চার
ডানা আর কিশোর হেঁটে ফিরল হোয়াইট হাউসে।
‘ডানা, এসো, অনলাইনে গিয়ে দেখি আমাদের ওয়াশিংটন কোন্ জাতের বানর,’ ভেতরে ঢোকার পর বলল কিশোর।
‘ও স্পাইডার মাংকি,’ বলল ডানা।
হেসে উঠল কিশোর।
‘এত নাম থাকতে এই নাম?’
‘হেসো না,’ বলল ডানা। ‘মাকড়সার মত লম্বা, সরু ঠ্যাঙের জন্যে এদের স্পাইডার মাংকি বলে। ফলমূল আর পোকা-মাকড় খায় এরা।’
ডানার কামরায় গেল ওরা। বানরটাকে বিছানায় নামিয়ে রাখল ডানা। চোখের পলকে লাফিয়ে নেমে পড়ে ঘরময় ঘোরাঘুরি করতে লাগল ওয়াশিংটন। এটা-ওটা তুলছে, পরখ করছে, ঝাঁকাচ্ছে, পরস্পর বাড়ি মারছে।
চেয়ারে বসে ডানা ওর কম্পিউটার অন করল। ডেস্কের ওপরে ওয়াশিংটন ডি. সি.-র এক বাঁধানো ম্যাপ। আরেকটা চেয়ার টেনে নিল কিশোর।
‘সব বানর খুঁজবে?’ ডানাকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
‘না, এদের তো অনেক জাত,’ বলল ও। ‘শুধু স্পাইডার মাংকি টাইপ করে দেখি।’
ক’মুহূর্ত পরেই, স্পাইডার মাংকির এক ওয়েবসাইটে ঢুকল ওরা। ঠিক ওয়াশিংটনের মত দেখতে এক বানরের ছবি দেখা যাচ্ছে।
‘ঠিকই বলেছিলে,’ বলল কিশোর।
দাঁত বের করে হাসল ডানা। নিঃশব্দে পড়ল ওরা পেজটা।
এরা বলছে, স্পাইডার মাংকি এমনকী লেজ দিয়েও নাকি জিনিসপত্র তুলতে পারে!’ বলল কিশোর।
পর্দায় আঙুল রাখল ডানা।
‘বাটন ক্লিক করলে ওরা কীভাবে শব্দ করে তাও জানা যাবে।’ মাউস ক্লিক করল ডানা, এবং কামরাটা বিচিত্র কিচির-মিচির আর চিঁ-চিঁ শব্দে ভরে উঠল। হঠাৎই এক লাফে ডেস্কের ওপর এসে নামল ওয়াশিংটন। খুদে হাতজোড়া কম্পিউটারে রেখে মন দিয়ে শুনছে। চোখজোড়া বিস্ফারিত। নিজেও তীক্ষ্ণ স্বরে চিঁ-চিঁ করতে লাগল।
ডানা আবারও ক্লিক করতেই বানরের ডাক থেমে গেল। ‘চাই না ওর মন খারাপ হোক,’ কিশোরকে বলল ও। ‘বেচারা হয়তো ভেবেছে নিজের আস্তানায় ফিরে গেছে।’
পেছনের দু’পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে, থাবা দুটো বাঁধাই করা মানচিত্রের ওপরে রাখল ওয়াশিংটন। গোটা-গোটা অক্ষরে কাঁচে যেখানটিতে ওয়াশিংটন লেখা, সেখানে নাক ঠেকাল ও।
‘দেখো! ও নিজের নাম পড়তে পারে!’ ঠাট্টা করল কিশোর। ‘হা-হা,’ হাসল ডানা। ‘কেন—’
ঝন-ঝনাৎ!
পাঁই করে ঘুরে গেল কিশোর আর ডানা।
দু’হাতে এক পেপারওয়েট ধরে রয়েছে বানরটা। মানচিত্রের কাঁচ ফাটিয়ে দিয়েছে ওটা দিয়ে বাড়ি মেরে।
‘কী হলো!’ বলে উঠল কিশোর। পেপারওয়েটটা কেড়ে নিল ওয়াশিংটনের হাত থেকে। ‘বাঁদরামি হচ্ছে!’
‘ওর মনে হয় নিজের নামটা পছন্দ নয়,’ বাতলে দিল ডানা। কাঁচে বারবার থাবা মারছে ওয়াশিংটন।
কিশোর ওয়াশিংটনকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেল। কিন্তু বানরটা তড়াক করে লাফিয়ে পড়ে এক লাফে সওয়ার হলো ডানার ডেস্কে। আবারও থাবড়াচ্ছে ওয়াশিংটন ডি. সি.-র ম্যাপটা।
‘ও সত্যিই হয়তো নিজের নাম পড়তে পারে,’ বলল কিশোর। এবার আর রসিকতার ছলে নয়।
ও আর ডানা পরস্পরের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল। এই বানরটা কি আদতেই পড়তে জানে?
‘পরীক্ষা হয়ে যাক,’ আস্তে করে বলল ডানা। ‘এসো!’
ওয়াশিংটনকে ও বয়ে নিয়ে এল এক হলওয়েতে, কোন আসবাবপত্র নেই যেখানে। লাল কার্পেট লম্বালম্বি পাতা হলটিতে। দেয়ালে শুধু সাবেক রাষ্ট্রপতিদের ছবি আর দীর্ঘ এক সার ভাস্কর্য। বেদী আকৃতির স্তম্ভমূলে বসানো প্রতিটা মর্মরমূর্তি। মূর্তিগুলোর গোড়ায় রাষ্ট্রপতিদের যার-যার নাম কুঁদে লেখা।
‘ওকে নামিয়ে দিচ্ছি, দেখি কী করে,’ বলল ডানা। মেঝেতে নামাল ওয়াশিংটনকে।
কয়েক মিনিট ছোটাছুটি করে বেড়াল বানরটা। যতবারই জর্জ ওয়াশিংটনের মূর্তির কাছে এল, ওরা শ্বাস চেপে রইল। কিন্তু প্রতিবারই মূর্তিটার পাশ দিয়ে দৌড়ে চলে গেল ওয়াশিংটন।
‘উঁহু,’ বলল ডানা, ‘আমাদের ধারণা ভুল।’
‘দেখো! দেখো!’ সহসাই বলে উঠল কিশোর।
বানরটা এক লাফে চড়াও হয়েছে জর্জ ওয়াশিংটনের মূর্তির ওপরে। ভিত্তিমূলে বড়-বড় হরফে ওয়াশিংটন লেখা। বানরটা থাবা মারতে লাগল ওখানটায়।
ডানা ওকে তুলে নিয়ে কাঁধে বসাল।
‘ওকে নামিয়ে দাও, ডানা,’ বলল কিশোর।
ডানা ঝুঁকল ওয়াশিংটনকে মেঝেতে নামাতে।
‘এখানে নয়, একদম শেষ মাথায় নিয়ে যাও, টমাস জেফারসনের মূর্তির পাশে,’ বলল কিশোর।
ওয়াশিংটনকে বয়ে নিয়ে হল ধরে প্রায় ত্রিশ ফিট হেঁটে গেল ডানা। ওকে কার্পেটে বসাতে না বসাতেই ওয়াশিংটন এক ছুটে ফিরে এল জর্জ ওয়াশিংটনের ভাস্কর্যটির কাছে। আবারও স্তম্ভমূলে চড়ে বসল ও। রাষ্ট্রপতির নামের ওপর আবারও বারবার থাবা মারছে।
বেদী থেকে ওয়াশিংটনকে নামাল ডানা।
‘ও হয়তো বলতে চাইছে জর্জ ওয়াশিংটনকে ওর পছন্দ নয়, ‘ বলল। ‘কিংবা ওয়াশিংটন ডি. সি.,’ যোগ করল, মানচিত্রটার কথা মনে পড়তেই।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর।
‘না, ডানা, আমার ধারণা ও ওয়াশিংটনকে ভালই পছন্দ করে,’ বলল। ‘মনে হয় রহস্যটা ধরতে পেরেছি!’