হ্যাঁ

হ্যাঁ আমি হ্যাঁ তুমি হ্যাঁ তোমরা হ্যাঁ আমরা
হ্যাঁ আমাদের কিছু একটা করার থাকে কখনো না কখনো
হ্যাঁ এমন কিছু যা হয়তো সোনালি রেখার মতো রহস্যময় নয়
হ্যাঁ জ্যোৎস্না রাতে সারসের হঠাৎ পক্ষধ্বনির মতো নয় হয়তোবা
অথচ আমাদের বেঁচে থাকার সংকেত
হ্যাঁ সংবাদপত্রে যৌথ দুর্দশা পড়া ডাকঘরে চিঠি পোস্ট করা
হ্যাঁ বাসে চড়া হ্যাঁ চায়ের কাপে ঝড় তোলা
হ্যাঁ দুঃসময়ের ছায়ায় চুমো খাওয়া
হ্যাঁ নিসর্গের অন্তঃপুরে কারো হাত ধরে হেঁটে যাওয়া
হ্যাঁ টাইপরাইটারে স্বপ্ন লেখা খাটে ব’সে পা দোলানো
হ্যাঁ চুল আঁচড়ানো খুসকি তুলে আনা
হ্যাঁ মধ্যাহ্নে পাখিডাকা পার্কের প্রিয় সম্ভাষণ শোনা
হ্যাঁ অপরাহ্নে সিঁড়ি বেয়ে কলিংবেল বাজানো
হ্যাঁ অন্ধকারে লিরিকের মতো রাজহংসী দেখা
হ্যাঁ সকালবেলার রোদে প্লেটে ফলের ঘুম দেখা

হ্যাঁ এ ধরনের কত কিছু করার থাকে হ্যাঁ থাকে কখনো না কখনো
হ্যাঁ এই তো সেদিন ম্যান্ডোলিন শুনে
হ্যাঁএকরাশ সূর্যমুখীর ভেতর থেকে একটা বাঘ বেরিয়ে এলো
হ্যাঁ সেই বাঘ ডোরাকাটা কিনা মনে নেই
হ্যাঁ জ্বলজ্বলে সেই বাঘ সূর্যমুখী ফুলগুলি খেতে খেতে
হ্যাঁ নিজেই বিপুল এক সূর্যমুখী
হ্যাঁ সেই উন্মদ ভ্যানগগ তাঁর শীতার্থ ঘরে কিংবা হলদে ক্ষেতের ধারে
হ্যাঁ ত্রিকাল চিবোতে চিবোতে কালো রুটির মতো চিবোতে চিবোতে
হ্যাঁ সূর্যমুখী এঁকেছিলেন নিজেকে প্রতিটি পাপড়িতে মেলে দিয়ে

হ্যাঁ আমি মাঝে মাঝে সূর্যমুখী নয় শব্দ লিখি
হ্যাঁ লিখি

হ্যাঁ সেই শব্দাবলির শরীর থেকে ভেসে আসে
হ্যাঁ ভেসে আসে সূর্যমুখী চিতাবাঘ আর হরিণের ঘ্রাণ
হ্যাঁ ভেসে আসে গোরখোদকের ঘামের ঘ্রাণ
হ্যাঁ ভেসে আসে শ্রমিকের ঘুমের ঘ্রাণ
হ্যাঁ ভেসে আসে লতাগুল্ম ফলমূলের ঘ্রাণ
হ্যাঁ ভেসে আসে আসবাবপত্রের ঘ্রাণ
হ্যাঁ ভেসে আসে মা আর সন্তানের চুমোর ঘ্রাণ
হ্যাঁ ভেসে আসে নারীর ভেজা চুল আর স্তনের ঘ্রাণ
হ্যাঁ ভেসে আসে প্রেমিকের স্বপ্নের ঘ্রাণ
হ্যাঁ ভেসে আসে দুঃখিত মানুষের অশ্রুর ঘ্রাণ

হ্যাঁ আমি হ্যাঁ তুমি হ্যাঁ তোমরা হ্যাঁ আমরা
হ্যাঁ আমাদের একটা কিছু দেখার থাকে কখনো না কখনো
হ্যাঁ দেখি টিলায় দাঁড়িয়ে দেখি আকাঙ্ক্ষার সূর্যোদয়
হ্যাঁ বালিয়াড়িতে শুয়ে শুয়ে দেখি প্রেমের সূর্যাস্ত
হ্যাঁ দেখি আধপোড়া সিগারেট আর বিয়ারের শূন্য বোতল নাচে
হ্যাঁ অন্তহীন প্রান্তরে স্বপ্নের মতো ঘোড়া
হ্যাঁ দেখি একটা সিংহ চাঁদকে চুমো খেতে খেতে ব্যাঞ্জো নিয়ে

হ্যাঁ জ্যোৎস্নায় মিলিয়ে যায়
হ্যাঁ দেখি ঝরনার ঝলমলে পাতা হয়ে দোলে মরূদ্যানে
হ্যাঁ লিওনার্দো দা ভিঞ্চির হাত একালের চুলে বিলি কাটে
হ্যাঁ দেখি খৈয়ামের খুলি গোলাপে তোড়া হয়ে
হ্যা পড়ে থাকে পুরোনো প্রাসাদের নাচঘরে
হ্যাঁ দেখি ইয়ুং স্বপ্নারণ্যে হেঁটে যান ছড়ি হাতে
হ্যাঁ দেখি ইয়ুংয়ের
কোট অবচেতনের মুখোমুখি মাতাডোরের পোশাক
হ্যাঁ দেখি র্যাঁ বো ল্যাম্পপোস্টে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন কবিতা
হ্যাঁ দেখি আইনস্টাইন ওভারকোট আর বেহালার বাক্স নিয়ে
হ্যাঁ পার হচ্ছেন গনগনে জার্মানির সীমান্ত
হ্যাঁ দেখি মরুশেয়াল রুমেলের মুঠো থেকে বেরিয়ে আসছে ট্যাঙ্ক

হ্যাঁ দেখি বুখেনওয়াল্ড আর আউসউইজ-এ পুরোনো জুতোর
স্তূপ কাটা চুল
হ্যাঁ দেখি বুলেটবিদ্ধ বাংলাদেশের ভাঙ্গা চুড়ি ছেঁড়া পুঁতির মালা
হ্যাঁ দেখি বাংলাদেশের আগুনে ঝলসে যাওয়া মুখ

হ্যাঁ দেখি জনাব মরণ বায়তুল মোকাররমে লাল নীল সবুজ শার্ট
হ্যাঁ হলদে বেগনি ফিরোজা ট্রাউজার
হ্যাঁ দেখি জনাব মরণ বায়তুল মোকাররমে লাল নীল সবুজ শাড়ি
হ্যাঁ হলদে বেগনি ফিরোজা ব্লাউজ
হ্যাঁ দেখি জনাব মরণ রাশি রাশি সাদা বাদামি ব্রা
হ্যাঁ দেখি বেলুনের মতো ছুড়ে দিচ্ছেন আকাশের দিকে
হ্যাঁ দেখি জনাব মরণ আতর-অলার কাঁধের ওপর দিয়ে গলা বাড়িয়ে
হ্যাঁ জনাব মরণ সংবাদপত্রে পড়ছেন শোক সংবাদ
হ্যাঁ জনাব মরণ দস্তানা খুলে ঈগলের চোখের মতো আংটি দেখাচ্ছেন
হ্যাঁ দেখাচ্ছন যখন তখন যেন কালো স্যুট পরা জাদুকর
হ্যাঁ দেখি সভ্যতার চোখে সূর্য অস্ত যায় অস্ত যায়

হ্যাঁ আমি হ্যাঁ তুমি হ্যাঁ তোমরা হ্যাঁ আমরা
হ্যাঁ আমাদের সামনে কালো পাখির মতো ঝাঁক ঝাঁক না উড়ছে
হ্যাঁ ওরা ঝাঁক ঝাঁক না বসছে কার্নিশে মিনারে চঞ্চু ঘষছে বারংবার
হ্যাঁ আমি হ্যাঁ তুমি হ্যাঁ তোমরা হ্যাঁ আমরা হ্যাঁ রৌদ্রে
হ্যাঁ হ্যাঁ রৌদ্রে মুছে ফেলব ওদের ডানার কালো রঙ
হ্যাঁ ওদের রুপালি নক্ষত্র বানিয়ে দেব
হ্যাঁ ওদের বানিয়ে দেব আগামীর একগুচ্ছ গোলাপ
হ্যাঁ প্রত্যেক ধূলিকণাকে দেব গিটারের সুর
হ্যাঁ শহরের প্রতিটি ঘরের ছাদকে বানাব মুকুট
হ্যাঁ হ্যাঁ-স্পর্শে হ্যাঁ-চুম্বনে শূন্যতাকে বানাব সঙ্গীতময় জলসা