৮ম অধ্যায়
দুৰ্য্যোধনের দুর্ব্বাসনায় ব্যাসের নিষেধ
“হে মহাপ্রাজ্ঞ ধৃতরাষ্ট্র! আমি সমস্ত কৌরবগণের হিতার্থে যাহা কহিতেছি, সাবধানে শ্রবণ করা। হে মহাবাহো! পাণ্ডবগণ দুর্য্যোধনকর্ত্তৃক অবমানিত হইয়া বনে গমন করাতে আমার নিতান্ত অপ্রীতি জন্মিয়াছে। ত্ৰয়োদশ বৎসর পরিপূর্ণ হইলে তাহারা অশেষবিধ স্বীয় দুঃখ স্মরণে সাতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া অবশ্যই বৈরানিৰ্য্যাতন করিবে। হে রাজন! তোমার পুত্ৰ দুৰ্য্যোধন নিতান্ত মন্দবুদ্ধি; ঐ পাপাত্মা কি নিমিত্ত রাজ্যলোভে প্রতিদিন পাণ্ডবগণের হিংসা করে? তুমি ঐ দুরাত্মাকে নিবারণ করিয়া ক্ষান্ত কর, নচেৎ ও বনবাসী পাণ্ডবগণকে বধ করিতে গিয়া আপনিই কালগ্রাসে পতিত হইবে, সন্দেহ নাই। হে মহারাজ! তুমি ও মহাপ্রাজ্ঞ বিদুর, ভীষ্ম, কৃপ, দ্রোণ আমাদের ন্যায় সাধু। হে প্রাজ্ঞবর! স্বজনের সহিত বিবাদ নিতান্ত নিন্দনীয়; তুমি সেই অধর্ম্ম ও কীর্ত্তিলোপকার কর্ম্মে প্রবৃত্ত হইও না। হে রাজন! লোকে পাণ্ডবগণের প্রতি যেরূপ অনুরাগ করে, তুমি তাঁহার বিপরীত করিলে নিতান্ত অন্যায়াচরণ করা হইবে, সন্দেহ নাই। অতএব তোমার এই দুষ্টপুত্ৰ দুৰ্য্যোধন একাকী পাণ্ডবগণের নিকট বনে গমন করুক। যদি উহার হৃদয়ে পাণ্ডবগণের সহিত একত্ৰ বাসনিবন্ধন স্নেহের আবির্ভাব হয়, তাহা হইলে তুমি কৃতকাৰ্য্য হইবে। কিন্তু সেরূপ হইবার সম্ভাবনা নাই, কেন না, ইহা প্ৰসিদ্ধই আছে, যাহার জন্মাবধি যেরূপ স্বভাব হইয়া থাকে, সে না মরিলে তাহা কদাচ যায় না। যাহা হউক, এক্ষণে ভীষ্ম, দ্ৰোণ, বিদুর ও তুমি এ বিষয়ে কি বিবেচনা করিতেছ? যাহাতে উত্তরকালে তোমাদের মঙ্গল হয়, এমন উপায় স্থির কর।”