শ্রীকৃষ্ণ বলেন, রাজা করহ শ্রবণ।
শ্রীবৎস রাজার কথা অপূর্ব্ব কথন।।
চিত্ররথ পূর্ব্বে ছিল পৃথিবীর পতি।
তৎপরে শ্রীবৎস হয় তাঁহার সন্ততি।।
একচ্ছত্রে ধরণী শাসিল নরপতি।
রতিপতি সম রূপে, বুদ্ধে বৃহস্পতি।।
সসাগরা বসুন্ধরা শাসি বাহুবলে।
সকল করিল রাজা নিজ করতলে।।
রাজসূয় অশ্বমেধ করে শত শত।
দানেতে দরিদ্রগণে তোষে অবিরত।।
অপ্রমিত গুণ তাঁর বর্ণনা না যায়।
ধার্ম্মিক তাঁহার তুল্য নাহিক কোথায়।।
যেই যাহা বাঞ্ছা করে, তাহা দেন তারে।
দেহ রক্ষা হেতু প্রাণ নাহি দেন কারে।।
চিত্রসেন রাজকন্যা তাঁহার মহিষী।
চিন্তা নামে পতিব্রহা পরমা রূপসী।।
শত শত চান্দ্রায়ন, কত মহাদান।
করিয়াছে কেবা হেন চিন্তার সমান।।
রাজা রাণী ধর্ম্ম কর্ম্ম যা করে যখন।
ঈশ্বরে অর্পণ করে হয়ে শুদ্ধমন।।
একগুণ দান করে শত গুণ হয়।
এইরূপে শ্রীবৎসেন কতকাল যায়।।
শুন হে অপূর্ব্ব কথা ধর্ম্মের নন্দন।
তৎপরে হইল দেখ দৈবের ঘটন।।
একদিন লক্ষ্মী আর শনি মহাশয়।
উভয়েতে বাগযুদ্ধ হয় অতিশয়।।
লক্ষ্মী কহে, আমি শ্রেষ্ঠা, সকল সংসারে।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালেতে কে ছাড়ে আমারে।।
কেমনে বলিলে শনি, তুমি শ্রেষ্ঠ জন।
ত্রিভুবন মধ্যে তোমা কে করে অর্চ্চন।।
এইরূপে দুই জনে হল গণ্ডগোল।
পণ করি দুই জনে আসে ভূমণ্ডল।।
লক্ষ্মী কহে, শ্রীবৎস নৃপতি বিচক্ষণ।
ইহার মধ্যস্থ তবে হৌক সেই জন।।
সূর্য্য পুত্র সিন্ধু কন্যা উভয়ে ত্বরিত।
রাজার পুরেতে আসি হন উপস্থিত।।
শ্রীবৎস নৃপতি যান স্নান করিবোরে।
দুই জন উপনীত দেখিলেন দ্বারে।।
দেখি ব্যস্ত নরপতি রহি যোড়করে।
প্রণাম করিয়া কহে মৃদু মধুস্বরে।।
কি কারণে আগমন হয়েছে এ স্থানে।
শনি কহে, কার্য্য আছে তব সন্নিধানে।।
আমরা দুয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কোন্ জন।
বিচারিয়া কহ রাজা তুমি বিচক্ষণ।।
এত শুনি কহে রাজা বিনয় বচনে।
মীমাংসা করিব কল্য যাহা লয় মনে।।
এই বাক্য করি দোঁহে করেন বিদায়।
স্নান করি নিজালয়ে আসি নৃপরায়।।
রাণীরে কহিল রাজা এই বিবরণ।
শুনিয়া হইল রাণী বিষণ্ণ বদন।।
অমরে অমরে দ্বন্দ্ব করি দুই জনে।
মনুষ্যে মধ্যস্থ করে কিবা সে কারণে।।
ভাল ত লক্ষণ রাজা নহে এ সকল।
না জানি কি হয় বুঝি মম কর্ম্মফল।।
রাজা বলে, চিন্তাদেবী চিন্তা কর মিছা।
হইবে যখন যাহা ঈশ্বরের ইচ্ছা।।
কাল বলবান্ দেবী জানিহ নিশ্চয়।
কালপ্রাপ্ত হলে নর মৃত্যুবশ হয়।।
এমত চিন্তায় গত দিবস শর্ব্বরী।
কাশীদাস কহে, সাধু শুনে কর্ণ ভরি।।