সুরাসুর যক্ষ রক্ষ ভুজঙ্গ কিন্নর।
সবে সিন্ধু মথিল, না জানে মহেশ্বর।।
দেখিয়া নারদ মুনি হৃদয়ে চিন্তিত।
কৈলাসে হরের ঘরে হৈল উপনীত।।
প্রণমিলা শিব-দুর্গা দোঁহার চরণ।
আশিস্ করিয়া দেবী দিলেন আসন।।
দেবী জিজ্ঞাসিলা, কহ ব্রহ্মার নন্দন।
কোথা হতে হেথা তব হল আগমন।।
নারদ বলেন, আমি ছিনু সুরপুরে।
শুনিনু মথিল সিন্ধু যত সুরাসুরে।।
বিষ্ণু পায় কমলা কৌস্তুভ-মণি-আদি।
ইন্দ্র উচ্চৈঃশ্রবা ঐরাবত গজনিধি।।
নানারত্ন পায় লোক, জল জলধর।
অমৃত অমর-বৃন্দ কল্পতুরু বর।।
নানা ধাতু মহৌষধি পায় নরলোক।
এই হেতু হৃদয়ে জন্মিল বড় শোক।।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালে আছয়ে যতজনে।
সবে ভাগ পাইল কেবল তোমা বিনে।।
সে কারণে তত্ত্ব নিতে আইলাম হেথা।
সবার ঈশ্বর তুমি বিধাতার ধাতা।।
তোমারে না দিয়া ভাগ সবে বাঁটি লৈল।
এই হেতু মোর চিতে ধৈর্য্য নাহি হৈল।।
এতেক নারদ মুনি বলিল বচন।
শুনি কিছু উত্তর না কৈল ত্রিলোচন।।
তাহা দেখি ক্রোধে সকম্পিতা ত্রিলোচনা।
নারদেরে কহে তবে করিয়া ভৎসনা।।
কাহারে এতেক বাক্য বল মুনিবর।
বৃক্ষেরে বলিলে যেন না পায় উত্তর।।
কণ্ঠেতে হাড়ের মালা বিভূষণ যার।
কৌস্তুভাদি-মণি-রত্নে কি কাজ তাহার।।
কি কাজ চন্দনে, যার বিভূষণ ধূলি।
অমৃতে কি কাজ, যার ভক্ষ্য সিদ্ধি-গুলি।।
মাতঙ্গে কি কাজ, যার বলদ-বাহন।
পারিজাতে কিবা কাজ, ধুতুরা ভূষণ।।
এ সকল চিন্তি মোর অঙ্গ জরজর।
পূর্ব্বের বৃত্তান্ত সব জান মুনিবর।।
জানিয়া উহারে দক্ষ পূজা না করিল।
সেই অভিমানে তনু ত্যজিতে হইল।।
দেবীবাক্য শুনি হাসি বলেন ঈশান।
যে বলিলা হৈমবতী কিছু নহে আন।।
বাহন ভূষণে মোর কিবা প্রয়োজন।
আমি লই তাহা, যাহা ত্যজে অন্য জন।।
ভক্তিতে করিয়া বশ মাগিলেন দাস।
অম্লান অম্বর পট্টাম্বর দিব্য-বাস।।
ঘৃনা করি ব্যাঘ্রচর্ম্ম কেহ না লইল।
তাই মোরে বাঘাম্বর পরিতে হইল।।
অগুরু চন্দন নিল কুঙ্কুম কস্তূরী।
বিভূতি না লয় তাই সমাদরে ধরি।।
মণি-রত্ন হার নিল মুকুতা প্রবাল।
কেহ না লইল, তাই পরি হাড়মাল।।
ধুতুরা-কুসুম নাহি লয় কোন জন।
তাই কর্ণে ধুতুরা করিনু বিভূষণ।।
রথ গজ লইল বাহন পরিচ্ছদ।
কেন নাহি লয় তাই আছয়ে বলদ।।
অজ্ঞান তিমিরে দক্ষ মোহিত হইল।
মোহে মত্ত হয়ে দক্ষ যজ্ঞ যে করিল।।
সকল দেবেরে পূজি মোরে না পূজিল।
সমুচিত দণ্ড তার তখনি পাইল।।
পশুর সদৃশ হৈল ছাগলের মুণ্ড।
মূত্র-পুরীষেতে পূর্ণ হৈল যজ্ঞকুণ্ড।।
ব্রহ্মা বিষ্ণু ইন্দ্র যম বরুণ তপন।
মোরে না পূজিয়া দেবী আছে কোন্ জন।।
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালেতে দেখ জীবগণে।
আমা ছাড়া কেবা আছে এ তিন ভুবনে।।
দেবী বলে, দারাপুত্রে গৃহী যেই জন।
তাহারে না হয় যুক্ত এ সব বচন।।
বিভূতি-বৈভব-বিদ্যা সঞ্চয়ে যতনে।
সংসারে বিমুখ ইথে আছে কোন্ জনে।।
সংসারেতে যে জন বিমুখ ও সকলে।
কাপুরুষ বলিয়া তাহারে লোকে বলে।।
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-ইন্দ্র আদি যেমন পূজিত।
সাক্ষাতেই সে সকল হইল বিদিত।।
রত্নাকর মথি সবে নিল রত্নধন।
কেহ না পুছিল তোমা করিয়া হেলন।।
পার্ব্বতীর হেন বাক্য শুনিয়া শঙ্কর।
ক্রোধেতে অবশ অঙ্গ কাঁপে থরথর।।
কাশীরাম কহে, কাশীপতি ক্রোধমুখে।
বৃষভ সাজাতে আজ্ঞা করিল নন্দীকে।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।