ষষ্ঠ অধ্যায়
রাক্ষস কর্ত্তৃক পুলোমা-হরণ
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, দুরাত্মা রাক্ষস অগ্নির সেই বাক্য শ্রবণ করিয়া বরাহরূপ ধারণপূর্ব্বক ভৃগুজায়াকে অপহরণ করিয়া বায়ুবেগে পলায়ন করিতে লাগিল। তখন পুলোমার গর্ভস্থ বালক রাক্ষসের এইরূপ গর্হিত অনুষ্ঠান অবলোকনে ক্রোধান্বিত হইয়া মাতৃগর্ভ হইতে নির্গত হইলেন। তাহাতেই তাঁহার নাম চ্যবন হইল। রাক্ষসসূর্য্যের ন্যায় তেজস্বী সদ্যোজাত সেই শিশুকে অবলোকন করিবামাত্র পুলোমাকে পরিত্যাগ পূর্ব্বক ভস্মীভূত হইয়া ভূতলে পতিত হইল। অনন্তর দুঃখাভিভূতা পুলোমা ভৃগুর ঔরসপুৎত্র চ্যবনকে ক্রোড়ে লইয়া রোদন করিতে করিতে আশ্রমাভিমুখে গমন করিতে লাগিলেন। সর্ব্বলোকপিতামহ ব্রহ্মা সেই অনিন্দিতা ভৃগুপত্নীকে বাষ্পাকুলিত-লোচনা দেখিয়া সমীপে গিয়া অশেষ প্রকার প্রবোধবাক্যে তাঁহাকে সান্ত্বনা করিলেন। ভৃগুপত্নীর নয়ন-নিপতিত জলধারায় এক মহানদী প্রবাহিত হইল। পিতামহ ব্রহ্মা সেই নদীকে পুৎত্রবধূ পুলোমার অনুসরণ করিতে দেখিয়া তাহার নাম “বধূসরা” রাখিলেন।
পরে পুলোমা চ্যবনকে ক্রোড়ে লইয়া আসিতেছিলেন, ইত্যবসরে মহর্ষি ভৃগু স্নান-পূজাদি সমাপনান্তর প্রত্যাগমনপূর্ব্বক স্বীয় ধর্ম্মপত্নী ও পুৎত্রকে তদবস্থ দেখিয়া ক্রোধান্ধ হইলেন এবং সহধর্ম্মিণী পুলোমাকে সম্বোধনপূর্ব্বক জিজ্ঞাসা করিলেন, “হে মধুরহাসিনি! হরণেচ্ছৃ দুরাত্মা রাক্ষস তোমাকে আমার ভার্য্যা বলিয়া জানিত না, তুমি সত্য করিয়া বল, কে তাহার নিকট তোমার পরিচয় প্রদান করিল? আমি এক্ষণেই সেই পরিচয়দাতাকে শাপ প্রদান করিব। কোন্ ব্যক্তির এই দুষ্টকর্ম্মের অনুষ্ঠানে সাহস হইল? আমার শাপে ভীত না হয়, এমত লোক কে?” ভৃগু কর্ত্তৃক এইরূপে জিজ্ঞাসিত হইয়া পুলোমা কহিলেন, “ভগবন্! অগ্নি সেই রাক্ষসের সমীপে আমার পরিচয় দেন, পরে সেই পাপাত্মা রাক্ষস আমাকে রোরুদ্যমানা কুররীর [উৎক্রোশ পক্ষী –কুরল পাখী] ন্যায় অপহরণ করিল। তদনন্তর এই পুৎত্রের তেজঃপ্রভাবে সে ভস্মীভূত হইয়া ভূমিসাৎ হইয়াছে, তাহাতে আমি রক্ষা পাইলাম।” ভৃগু পুলোমার এই বাক্যশ্রবণে অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হইয়া “অদ্যাবধি তুমি সর্ব্বভক্ষ হইবে” বলিয়া অগ্নিকে শাপ প্রদান করিলেন।