৮ম অধ্যায়
বিবিধ বর্ষপ্রসঙ্গে শাণ্ডিলী-অধিষ্ঠানকথন
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “হে সঞ্জয়! তুমি বর্ষ, পর্ব্বত ও পর্ব্বতবাসীদিগের নাম নির্দেশ কর।” সঞ্জয় কহিলেন, “মহারাজ! শ্বেতপর্ব্বতের দক্ষিণ ও নিষধগিরির উত্তরে রমণকনামে এক বর্ষ আছে; তথায় মনুষ্যসকল শুদ্ধবংশসমুৎপন্ন, প্রিয়দর্শন ও শত্রুবিহীন। নীলপর্ব্বতের দক্ষিণ ও নিষধের উত্তরে হিরন্ময়নামে বর্ষ আছে; হৈরন্বতীনামে এক স্রোতস্বতী তথায় প্রবাহিত হইয়া থাকে। ঐ স্থানে সর্পরাজ গরুড় অবস্থান করেন; তত্রত্য মনুষ্যসকল যক্ষের অনুগত, মহাবলপরাক্রান্ত প্রিদর্শন, সতত হৃষ্টচিত্ত ও বিপুলধনশালী। এইসকল বর্ষবাসী মানবেরা দুইসহস্রপাঁচশত বৎসর জীবিত থাকে।
“শৃঙ্গবানপর্ব্বতের তিনটি শৃঙ্গ আছে; তন্মধ্যে একটি মণিময়, একটি রজাতময় এবং একটি সর্ব্বরত্নময় ও সুরম্য গৃহপরিশোভিত; তথায় অসামান্য প্রভাবশালিনী শাণ্ডিলীনামে এক দেবী বিরাজিতা আছেন। শৃঙ্গবানের উত্তরে সাগরপারে ঐরাবতবর্ষ; তথায় দিবাকর উত্তাপ প্ৰদান করেন না এবং মনুষ্যেরা কদাচ জরাগ্রস্ত হয় না। চন্দ্ৰ নক্ষত্রমণ্ডলসমভিব্যাহারে তাহার চতুর্দ্দিকে আলোক প্ৰদান করিয়া থাকেন। তথায় পদ্মবৰ্ণ পদ্মনেত্র ও পদ্মগন্ধসম্পন্ন মনুষ্যগণ জন্মগ্রহণ করেন; তাঁহারা দেবলোকচ্যুত ঘর্ম্মসম্পর্কশূন্য, গন্ধপ্রিয়, নিরাহার, জিতেন্দ্ৰিয় ও পাপশূন্য। তত্ৰত্য মানবেরা ত্ৰয়োদশসহস্ৰ বৎসর জীবিত থাকে। ভগবান নারায়ণ ক্ষীরসাগরের উত্তরে কনকময় অনলবর্ণ, দৈবপ্রভাবসম্পন্ন, মনের ন্যায় বেগবান, সুবৰ্ণভূষিত, অষ্টচক্ৰে চালিত রথে উপবিষ্ট থাকেন, তিনি সর্ব্বভূতের বিভু; তিনি ক্ষুদ্র ও বৃহৎ, তিনি সমস্ত করেন ও করাইয়া থাকেন; তিনি পৃথিবী, জল, আকাশ, বায়ু, তেজ ও যজ্ঞস্বরূপ এবং হুতাশন তাঁহার আনন।”
রাজা ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়কর্ত্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া পুত্রদিগের বিষয় চিন্তা করিতে লাগিলেন। পরে সঞ্জয়কে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “হে সঞ্জয়! কালই যে বিশ্ব বিনষ্ট ও পুনর্ব্বার সৃষ্টি করিতেছে, তাহার আর সংশয় নাই। এই পৃথিবীর কোন পদার্থই নিত্য নহে। ভগবান নর ও নারায়ণ সর্ব্বজ্ঞ ও সর্ব্বভূতের সংহর্ত্তা। দেবগণ তাঁহাদিগকে বৈকুণ্ঠ ও মনুষ্যেরা বিষ্ণু বলিয়া থাকে।”