সাত
‘ডানা, ডক্টর গোমেজ বলেছিলেন ডাম নামে কে একজন নাকি ওয়াশিংটনকে মহিলা ভেটের কাছে নিয়ে যায়! তারমানে এই ডামই ওয়াশিংটনকে স্মৃতিপাথর ভাঙার ট্রেইনিং দিয়েছে!’ বলল কিশোর।
‘তো বোঝা যাচ্ছে এই হামিশ ডাম উনিশশো চোদ্দ সালে হীরেগুলো চুরি করে পাথরের ভেতর লুকিয়ে রাখে,’ বলল ডানা।
‘এবং বানরটার মালিক চোরের আত্মীয়-টাত্মীয় কেউ হবে, বলল কিশোর। ‘তারমানে বানরওয়ালা ডামের কাছেই নিশ্চয়ই হীরেগুলো রয়েছে!’
‘লোকটাকে আমরা খুঁজে পাব কীভাবে?’ প্রশ্ন করল ডানা। ‘কিংবা মহিলাকে?’
‘জানি না, তবে হোয়াইট হাউসে ফিরি, চলো,’ বলল কিশোর। ‘প্রেসিডেন্ট নিশ্চয়ই কোন বুদ্ধি বাতলাতে পারবেন। ডানা, আমরা এই রহস্যময় ডামের খোঁজ পেলে, রহস্যভেদও হবে আর হীরেগুলোও মিলবে!’
মিসেস হ্যান আর মি. ম্যাডককে ধন্যবাদ জানাল কিশোর এবং দু’জনে ঊর্ধ্বশ্বাসে বেরিয়ে এল দালানটা থেকে। মেট্রো ট্রেইন ওদেরকে যখন হোয়াইট হাউসের কাছে নামাল ততক্ষণে শান্ত হয়ে এসেছে দু’জনেই।
ছেলে-মেয়েরা প্রাইভেট এন্ট্রান্স দিয়ে পড়িমরি হোয়াইট হাউস অভিমুখে চলল।
প্রেসিডেন্টের মেইড মার্শাকে কিচেনে পেল ওরা, খবরের কাগজ পড়ছে।
‘এই যে, ডানা, কোথায় ছিলে তোমরা? তোমার খালা-খালু তো চিন্তা করছিলেন,’ বলল মহিলা।
‘ওঁরা আছেন এখানে?’ বলল ডানা। ওদিকে কিশোর এক কোণে ব্যাকপ্যাকটা হেলান দিয়ে রেখে ঝুঁকল ওপরের চেইন খুলতে। ওয়াশিংটন আরামসে ঘুমোচ্ছে এখনও।
মাথা নাড়ল মার্শা।
‘না, তবে রহস্যজনক একটা বার্তা আছে তোমাদের জন্যে।’ কনুইয়ের কাছে রাখা প্যাডটা চকিতে দেখে নিল ও। ‘কে এক ডাক্তার গোমেজ ফোন করেছিলেন। তিনি তোমাদের বলতে বলেছেন, ডাক্তার মার্টিনা তোমরা চলে আসার পরে তাঁকে ফোন করেছিলেন। ডাক্তার মার্টিনা তোমাদের জন্যে একটা ফোন নম্বর দিয়েছেন ভদ্রলোককে।’ মার্শা নম্বরটা পড়ে শোনাল।
‘কিন্তু কার নম্বর এটা?’ ডানা প্রশ্ন করল।
নোটটা দেখল মার্শা।
‘ডাম নামের একজনের,’ বলল।
কিশোর আর ডানা হাই ফাইভ দিল।
‘পেয়েছি!’ চিৎকার ছাড়ল কিশোর।
‘এখন ডাম আর হীরে দুটোই খুঁজে পাব আমরা!’ বলে উঠল ডানা।
তোমরা শোধরাবে না, এমনি ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল মার্শা। ডানার দিকে চাইল কিশোর।
‘চলো, নম্বরটায় ফোন করি। আমার তর সইছে না।’
মার্শা উঠে দাঁড়িয়ে কামরা ছাড়ল। কিশোর ফোনটা নিয়ে এল টেবিলে, মার্শার প্যাডে লেখা নম্বরটায় ডায়াল করল ও। কান পেতে রয়েছে, এবার প্রশ্ন করল ডাম নামে কেউ ওখানে রয়েছে কিনা। ক’মুহূর্ত পরে, রিসিভার নামিয়ে রাখল। মুখের চেহারা ফ্যাকাসে।
‘ডামের সাথে কথা বললে?’ ডানা জিজ্ঞেস করল।
মাথা নাড়ল কিশোর।
‘না, ওটা ওয়াশিংটন মনুমেন্টের নম্বর।’
হকচকিয়ে গেল ডানা।
‘ডাম ওয়াশিংটন মনুমেন্টে কাজ করে?’
‘বলল ওরা নাকি ডাম নামে কাউকে চেনে না,’ জানাল কিশোর।
‘তাহলে ভেটকে সে এ নাম বলেছিল কেন?’ ডানার প্রশ্ন।
‘কে জানে,’ বলল কিশোর। কাল ওয়াশিংটন মনুমেন্টে যেসব পার্ক রেঞ্জারের সাথে দেখা হয় আমাদের, তাদের মধ্যে কেউ হয়তো বানরটাকে আলগোছে ঢুকিয়ে দিয়েছিল হীরে চুরির জন্যে।’ ও আর ডানা মনুমেন্টে চারজন রেঞ্জারের সঙ্গে পরিচিত হয়, মনে আছে ওর।
ক্লাইভ, রুবি, ডার্লা, ম্যাপ বিক্রি করে যে, আর ড. উড। এদের কেউ কি রহস্যময় ডাম নামের চরিত্রটি, যে বানরটার মালিক আর প্রশিক্ষক?
এসময় কিশোরের প্যাক থেকে এক লাফে বেরিয়ে এল ওয়াশিংটন। এবার কাছিয়ে এসে গুড়ি মেরে ওর কোলে চড়ে বসল। বানরটার রেশমের মত কোমল পশমে হাত বোলাল কিশোর। বানরটা কীভাবে ক্লাইভের কোলে লাফিয়ে পড়েছিল ভাবল, ভাব দেখে মনে হচ্ছিল দু’জনে জানি দোস্ত।
‘ক্লাইভ হয়তো ওয়াশিংটনের মালিক,’ ডানাকে বলল ও। ‘ওয়াশিংটন ওকে পছন্দ করে।
দু’মুহূর্ত ভেবে নিল ডানা।
‘হ্যাঁ, আর ক্লাইভ পাথরগুলো সম্বন্ধে অনেক জানেও। কিন্তু আমার ধারণা নাটের গুরু ডার্লা, যে মহিলা ম্যাপ আর বই বেচে। তার কাউন্টারে বাদাম ছিল, মনে আছে? ওই স্মৃতিপাথরটার কাছে একটা বাদামের খোসা খুঁজে পাই আমি!’
কোলে বসা ওয়াশিংটনের দিকে চাইল কিশোর।
‘অ্যাই, বল না, ওয়াশিংটন সোনা, কে তোর মালিক?’
‘গতকাল ওখানে আরও দু’জন রেঞ্জার ছিল,’ বলে চলল ডানা। ‘আমাদেরকে এলিভেটরে তোলে, রুবি নামের মহিলাটা। মহিলার সাথে টুরিস্টদের দেখে চিৎকার জুড়েছিল বানরটা।
‘হুঁ, এখন মনে পড়েছে। তখন ভেবেছিলাম টুরিস্টদের দেখে চেঁচাচ্ছে বুঝি, বলল কিশোর। ‘আসলে হয়তো রুবিকে দেখেই ডাকছিল।’
‘আর ডক্টর উড?’ বলল ডানা। ‘মনুমেন্ট থেকে ওয়াশিংটনকে তাড়াতে রীতিমত খেপে উঠেছিলেন ভদ্রলোক!’
ঠিক এমনিসময় প্রেসিডেন্ট আর ডানার খালা কিচেনে প্রবেশ করলেন।
‘কী খবর তোমাদের, বাছারা?’ রাষ্ট্রপতি বললেন।
‘কিশোর, ওটা কী? বানর নাকি?’ বলে উঠে, পিছিয়ে গেলেন ফ্লোরিনা আণ্টি
কিশোর তুলে ধরল ওয়াশিংটনকে।
‘ওর নাম ওয়াশিংটন,’ জানাল।
‘খুব ভাল, বাছা,’ বললেন রাষ্ট্রপতি। ‘কিন্তু আমাদের কিচেনে ও কী করছে?’