০০৩. গ্রন্থ-সূচনা

বেদ রামায়ণে আর আছয়ে ভারতে।
ইত্যাদি যতেক শাস্ত্র আছে ত্রিজগতে।
এ সকল বিচারিয়া কহি পুনঃ পুনঃ ।
আদি অন্ত মধ্যে সব হরিগুণ-গান।।
সর্ব্বশাস্ত্র বিচারিয়া কহি পুনর্ব্বার।
শ্রীমহাভারত-গ্রন্থ সর্ব্বশাস্ত্র-সার।।

সর্ব্বশাস্ত্র বীজ হরিনাম দ্বি-অক্ষর।
আদি অন্ত নাহি যার বেদে অগোচর।।
প্রণমহ পুস্তক ভারত-নামধর।
যাহার শ্রবণেতে নিষ্পাপ হয় নর।।

পরাশর-সুতমুখে হইল সম্ভব।
অমল কমল দৈব্য ত্রৈলোক্য-বল্লভ।।
ব্রহ্মা আদি দেবতার শ্রবণ বাঞ্ছিত।
বিবিধ পুরাণে গ্রন্থ ভারত সঙ্গীত।।
গীতি অর্থ কৈল তাহে সুগন্ধি নির্ম্মাণ।
চিত্র বিচিত্র কথা ভারত আখ্যান।।
হরিতে সদ্ভক্তি যেই প্রচণ্ড তপনে।
ভারত-পঙ্কজ ফুটে যার দরশনে।।
সজ্জন সুবুদ্ধিলোক হইয়া ষট্‌পদী।
ভারত-পঙ্কজ-মধু পিয়ে নিরবধি।।
বিপুল বৈভব ধর্ম্ম, জ্ঞানের প্রকাশ।
কলির কলুষ যত হয় তাহে নাশ।।
ষষ্টি লক্ষ গ্রন্থ ব্যাস ভারত রচিল।
ত্রিশ লক্ষ শ্লোক তার দেবলোকে নিল।।
সুরলোকে পড়েন নারদ তপোধন।
ইন্দ্র আদি দেবতারা করেন শ্রবণ।।
পঞ্চদশ লক্ষ শ্লোক পিতৃগণ শুনে।
অসিত দেবল তথা করেন পঠনে।।
শুকদেব-মুখে শুনে গন্ধর্ব্ব যক্ষ রক্ষ।
মহাভারতের শ্লোক চতুর্দশ লক্ষ।।
একলক্ষ শ্লোক প্রচারিল মর্ত্তপুরে।
সংসারো-নরক হৈতে উদ্ধারিতে নরে।।
বৈশম্পায়ন কহেন জন্মেজয় শুনে।
পরম পবিত্র কথা ব্যাসের রচনে।।
চারি বেদ ষট্‌ শাস্ত্র একভিতে কৈল।
ভারত-সংহিতা মুনি তুলেতে তুলিল।।
ভারেতে অধিক তেঁই হইল ভারত।
বিবিধ পুরান গ্রন্থ যাহার সম্মত।।
সুরাসুর নাগ নর এ তিন ভুবনে।
সংসারের মধ্যে যত হৈল পূণ্যজনে।।
সবার চরিত্র এই ভারত-ভিতর।
যাহার শ্রবণে পাপহীন হয় নর।।
সর্ব্বশাস্ত্র মধ্যে যার প্রধান গণন।
দেবগন মধ্যে যথা দেব নারায়ণ।।
নদ-নদীগণ যেন প্রবেশে সাগর।
সকল পুরাণ-কথা ভারত ভিতর।।
অনেক কঠোর তপে ব্যাস-মহামুনি।
রচিলা বিচিত্র গ্রন্থ ভারত-কাহিনী।।
শ্লোকচ্ছন্দে সংস্কৃত বিরচিলা ব্যাসে।
গীতিচ্ছন্দে কহি তাহা শুন অনায়াসে।।

============
আরেকটি ভার্সন-
===========
হরিনাম সর্বশাস্ত্র বীজ দ্বি-অক্ষর।
অন্ত নাহি আদি নাহি, বেদে অগোচর।।
কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন করে ভারত রচন।
ত্রৈলোক্য দুর্লভ হয়, অমূল্য রতন।।
অর্থ গীতি তাহে কৈল, সুগন্ধি নির্ম্মাণ।
রচিত কেশর তাহে, বিবিধ আখ্যান।।
বিপুল বৈভব ধর্ম্ম, জ্ঞানের প্রকাশ।
কলির কলুষ যত হয় তাহে নাশ।।
ষাটলক্ষ শ্লোকে ব্যাস ভারত রচিল।
শ্লোক তার ত্রিশলক্ষ, দেবলোকে দিল।।
পড়িল দেবলোকে, নারদ তপোধন।
ইন্দ্র আদি দেবতারা করেন শ্রবণ।।
পনেরো লক্ষের শ্লোক পরম যতনে।
অসিত দেবল মুখে পিতৃলোক শুনে।।
শুকদেব মুখে শুনে গন্ধর্ব্বাদি যক্ষ।
মহাভারতের শ্লোক চতুর্দশ লক্ষ।।
প্রচারিত লক্ষশ্লোক হ’ল ধরাপরে।
সংসার নরক হ’তে উদ্ধারিতে নরে।।
কহেন বৈশম্পায়ন জন্মেজয় শুনে।
পরম পবিত্র কথা ব্যাসের বচনে।।
ষট্‌শাস্ত্র চারি বেদ একভিতে কৈল।
ভারত গ্রন্থের সনে ওজনে তুলিল।।
ভারেতে অধিক তবে হইল ভারত।
বিবিধ পুরান গ্রন্থ যাহার সম্মত।।
সবার চরিত্র এই ভারত-ভিতর।
শ্রবণেতে নাশ হয় যায় পাপ ভার।।
সকল শাস্ত্রের মাঝে প্রধান গণন।
দেবগন মধ্যে যথা দেব নারায়ণ।।
অনেক দুরন্ত তপে ব্যাস মহামুনি।
রচিল বিচিত্র গ্রন্থ ভারত কাহিনী।।
ভারত পুস্তক গ্রন্থ বিদিত ভুবন।
পঠনে শ্রবণে লভে দিব্যমুক্তি-ধন।।