পরিশিষ্ট

হেঁয়ালির ছন্দ – ২

পরদিন সকালে চা পান করিতে করিতে ব্যোমকেশ বলিল, ‘চল, শ্রীমৎ প্রণবানন্দ স্বামীকে দর্শন করে আসা যাক।’

কাল রাত্রে ভূপেশবাবুর জীবনের ট্র্যাজেডি শুনিয়া মনটা ছায়াচ্ছন্ন হইয়া ছিল, প্রণব দারোগার সম্মুখীন হইতে হইবে শুনিয়া আরো দমিয়া গেলাম। বলিলাম, ‘প্রণবানন্দ বাবাজিকে দর্শন করা কি একান্ত দরকার?’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘পুলিসের সন্দেহ থেকে যদি মুক্ত হতে না চাও তাহলে দরকার নেই।’

‘চল।’

সাড়ে ন’টার সময় সিঁড়ি দিয়া দ্বিতলে নামিয়া দেখিলাম ভূপেশবাবুর দ্বারে তালা লাগানো। তিনি নিশ্চয় অফিসে গিয়াছেন। তিন নম্বর ঘর হইতে রামবাবু ও বনমালীবাবু ধড়াচূড়া পরিয়া বাহির হইতেছিলেন, আমাদের দেখিয়া আবার ঘরে ঢুকিয়া পড়িলেন। ব্যোমকেশ আমার পানে চোখ বাঁকাইয়া হাসিল।

নীচের তলায় শিবকালীবাবু অফিসে বসিয়া হিসাব দেখিতেছিলেন, ব্যোমকেশকে দেখিতে পাইয়া লাফাইয়া দ্বারের কাছে আসিলেন, ব্যাকুল চক্ষে চাহিয়া বলিলেন, ‘ব্যোমকেশবাবু! কটক থেকে কবে এলেন— কখন এলেন? নটবর নস্করের কথা শুনেছেন তো! কি মুশকিল দেখুন দেখি, পুলিস আমাকে ধরে টানাটানি করছে— নাহক টানাটানি করছে।’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘শুধু আপনাকে নয়, অজিতকে নিয়েও টানাটানি করছে।’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই তো, তাই তো। বাদামী র‍্যাপার! মানে হয় না— মানে হয় না। — আপনি একটা ব্যবস্থা করুন।’

‘দেখি চেষ্টা করে।’

রাস্তায় নামিয়া ব্যোমকেশ থমকিয়া দাঁড়াইল, বলিল, ‘এস, গলিটা দেখে যাই।’

‘গলিটা’ মানে আমাদের বাসার পাশের গলি, যে গলি দিয়া বাদামী আলোয়ান গায়ে লোকটা নটবরবাবুকে গুলি করিয়া পলায়ন করিয়াছিল। অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ গলি, দুইজন মানুষ পাশাপাশি হাঁটিতে পারে না। আমরা আগে পিছে গলিতে প্রবেশ করিলাম; ব্যোমকেশ ইট-বাঁধানো মেঝের উপর দৃষ্টি রাখিয়া ধীরে ধীরে অগ্রসর হইল। তাহার মনে কী আছে জানি না, কিন্তু তিন দিন পরে গলির মধ্যে হত্যাকারীর কোনো নিশানা পাওয়া যাইবে ইহা আশা করাও দুরাশা।

নটবরবাবুর ঘরের জানালা বন্ধ। ব্যোমকেশ সেইখানে গিয়া ইট-বাঁধানো জমির উপর সন্ধানী চক্ষু বুলাইতে লাগিল। জানালাটি গলি হইতে চার ফুট উঁচুতে অবস্থিত, কপাট খোলা থাকিলে গলিতে দাঁড়াইয়া স্বচ্ছন্দে ঘরের মধ্যে গুলি চালানো যায়।

‘ওটা কিসের দাগ?’

ব্যোমকেশের অঙ্গুলি নির্দেশ অনুসরণ করিয়া দেখিলাম, ঠিক জানালার নীচে ইট-বাঁধানো। মেঝের উপর পাঁশুটে রঙের একটা দাগ রহিয়াছে; তিন ইঞ্চি ব্যাসের নক্ষত্রাকার একটা দাগ। গলিতে মাঝে মাঝে ঝাঁট পড়ে, কিন্তু সম্মার্জনীর তাড়না সত্ত্বেও দাগটা মুছিয়া যায় নাই। দুই তিন দিনের পুরানো দাগ মনে হয়।

বলিলাম, ‘কিসের দাগ?’

ব্যোমকেশ উত্তর দিল না, হঠাৎ গলির মধ্যে ডন ফেলার ভঙ্গীতে লম্বা হইয়া দাগের উপর নাসিকা স্থাপন করিল। বিস্মিত হইয়া বলিলাম, ‘ওকি! মাটিতে নাক ঘষছ কেন?’

ব্যোমকেশ উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, ‘নাক ঘষিনি। শুঁকছিলাম।’

‘শুকছিলে! কেমন গন্ধ?’

‘যদি জানতে চাও তুমিও শুঁকে দেখতে পার।’

‘আমার দরকার নেই।’

‘তাহলে চল থানায়।’

গলি হইতে বাহির হইয়া থানার দিকে চলিলাম। দু’একবার ব্যোমকেশের মুখের পানে অপাঙ্গদৃষ্টি নিক্ষেপ করিলাম, কিন্তু রাস্তার গন্ধ শুঁকিয়া সে কিছু পাইয়াছে কিনা বোঝা গেল না।

থানায় প্রণব দারোগা ঘর আলো করিয়া বসিয়া আছেন। তাঁহার চেহারা মোটের উপর ভালোই, দোহারা উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ শরীর; দোষের মধ্যে শরীরের খাড়াই মাত্র পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি।

ব্যোমকেশকে দেখিয়া তাঁহার চোখে প্রথমে বিস্ময়, তারপর ছদ্মবিনয় ভাব ফুটিয়া উঠিল, তিনি বলিলেন, ‘ব্যোমকেশবাবু! সকালে উঠেই আপনার মুখ দেখলাম— কী সৌভাগ্য। খিক্‌ খিক্‌।’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘আমার সৌভাগ্যও কম নয়। সকালবেলা বেঁটে মানুষ দেখলে কী ফল হয় তা শাস্ত্রেই লেখা আছে— রথস্থং বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।’

প্রণব দারোগা থতমত খাইয়া গেলেন। ব্যোমকেশ চিরদিন প্রণব দারোগার ব্যঙ্গ বিদ্রূপ অগ্রাহ্য করিয়া চলিয়াছে, কিন্তু আজ তাহার মেজাজ অন্য রকম। প্রণববাবু প্রত্যাঘাতের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, তিনি গম্ভীর হইয়া বলিলেন, ‘আমার চেহারা আকাশ পিদ্দিমের মত নয় তা স্বীকার করি।’

ব্যোমকেশ হাসিল, ‘স্বীকার না করে উপায় নেই। আকাশ পিদ্দিমের মাথায় আলো জ্বলে; ঐখানেই আপনার সঙ্গে তফাত।’

প্রণববাবুর মুখ কালো হইয়া উঠিল, তিনি চেষ্টাকৃত কাষ্ঠহাসি হাসিয়া বলিলেন, ‘কি করব বলুন, সকলের মাথায় তো গ্যাস-লাইট জ্বলে না। — কিছু দরকার আছে কি?’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘আছে বইকি। প্রথমত, অজিত যে ফেরারী হয়নি তার প্রমাণস্বরূপ ওকে ধরে এনেছি। আপনি নির্ভয়ে থাকুন, আমি ওর ওপর নজর রেখেছি, আমার দৃষ্টি এড়িয়ে ও পালাতে পারবে না।’

প্রণববাবু অপ্রস্তুতভাবে হাসিবার চেষ্টা করিলেন। ব্যোমকেশ নির্দয়ভাবে বলিয়া চলিল, ‘আপনি অজিতকে শহরবন্দী করে রেখেছেন একথা শুনলে কমিশনার সাহেব কি বলবেন আমি জানি না, কিন্তু জানবার আগ্রহ আছে। দেশে আইন আদালত আছে, জনসাধারণের স্বাধীনতার ওপর অকারণ হস্তক্ষেপ করলে পুলিস কর্মচারীরও সাজা হতে পারে। যাহোক, এসব পরের কথা। আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন, নটবর নস্করের মৃত্যু সম্বন্ধে আপনি কোনো সংবাদ সংগ্রহ করতে পেরেছেন কিনা।’

প্রণববাবু এই প্রশ্নের রূঢ় উত্তর দিবেন কিনা চিন্তা করিলেন। কিন্তু ব্যোমকেশকে তাহার বর্তমান মানসিক অবস্থায় ঘাঁটানো উচিত হইবে না বুঝিয়া তিনি ধীরস্বরে বলিলেন, ‘ব্যোমকেশবাবু, এই কলকাতা শহরের জনসংখ্যা কত আপনার জানা আছে কি?’

ব্যোমকেশ তাচ্ছিল্যভারে বলিল, ‘কখনো গুনে দেখিনি, লাখ পঞ্চাশেক হবে।’

প্রণববাবু বলিলেন, ‘ধরুন পঞ্চাশ লাখ। এই অর্ধকোটি মানুষের মধ্যে থেকে বাদামী আলোয়ান গায়ে একটি লোককে ধরা কি সহজ? আপনি পারেন?’

‘সব খবর পেলে হয়তো পারি।’

‘বাইরের লোককে সব খবর জানানো যদিও আমাদের রীতি বিরুদ্ধ, তবু যতটুকু জানি আপনাকে বলতে পারি।’

‘বেশ, বলুন। নটবর নস্করের আত্মীয়-স্বজনের কোনো সন্ধান পাওয়া গেছে?’

‘না। কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।’

‘ময়না তদন্তের ফলাফল কি রকম?’

‘বুকের হাড় ফুটো করে গুলি হৃদ্‌যন্ত্রে ঢুকেছে। পিস্তলের সঙ্গে গুলি মিলিয়ে দেখা গেছে, গুলি ওই পিস্তল থেকেই বেরিয়েছে।’

‘আর কিছু?’

‘শরীর সুস্থই ছিল, কিন্তু চোখে ছানি পড়বার উপক্রম হয়েছিল।’

‘পিস্তলের মালিক কে?’

‘মার্কিন ফৌজি পিস্তল, কালোবাজারে কিনতে পাওয়া যায়। মালিকের নাম জানার উপায় নেই।’

‘ঘর তল্লাশ করে কিছু পেয়েছেন?’

‘দরকারী জিনিস যা পেয়েছি তা ওই টেবিলের ওপর আছে। একটা ডায়েরি, গোটা পাঁচেক টাকা, ব্যাঙ্কের পাস-বুক, আর একটা আদালতের রায়ের বাজাপ্তা নকল। আপনি ইচ্ছে করলে দেখতে পারেন।’

ঘরের কোণে একটা টেবিল ছিল, ব্যোমকেশ উঠিয়া সেইদিকে গেল, আমি গেলাম না। প্রণব দারোগা লোক ভাল নয়, তিনি যদি আপত্তি করেন একটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হইবে। বসিয়া বসিয়া দেখিলাম, ব্যোমকেশ ব্যাঙ্কের খাতা পরীক্ষা করিল, ডায়েরির পাতা উল্টাইল, স্ট্যাম্প কাগজে লেখা আদালতী দলিল মন দিয়া পড়িল। তারপর ফিরিয়া আসিয়া বলিল, ‘দেখা হয়েছে।’

প্রণব দারোগার দুষ্টবুদ্ধি এতক্ষণে আবার চাড়া দিয়াছে, তিনি মিটিমিটি চাহিয়া বলিলেন, ‘আমি যা-যা দেখেছি আপনিও তাই দেখলেন। আসামীর নাম-ধাম সব জানতে পেরে গেছেন?’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘হ্যাঁ, পেরেছি।’

ভ্রূ আকাশে তুলিয়া প্রণববাবু বলিলেন, ‘বলেন কি! এরি মধ্যে! আপনার তো ভারি বুদ্ধি! তা দয়া করে আসামীর নামটা আমায় বলুন, আমি তাকে গ্রেপ্তার করে ফেলি!’

ব্যোমকেশ চোয়াল শক্ত করিয়া বলিল, ‘আসামীর নাম আপনাকে বলব না দারোগাবাবু; ওটা আমার নিজস্ব আবিষ্কার। আপনি এই কাজের জন্যে মাইনে খান, আপনাকে নিজে থেকে খুঁজে বার করতে হবে। তবে একটু সাহায্য করতে পারি। মেসের পাশের গলিটা খুঁজে দেখবেন।’

‘সেখানে আসামী তার পদচিহ্ন রেখে গেছে নাকি! খিক্‌ খিক্‌।’

‘না, পদচিহ্নের চেয়েও গুরুতর চিহ্ন রেখে গেছে। —আর একটা কথা জানিয়ে যাই। দু’চার দিনের মধ্যেই আমি অজিতকে নিয়ে কটকে চলে যাব। আপনার যদি সাহস থাকে তাকে আটকে রাখুন। —চল অজিত।’

থানা হইতে বাহির হইয়া আমি উত্তেজিত কণ্ঠে বলিলাম, ‘কে আসামী, ধরতে পেরেছ?’

ব্যোমকেশ ঘাড় নাড়িয়া বলিল, ‘থানায় আসার আগেই জানতে পেরেছি, কিন্তু প্রণব দারোগা একটা ইয়ে। বুদ্ধি নেই তা নয়, বিপরীত বুদ্ধি। ও কোনো কালে নটবর নস্করের খুনীকে ধরতে পারবে না।’

প্রশ্ন করিলাম, ‘নটবর নস্করের খুনী কে? চেনা লোক?’

‘পরে বলব। আপাতত এইটুকু জেনে রাখো যে, নটবর নস্করের পেশা ছিল ব্ল্যাকমেল করা। তুমি বাসায় ফিরে যাও, আমি অফিস-পাড়ায় যাচ্ছি। কলকাতাতেও গডফ্রে ব্রাউনের প্রকাণ্ড ব্যবসা আছে, তাদের অফিসে কিছু খোঁজ-খবর পাওয়া যেতে পারে। আচ্ছা, আমার ফিরতে দেরি হবে।’ হাত নাড়িয়া সে চলিয়া গেল।

আমি একাকী বাসায় ফিরিলাম। ব্যোমকেশ ফিরিল বেলা তখন দেড়টা।

স্নানাহারের পর সে বলিল, ‘একটা কাজ করতে হবে; বিকেলবেলা তুমি গিয়ে রামবাবুকে, বনমালীবাবুকে এবং ভূপেশবাবুকে চায়ের নেমন্তন্ন করে আসবে। সন্ধ্যের পর এই ঘরে সভা বসবে।’

‘তথাস্তু। কিন্তু ব্যাপার কি! গডফ্রে ব্রাউনের অফিসে গিয়েছিলে কেন?’

‘থানায় নটবর নস্করের জিনিসগুলোর মধ্যে একটা আদালতের রায় ছিল। সেটা পড়ে দেখলাম রাসবিহারী বিশ্বাস এবং বনবিহারী বিশ্বাস নামে দুই ভাই গডফ্রে ব্রাউন কোম্পানির ঢাকা ব্রাঞ্চে যথাক্রমে খাজাঞ্চী ও তস্য সহকারী ছিল। সাত বছর আগে তারা অফিসের টাকা চুরির অপরাধে ধরা পড়ে। মামলা হয় এবং বনবিহারীর দু’বছর ও রাসবিহারীর তিন বছর জেল হয়। সেই মোকদ্দমার রায় নটবর নস্কর যোগাড় করেছিল। তারপর তার ডায়েরি খুলে দেখলাম, প্রতি মাসে সে রাসবিহারী ও বনবিহারী বিশ্বাসের কাছ থেকে আশি টাকা পায়। গডফ্রে ব্রাউনের অফিসে গিয়ে চুরি-ঘটিত মামলার কথা যাচাই করে এলাম। সত্যি ঘটনা। সন্দেহ রইল না, নটবর তাদের ব্ল্যাকমেল করছিল।’

‘কিন্তু রাসবিহারী বনবিহারী— এরা কারা? এদের কোথায় খুঁজে পাবে?’

‘বেশি দূর খুঁজতে হবে না, এই মেসের তিন নম্বর ঘরে তাঁদের পাওয়া যাবে।’

‘অ্যাঁ! রামবাবু আর বনমালীবাবু!’

‘হ্যাঁ। তুমি কাছাকাছি আন্দাজ করেছিলে। ওরা মাসতুত ভাই নয়, সাক্ষাৎ সহোদর ভাই। তবে যদি চোরে চোরে মাসতুত ভাই এই প্রবাদ-বাক্যের মর্যাদা রাখতে চাও তাহলে মাসতুত ভাই বলতে পার।’

‘কিন্তু— কিন্তু—এরা তো নটবর নস্করকে খুন করতে পারে না। নটবর যখন খুন হয় তখন তো ওরা—’

হাত তুলিয়া ব্যোমকেশ বলিল, ‘ধৈর্য ধারণ কর। আগাগোড়া কাহিনী আজ চায়ের সময় শুনতে পাবে।’

মাড়োয়ারীর দোকানের রকমারি ভাজাভুজি ও চা দিয়া অতিথি সৎকারের ব্যবস্থা হইয়াছে। প্রথমে দেখা দিলেন ভূপেশবাবু। ধুতি পাঞ্জাবির উপর কাঁধে পাট-করা ধূসর রঙের শাল, মুখে উৎসুক হাসি। বলিলেন, ‘ব্রিজ খেলার ব্যবস্থা আছে নাকি।’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘আপনারা যদি খেলতে চান ব্যবস্থা করা যাবে।’

কিছুক্ষণ পরে রামবাবু ও বনমালীবাবু আসিলেন। গায়ে গলাবন্ধ কোট, চোখে সতর্ক দৃষ্টি। ব্যোমকেশ বলিল, ‘আসুন আসুন।’

পানাহারের সঙ্গে ব্যোমকেশ সরস বাক্যালাপ করিতে লাগিল। কিছুক্ষণ পরে লক্ষ্য করিলাম, রামবাবু ও বনমালীবাবুর আড়ষ্ট ভাব শিথিল হইয়াছে। তাঁহারা সহজভাবে কথাবার্তায় যোগ দিতেছেন।

মিনিট কুড়ি পরে জলযোগ সমাপ্ত করিয়া রামবাবু চুরুট ধরাইলেন; ব্যোমকেশ ভূপেশবাবুকে সিগারেট দিয়া সিগারেটের টিন বনমালীবাবুর সামনে ধরিল, ‘আপনি একটা নিন, বনবিহারীবাবু।’

বনমালীবাবু বলিলেন, ‘আজ্ঞে, আমি সিগারেট খাই না—’ বলিয়া একেবারে ফ্যাকাসে হইয়া গেলেন— ‘আজ্ঞে—আমার নাম—’

‘আপনাদের দুই ভায়েরই প্রকৃত নাম আমি জানি—রাসবিহারী এবং বনবিহারী বিশ্বাস।’—ব্যোমকেশ নিজের চেয়ারে গিয়া বসিল, ‘নটবর নস্কর আপনাদের ব্ল্যাকমেল করছিল। আপনারা মাসে মাসে তাকে আশি টাকা দিচ্ছিলেন—’

রাসবিহারী ও বনবিহারী দারুমূর্তির ন্যায় বসিয়া রহিলেন। ব্যোমকেশ নিজে সিগারেট ধরাইয়া ধোঁয়া ছাড়িতে ছাড়িতে বলিল, ‘নটবর নস্কর লোকটা ছিল অতি বড় শয়তান। যখন ঢাকায় ছিল তখন প্রকাশ্যে দালালির কাজ করত, আর সুবিধা পেলে ব্ল্যাকমেলের ব্যবসা চালাত। আপনারা দুই ভাই যখন জেলে গেলেন তখন সে ভবিষ্যতের কথা ভেবে আদালতের রায়ের নকল যোগাড় করে রাখল। মতলব, আপনারা জেল থেকে বেরিয়ে আবার যখন চাকরি-বাকরি করবেন তখন আপনাদের রক্ত শোষণ করবে।

‘তারপর একদিন দেশ ভাগাভাগি হয়ে গেল। ঢাকায় নটবরের ব্যবসা আর চলল না, সে কলকাতায় পালিয়ে এল। কিন্তু এখানে তার জানা-শোনা লোকের সংখ্যা কম, বৈধ এবং অবৈধ কোনো রকম ব্যবসারই সুবিধে নেই, ব্ল্যাকমেল করার উপযুক্ত পাত্র নেই। তার ব্যবসায় ভাঁটা পড়ল। এই মেসে এসে একটা ঘর নিয়ে সে রইল; সামান্য যা টাকা সঙ্গে আনতে পেরেছিল তাই দিয়ে জীবন নির্বাহ করতে লাগল।

‘এখানে থাকতে থাকতে হঠাৎ একদিন সে আপনাদের দেখল এবং চিনতে পারল। আপনারা এই মেসেই থাকেন। খোঁজখবর নিয়ে সে জানতে পারল যে আপনারা ছদ্মনামে এক ব্যাঙ্কে চাকরি করছেন। নটবর নস্কর রোজগারের একটা রাস্তা পেয়ে গেল। ভগবান যেন আপনাদের হাত-পা বেঁধে তার হাতে সঁপে দিলেন।

‘নটবর আপনাদের বলল, টাকা দাও, নইলে ব্যাঙ্কে তোমাদের প্রকৃত পরিচয় জানিয়ে দেব। আপনারা নিরুপায় হয়ে মাসে মাসে টাকা গুনতে লাগলেন। টাকা অবশ্য বেশি নয়, মাসে আশি টাকা। কিন্তু নটবরের পক্ষে তাই বা মন্দ কি। অন্তত মেসের খরচটা উঠে আসে।

‘এইভাবে চলছিল। আপনাদের প্রাণে সুখ নেই, কিন্তু নটবরের হাত ছাড়ানোর উপায়ও নেই। একমাত্র উপায়, যদি নটবরের মৃত্যু হয়।’

ব্যোমকেশ থামিল। রুদ্ধশ্বাস নীরবতা ভাঙিয়া বনবিহারী হাউমাউ করিয়া উঠিলেন, ‘দোহাই ব্যোমকেশবাবু, আমরা নটবর নস্করকে মারিনি। নটবর যখন মরে তখন আমরা ভূপেশবাবুর ঘরে ছিলাম।’

‘তা বটে!’ ব্যেমকেশ চেয়ারে হেলান দিয়ে ঊর্ধ্বদিকে ধোঁয়া ছাড়িল, অবহেলাভরে বলিল, ‘কে নটবরকে খুন করেছে তা নিয়ে আমার মাথা-ব্যথা নেই। মাথা-ব্যথা পুলিসের। কিন্তু আপনারা ব্যাঙ্কে চাকরি করেন। ব্যাঙ্কে যদি কোনো দিন টাকার গরমিল হয় তখন আমাকে আপনাদের আসল পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।’

এবার রামবাবু ওরফে রাসবিহারীবাবু কথা বলিলেন, ‘ব্যাঙ্কের টাকার গরমিল হবে না। আমরা একবার যে-ভুল করেছি দ্বিতীয়বার সে-ভুল করব না।’

‘ভাল কথা। তাহলে আমি আর অজিত নীরব থাকব।’ ব্যোমকেশ ভূপেশবাবুর পানে চাহিয়া প্রশ্ন করিল, ‘আপনি?’

ভূপেশবাবুর মুখে বিচিত্র হাসি খেলিয়া গেল, তিনি মৃদুস্বরে বলিলেন, ‘আমিও নীরব। আমার মুখ দিয়ে একটি কথা বেরুবে না।’

অতঃপর ঘর কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হইয়া রহিল। তারপর রামবাবু উঠিয়া দাঁড়াইলেন, হাত জোড় করিয়া বলিলেন, ‘আপনাদের দয়া জীবনে ভুলব না। আচ্ছা, আজ আমরা যাই, আমার শরীর একটু অসুস্থ বোধ হচ্ছে।’

‘আসুন।’ ব্যোমকেশ তাঁহাদের দ্বার পর্যন্ত আগাইয়া দিল, তারপর দ্বার বন্ধ করিয়া ফিরিয়া আসিয়া বসিল।

ভূপেশবাবু ব্যোমকেশের পানে চাহিয়া মৃদু মৃদু হাসিতেছেন দেখিলাম। ব্যোমকেশও প্রত্যুত্তরে হাসিল। ভূপেশবাবু বলিলেন, ‘রামবাবু আর বনমালীবাবুর সঙ্গে নটবর নস্করের অবৈধ যোগাযোগ আছে আমি জানতাম না, ব্যোমকেশবাবু। ওটা সমাপতন। আপনি বোধ হয় সবই বুঝতে পেরেছেন— কেমন?’

ব্যোমকেশ গভীর নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, ‘সব বুঝতে পারিনি, তবে মোট কথা বুঝেছি।’

ভূপেশবাবু বলিলেন, ‘আপনি তাহলে গল্পটা বলুন। আমার যদি কিছু বলবার থাকে আমি পরে বলব।’

ব্যোমকেশ ভূপেশবাবুকে একটি সিগারেট দিল, নিজে একটি ধরাইয়া আমার পানে চাহিয়া ধীরে ধীরে বলিতে আরম্ভ করিল, ‘তুমি নটবরের মৃত্যুর একটা বিবরণ লিখেছ। সেটা পড়ে আমার খট্‌কা লাগল। পিস্তলের আওয়াজ এত জোরে হয় না; এ যেন ছর্‌রা বন্দুকের আওয়াজ, কিম্বা বোমা ফাটার আওয়াজ। অথচ নটবর মরেছে পিস্তলের গুলিতে।

‘রামবাবু এবং বনমালীবাবুর মধ্যে চেহারার সাদৃশ্য তুমি লক্ষ্য করেছিলে। আমি তাঁদের সঙ্গে কথা কয়ে দেখলাম তাঁরা কিছু লুকোবার চেষ্টা করছেন। নটবরের ঘরে তাঁদের যাতায়াত ছিল, সুতরাং তাঁদের সম্বন্ধে আমার মনে কৌতূহল হল।

‘কিন্তু যখন বন্দুকের আওয়াজ হয় তখন ওঁরা দোতলায় ভূপেশবাবুর ঘরে ছিলেন। ভূপেশবাবুর ঘরের পরিস্থিতি অতিশয় নিরুদ্বেগ ও স্বাভাবিক। তিনি নিজের ঘরে আছেন, ছ’টা বেজে পঁচিশ মিনিটে রাসবিহারী ও বনবিহারী তাস খেলতে এলেন। কিন্তু অজিত না আসা পর্যন্ত তাস খেলা আরম্ভ হচ্ছে না। দু’মিনিট পরে সিঁড়িতে অজিতের ফট্‌ফট্‌ চটির শব্দ শোনা গেল। ভূপেশবাবু উঠে গিয়ে গলির দিকের জানলা খুলে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে গলিতে দুম্‌ করে শব্দ হল। রাসবিহারী ও বনবিহারী জানালার কাছে গেলেন। ভূপেশবাবু বলে উঠলেন, ‘ঐ—ঐ—গলি থেকে বেরিয়ে গেল, দেখতে পেলেন? গায়ে বাদামী রঙের আলোয়ান—?’

‘গলির মুখের কাছে সদর রাস্তা দিয়ে লোক যাতায়াত করছিল, রাসবিহারী ও বনবিহারী তাদেরই একজনকে দেখে ভাবলেন সে গলি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের সন্দেহ রইল না যে, ভূপেশবাবু ঠিক কথাই বলছেন। তাঁদের বিশ্বাস হল যে, তাঁরাও লোকটাকে গলি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছেন। এই ধরনের ভ্রান্তি চেষ্টা করলে সৃষ্টি করা যায়।

‘পরে নটবরের ঘরের জানলার ওপর পিস্তলটা পাওয়া গেল। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, আততায়ী পিস্তলটা ফেলে গেল কেন? অস্ত্র ফেলে যাওয়ার কোনো ন্যায্য কারণ নেই। আমার সন্দেহ হল এই সহজ স্বাভাবিক পরিস্থিতির আড়ালে মস্ত একটা ধাপ্পাবাজি রয়েছে।

‘মেসের চাকর হরিপদ সন্ধ্যে ছ’টার সময় শুনেছিল নটবরের ঘরে লোক আছে। যদি সেই লোকটাই নটবরকে খুন করে থাকে? এবং নিজের অ্যালিবাই তৈরি করার জন্যে মৃত্যুর সময়টা এগিয়ে এনে থাকে? পনেরো কুড়ি মিনিটের তফাত ময়না তদন্তে ধরা পড়ে না।

‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস হল, খুন যে-ই করুক, সে বাইরের লোক নয়, মেসের লোক। কিন্তু লোকটা কে? শিবকালীবাবু? রাসবিহারী-বনবিহারী? কিম্বা অন্য কেউ। কার মোটিভ আছে জানি না, কিন্তু সুযোগ আছে একমাত্র শিবকালীবাবুর। অন্য সকলের অকাট্য অ্যালিবাই আছে।

‘মনটা বাষ্পচ্ছন্ন হয়ে রইল, কিছুই পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি না। লক্ষ্য করেছিলাম যে, ভূপেশবাবুর ঘরের নীচে নটবরের ঘর এবং গলির দিকে ভূপেশেবাবুর জানলার নীচে নটবরের জানলা। কিন্তু পটকার কথা একেবারেই মনে আসেনি। হ্যাঁ, পটকা। যে পটকা আছাড় মারলে কিম্বা উঁচু থেকে শক্ত মেঝের উপর ফেললে আওয়াজ হয় সেই পটকা।

‘আজ সকালে থানায় যাচ্ছিলাম, যদি থানায় গিয়ে কিছু নতুন খবর পাই এই আশায়। বেরুবার সময় মনে হল, দেখি তো গলির মধ্যে নটবরের জানলার কাছে কোনো চিহ্ন পাই কিনা।

‘চিহ্ন পেলাম। ঠিক নটবরের জানলার নীচে ইট বাঁধানো মেঝের ওপর পটকা ফাটার পাঁশুটে দাগ। শুঁকে দেখলাম অল্প বারুদের গন্ধও রয়েছে। আর সন্দেহ রইল না। চমৎকার একটি অ্যালিবাই সাজানো হয়েছে। কে অ্যালিবাই সাজিয়েছে? ভূপেশবাবু ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। কারণ তিনিই জানলা খুলেছিলেন। রাসবিহারী এবং বনবিহারী জানলার কাছে এসেছিলেন আওয়াজ হওয়ার পরে।

‘সেদিন সন্ধে ছ’টার সময় ভূপেশবাবু অন্ধকারে গা-ঢাকা দিয়ে নিঃশব্দে নীচে নেমে গিয়েছিলেন। পিস্তল আগে থাকতেই যোগাড় করা ছিল, তিনি নটবরের ঘরে ঢুকে নিজের পরিচয় দিয়ে তাকে গুলি করলেন। গলির দিকের জানলা খুলে দিয়ে সেখানে পিস্তল রেখে নিজের ঘরে ফিরে এলেন। ভাগ্যক্রমে কেউ তাঁর যাতায়াত দেখতে পেল না। কিন্তু যদি কেউ দেখে ফেলে থাকে তাই অ্যালিবাই দরকার। তিনি নিজের ঘরে এসে অপেক্ষা করতে লাগলেন। দশ মিনিট পরে রাসবিহারী ও বনবিহারী তাস খেলতে এলেন। কিন্তু অজিত তখনো আসেনি, তাই তিনজনে অপেক্ষা করতে লাগলেন।

‘তারপর ভূপেশবাবু সিঁড়িতে অজিতের চটির ফট্‌ফট্‌ শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি তৈরি ছিলেন, তাঁর মুঠোর মধ্যে ছিল একটি মার্বেলের মত পটকা। ঘরের বন্ধ হাওয়ার অজুহাতে তিনি গলির দিকের জানলা খুলে দিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে মুঠি থেকে পটকাটি জানলার বাইরে ফেলে দিলেন। নীচে দুম্ করে শব্দ হল। রাসবিহারী ও বনবিহারী ছুটে জানলার কাছে গেলেন; ভূপেশবাবু তাঁদের বাদামী আলোয়ান গায়ে কাল্পনিক আততায়ী দেখালেন।

‘তারপর ভূপেশবাবুকে আর কিছু করতে হল না; স্বাভাবিক নিয়মে যথাসময়ে লাশ আবিষ্কৃত হল। পুলিস এল, লাশ নিয়ে চলে গেল। যবনিকা পতন।’

ব্যোমকেশ চুপ করিল। ভূপেশবাবু এতক্ষণ নিবাত নিষ্কম্প বসিয়া শুনিতেছিলেন, এখনো তিনি নিশ্চল বসিয়া রহিলেন। ব্যোমকেশ তাঁহার পানে ভ্রূ বাঁকাইয়া বলিল, ‘কোথাও ভুল পেলেন কি?’

ভূপেশবাবু এবার নড়িয়া চড়িয়া বসিলেন, স্মিতমুখে মাথা নাড়িয়া বলিলেন, ‘না, ভুল পাইনি। ভুল আমিই করেছিলাম, ব্যোমকেশবাবু। আপনি যে এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন তা ভাবিনি। ভেবেছিলাম আপনি ফিরে আসতে আসতে নটবরের মামলা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।’

ব্যোমকেশ একটু হাসিল, বলিল, ‘দুটো প্রশ্নের উত্তর পাইনি। এক, আপনার মোটিভ কি। দুই, পিস্তলের আওয়াজ চাপা দিলেন কেমন করে। বন্ধ ঘরের মধ্যে পিস্তল ছুঁড়লেও আওয়াজ বাইরে যাবার সম্ভাবনা। এ বিষয়ে আপনি কি কোনো সতর্কতাই অবলম্বন করেননি?’

‘দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর আগে দিচ্ছি’— ভূপেশবাবু কাঁধ হইতে পাট-করা শাল লইয়া দুই হাতে আমাদের সামনে মেলিয়া ধরিলেন; দেখিলাম নূতন শালের গায়ে একটি ক্ষুদ্র ছিদ্র রহিয়াছে। তিনি বলিলেন, ‘এই শাল গায়ে জড়িয়ে নটবরের ঘরে গিয়েছিলাম, শালের ভিতর হাতে পিস্তল ছিল। নটবরকে শালের ভিতর থেকে গুলি করেছিলাম; গুলির আওয়াজ শালের মধ্যেই চাপা পড়েছিল, বাইরে যেতে পারেনি।’

ব্যোমকেশ আস্তে আস্তে ঘাড় নাড়িল। বলিল, ‘আর প্রথম প্রশ্নের উত্তর? আমি কতকটা আন্দাজ করেছি; কাল আপনি ছেলের ফটো দেখিয়েছিলেন। যাহোক, আপনি বলুন।’

ভূপেশবাবুর কপালের শিরা দপ্‌ দপ্‌ করিয়া উঠিল, কিন্তু তিনি সংযত স্বরেই বলিলেন, ‘ছেলের ফটো দেখিয়েছিলাম, কারণ আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনি সত্য আবিষ্কার করবেন। তাই আগে থেকে নিজের সাফাই গেয়ে রেখেছিলাম। ঢাকায় যেদিন দাঙ্গা বাধে সেদিন নটবর আমার ছেলেকে স্কুল থেকে ভুলিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সেদিন সন্ধ্যের পর সে আমার বাসায় এসে বলল, দশ হাজার টাকা পেলে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে পারে। নগদ দশ হাজার টাকা আমার কাছে ছিল না; যা ছিল সব দিলাম, আমার স্ত্রী গায়ের সমস্ত গয়না খুলে দিলেন। নটবর সব নিয়ে চলে গেল, কিন্তু আমি ছেলেকে ফিরে পেলাম না। নটবরের দেখাও আর পেলাম না। তারপর কয়েক বছর কেটে গেছে, আমি স্ত্রী-পুত্র হারিয়ে কলকাতায় চলে এসেছি, হঠাৎ একদিন রাস্তায় নটবরকে দেখতে পেলাম। তারপর—’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘বুঝেছি। আর বলবার প্রয়োজন নেই, ভূপেশবাবু।’

ভূপেশবাবু কিছুক্ষণ নিশ্চেষ্ট থাকিয়া শেষে বলিলেন, ‘এখন আমার সম্বন্ধে আপনি কি করতে চান?’

ব্যোমকেশ ঊর্ধ্বদিকে ক্ষণেক চাহিয়া রহিল, তারপর বলিল, ‘সাহিত্য সম্রাট শরৎচন্দ্র কোথায় যেন একবার বলেছিলেন, ‘দাঁড় কাক মারলে ফাঁসি হয় না।’ আমার বিশ্বাস শকুনি মারলেও ফাঁসি হওয়া উচিত নয়। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।’