আট
‘সে লম্বা কাহিনী,’ বলল ডানা, ‘আপনারা বসুন।’
‘জমজমাট গল্প মনে হচ্ছে,’ হালকা চালে বললেন রাষ্ট্রপতি।
ফ্লোরিনা আর নিজের জন্য দুটো চেয়ার টানলেন।
‘আন্টি, ওয়াশিংটনকে নেবেন?’ কিশোর প্রশ্ন করল। ‘না, বাছা,’ বললেন আণ্টি।
‘আমার কাছে দাও,’ বললেন রাষ্ট্রপতি।
কিশোর তাঁর হাতে তুলে দিল বানরটাকে। ওয়াশিংটন রাষ্ট্রপতির কোলে গ্যাঁট মেরে বসে তাঁর লাল নেকটাই নিয়ে খেলা করতে লাগল।
এবার ডানার সাহায্য নিয়ে সব কথা খুলে বলল কিশোর, কীভাবে মনুমেন্টের জানালায় সাদা আলো দেখেছিল-সেখান থেকে শুরু করে।
পনেরো মিনিটে সমস্ত ব্যাখ্যা করা হয়ে গেল। ওদের কথা ফুরোলে সবার নজর স্থির হলো প্রেসিডেন্টের কোলে বসা বানরটার ওপর।
‘তো তোমাদের ধারণা এই পুঁচকেটা হীরেগুলো খুঁজে পায় এবং এর মালিকের হাতে তুলে দেয়?’ প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন করলেন। ‘সে ডাম নামের কেউ একজন?’
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। একনাগাড়ে কথা বলে ক্লান্ত।
‘এবং এই ডামের সাথে আদি ডামের কোন না কোন সম্পর্ক রয়েছে, উনিশশো চোদ্দ সালে যে লোক সম্ভবত হীরেগুলো চুরি করে?’ আন্টির প্রশ্ন।
আবারও ওপরে-নিচে মাথা নাড়ল কিশোর।
তো ডাম যদি ওয়াশিংটন মনুমেন্টে কাজ করে, তবে সে কোন একজন পার্ক রেঞ্জার হতে পারে, বাতলে দিলেন প্রেসিডেন্ট।
‘কাল চারজন রেঞ্জারের সাথে দেখা হয় আমাদের,’ জানাল ডানা।
‘কিন্তু চোর অন্য শিফটের লোকও হতে পারে,’ বললেন প্রেসিডেন্ট। ‘মনুমেন্টে তো প্রায় বারোজনের মত রেঞ্জার কাজ করে।’
‘আসলজনকে আমরা খুঁজে পাব কীভাবে?’ আণ্টি জবাব চাইলেন।
‘একটা বুদ্ধি এসেছে, বলল কিশোর। ‘আন্টি, আমরা কাল এখানে পার্টির আয়োজন করলে কেমন হয়?’
‘কী ধরনের পার্টি?’ আন্টি শুধালেন।
‘ওয়াশিংটন মনুমেন্টের পার্ক রেঞ্জারদের জন্যে,’ বলল কিশোর। ‘ওরা সবাই জড় হলে, আমি বানরটাকে নিয়ে আসব। ও হয়তো ডামকে চিনতে পারবে!’
‘মানে তার আসল নাম যা-ই হোক না কেন,’ বললেন প্রেসিডেন্ট। ‘বুদ্ধিটা খাসা, বাছা। ফ্লোরিনা, পারবে ব্যবস্থা করতে?’
‘তা পারব,’ বললেন আন্টি। ‘কিন্তু কী কারণে পার্টি দিচ্ছি ওদেরকে বলতে হবে না?’
চিবুক চুলকালেন প্রেসিডেন্ট।
‘হুম! বলবে হোয়াইট হাউসের জানালা দিয়ে মনুমেন্ট দেখতে অপূর্ব লাগে আমাদের, তাই অসাধারণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ধন্যবাদ জানিয়ে পার্টি দেয়া হচ্ছে,’ বললেন।
‘বাহ্, চমৎকার,’ বলে উঠলেন আন্টি। ‘আর কথাটা মিথ্যেও নয়। রাতের বেলা সত্যিই অদ্ভুত সুন্দর লাগে মনুমেন্টটাকে।’
পরদিন, দশজন পার্ক রেঞ্জার এল হোয়াইট হাউসে।
‘সাধারণ বেশভূষায় একদম অন্যরকম দেখাচ্ছে ওদেরকে, ‘ কিশোরকে বলল ডানা।
‘চলো, ওদেরকে হাই বলি, বলল কিশোর। রেঞ্জারদের অভ্যর্থনা জানাতে গেল।
ক্লাইভ পরেছে গাঢ় হলদে-সবুজরঙা ট্রপিকাল শার্ট। ওর আফটারশেভ লোশন সতেজ লেবুর ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে।
ড. উডের পরনে সুট আর টাই। খানিকটা নার্ভাস দেখাচ্ছে তাঁকে। মুখের চেহারা রক্তবর্ণ, কিশোরের সাথে ঘামে ভেজা হাত মেলালেন।
গোলাপী সানড্রেসে সুন্দর দেখাচ্ছে রুবিকে। গলায় মুক্তোর মালা, মাথার চুল স্কার্ফ দিয়ে বাঁধা। কাঁধে ঝুলছে গোলাপী ব্যাগ।
ডার্লা, মানচিত্র আর বই বিক্রি করে যে, সাদা প্যান্টসুট আর সাদা স্যাণ্ডেল পরে এসেছে। সানগ্লাস মাথায় তোলা।
অপেক্ষাকৃত ছোট এক ডাইনিং রুমে জড় হয়েছে সবাই। ফ্লোরিনা আন্টি একগাদা খাবার আর কোল্ড ড্রিঙ্ক নিয়ে এসেছেন।
‘এত অল্প সময়ের নোটিশে আসার জন্যে আপনাদেরকে ধন্যবাদ,’ বললেন প্রেসিডেন্ট। ‘মাত্র গতকালই আইডিয়াটা আসে আমাদের মাথায়।’
‘প্লিজ, পছন্দমত নিয়ে নিন আপনারা,’ বললেন আন্টি। ‘মার্শা ডেজার্টের জন্যে স্ট্রবেরি শর্টকেক বানিয়েছে। ও আমাদের দক্ষ কিচেন হেল্পার।’
সবাই খাবারের টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে যার-যার প্লেট ভরতে লাগল।
‘আমার এখনও ধারণা, বাদামওয়ালী ডার্লাই কালপ্রিট,’ ফিসফিস করে বলল ডানা।
‘না, ডক্টর উড,’ বলল কিশোর। ‘উনি এতটাই নার্ভাস, ঠিকমত কথাই বলতে পারছেন না।’
পার্ক রেঞ্জাররা খেতে আরম্ভ করেছে। প্রেসিডেন্ট দম্পতি অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করছেন। কিশোর আর ডানার চোখ ঘরের কোনার গ্র্যাণ্ডফাদার ক্লকটার দিকে বারবার চলে যাচ্ছে। ওটায় শব্দ করে বেলা একটা বাজতেই, ডানার উদ্দেশে চোখ টিপল কিশোর। এবার উঠে চলে গেল কামরা ছেড়ে। কিছুক্ষণ পরে, ফিরল ওয়াশিংটনকে বাহুতে নিয়ে।
নবাগত বানরটিকে অল্প ক’জনই খেয়াল করল।
‘বাহ্, খুব কিউট তো খুদে বানরটা!’ এক মহিলা বলে উঠল এবার সবাই চাইল চোখ তুলে।
আচমকাই ঝটকা মেরে কিশোরের বাহু থেকে ছিটকে গেল ওয়াশিংটন। এক লাফে টেবিলে উঠে ছোটাছুটি করতে লাগল লেমোনেডের দুটো গ্লাস উল্টে ফেলে দিয়ে, ক্লাইভের আলুর সালাদ মাড়িয়ে দৌড় দিল। সরষেয় পা পিছলে গেলেও ছোটা থামাল না।
থাবাজোড়া মেয়োনেয আর সরষেয় মাখামাখি, ওয়াশিংটন হঠাৎই রুবির বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চিঁ-চিঁ ডাক ছাড়তে লাগল। মহিলার সারা মুখে নাক ঘষছে।
পরনের পোশাকের মতই গোলাপী হয়ে গেল রুবির মুখের চেহারা। ডানা ছুটে গিয়ে ছোঁ মেরে তুলে নিল ওয়াশিংটনকে। নিজের চেয়ারে বয়ে নিয়ে গেল, কিন্তু বানরটা রুবির কাছে ফিরতে ছটফটাতে লাগল।
‘কিছু মনে করবেন না, রুবি,’ বলে, উঠে দাঁড়ালেন ফ্লোরিনা আণ্টি। ‘আমার সাথে আসুন, তোয়ালে দিচ্ছি। আপনার কাপড় পরিষ্কারেরও ব্যবস্থা হবে।’ রুবির বাহু ধরে বের করে নিয়ে গেলেন ঘর থেকে।
প্রেসিডেন্টও সটান উঠে দাঁড়িয়েছেন।
‘আপনারা খান, প্লিজ,’ অন্যান্য হতভম্ব মেহমানদের উদ্দেশে বললেন। ‘এখুনি আসছি।’ স্ত্রীর সঙ্গে যোগ দিতে গেলেন, রুবিকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে।
প্রেসিডেন্ট কামরা ত্যাগ করতেই কিশোর আর ডানা ওয়াশিংটনকে নিয়ে তাঁকে অনুসরণ করল।
ফ্লোরিনা রুবিকে এক পাউডার রুমে নিয়ে গেলেন, ও যেখানে মেয়োনেয আর সরষে মুছতে পারবে। মহিলা যখন বেরিয়ে এল, প্রেসিডেন্ট এবং আরেকজন লোক ওর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিশোর আর ডানা একপাশে বসল।
‘রুবি, ইনি এফবিআইয়ের ডিরেক্টর মিস্টার কাউড্রে,’ বললেন রাষ্ট্রপতি। ‘বসুন, প্লিজ। ডাম আর হীরেগুলোর কথা জানতে চাই আপনার কাছে।’
রুবি পায়ের কাছে ওর ব্যাগটা রেখে বসল। বাথরুম থেকে এক তোয়ালে এনেছে, এখন হাতের আঙুলে ঘষছে ওটা। শেষমেশ ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অস্বীকারের কোন চেষ্টা করল না।
‘গতবছর মানুষের চিলেকোঠা আর বেসমেন্ট পরিষ্কারের কাজ নিই,’ বলল। ‘ভাল কোন কিছু খুঁজে পেলে ইবে-তে বিক্রি করতে পারব এই শর্তে। কোনমতে দিন চলে যাচ্ছিল।’
বিরতি নিয়ে চোখ বুজল ও।
‘তো ছয় মাস আগে, বইপত্র আর কাগজ ভর্তি এক বাক্স খুঁজে পাই আমি,’ বলে চলেছে। ‘ওটায় এক ডায়েরি ছিল। প্রায় একশো বছর আগে হামিশ ডাম নামে এক লোকের লেখা। পুরানো জিনিস ভাল লাগে আমার, তাই পড়ি জার্নালটা। ওখানে বেশ কিছু ড্রইংও ছিল।
কিছুক্ষণের জন্য থামল রুবি। ব্যাগ থেকে ছোট, কালো এক ডায়েরি বের করে রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দিল।
এফবিআই কর্মকর্তা কলিন কাউড্রে রুবির কথা শোনার ফাঁকে নোট নিচ্ছিলেন।
এই ডাম লোকটা লিখেছিল এক বড়লোকের বাসায় কাজ করতে গিয়ে কীভাবে সে তাঁর বেশ কিছু হীরে চুরি করে,’ বলে চলেছে রুবি। ‘ভদ্রলোকের নাম ছিল সাদারল্যাণ্ড। তবে ডাম সেসময় ওয়াশিংটন মনুমেন্ট তৈরির কাজেও জড়িত ছিল। ও জানত ওকে সন্দেহ করা হবে, তাই মনুমেন্টের ভেতরে হীরেগুলো লুকিয়ে কিছুদিনের জন্যে গা ঢাকা দেয়।’
তোয়ালে দিয়ে চোখজোড়া মুছে নিল রুবি।
‘বলে যান, রুবি,’ প্রেসিডেন্ট বললেন।
দেয়ালে বড় এক পাথর বসানোর আগে ওটায় এক গর্ত করে ডাম,’ বলল রুবি। পাথরটা ওয়াশিংটন স্টেটের ছিল। ‘O’ অক্ষরটায় ড্রিল করে একটা ফুটো করে সে। তারপর হীরেগুলো গর্তটার ভেতর লুকিয়ে পাতলা প্লাস্টার দিয়ে ঢেকে দেয়। পাথরটার এক নকশাও এঁকেছে ও এই ডায়েরিটায়।
প্রেসিডেন্টের দিকে চাইল রুবি।
‘হীরেগুলো হাতাব ঠিক করি আমি। ওখানে নিজে উঠতে পারব না বুঝে রিঙ্গো, মানে এই বানরটাকে কিনি। ওকে ওয়াশিংটন শব্দটা শেখাই, ‘O’ অক্ষরটায় হিট করার ট্রেইনিং দিই। যতবারই কাজটা ঠিক-ঠিক করতে পেরেছে, ওকে পুরস্কার দিয়েছি। বানরেরা খুব তাড়াতাড়ি সব শিখে নেয়।’
ওর বাহুতে চোট লাগল কীভাবে?’ প্রশ্ন করলেন প্রেসিডেন্ট।
‘একবার পড়ে গিয়ে হাড়ে চিড় ধরে ওর,’ জানাল রুবি। ‘ওকে ভেটের কাছে নিয়ে যাই, তবে রিসেপশনিস্টকে ভুয়া নাম বলি। চাইনি বানরটার সাথে কেউ আমার কোন সম্পর্ক খুঁজে পাক। আমার আসলে ডাম নামটা নেয়াই ঠিক হয়নি।’
‘রিঙ্গো মনুমেন্টে আটকা পড়ে কীভাবে?’ এফবিআই ডিরেক্টরের প্রশ্ন।
‘আমার বোকামিতে,’ জানাল রুবি। ‘রিঙ্গো হীরেগুলো বের করে-এক পুঁটলির ভেতর ছিল ওগুলো-এবং আমাকে দেয়। আমি এতটাই নার্ভাস হয়ে পড়ি যে ওকে পুরস্কার দিতে ভুলে যাই। ও রাগ করে দৌড়ে পালায়, তাই বাধ্য হয়ে ওকে ওখানেই রেখে আসি। ভেবেছিলাম পরদিন বের করে আনব।’
‘হীরেগুলো এখন কোথায়, রুবি?’ প্রেসিডেন্ট শুধালেন। ‘আমার ফ্রিয়ারে। ট্রেতে পানি দিয়ে ওগুলোকে বরফ বানিয়ে রেখেছি,’ বলল ও।
মি. কাউড্রে উঠে দাঁড়ালেন।
‘চলুন, আপনার বাসায় যাব,’ বললেন।
রুবি সিধে হয়ে দাঁড়িয়ে ফ্লোরিনা আন্টিকে তোয়ালেটা দিল। ‘ধন্যবাদ,’ বলল। ‘সরি। আমার জন্যে আপনাদের পার্টিটা মাটি হলো।’
মি. কাউড্রে রুবিকে নিয়ে কামরা ছাড়লেন।
ড. গোমেজ ওয়াশিংটনকে ন্যাশনাল যু-তে নিয়ে গেছেন। ক’দিন পরে, কিশোর আর ডানা গেল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। স্পাইডার মাংকিতে ঠাসা অতিকায় খাঁচাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল ওরা। কমপক্ষে পঞ্চাশটা বানর দোল খাচ্ছে, কিচির-মিচির করছে, একে অপরের লোম বাছছে।
‘ওয়াশিংটনকে চিনব কীভাবে?’ প্রশ্ন করল ডানা। ‘সব কটা তো দেখতে একইরকম!’
‘কে জানে, বলল কিশোর। ‘ওদেরকে অবশ্য খুশিই দেখাচ্ছে, তাই না?’
উঁচু খাঁচাটার চারপাশেই স্পাইডার মাংকিরা খাচ্ছে, খেলছে, ঢুলছে। বেয়ে ওঠার জন্য লতা আর বাসা বানানোর জন্য গাছও রয়েছে এখানে। কিশোর দেখল এক বানরের কোলে ছোট্ট এক ছানা।
‘দেখো, দেখো,’ বলে উঠল ডানা। দেয়ালের এক সাইন দেখাল আঙুল ইশারায়। ওয়াশিংটন, আমাদের ‘এক স্পাইডার মাংকি, দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। ও পুঁটলি ভর্তি হীরে চুরি করেছে, হোয়াইট হাউসে ঘুমিয়েছে এবং এক অপরাধীকে ধরতে সাহায্য করেছে।
প্যারাগ্রাফটার নিচে আরেকটি বাক্য: বানরদের খাবার দেয়া নিষেধ।
খাঁচার শিকগুলোর ফাঁক দিয়ে স্পাইডার মাংকিদের দেখছে দর্শকরা। এক লোক ইয়েল নিয়ে বসেছেন। এক বানরের ছবি আঁকছেন।
‘এক কাজ করা যাক,’ ডানাকে বলল কিশোর। শিল্পীর কাছে হেঁটে গেল ও। ‘এক্সকিউজ মি, আমাকে এক শীট কাগজ আর একটা পেন্সিল দেবেন?’
‘দেব,’ বললেন ভদ্রলোক। ‘ছবি আঁকরে?’
কিশোর তাঁর চমৎকার স্কেচটা দেখল এক ঝলক।
‘না, অন্য কাজ আছে।’
কিশোর মাটিতে কাগজটা বিছিয়ে বড়-বড় হরফে ওয়াশিংটন
শব্দটা লিখল।
‘ভাল ফন্দি,’ দেখে বলল ডানা।
ছেলে-মেয়েরা এবার খাঁচার শিকের কাছে মেলে ধরল কাগজটা। প্রথমটায় কিছুই ঘটল না। বানরগুলো যার-যার মত
ছোটাছুটি, গাছ বাওয়াবাওয়ি আর ডাকাডাকি করে চলেছে। এবার এক বানর গুটি-গুটি এগিয়ে এল গরাদের কাছে।
‘এটাই কি ও?’ ফিসফিস করে জানতে চাইল ডানা।
‘জানি না,’ বলল কিশোর
কৌতূহলী বানরটা কাগজটার সামনে বসে চিকন এক হাত গলিয়ে দিল শিকের ফাঁক দিয়ে। তারপর তীক্ষ্ণ ডাক ছেড়ে থাবা মারতে লাগল ‘O’ অক্ষরটার ওপরে।
‘হ্যাঁ, এটাই ওয়াশিংটন,’ বলল কিশোর।
বানরটা মাথা কাত করল। ছেলে-মেয়েদের দেখছে, এবার আবারও জোরে কিচকিচ করে উঠল
দাঁত বেরিয়ে পড়েছে ডানার।
‘ও আমাকে হাই বলেছে!’
মাথা নাড়ল কিশোর।
‘তোমাকে নয়, আমাকে বলেছে!’
‘মোটেই না,’ বলে উঠল ডানা। ‘আমাকে।’
‘জানলে কীভাবে?’ কিশোর শুধাল।
মৃদু হাসল ডানা।
‘মেয়েরা এসব ভাল বোঝে,’ রহস্যময় কণ্ঠে বলল।
কিশোর শিল্পীর কাছে গিয়ে পেন্সিলটা ফিরিয়ে দিল। ভদ্রলোক উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন ওদের দিকে।
‘ঘটনাটা কী?’ জবাব চাইলেন।
হেসে উঠল কিশোর।
‘সে লম্বা কাহিনী!’
***