দুই সিংহাসনে তবে বসি দুই জন।
কথায় কথায় জিজ্ঞাসিলেন তখন।।
কহ ভূপ এ দুয়ের শ্রেষ্ঠ কোন্ জন।
শুনিয়া হাসিয়া রাজা বলেন বচন।।
আসন ছত্রেতে বিধি বুঝি লহ মনে।
বামে বসে সাধারণ, প্রধান দক্ষিণে।।
শুনি শনি হয় অতি কোপান্বিত মন।
ম্লানমুখ হয়ে শনি করেন গমন।।
লক্ষ্মী কহিলেন, তুষ্ট করিলে আমায়।
অচলা হইয়া রব তোমার আলয়।।
আশীর্ব্বাদ করি দেবী করেন গমন।
বিষণ্ণ হইয়া রাজা ভাবেন তখন।।
এরূপে শ্রীবৎস রাজা বঞ্চে কত দিন।
ছিদ্র অন্বেষণে শনি ভ্রমে অনুদিন।।
শুন রাজা যুধিষ্ঠির ধর্ম্ম অবতার।
দৈবেতে কুগ্রহ ঘটে শ্রীবৎস রাজার।।
সিংহাসনে স্নান করি বৈসে নরপতি।
হেনকালে শুন নৃপ দৈবের দুর্গতি।।
কৃষ্ণবর্ণ তথা এক কুক্কুর আসিয়া।
সেই জল অকস্মাৎ খাইল চাটিয়া।।
এক ছিদ্র দেখি শনি প্রবিষ্ট হইল।
ক্রমে ক্রমে বুদ্ধি হ্রাস হইতে লাগিল।।
বিষম শনির কোপ বাড়ে অনুদিন।
ক্রমে ক্রমে বৈভবাদি সব হৈল হীন।।
অকস্মাৎ পড়ে গৃহ মন্দির প্রাচীর।
শত শত মঞ্চ সুন্দর মন্দির।।
অকস্মাৎ কোন স্থানে অগ্নিদাহ হয়।
দিবস রজনী প্রায় সব ধূম্রময়।।
বিনা মেঘে রক্তবৃষ্টি হয় চতুর্দ্দিকে।
অকস্মাৎ উল্কাপাত কালপেচাঁ ডাকে।।
দিবসে প্রকাশে সব নক্ষত্র মণ্ডল।
ধূমকেতু খসি পড়ে, অতি অমঙ্গল।।
শনি কোপানলেতে পড়িল নৃপবর।
রাজ্যরক্ষা নাহি হয়, উৎপাত বিস্তর।।
গজ বাজী পদাতি মরিল লক্ষ লক্ষ।
গাভী বৎস পশু পক্ষী নাহি পায় ভক্ষ্য।।
অকস্মাৎ রথধ্বজ ভাঙ্গিতে লাগিল।
দাবানল আসি যেন অরণ্য দহিল।।
শ্রীবৎসের রাজ্যে শনি ঘটান প্রমাদ।
যুবক যুবতী হয় হরিষে বিষাদ।।
কাক শিবা শকুনি গৃধিনী নাচে রঙ্গে।
ভূত প্রেত দৈত্য দানা পিশাচের সঙ্গে।।
বিপদ সাগরে পড়ে শ্রীবৎস নৃপতি।
রোদন করিয়া ফেরে, শুন মহামতি।।
রাজার নিকটে আসি যত প্রজাগণ।
এই দুঃখে দুঃখী হয়ে করয়ে রোদন।।
কোথা বা যাইব, আর কোথা বা রহিব।
অনাহারে মহাকষ্টে কেমনে বাঁচিব।।
তিন দিবা রাত্রি রাজা নগর ভ্রমিয়া।
ঘরে ঘরে দেখিলেন সকল চাহিয়া।।
শঙ্কায় কম্পিত নৃপ হৈল মুহ্যমান।
বিলাপ করিয়া রাণী হইল অজ্ঞান।।
রাজা বলে, কান্দ কেন পাগলের প্রায়।
জনম হইলে মৃত্যু সকলেরি হয়।।
স্বকীয় কর্ম্মের ভোগ হয় যে আমার।
কেন বা রোদন ইথে কর প্রিয়ে আর।।
সসাগরা পৃথিবীর পতি যেই জন।
তাহার এমন দশা দৈবের ঘটন।।
দৈব যাহা করে, তাহা কে করে অন্যথা।
ঈশ্বরের ইচ্ছা হেন, খেদ কর বৃথা।।
আমার একান্ত ভার তাঁহার উপর।
আমি কি করিব চিন্তা, কর্ত্তা ত ঈশ্বর।।