১৩শ অধ্যায়
যুধিষ্ঠিরের প্রতি আনুষঙ্গিক আশ্বাসপ্রদান
বাসুদেব কহিলেন, “হে বসুধাধিপ! যদ্যপি আমি সে সময়ে দ্বারকায় উপস্থিত থাকিতাম, তাহা হইলে আপনাকে এ ক্লেশ ভোগ করিতে হইত না। রাজা ধৃতরাষ্ট্র, দুৰ্য্যোধন অথবা অন্যান্য কৌরবগণ আমাকে আহ্বান না করিলেও আমি দূতস্থানে আগমন করিতাম, এবং আপনার নিমিত্ত ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ, বাহ্লীক ও রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে আনায়ন করিয়া বহুদোষপ্রদর্শনপূর্ব্বক ‘দ্যূতে প্রয়োজন নাই’ বলিয়া পুত্রগণের পরষ্পর দ্যূতক্রীড়া নিবারণ করাইতাম। অধিক কি কহিব, যে-সকল দোষ স্পর্শ করিয়া মহারাজ আপনি রাজ্যভ্ৰষ্ট হইয়া অশেষ ক্লেশভোগ করিতেছেন, যে-সকল দোষ স্পর্শ করিয়া বীরসেনসূত রাজ্যচ্যুত হইয়াছিল, যে-সকল দোষ স্পর্শ করিলে লোকের অতর্কিত বিনাশ ঘটিয়া থাকে, সেই সকল দোষাদ্ভাবন করিলে কদাচ তাহারা দ্যূতে প্রবৃত্ত হইত না। স্ত্রী, দ্যূত, মৃগয়া ও সুরাপান, এই কামসমুত্থিত ব্যসনচতুষ্টয়দ্বারা লোকসকল শ্ৰীভ্রষ্ট হয়। পণ্ডিতগণ উক্ত চতুবির্ধ ব্যসনই বহু দুঃখের আকর ও দোষাবহ বলিয়া পরিগণিত করিয়াছেন। বিশেষতঃ দূতজ্ঞ ব্যক্তিকর্ত্তৃকই দূতক্রীড়ার সবিশেষ দোষ সমুদ্ভূত হইয়াছে। দূতক্রীড়ায় এক দিবসেই দ্রব্যনাশ, বিপদ্, অভুক্ত [সঞ্চিত-ভোগার্থে রক্ষিত] অর্থের বিনাশ, বাক্পারুষ্য [কথাকার্কশ্য-বাক্যের কর্কশতা] ও অন্যান্য বহুবিধ আনুষঙ্গিক দোষ ঘটিয়া থাকে। অম্বিকাতনয়ের নিকট এই সকল দোষ ব্যক্ত করিলে তিনি কখনও দ্যূতে রত হইতেন না। হে রাজেন্দ্ৰ! সেই সময়ে যদ্যপি রাজা ধৃতরাষ্ট্র মধুর ও হিতকর মদীয় বাক্য গ্ৰহণ করিতেন, তাহা হইলে কুরুকুলের কুশল ও ধর্ম্মবৰ্দ্ধন হইত; নতুবা আমি বলপূর্ব্বক তাহার নিগ্ৰহ করিতাম। ইহাতে তত্ৰস্থ সমস্ত দ্যূতপরায়ণ মিত্ৰাভিমানী অমিত্ৰগণ তাঁহার সহায়তা করিলে, তাহাদিগকেও শমনসদনের আতিথ্যগ্রহণ করাইতাম। কি কহিব, আমি তৎকালে আনর্ত্তদেশে অনুপস্থিত ছিলাম; এই নিমিত্তই আপনারা দুরোদরজনিত বিপদে নিপতিত হইয়াছেন। আমি দ্বারকায় আসিয়া যুযুধানের সকাশে শ্রবণ করিলাম, আপনি দুস্তর বিপদসাগরে মগ্ন হইয়াছেন। অতএব আপনাকে দেখিবার নিমিত্ত অতিমাত্র আকুলহৃদয়ে সত্বরে আসিতেছি। আহা! আপনারা সকলে কি ক্লেশই ভোগ করিতেছেন। হায়! আপনাদিগকে বিপন্ন দেখিতে হইল।