৬ষ্ঠ অধ্যায়
স্ত্রীজাতির প্রতি যুধিষ্ঠিরের অভিশাপ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! তপোধনাগ্রগণ্য দেবর্ষি নারদ এই কথা বলিয়া মৌনাবলম্বন করিলে রাজা যুধিষ্ঠির শোকসন্তপ্ত ও নিতান্ত চিন্তাকুল হইয়া দীনমনে অনবরত অশ্রুজল বিসর্জন ও ভুজঙ্গের ন্যায় নিশ্বাস পরিত্যাগ করিতে লাগিলেন। শোকব্যাকুলা কুন্তী ধর্মরাজকে তদবস্থ অবলোকন করিয়া মধুরবাক্যে কহিলেন, “বৎস! শোক পরিত্যাগপূর্বক আমার বাক্য শ্রবণ কর। পূর্বে আমি ও ভগবান্ ভাস্কর আমরা উভয়ে তুমি যে কর্ণের ভ্রাতা, ইহা কর্ণকে বিজ্ঞাপিত করিবার নিমিত্ত বিশেষ যত্ন করিয়াছিলাম। ভগবান সূর্য্য কর্ণকে স্বপ্নবস্থায় সুহৃদের ন্যায় বিবিধ হিতোপদেশ প্রদান করিয়াছিলেন; আমিও বিশেষ যত্নসহকারে তাহাকে অনুনয় করিয়াছিলাম, কিন্তু আমরা উভয়েই কোনক্রমে কৃতকাৰ্য্য হইতে পারি নাই। কর্ণ তৎকালে কোনমতেই তোমার সহিত মিলিত হইতে বাসনা করিল না; প্রত্যুত ক্রমে ক্রমে তোমাদিগের বিলক্ষণ প্রতিকুলাচারী হইয়া উঠিল। আমিও কর্ণকে নিতান্ত দুৰ্বিনেয় [আমার কথিত নীতির অবাধ্য] বোধ করিয়া উপেক্ষা করিতে লাগিলাম।”
শোকাকুল ধর্মাত্মা যুধিষ্ঠির মাতার মুখে এই কথা শুনিয়া বাষ্পকুললোচনে কহিলেন, “জননি! আপনি কর্ণের জন্মবৃত্তান্ত গোপন করাতেই আমাকে বিষম দুঃখভোগ করিতে হইল; অতএব আমি অভিসম্পাত করিতেছি যে, কোন লোকেই কোন রমণী কোন বিষয় গোপন রাখিতে পারিবে না।” শোকাকুলিতচিত্ত রাজা যুধিষ্ঠির এইরূপে স্ত্রীজাতির প্রতি শাপ প্রদান করিয়া পুত্র, পৌত্র ও বন্ধুবান্ধবগণকে স্মরণপূর্বক নিতান্ত উদ্বিগ্নহৃদয়ে সধূম পাবকের ন্যায় অবস্থান করিতে লাগিলেন।