হেলং

এ যেন আরণ্য প্রেত-রাত্রির শিয়রে এক মুঠো
জ্যোৎস্নার অভয়।
অন্তত তখন তা-ই মনে হয়েছিল
সুন্দরী হেলং, সেই পাহাড়িয়া বৃষ্টির তিমিরে।
সকাল থেকেই সূর্য নিখোঁজ। দক্ষিণে
স্পর্ধিত পাহাড়। বাঁয়ে অতল গড়খাই
উন্মাদ হাওয়ার মাতামাতি
শীর্ণ গিরিপথে।
যেন কোনো রূপকথার হৃতমণি অন্ধ অজগর
প্রচণ্ড আক্রোশে তার গুহা থেকে আথালি-পাথালি
ছুটে আসে; শত্রু তার পলাতক জেনে
নিজেকে দংশন হানে, আর
মৃত্যুর পাখসাট খায় পাথরে-পাথরে।

উপরে চক্রান্ত চলে ক্রূর দেবতার। ত্রস্ত পায়ে
নীচে নেমে আর-এক বিস্ময়।
এ কেমন অলৌকিক নিয়মে নিষ্ঠুর
ঝঞ্চা প্রতিহত, হাওয়া নিশ্চুপ এখানে।
নিত্যকার মতোই দোকানি
সাজায় পসরা, চাষি মাঠে যায়, গৃহস্থ-বাড়ির
দেয়ালে চিত্রিত পট, শান্ত গাঁওবুড়া
গল্প বলে চায়ের মসলিসে।
দুঃখের নেপথ্যে স্থির, আনন্দের পরম আশ্রয়
প্রাণের গভীরে মগ্ন, ক্ষমায় সহাস্য গিরিদরি–
সুন্দরী হেলং।

অন্তত তখন তা-ই মনে হয়েছিল
তোমাকে, হেলং, সেই পাহাড়িয়া বৃষ্টির তিমিরে।
এবং এখনও মনে হয়,
তীব্রতম যন্ত্রণার গভীরে কোথাও
নিত্য প্রবাহিত হয় সেই আনন্দের স্রোতস্বিনী
যে জাগায় দারুণ ভয়ের
মর্মকষে শান্ত বরাভয়।।
মনে হয়, রক্তরং এই রঙ্গমঞ্চের আড়ালে
রয়েছে কোথাও
নেপথ্য-নাটকে স্থির নির্বিকার নায়ক-নায়িকা,
দাঁড়ে টিয়াপাখি, শান্তি টবের অর্কিডে।