৪র্থ অধ্যায়
কর্ণসাহায্যে দুর্য্যোধনের স্বয়ংবরসভা জয়
অতঃপর নারদ কহিলেন, “মহারাজ! এইরূপে মহাবীর কর্ণ ভৃগুবংশপ্রবর পরশুরামের নিকট সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র লাভ করিয়া দুর্য্যোধনের সহিত পরমাহ্লাদে কালযাপন করিতে লাগিলেন। কিয়দ্দিন পরে ভূপালগণ কলিঙ্গদেশে রাজা চিত্রাঙ্গদের রাজধানী। রাজপুরনামক নগরে কন্যালাভার্থ স্বয়ংবরসভায় গমন করিতে লাগিলেন। রাজা দুৰ্য্যোধনও ঐ সংবাদ শ্রবণ করিয়া সূতপুত্রের সহিত সুবর্ণখচিত রথে আরোহণপূর্বক তথায় গমন করিলেন। ঐ স্থানে মহারাজ শিশুপাল, জরাসন্ধ, ভীষ্মক, বক্র, কপোতরোমা, নীল, রুক্মী, স্ত্রীরাজ্যাধিপতি শৃগাল, অশোক, শতধন্বা, ভোজ ও বীর এবং দক্ষিণ পশ্চিম ও উত্তরদেশস্থিত কাঞ্চনাঙ্গদধারী [সুবর্ণবলয়ধারী], সুবৰ্ণবর্ণ, ব্যাঘ্রের ন্যায় বলমদমত্ত[বলবীর্য্যে উদ্ধত], ম্লেচ্ছাধিপতি ভূপালগণ আগমন করিয়াছিলেন। ঐ সমস্ত ভূপতি স্বয়ংবরসভায় উপবিষ্ট হইলে রাজকন্যা ধাত্রী ও বর্ষবরগণ [নপুংশক-হিজরা] সমভিব্যাহারে তন্মধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া ধাত্রীমুখে ভূপালগণের নাম শ্রবণ ও পরিচয় গ্রহণ করিয়া তাঁহাদিগকে অতিক্রম করিতে লাগিলেন। তিনি ক্রমে দুৰ্য্যোধনকেও অতিক্রম করিলেন। তখন বলমদমত্ত ভূপতি দুৰ্য্যোধন উহা সহ্য করিতে সমর্থ না হইয়া অন্যান্য ভূপালগণের প্রতি অসম্মানপ্রদর্শনপূর্বক ভীষ্ম ও দ্রোণের বলবীৰ্য্যসাহায্যে সেই কন্যাকে রথে আরোপিত করিয়া গমন করিতে লাগিলেন। মহাবীর কর্ণ রথারোহণ ও খড়ঙ্গগ্রহণপূর্বক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হইলেন।
“দুৰ্য্যোধন এইরূপে ভূপতিগণের সমক্ষে কন্যাহরণে প্রবৃত্ত হইলে নরপতিগণ যুদ্ধার্থী হইয়া তুমুল কোলাহলসহকারে বৰ্মধারণ ও রথযোজন করিয়া একান্ত ক্রোধাবিষ্টচিত্তে মেঘসকল যেমন পৰ্বতদ্বয়ের উপর সলিল বর্ষণ করে, তদ্রূপ দুৰ্য্যোধন ও কর্ণের উপর অনবরত শরবর্ষণ করিতে লাগিলেন। তখন মহাবীর কর্ণ এক-এক শরে তাঁহাদিগের শর ও শরাসন ছেদন করিয়া ভূতলে নিপাতিত করিলেন। তৎকালে তাঁহার হস্তলাঘবপ্রভাবে সেই শরশরাসনধারী গদাযুদ্ধবিশারদ বীরগণ নিতান্ত ব্যাকুল ও পরাজিত হইয়া ভগ্নান্তঃকরণে স্বয়ং অশ্বসঞ্চালনপূর্বক রণস্থল পরিত্যাগ করিয়া গমন করিতে লাগিলেন। রাজা দুৰ্য্যোধনও কর্ণের ভুজবীর্য্যে রক্ষিত হইয়া কন্যাগ্রহণপূর্বক হৃষ্টান্তঃকরণে [প্রফুল্লচিত্তে] হস্তিনানগরে প্রস্থান করিলেন।”