১৩তম অধ্যায়
শচীসমীপে সংবাদদাত্রী উপশ্রুতির উপস্থিতি
“অনন্তর উপশ্রুতি পতিব্ৰতা ইন্দ্ৰাণীর নিকট সমুপস্থিত হইলেন। ইন্দ্ৰাণী সেই রূপলাবণ্যসম্পন্ন দেবী উপশ্রুতিকে সন্দর্শন করিয়া যথোচিত উপহারে অর্চ্চনাপূর্ব্বক হৃষ্টান্তঃকরণে কহিলেন, “হে বরাননে! তুমি কে? তোমাকে জানিতে আমার নিতান্ত অভিলাষ হইয়াছে।” উপশ্রুতি কহিলেন, “হে দেবি! আমি উপশ্রুতি, সত্যানুরাগবশতঃ তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিবার নিমিত্ত আগমন করিয়াছি, তুমি একান্ত পতিপরায়ণা ও যমনিয়মসম্পন্না; তোমার মঙ্গল হউক, এক্ষণে তুমি আমার সহিত আগমন কর; আমি তোমাকে বৃত্ৰাসুরনিসূদন পুরন্দরকে প্রদর্শন করাইব।”
“অনন্তর ইন্দ্রমহিষী তাঁহার অনুগমন করিতে লাগিলেন এবং বহুবিধ মহীধর ও রমণীয় দেবারণ্য অতিক্রম করিয়া হিমাচল উল্লঙঘনপূর্ব্বক তাহার উত্তরপার্শ্বে উপস্থিত হইলেন। পরে বহুযোজনাবিস্তীর্ণ অর্ণবসন্নিধানে উপনীত হইয়া পাদপরাজিবিরাজিত লতাজালমণ্ডিত মহাদ্বীপে সমুপস্থিত হইলেন। তথায় চতুর্দ্দিকে শতযোজনবিস্তীর্ণ হংসসারসকুলমুখরিত এক রমণীয় সরোবর সন্দর্শন করিলেন। ঐ সরোবরে ষট্পদগণনিনাদিত পঞ্চবর্ণ সহস্ৰ সহস্ৰ দিব্যকমল বিকসিত রহিয়াছে। তন্মধ্যে গৌরকান্তি উন্নতনাল এক নলিনী শোভা পাইতেছে।
উপশ্রুতিসাহায্যে শচীর ইন্দ্ৰদৰ্শন
“অনন্তর শচী উপশ্রুতিদেবীর সহিত পদ্মের মৃণালদণ্ড [পদ্মনাল] বিদীর্ণ করিয়া তন্মধ্যে প্রবেশপূর্ব্বক বিসতন্তুর [মৃণালমধ্যগত সূত্র] অন্তর্গত সুররাজ ইন্দ্রকে অবলোকন করিলেন। তাঁহারা তথায় পুরন্দরকে সূক্ষ্মরূপে অবস্থান করিতে দেখিয়া আপনারাও তৎক্ষণাৎ সূক্ষ্ম বিগ্ৰহ পরিগ্রহ করিলেন। পরে শচী ইন্দ্রের সুপ্ৰসিদ্ধ পূর্ব্বকর্মের কথা উত্থাপন করিয়া স্তব করিতে লাগিলেন। দেবরাজ তাঁহার স্তবে সন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন, “হে ইন্দ্রাণি! তুমি কি নিমিত্ত আগমন করিয়াছ, আর আমি যে এস্থানে অবস্থান করিতেছি, ইহাই বা কিরূপে অবগত হইলে?” শচী কহিলেন, “হে দেবরাজ! অহঙ্কারপরতন্ত্র মহাবলপরাক্রান্ত দুরাত্মা নহুষ ত্রিলোকের ইন্দ্রত্ব লাভ করিয়া আমাকে কহিয়াছে, “তুমি আমাকে পতিত্বে বরণ কর”; আমি তাহার সহিত এক সময় নিরূপণ করিয়াছি; এক্ষণে আপনি আমাকে রক্ষা না করিলে সেই দুরাত্মা নিশ্চয়ই গ্ৰহণ করিবে। আমি এই নিমিত্ত আপনার নিকট আগমন করিয়াছি; অতএব আপনি বিসতন্তু হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া তেজঃপ্রকাশপূর্ব্বক তাহাকে বিনাশ ও পুনরায় দেবরাজ্য শাসন করুন।’ ”