণ্ডব সঙ্কুল যুদ্ধ
সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! অনন্তর দ্রোণাচার্য্য পাণ্ডব সৈন্যের সহিত তুমুল রণ করত, হুতাশন যেমন বৃক্ষ দগ্ধ করিয়া বিচরণ করে, সেই রূপ তাহাদিগকে দগ্ধ করিয়া ভ্রমণ করিতে লাগিলেন। সুবৰ্ণরথ দ্রোণাচার্য্য ক্রুদ্ধ হইয়া প্রজ্বলিত অনলের ন্যায় সৈন্যগণকে দগ্ধ করিতেছেন দেখিয়া সৃঞ্জয়গণ কম্পিত হইয়া উঠিলেন। আকর্ণ আকৃষ্যমান আশুকারী দ্রোণশরাসনের প্রবল জ্যানির্ঘোষ অশনিশব্দের ন্যায় শ্রবণগোচর হইল। লঘুহস্ত দ্রোণ কর্ত্তৃক বিনির্মুক্ত অতি ভীষণ সায়কসমূহ রথী, সাদী, হস্তী, অশ্ব ও পদাতিগণকে বিমর্দ্দিত করিতে লাগিল। যেমন বায়ুসহায় গর্জ্জমান পৰ্য্যন্য বর্ষাকালে শিলাবর্ষণ করে, সেইরূপ দ্রোণাচার্য্য বাণ বর্ষণ করত শত্রুগণের ভয়াবহ হইয়া উঠিলেন এবং বিচরণ পূর্ব্বক সেনাগণকে সংক্ষোভিত করিয়া শত্রুগণের অলৌকিক ভয় বর্দ্ধন করিতে লাগিলেন। তাঁহার ভ্রাম্যমান রথে হেমপরিষ্কৃত চাপ পুনঃপুন জলদ বিলগ্ন বিদ্যুতের ন্যায় লক্ষিত হইতে লাগিল। সত্যবান, প্রাজ্ঞ, নিত্য ধৰ্ম্মপরায়ণ সেই বীর অমর্য্যবেগ সদ্ভূত, ক্ৰব্যাদ্গণ সংকুল, সৈন্যস্রোতে পরিপূর্ণ, বীরবৃক্ষাপহারী, শোণিতোদক, গজাশ্বকৃতপুলিম, কবচোৎপল, মাংসপঙ্ক, মেদমজ্জাস্থিসৈকত, উষ্ণীষফেন, যুদ্ধমেঘাকীর্ণ, নরনাগাশ্বগহন, সরবেগপ্রবাহ দেহদারুসংকীর্ণ, রথকচ্ছপসমাকুল, মস্তকশিলাতটশোভিত, রথনাগহ্রদোপেত, নানাভরণভূষিত, মহারথ শতাবর্ত্ত, ধূলি তরঙ্গ, মহাবীরগণের সুতর, ভীরুগণের দুস্তর, শরীরশতপুর্ণ, কঙ্ক গৃধ্র পরিচারিত, শূরসর্পসমাকীর্ণ, জীববৃন্দ সেবিত, ছিন্ন চ্ছত্রমহাহংস, মুকুটবিহগ, চক্রকূৰ্ম্ম, গদাকুম্ভীর, খড়্গপ্রাসমৎস্য, ভয়ানক কাক গৃধ্র ও শৃগাল সমূহে অধিষ্ঠিত, কেশ শৈবাল শাদ্বল, ভীরুগণের ভয় বর্দ্ধন নদী প্রবর্ত্তিত করিলেন। সেই নদী বলবান্ দ্রোণ কর্ত্তৃক নিহত সহস্র সহস্র মহারথ ও অন্যান্য শত শত প্রাণীকে যম সদনে বহন করিতে লাগিল।
এই রূপে দ্রোণাচার্য্য সৈন্যগণের প্রতি তর্জ্জন করিতেছেন, এমন সময়ে যুধিষ্ঠির প্রভৃতি বীরগণ চতুর্দ্দিক হইতে তাঁহার প্রতি ধাবমান হইলেন। দৃঢ়বিক্রম কৌরবপক্ষ শূরগণ চতুর্দ্দিক হইতে তাঁহাদিগকে গ্রহণ করিলেন। উহা লোমহর্ষণ হইয়া উঠিল।
শতমায় শকুনি সম্মুখীন হইয়া নিশিত শর সমূহে সারথি, ধ্বজ ও রথের সহিত সহদেবকে বিদ্ধ করিলেন। সহদেবও ঈষৎ রোষপরবশ হইয়া শরনিকরে তাঁহার কেতু, ধনু, সারথি ও তুরঙ্গমগণকে ছেদিত করিয়া যষ্টিসায়কে তাঁহাকে বিদ্ধ করিলেন। শকুনি গদা গ্রহণ পূর্ব্বক রথ হইতে অবতীর্ণ হইয়া তদ্বারা সহদেবের সারথিকে রথ হইতে নিপাতিত করিলেন। অনন্তর দুই মহাবলই বিরথ ও গদাহস্ত হইয়া সশৃঙ্গ পর্ব্বতের ন্যায় সংগ্রামে ক্রীড়া করিতে লাগিলেন।
দ্রোণাচার্য্য দশ বাণে দ্রুপদকে বিদ্ধ করিলে তিনি বহু বাণে তাঁহাকে বিদ্ধ করিলেন। আচার্য্য পুনরায় তাঁহাকে ততোধিক সায়কে বিদ্ধ করিতে লাগিলেন।
ভীমসেন নিশিত বিংশতি শৰে বিবিংশতিরে বিদ্ধ করিয়া কম্পিত করিতে পারিলেন না। ইহা অদ্ভুতবৎ প্রতীয়মান হইল। বিবিংশতি ভীমসেনকে সহসা অশ্ব শূন্য, কেতু শূন্য ও শরাসন শূন্য করিলে ভীমসেন অরাতির তাদৃশ বিক্রম সহ্য করিতে না পারিয়া গদা দ্বারা তাঁহার সমুদায় বশীভূত অশ্বকে নিপাতিত করিলেন। যেমন মত্ত গজ মত্ত গজকে আক্রমণ করে, সেই রূপ মহাবল বিবিংশতি চৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়া হতাশ্ব রথ হইতে ভীমসেনের অভিমুখে গমন করিলেন।
বীৰ্য্যশালী শল্য প্রীতিভাজন ভাগিনেয় নকুলকে, যেন কোপিত করিবার নিমিত্ত হাস্য সহকারে লালন করিতে করিতে শরজাল আঘাত করিলেন। প্রতাপবান্ নকুল তাঁহার সমুদায় অশ্ব, আতপত্র, ধ্বজ, সারথি ও শরাসন বিনষ্ট করিয়া শঙ্খনাদ করিতে লাগিলেন।
ধৃষ্টকেতু কৃপনিক্ষিপ্ত বহুবিধ শর ছেদন করিয়া সপ্ততি শরে তাঁহাকে বিদ্ধ ও তিন শরে তাঁহার ধ্বজচিহ্ন বিনষ্ট করিলেন। কৃপাচার্য্য প্রচুর শর বর্ষণ দ্বারা তাঁহাকে নিবারণ করিয়া তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন।
সাত্যকি যেন হাস্য করিতে করিতে কৃতবর্ম্মার বক্ষস্থলে প্রথমে নারাচ পরে সপ্ততি শর দ্বারা বিদ্ধ করিয়া পুনরায় অন্য শরসমূহে বিদ্ধ করিতে লাগিলেন। যেমন দ্রুতগামী বায়ু অচলকে কম্পিত করিতে পারে না, সেই রূপ ভোজরাজ কৃতবর্ম্মা সুনিশিত সপ্তসপ্ততি শরে সাত্যকিকে বিদ্ধ করিয়া কম্পিত করিতে পারিলেন না।
সেনানী, সুশর্ম্মার সমুদায় মৰ্ম্মস্থান অতিমাত্র আহত করিলে তিনিও তোমর দ্বারা সেনানীর জত্রুদেশে আঘাত করিলেন। বিরাট মহাবীর মৎস্যগণের সহিত কর্ণকে নিবারিত করিলেন, ইহা অদ্ভুতবৎ প্রতীয়মান হইল। ইহাই পুত্রের পৌরুষ যে, তিনি সন্নতপর্ব্ব শরসমূহে সেই দারুণ সৈন্য নিরস্ত করিলেন। রাজা দ্রুপদ স্বয়ংভগদত্তের সহিত সমরে মিলিত হইয়াছিলেন; তাঁহাদিগের অদ্ভুতবৎ যুদ্ধ হইয়া ছিল। ভগদত্ত নতপর্ব্ব শরসমূহে রাজা দ্রুপদকে সারথি, ধ্বজ ও রথের সহিত বিদ্ধ করিলে দ্রুপদ ক্রুদ্ধ হইয়া আনতপর্ব্ব শর দ্বারা মহারথ ভগদত্তের বক্ষস্থলে আঘাত করিলেন। যোদ্ধাবর অস্ত্রবিশারদ ভূরিশ্রবা ও শিখণ্ডী ভূতগণের ত্রাসজনন যুদ্ধ করিয়াছিলেন। বীৰ্য্যবান্ ভূরিশ্রবা সায়ক সমূহে মহারথ শিখণ্ডীকে আচ্ছন্ন করিলে শিখণ্ডী ক্রুদ্ধ হইয়া নবতি সায়কে ভূরিশ্রবাকে কম্পিত করিলেন। ভীষণকৰ্ম্মা, মায়াবী, গর্বিত, রাক্ষস ঘটোৎকচ ও অলম্বুষ পরস্পর জয়ার্থী হইয়া মায়া প্রকটন পূর্ব্বক অতি অদ্ভুত যুদ্ধ করত সাতিশয় বিস্ময় উৎপাদন পূর্ব্বক অন্তর্হিত হইয়া বিচরণ করিতে লাগিল। যেমন দেবাসুর যুদ্ধে মহাবল বল ও ইন্দ্র পরস্পর যুদ্ধ করিয়াছিলেন, সেই রূপ চেকিতান অনুবিন্দের সহিত অতিভৈরব যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। যেমন পূর্ব্বে বিষ্ণু হিরণ্যাক্ষের সহিত যুদ্ধ করিয়াছিলেন, সেই রূপ লক্ষণ ক্ষত্ৰদেবের সহিত ভয়ানক যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন।
অনন্তর মহাবল হার্দ্দিক্য ত্বরান্বিত ও যুদ্ধাকাঙ্ক্ষী হইয়া যথাবিধি কল্পিত, প্রচলিত রথে আরোহণ পূর্ব্বক অভিমন্যুর অভিমুখে গমন করিয়া সিংহনাদ করিতে লাগিলেন। অরিন্দম অভিমন্যু তাঁহার সহিত অতি ভয়ানক যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। হার্দ্দিক্য শরনিকরে অভিমন্যুকে আচ্ছন্ন করিলে অভিমন্যু তাঁহার ধ্বজ, ছত্র ও অশ্বগণকে ভূতলে নিপাতিত করিলেন। হার্দ্দিক্য অন্য সাত শরে অভিমন্যুকে ও পাঁচ শরে তাঁহার অশ্বগণকে ও সারথিকে বিদ্ধ করিয়া কৌরব সেনাগণের হর্ষবর্দ্ধন করত সিংহের ন্যায় মুহুর্মুহু শব্দ করিতে লাগিলেন। অভিমন্যু হার্দ্দিক্যের প্রাণহর শর গ্রহণ করিবামাত্র হার্দ্দিক্য সেই ঘোরদর্শন শর সন্ধিত হইয়াছে জানিয়া দুই শরে তাহার সশর শরাসন ছেদন করিয়া ফেলিলেন। পরবীরহা অভিমন্যু সেই ছিন্ন ধনু পরিত্যাগ করিয়া চর্ম্ম ও নিশিত খড়্গ ধারণ পূর্ব্বক শোভা পাইতে লাগিলেন এবং সেই খড়্গ ঘূর্ণায়মান করিয়া অনেক তারাশোভিত সেই চৰ্ম্ম দ্বারা কৃতহস্তের ন্যায় আত্মবীৰ্য্য প্রদর্শন পূর্ব্বক ভ্রমণ করিতে লাগিলেন। তিনি অসি চৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়া একবার ঘূর্ণায়মান, এক বার উর্ধ্ব ভ্রাম্যমান, এক বার কম্পিত ও এক বার উত্থিত করাতে অসিচর্মের প্রভেদ দৃষ্টিগোচর হইল না। অনন্তর তিনি সিংহনাদ সহকারে হার্দ্দিক্যের রথেষায় লম্ফ প্রদান পূর্ব্বক রথে আরোহণ ও তাঁহার কেশকলাপ গ্রহণ করিয়া পদাঘাতে সারথিকে নিহত করিলেন, খড়্গঘাতে ধ্বজ ছেদন করিলেন এবং গরুড় যেমন সমুদ্রকে ক্ষোভিত করিয়া সর্পকে নিক্ষিপ্ত করিয়াছিল, সেইরূপ অভিমন্যু তাঁহাকে নিক্ষিপ্ত করিলেন। তখন পার্থিবগণ বিগলিত কেশ পৌরবকে সিংহ কর্ত্তৃক পাত্যমান অচেতন বৃষভের ন্যায় বোধ করিতে লাগিলেন।
জয়দ্রথ পৌরবকে অভিমন্যুর বশবর্তী, অনাথবৎ আকৃষ্যমান ও নিপতিত অবলোকন করিয়া ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন এবং সিংহনাদসহ, ময়ূরাঙ্কিত কিঙ্কিণীশত শোভিত, জাল পরিবেষ্টিত চর্ম্ম ও খড়্গ গ্রহণ করিয়া রথ হইতে অবতীর্ণ হইলেন। অভিমন্যু জয়দ্রথকেদর্শন করিয়া পৌরবকে পরিত্যাগ পূর্ব্বক তূর্ণ রথ হইতে অবতীর্ণ হইয়া শ্যেনবৎ নিপতিত হইলেন। শত্রুগণের নিক্ষিপ্ত প্রাস, পট্টিশ ও নিস্ত্রিংশ সকল খড়ঙ্গ দ্বারা ছেদিত ও চর্ম্ম দ্বারা প্রতিহত করিতে লাগিলেন এবং স্বপক্ষ সৈন্যগণকে স্বভুজবীৰ্য্য প্রদর্শনপূর্ব্বক সেই মহাখড়্গ ও চৰ্ম্ম উদ্যত করিয়া, শার্দ্দল যেমন কুঞ্জরের প্রতিগমন করে, তদ্রপ পিতার অত্যন্ত বৈরী, বৃদ্ধক্ষত্ৰনন্দন জয়দ্রথের অভিমুখে পুনর্ব্বার গমন করিলেন। যেমন ব্যাঘ্র ও সিংহ নখদন্ত দ্বারা পরস্পর প্রহার করে, তদ্রূপ তাঁহারা উভয়ে উভয়কে প্রাপ্ত হইয়া হৃষ্ট চিত্তে খড়্গ দ্বারা পরস্পর প্রহার করিতে লাগিলেন। কোন ব্যক্তি অসিচৰ্ম্মের সম্পাতে, অভিঘাতে ও নিপাতে সেই নরসিংহদ্বয়ের প্রভেদ উপলব্ধি করিতে পারিল না। উভয়ের অবক্ষেপ, শস্ত্রান্তর নিদর্শন এবং বাহ্যান্তর নিপাতও নির্বিশেষ লক্ষিত হইতে লাগিল। সেই দুই মহাত্মা যখন বাহ্য ও অভ্যন্তর পথে বিচরণ করিতে আরম্ভ করিলেন, তখন তাঁহারা সপক্ষ পর্ব্বতবৎ প্রতীয়মান হইতে লাগিলেন। অনন্তর যশস্বী অভিমন্যু খড়্গ বিক্ষেপ করিবামাত্র জয়দ্রথ তাঁহার চৰ্ম্মে খড়গাঘাত করিলেন। সেই মহাখড়্গ অভিমন্যুর চৰ্ম্মন্থিত স্বর্ণপত্রের অভ্যন্তরে সংলগ্ন ও জয়দ্রথ কর্ত্তৃক বলপূর্ব্বক কম্পিত হওয়াতে ভগ্ন হইল। দেখিলাম, জয়দ্রথ স্বীয় খড়্গ ভগ্ন হইয়াছে জানিয়া প্লুত গতিতে ছয় পদ গমন করিয়া নিমেষ মাত্রেই পুনরায় রথে আরোহণ করিলেন। এ দিকে অভিমন্যু সমরযুক্ত হইয়া উত্তম রথে অবস্থান করিলে সমস্ত ভূপতিগণ তাঁহাকে চতুর্দ্দিকে বেষ্টন করিলেন। মহাবল অর্জ্জুন নন্দন চৰ্ম্ম ও খড়্গ উৎক্ষিপ্ত করিয়া জয়দ্রথের প্রতি দৃষ্টিপাত পূর্ব্বক সিংহনাদ করিতে লাগিলেন।
হার্দ্দিক্য জয়দ্রথ প্রমুখ কৌরব-পরাজয়
ভাস্কর যেমন ভুবন সন্তাপিত করেন, পরবীরহা অভিমন্যু সিন্ধুরাজকে পরাজিত করিয়া, তাঁহার সৈন্যগণকে সেইরূপ পরিতাপিত করিতে লাগিলেন। শল্য তাঁহার উপর লৌহময়, কনকভূষণ, অতি ভীষণ, অগ্নিশিখার ন্যায় প্রদীপ্ত শক্তি নিক্ষেপ করিলেন। গরুড় যেমন পতন্ত পতঙ্গকে গ্রহণ করে, অভিমন্যু সেইরূপ লম্ফ প্রদান পূর্ব্বক সেই শক্তি গ্রহণ করিয়া স্বীয় অসিকোষ হইতে নিষ্কাসিত করিয়া ফেলিলেন। রাজগণ সেই অমিততেজার ক্ষিপ্রকারিতা ও বলবত্তা অবগত হইয়া সকলে এক কালে সিংহনাদ করিয়া উঠিলেন। অনন্তর পরবীরহা অভিমন্যু শল্যের প্রতি সেই বৈদুর্য্য খচিত শক্তি পরিত্যাগ করিলেন। নির্ম্মোকমুক্ত ভুজঙ্গ সদৃশ শক্তি শল্যের রথে উপস্থিত হইয়া তাঁহার সারথিকে নিহত ও রথ হইতে নিপাতিত করিল। অনন্তর বিরাট, দ্রুপদ, ধৃষ্টকেতু, যুধিষ্ঠির, সাত্যকি, কৈকেয়, ভীম, ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডী, নকুল, সহদেব ও দ্রৌপদীর পুত্রেরা সাধু সাধু বলিয়া চীৎকার করিতে লাগিলেন। নানাবিধ বাণ শব্দ ও বিপুল সিংহনাদ সমুত্থিত হইতে লাগিল; উহা শ্রবণ করিয়া সমরে অপরাঙ্মুখ অভিমন্যু সাতিশয় প্রফুল্ল হইলেন। যেমন জলদজাল পৰ্ব্বতকে আচ্ছন্ন করে, আপনার পুত্রগণ শত্রুর ঈদৃশ বিজয় লক্ষণ সহ্য করিতে না পারিয়া সহসা চতুর্দ্দিক হইতে শরনিকরে সেই রূপ আকীর্ণ করিলেন। শত্ৰুনিপাতন শল্য সারথির পরাভবে ক্রোধপরতন্ত্র হইয়া তাঁহাদিগের প্রিয়াচরণ বাসনায় সুভদ্রানন্দনকে আক্রমণ করিলেন।