৩য় অধ্যায়
সূৰ্যোপাসনায় ধৌম্যের উপদেশ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, শৌনক এই প্রকার কহিলে পর রাজা যুধিষ্ঠির ভ্রাতৃগণসমক্ষে পুরোহিতকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “ভগবন্! বেদপারগ ব্ৰাহ্মণগণ আমার অনুগমন করিতেছেন। আমি অতি দুঃখী ও দানশক্তি রহিত, ইঁহাদিগকে পালন করিতে নিতান্ত অসমর্থ; কিন্তু পরিত্যাগ করিতেও পারি না, এক্ষণে আমার কি করা কর্ত্তব্য?”
ধার্ম্মিকপ্রবর ধৌম্য মুহূর্ত্তকাল ধর্ম্মানুগত উপায় চিন্তা করিয়া যুধিষ্ঠিরকে কহিলেন, “প্রথমে ভূতসকল উৎপন্ন হইয়া ক্ষুধায় সাতিশয় কাতর হইতে লাগিল। তখন ভূতপ্ৰসবিতা সূৰ্য্য করুণাপরতন্ত্র হইয়া উত্তরায়ণে গমনপূর্ব্বক রশ্মিদ্বারা তেজ ও রস উদ্ধৃত করিয়া দক্ষিণায়নে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া পৃথিবীতে প্রবিষ্ট হইলেন। রবি ক্ষেত্রভূত হইলে চন্দ্ৰমা আকাশ হইতে তেজ উদ্ধৃত করিয়া সলিলদ্বারা ওষধি উৎপাদনা করিলেন। তদনন্তর বাজসকল নিৰ্গত হইল। সূৰ্য্য পরিশেষে চন্দ্ৰমার তেজোদ্বারা নিষিক্ত ও পবিত্রমধুরাদি-র সসম্পন্ন ওষধিরূপে পরিণত হইয়া পার্থিব প্রাণীগণের অন্নস্বরূপ হয়েন। এই সূৰ্য্যাত্মক অন্ন প্রাণীগণের প্রাণধারণের উপায়। অতএব হে রাজন! সূৰ্য্যই সর্ব্বপ্রাণীর পিতা। তুমি তাহার শরণাপন্ন হও। বিশুদ্ধবংশজাত বিশুদ্ধকর্ম্ম মহাত্মা ভূপতিগণ সমুচিত তপশ্চৰ্য্যদ্বারা প্ৰজাগণকে পরিত্রাণ করেন। ভীম, কার্ত্তবীৰ্য্য, বৈণ্য ও নহুষ, ইহারা তপস্যা, যোগ এবং সমাধিদ্বারা প্ৰজাগণকে আপদ হইতে উদ্ধার করিয়াছিলেন। হে ধর্ম্মাত্মন! আপনিও তাহাদিগের ন্যায় সৎ কর্ম্মানুশীলন দ্বারা বিশুদ্ধ হইয়াছেন; এক্ষণে তপানুষ্ঠান করিয়া ধর্ম্মতঃ দ্বিজাতিগণের ভরণপোষণ করুন।”
জনমেজয় জিজ্ঞাসা করিলেন, হে ব্রাহ্মন্! কুরুচূড়ামণি রাজা যুধিষ্ঠির বিপ্ৰগণের নিমিত্ত কিরূপে বিচিত্রদর্শন সূৰ্য্যদেবের আরাধনা করিয়াছিলেন?
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে রাজেন্দ্ৰ! মহাত্মা ধৌম্য কুন্তীনন্দন যুধিষ্ঠিরকে সূৰ্য্যদেবের যে একশত অষ্টনাম কহিয়াছিলেন, তাহা আনুপূর্ব্বিক কীর্ত্তন করি, আপনি অবহিত, সমাহিত ও শুচি হইয়া শ্রবণ করুন।
সূৰ্য্যের অষ্টোত্তরশতনাম
ধৌম্য কহিলেন, “ওঁ সূৰ্য্য, অৰ্য্যমা, ভগ, তুষ্টা, পূষা, অর্ক, সবিতা, রবি, গভস্তিমান্, অজ, কাল, মৃত্যু, ধাতা, প্রভাকর, পৃথিবী, জল, তেজ, আকাশ, বায়ু, সোম, বৃহস্পতি, শুক্র, বুধ, অঙ্গারক, ইন্দ্ৰ, বিবস্বান্, দীপ্তাংশু, শুচি, শৌরি, শনৈশ্চর, ব্ৰহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র, স্কন্দ, বরুণ, যম, বৈদ্যুতাগ্নি, জাঠিরাগ্নি, ঐন্ধনাগ্নি, তেজঃপতি, ধর্ম্মধ্বজ, দেবকর্ত্তা, বেদাঙ্গ, বেদবাহন, সত্য, ত্রেতা, দ্বাপরি, কলি, কলা, কাষ্ঠী, মুহুর্ত্ত, ক্ষপ, যাম, ক্ষণ, সংবৎসরকার, অশ্বথ, কালচক্র, বিভাবসু, ব্যক্তাব্যক্ত, পুরুষ, শাশ্বত, যোগী, কালাধ্যক্ষ, প্ৰজাধ্যক্ষ, বিশ্বকর্ম্ম, তমোনুদ, বরুণ, সাগর, অংশ, জীমূত, জীবন, আরিহা, ভূতাশ্রয়, ভূতপতি, স্ৰষ্টা, সংবর্ত্তক, বহ্নি, সর্ব্বাদি, আলোলুপ, অনন্ত, কপিল, ভানু, কামদ, জয়, বিশাল, বরদ, মন, সুপর্ণ ভূতাদি, শীঘ্ৰগ, ধন্বন্তরি, ধূমকেতু, আদিদেব, দিতিসূত, দ্বাদশাত্মা, অরবিন্দাক্ষ, পিতা, মাতা, পিতামহ, স্বৰ্গদ্বার, প্ৰজাদ্ধার, মোক্ষদ্বার, ত্রিপিষ্টপ, দেহকর্ত্তা, প্রশান্তাত্মা, বিশ্বাত্মা, বিশ্বতোমুখ, চরাচরাত্মা, সূক্ষ্মাত্মা ও মৈত্ৰেয়। স্বয়ত্ত্ব অমিততেজাঃ সূৰ্য্যের এই অষ্টোত্তরশতনাম কীর্ত্তন করিয়া গিয়াছেন। আমি হিতের নিমিত্ত সুরগণ, পিতৃগণ ও যক্ষগণকর্ত্তৃক সেবিত, অসুর, নিশাচর ও সিদ্ধগণকর্ত্তৃক বন্দিত এবং কনক ও হুতাশনের ন্যায় প্রভাসম্পন্ন ভাস্করকে প্ৰণিপাত করি। যে ব্যক্তি সূৰ্য্যোদয়সময়ে সুসমাহিত হইয়া সূৰ্য্যদেবের এই অক্টোত্তর শতনাম পাঠ করে, তাহার পুত্র, কলাত্ৰ, ধন, রত্ন, ধূতি, মেধা ও জাতিস্মরত্ব লাভ হয়। পবিত্র ও একাগ্রচিত্ত হইয়া দেবেশ্বর দিবাকরের এই স্তোত্ৰ কীর্ত্তন করিলে শোক, বন, অগ্নি ও সাগর হইতে পরিত্রাণ এবং অভীষ্টসিদ্ধি হয়।”
যুধিষ্ঠিরকৃত সূৰ্য্যস্তব
রাজা যুধিষ্ঠির ধৌম্যের তৎকালোচিত বাক্য শ্রবণ করিয়া সংযতচিত্তে পুষ্পোপহার ও বলিদ্বারা দিবাকরের অর্চনা করিয়া তপশ্চৰ্য্যায় প্রবৃত্ত হইলেন। তিনি জলে অবগাহনপূর্ব্বক সূৰ্য্যাভিমুখ হইয়া প্ৰাণায়ামসহকারে একাগ্রচিত্তে পবিত্ৰ-বাক্যে তাঁহার স্তব করিতে আরম্ভ করিলেন। “হে ভানো! তুমি জগতের চক্ষু, তুমি সকল দেহীর আত্মা, তুমি সকল জীবের জনক এবং ক্রিয়াবানের ক্রিয়া; তুমি সাংখ্যাদিগের গতি ও যোগিগণের প্রধান আশ্রয়; তোমার পথ অনাবৃত ও অনর্গল; তুমিই মুমুক্ষুদিগের গতি, তুমি লোকসকল ধারণ, প্রকাশ, পবিত্র ও অকপটে প্রতিপালন করিতেছ; বেদপারগ ব্ৰাহ্মণগণ আপনাপন শাখাবিহিত মন্ত্রদ্বারা তোমাকে অৰ্চনা করেন ও বাঞ্ছিত ফল-প্রার্থনায় তোমার অপ্ৰতিহতগতি দিব্যরথের অনুগমন করিয়া থাকেন; সিদ্ধ, চারণ, গন্ধর্ব্ব, যক্ষ, গুহ্যক ও পন্নগগণ, নারায়ণ, ইন্দ্ৰ, ত্ৰয়স্ত্রিংশৎ দেবতা ও বৈমানিকগণ তোমাকে কামনা করিয়া সিদ্ধিপ্ৰাপ্ত হইয়াছেন; প্রধান প্রধান বিদ্যাধরগণ দিব্য মন্দারমালাদ্বারা তোমার অর্চনা করিয়া আপনাদের মনোরথ পূর্ণ করিয়াছেন; গুহ্যক, দিব্য ও মানুষ সপ্তপিতৃগণ, বসু, মরুৎ, রুদ্র, সাধ্য এবং মরীচিপায়ী বালখিল্য প্রভৃতি সিদ্ধগণ তোমার পূজা করিয়া প্রাধান্য লাভ করিয়াছেন; যাহা তোমাতে নাই, তাহা ব্ৰহ্মলোক প্রভৃতি সপ্তলোকে নাই। অন্যান্য অনেক তেজস্বী ও মহৎ মহৎ জীব আছে, কিন্তু তোমার যে প্রকার দীপ্তি ও প্রভাব, তাহা আর কাহারও নাই; তোমাতেই সত্য, সত্ত্ব, সকল জ্যোতিঃ ও সমুদয় সাত্ত্বিকভাব বিদ্যমান; তুমিই সকল জ্যোতির অধীশ্বর; নারায়ণ যদ্দ্বারা দানবগণের দর্পহারী হইয়াছেন, বিশ্বকর্ম্মা তোমারই তেজো দ্বারা সেই সুনাভি চক্র নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। তুমি নিদাঘসময়ে রশ্মিদ্বারা তেজ গ্রহণ করিয়া পুনর্ব্বার বর্ষাকালে সমুদয় প্রাণী ও ওষধিগণকে সেই তেজ বিতরণ কর; তোমার কিরণজালের মধ্যে কতকগুলি উত্তাপ প্ৰদান করে, কতকগুলি দহনশক্তি ধারণ করে, আর কতকগুলি ঘনীভূত হইয়া বর্ষাকালে গর্জ্জন, বিদ্যোতন [বিদ্যুৎস্ফুরণ] ও বারিবর্ষণ করে; শীত-বাতাদ্দিত ব্যক্তিরা তোমার করণিকরদ্ধারা যেরূপ সুখানুভব করে, কি অগ্নি, কি প্রাবরণ [গাত্রাবরণ—গাত্ৰবন্ত্র], কি কম্বল, কেহই সেরূপ সুখ প্ৰদান করিতে পারে না। তুমি ত্ৰয়োদশদ্বীপা পৃথিবীকে কিরণদ্বারা উদ্ভাসিত কর; তুমি একমাত্র ভুবনত্রয়ের একমাত্ৰ শুভদাতা; যদ্যপি তোমার উদয় না হয়, তাহা হইলে এই জগৎ অন্ধতমসে [গাঢ় অন্ধকার] আবৃত হইয়া থাকে ও পণ্ডিতগণ ধর্ম্মার্থকামেও প্রবৃত্ত হইতে পারেন না; ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যগণ তোমার প্রসাদে আধান, পশুবন্ধ, ইষ্ট, মন্ত্র, যজ্ঞ, তপ প্রভৃতি ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করেন। কালজ্ঞ পণ্ডিতেরা কহিয়াছেন, তুমিই সহস্ৰযুগপরিমিত ব্ৰাহ্ম দিবসের আদি ও অন্ত, তুমি সমুদয় মনু, মনুপুত্র, মানব, মন্বন্তর ও সকল ঈশ্বরের ঈশ্বরী; তোমার ক্ৰোধ-বিনিঃসৃত সংবৰ্ত্তক-নামা অগ্নি সংহারসময়ে সমুদয় সংসার ভস্মসাৎ করে, তোমার দীধিতিসমূৎপন্ন নানাবর্ণ মেঘ ঐরাবত ও অশনি-সমভিব্যাহারে আবির্ভূত হইয়া ভূতসমূদয়ের উপপ্লব প্রদর্শন করে এবং তুমি আপনাকে দ্বাদশধা করিয়া দ্বাদশ মূর্ত্তি ধারণপূর্ব্বক স্বীয় রশ্মিদ্বারা সমুদয় সাগর শোষণ করিয়া থাক; তুমি ইন্দ্ৰ, তুমি বিষ্ণু, তুমি রুদ্র, তুমি প্রজাপতি, তুমি অগ্নি, তুমি সূক্ষ্ম মন, তুমি প্ৰভু, তুমি সনাতন ব্ৰহ্মা; তুমি হংস, সবিতা, ভানু, অংশুমালী, বৃষাকপি; তুমি বিবস্বান্, মিহির, পূষা, মিত্র এবং ধর্ম্ম; তুমি সহস্ররশ্মি আদিত্য, তপন ও কিরণাধিরাজ; তুমি মাৰ্ত্তণ্ড, অর্ক, রবি, সূৰ্য্য, শরণ্য ও দিনকৃৎ; তুমি দিবাকর, সপ্তসপ্তি, ধামকেশী ও বিরোচন; তুমি আশুগামী, তমোহন্তা ও হরিতাশ্ব; যে ব্যক্তি অনির্ব্বিণ্ন ও অনহঙ্কারী হইয়া ষষ্ঠী বা সপ্তমীতে ভক্তিপূর্ব্বক তোমার পূজা করে, সে লক্ষ্মীপ্রাপ্ত হয়; যে ব্যক্তি অনন্যমনঃ হইয়া তোমার বন্দনা করে, তাহার আধি-ব্যাধি ও আপদ দূরীভূত হয়, তোমার ভক্তসকল রোগ ও পাপবিবর্জ্জিত এবং চিরজীবী হইয়া সুখে কালব্যাপন করে; আমি শ্রদ্ধাসহকারে আতিথ্য করিবার নিমিত্ত অন্ন কামনা করিতেছি। হে অন্নপত্যে! আমাকে অন্ন প্রদান কর; তোমার চরণাশ্রিত অনুচরগণকে ও মাঠর, অরুণ, দণ্ড প্রভৃতিকে নমস্কার করি; ক্ষুভা ও মৈত্রী প্রভৃতি ভূতমাতৃগণকে প্ৰণাম করি; আমি তাহাদের শরণাপন্ন হইলাম, তাহারা আমাকে রক্ষা করুন।’
যুধিষ্ঠিরের সূৰ্য্যদত্ত অক্ষয়স্থলীলাভ
দিবাকর যুধিষ্ঠিরের স্তবে প্রীত হইয়া প্ৰজ্বলিত হুতাশনের ন্যায় দীপ্যমান-শরীরে তাহার সমীপে আবির্ভূত হইলেন ও কহিলেন, “তোমার সমুদয় অভিলাষ সফল হইবে। আমি দ্বাদশ বৎসর অন্ন প্ৰদান করিব। হে নিরাধিপ! আমার প্রদত্ত তাম্রনির্ম্মিত এই স্থালী গ্রহণ কর; পাঞ্চালীর ভোজনের পূর্ব্বে এই পাত্ৰস্থ খাদ্যসম্ভার নিঃশেষিত হইবে না, তোমাদের পাকশালায় পক্ক ফল, মূল, শাক, আমিষ প্রভৃতি চতুর্ব্বিধ অন্ন অক্ষয় হইয়া থাকিবে। ত্ৰয়োদশ বৎসর পূর্ণ হইলে পুনরায় তুমি রাজ্য প্রাপ্ত হইবে।” ভগবান মরীচিমালী ইহা কহিয়া অন্তর্হিত হইলেন।
যে কোন ব্যক্তি বাঞ্ছিত-ফলপ্রার্থনায় পবিত্ৰ মনে এই স্তোত্র পাঠ করেন, ভগবান সহস্ৰদীধিতি তাহাকে তাঁহাই প্ৰদান করেন এবং তাঁহার মনোরথ অসুলভ হইলেও পরিপূর্ণ করেন। প্রতিদিন ইহা ধারণ বা শ্রবণ করিলে পুত্রার্থী পুত্র, ধনার্থী ধন এবং বিদ্যার্থী বিদ্যালাভ করেন। যদি স্ত্রী কিংবা পুরুষ প্রত্যহ প্ৰাতঃকালে ও সায়ংকালে ইহা পাঠ করেন, তাহা হইলে আপদ ও বন্ধন হইতে মুক্ত হয়েন। প্রথমে ব্ৰহ্মা এই স্তব মহাত্মা ইন্দ্রকে প্রদান করিয়াছিলেন, অনন্তর নারদ ইন্দ্ৰ হইতে এবং ধৌম্য নারদ হইতে প্রাপ্ত হয়েন। রাজা যুধিষ্ঠির ধৌম্যের নিকটে এই স্তোত্র প্রাপ্ত হইয়া আপ্তকাম হইলেন। যিনি ইহা পাঠ করেন, তিনি সংগ্রামে জয় প্রাপ্ত হয়েন, বিপুল ধনলাভ করেন এবং সকল পাপ হইতে মুক্ত হইয়া সূৰ্য্যলোকে গমন করেন।
দ্বিজগণসহ যুধিষ্ঠিরের কাম্যাকবনে গমন
বৈশ্যম্পায়ন কহিলেন, ধর্ম্মাত্মা কৌন্তেও বরলাভানন্তর জল হইতে উত্তীর্ণ হইয়া ধৌম্যের পাদবিন্দনপূর্ব্বক ভ্রাতৃগণকে আলিঙ্গন করিয়া দ্ৰৌপদীর সমীপে গমন করিলেন। পাঞ্চালী তাঁহার বন্দনা করিলে তিনি পাকশালায় গমন করিয়া পাকক্রিয়া সম্পন্ন করাইলেন। সেই চতুর্ব্বিধ অন্ন অত্যল্পপরিমাণে প্রস্তুত হইলেও অক্ষয় রূপে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইত। তিনি সেই অন্ন দ্বারা দ্বিজগণকে ভোজন করাইতেন। তাহারা ভোজন করিলে, রাজা যুধিষ্ঠির ভ্রাতৃগণকে ভোজন করাইয়া পশ্চাৎ বিঘাসনামক ভুক্তিশেষ স্বয়ং ভোজন করিতেন। তদনন্তর দ্রৌপদী ভোজন করিলে সেই অন্ন নিঃশেষ হইয়া যাইত। দিবাকরসমপ্রভ যুধিষ্ঠির দিবাকর হইতে এইরূপে পূৰ্ণকাম হইয়া ব্রাহ্মণদিগকে অন্ন প্রদানপূর্ব্বক গাৰ্হস্থ্য ধর্ম্ম প্রতিপালন করিতেন। পাণ্ডবগণ তিথিনক্ষত্রবিশেষে ও পর্ব্বাহে পুরোহিতের অনুবর্ত্তী হইয়া বিধি, মন্ত্র ও প্রমাণানুসারে যজ্ঞ সম্পাদন করিতে লাগিলেন। অনন্তর স্বস্ত্যয়ণপূর্ব্বক ধৌম্য-সমভিব্যাহারে দ্বিজগণে পরিবৃত হইয়া কাম্যাকবনে প্ৰস্থান করিলেন।