৪র্থ অধ্যায়
দুর্য্যোধন সাহায্যার্থ কর্ণের প্রতি ভীষ্মের অনুজ্ঞা
পিতামহ ভীষ্ম কর্ণের বাক্য শ্রবণ করিয়া প্রীতিপ্রফুল্ল চিত্তে দেশকালোচিত বাক্যে কহিলেন, হে কর্ণ! যেমন সমুদ্র সমুদয় নদীর, দিবাকর সমুদয় জ্যোতির, সাধুগণ সত্যের উর্ব্বরা ভূমি সমুদয় বীজের ও পর্জ্জন্য সমুদয় প্রাণিগুণের অবলম্বন, সেইরূপ তুমি সুহৃদগণের আশ্রয়; অমরগণ যেমন পুরন্দরের অনুজীবী, বান্ধবগণ সেই রূপ তোমার অনুজীবী হউন। তুমি শত্রুগণের মনোহরণ কর এবং বিষ্ণু যেমন দেবগণের আনন্দ বর্দ্ধন করেন, তুমি সেইরূপ মিত্রগণের ও কৌরবগণের আনন্দ বর্দ্ধন কর। তুমি দুর্য্যোধনের হিতাভিলাষে নিজ বাহুবলে রাজপুরে গমন করিয়া কাম্বোজগণ, গিরিব্রজগত নগ্নজিৎ প্রভৃতি ভূপালগণ, অম্বষ্ঠ, বিদেহ, গান্ধার, উৎকল, মেকল, পৌণ্ড্র, কলিঙ্গ, অন্ধ্র, নিষাদ, ত্রিগর্ত্ত ও বাল্মীকগণকে পরাজিত এবং হিমালয়দুৰ্গস্থ রণনিষ্ঠুর কিরাতগণকে দুর্য্যোধনের বশীভূত করিয়াছ। এক্ষণে সবান্ধব দুর্য্যোধনের ন্যায় তুমিও কৌরবগণের আশ্রয় হও। আমি কল্যাণ বাক্যে কহিতেছি, তুমি শত্রুগণের সহিত যুদ্ধ কর, কৌরবপণকে আজ্ঞানুবর্তী করিয়া দুৰ্য্যোধনকে জয়শীল কর। দুৰ্যোধনের ন্যায় তুমি আমাদিগের পৌত্র সদৃশ, আমরা অন্যান্য ব্যক্তির ন্যায় দুর্য্যোধনের অধিকৃত। মনীষিগণ সাধুদিগের পরস্পর সহবাসকে যোনিকৃত সম্বন্ধ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলিয়া থাকেন। তোমার সহিত কৌরবগণের সেই রূপ সম্বন্ধ জন্মিয়াছে; অতএব দুর্য্যোধনের ন্যায় তুমিও মমতা সহকারে কৌরব সৈন্যগণকে পরিপালন কর।
কর্ণ ভীষ্মের বাক্য শ্রবণ করিয়া তাঁহারে অভিবাদন পূর্ব্বক অন্যান্য ধনুর্দ্ধরগণের সমীপে গমন এবং অতি প্রশস্ত সেনা স্থানের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া অস্ত্র শস্ত্রে ও উরস্রাণে সুশোভিত সৈন্যগণকে উৎসাহিত করিলেন। দুর্য্যোধন প্রভৃতি কৌরবগণ মহাবাহু কর্ণকে সেনাগণের অগ্রসর ও যুদ্ধার্থ সমুপস্থিত দেখিয়া হৃষ্টচিত্তে সিংহনাদ ও বিবিধ শরাসন শব্দে তাঁহারে পূজা করিতে লাগিলেন।