মুনিগণ বলে, কহ ইহার কারণ।
ভগিনীকে দিল নাগ কোন প্রয়োজন।।
মুনি হেতু কি কারণে কন্যার উৎপত্তি।
বিস্তারিত সব কথা কহ পুনঃ সৌতি।।
সৌতি বলে, অবধান কর মুনিগণ।
বাসুকি দিলেন ভগ্নী যাহার কারণ।।
দক্ষের দুহিতা কদ্রু বিনতা সুন্দরী।
স্বামী কশ্যপেরে দোঁহে বহু সেবা করি।।
তুষ্ট হয়ে বলে মুনি, মাগ দোঁহে বর।
ইহা শুনি কদ্রু বলে যুড়ি দুই কর।।
সহস্রেক নাগ হবে আমার কুমার।
এই বাঞ্ছা মোর পূর্ণ কর মুনিবর।।
বিনতা মাগিল বর কশ্যপের পায়।
দুই পুত্র মোরে মুনি দেহ মহাশয়।।
কদ্রু-পুত্রে বলাধিক হইবে নন্দন।
হাসিয়া কশ্যপ বর দিল ততক্ষণ।।
মুনি-বরে দুইজনে হৈল গর্ভবতী।
দোঁহে আশ্বাসিয়া বনে গেল মহামতি।।
কত দিনে দুই জনে প্রসব করিল।
সহস্রেক ডিম্ব প্রসবিল বিনতা সুন্দরী।
রাখিল সকল ডিম্ব স্বর্ণপাত্রে ভরি।।
পঞ্চশত বৎসরে জন্মিল নাগগণ।
মুনি-বরে পায় কদ্রু সহস্র-নন্দন।
বিনতা দেখিয়া তাপ হৃদয়ে ভাবিল।
এককালে দুইজনে ডিম্ব প্রসবিল।।
সহস্র পুত্রের কদ্রু জননী হইল।
কি হেতু না জানি মোর পুত্র না জন্মিল।।
এই ভাবি এক ডিম্ব বিনতা ভাঙিল।
তাহাতে লোহিরবর্ণ পুত্র যে জন্মিল।।
অর্দ্ধাঙ্গ-বিহীন হৈল পক্ষীর আকার।
ক্রোধ করি জননীকে বলিল কুমার।।
পরপুত্র দেখি হিংসা জন্মিল হৃদয়ে।
অকালে ভাঙ্গিলা ডিম্ব, পূর্ণ নাহি হয়ে।।
অঙ্গহীন করি মোরে জন্মাইলা তুমি।
সে-কারণে জননী, শাপিব তোরে আমি।।
যে ভগিনী-পুত্র দেখি হিংসা হৈল মনে।
হইয়া তাহার দাসী সেব চিরদিনে।।
এই ডিম্বে আছে যেবা পুরুষ-রতন।
তাহা হৈতে হবে তব শাপ-বিমোচন।।
মহা-বীর্য্যবান বীর এই ডিম্বে আছে।
অকালে আমায় প্রায় ভাঙ্গি ফেল পাছে।।
আপনি হইবে ভগ্ন সহস্র বৎসরে।
এত বলি প্রবোধ করিল জননীরে।।
হেনমতে একদিন দৈবের ঘটনে।
কদ্রু আর বিনতা আছয়ে একস্থানে।।
উচ্চৈঃশ্রবা অশ্ববর পরম সুন্দর।
সূর্য্যের কিরণ নিন্দি তার কলেবর।।
নানা রত্ন-অলঙ্কার অঙ্গেতে ভূষণ।
মহাবীর্য্যবন্ত অশ্ব পবন-গমন।।
সমুদ্র-মন্থনে সেই অশ্বের উৎপত্তি।
এত শুনি মুনি জিজ্ঞাসিল সৌতি প্রতি।।
সমুদ্র-মন্থন হৈল কিসের কারণ।
কহ শুনি বিস্তারিয়া সূতের নন্দন।।