আট
এক ঘণ্টা পর। মুসা আর সু কি সিভিক সেন্টারে ফিরে দেখে, অন্যরা বাইরে অপেক্ষা করছে।
‘যাক, এলে শেষ পর্যন্ত!’ ওদেরকে দেখে বলে উঠল ডন। ‘এত সময় লাগল যে?’ বলল কিশোর। ‘অনেক কিছু শিখলে বুঝি?’
‘সে আর বলতে,’ জবাবে জানাল মুসা। ‘তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না কী হয়েছে ওখানে।’ রহস্যজনক ফোন কল আর সিম্ফনির প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জানাল সবাইকে।
ওরা প্রত্যেকে আঁতকে উঠল। কাউকে সন্দেহ করা এক ব্যাপার, আর প্রমাণ অন্য বিষয়। এবং নতুন এই তথ্যটিকে তো অকাট্য প্রমাণ বলেই মনে হচ্ছে।
বাসে চেপে বাড়ি ফেরার পথে এ নিয়ে কথা বলল ওরা। রবিন জিজ্ঞেস করল মুসাকে, ‘সিম্ফনি ফোনে কী বলেছিলেন. মনে আছে?’
শব্দগুলো হুবহু মনে করল মুসা।
সকালে যেমনটা বলেছি…দেখা করব আমরা।
মাথা ঝাঁকাল সু কি।
‘হ্যাঁ, ঠিক একথাগুলোই বলেছিলেন সিম্ফনি।’
‘সিভিক সেন্টারের লবি থেকে আজ সকালের ফোন কলটা…’ ভাবনাটা অসমাপ্ত রাখল কিশোর।
ওটার দরকারও নেই। ওরা সবাই একই কথা ভাবছে: সিম্ফনি হোটেলে ফোন করে ওদের খোঁজ করেননি; তিনি বিকেলের সেই রহস্যময় ফোনদাতার সঙ্গে কথা বলছিলেন।
‘জ্যাক নানাকে জানানো উচিত,’ বলল ডন।
‘খাইছে, আমরা যদি ভুল ভেবে থাকি?’ মুসা প্রশ্ন করল। সিম্ফনিকে চোর ভাবতে নারাজ ও। ‘সু কি আর আমি তো শুধু এক প্রান্তের ফোনালাপই শুনেছি।’
লম্বা শ্বাস টানল রবিন।
‘এমুহূর্তে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন, বলল। সবাই চুপ করে গেল, ভাবছে। বাস ওদের স্টপে পৌঁছুতেই কিশোরের মাথায় একটা বুদ্ধি ঘাই মারল।
‘কাউকে বলার আগে নিজেরা পরীক্ষা করে দেখব,’ বলল। সবাই একমত হলো।
‘সিম্ফনি কোথায় যেন দেখা করবেন বললে কলারের সাথে?’ কিশোর প্রশ্ন করল মুসাকে।
‘কাল সকাল সাড়ে আটটায়, টাউন স্কয়্যারে।’
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
‘ঠিক আছে। আমরা ওখানে সোয়া আটটায় পৌছব।’
‘কিন্তু ওঁরা যদি আমাদের দেখে ফেলেন?’ রবিন জিজ্ঞেস করল।
‘দেখবে না, ডন আশ্বস্ত করল। ‘ওখানে লুকানোর অনেক জায়গা আছে।’
বাসায় ফিরে ওরা দেখল, জ্যাক নানা খবরের কাগজ পড়ছেন। আর দরজার পাশে বসা বাঘা!
‘তোমাদের অপেক্ষাতেই ছিলাম,’ ওরা সবাই কিচেনে ঢুকলে বললেন জ্যাক নানা। ‘দশ মিনিট আগেও বাঘা ঘুমোচ্ছিল। জাগার পর থেকেই দরজার পাশে বসে অপেক্ষা করছে।’
লেজ নাড়ল বাঘা।
কিশোর গায়ে হাত বুলিয়ে দিল কুকুরটার।
‘গুড বয়,’ বলল আদর করে।
‘মোযার্টের কুকুরও এমন ছিল,’ বলল মুসা। ‘মোযার্ট কখন বাসায় ফিরবেন জানত কুকুরটা। এক বইতে পড়েছি।’
‘রিহার্সাল কেমন হলো?’ জ্যাক নানা জানতে চাইলেন। ‘বেশিরভাগটাই শুনতে পারিনি আমরা,’ বলল রবিন।
কিশোর তাঁকে খোয়া যাওয়া স্বরগ্রামটা খোঁজার কথা জানাল। তবে সিম্ফনির সন্দেহজনক ফোন কলের বিষয়টা চেপে গেল।
ধীরে-ধীরে মাথা নাড়লেন জ্যাক নানা।
‘ভয়ানক দুর্ভাগ্যজনক!’ বললেন। ‘ঘটনাটা সবাইকে কষ্ট দেবে।’
‘হ্যাঁ,’ বলল মুসা। ‘দুঃখে আমার খিদে পেয়ে গেছে, অথচ এখনও সাপারের সময় হয়নি।’
‘হুম,’ বললেন জ্যাক নানা। ‘এত চিন্তা করলে খিদে তো পাবেই।’ গম্ভীর মুখে বললেও তাঁর চোখের তারা নেচে উঠল ঠাট্টার ছলে।
‘একটা ঘণ্টা অপেক্ষা করো, তোমাকে আমার স্পেশাল খাবারটা খাওয়াব,’ মুসাকে বলল কিশোর।
দাঁত বের করে হাসল মুসা।
‘খাইছে, চিকেন আর সুইস পনির, সঙ্গে মজাদার সস?’
ডাক ছাড়ল বাঘা।
হেসে উঠল মুসা।
‘এমনকী বাঘাও জানে সবুরে মেওয়া ফলে।’
‘মুসা, তুমি প্র্যাকটিস করোগে যাও,’ পরামর্শ দিল রবিন। আমরা এদিকটা ঠিক সামলে নেব।’
‘আমি টেবিলটা সাজাব,’ প্রস্তাব দিল সু কি।
‘ধন্যবাদ,’ বলল মুসা। ‘ইয়াং পিপল’স অর্কেস্ট্রায় সুযোগ পেতে হলে অনুশীলনের বিকল্প নেই।’
নিজের কামরায় দ্রুত চলে গেল ও। খানিক পরেই, ওর বেহালার সুমধুর ধ্বনি শোনা গেল কিচেন থেকে।
ডিনারের সময় ডন জ্যাক নানাকে যন্ত্র বানানোর ক্লাসের কথা জানাল।
‘একটা খালি কফি ক্যান দিয়ে ড্রাম বানিয়েছি আমি,’ বলল। ‘শব্দটাও দারুণ।’
সন্তুষ্ট দেখাল জ্যাক নানাকে।
‘আমি জানি তো তোমরা কোন কিছুকেই ফেলনা ভাবো না,’ গর্বভরে বললেন। ‘সারাজীবন এর সুফল পাবে। অনেক সময় ছাই থেকেও মানিক রতন পাওয়া যায়।’
পরদিন সকালে, টাউন স্কয়্যারের প্রথম বাসটা ধরল ছেলে- মেয়েরা। পথে ওরা সিদ্ধান্ত নিল টাউন হল-এ লুকিয়ে থাকবে। ওটা সক্কাল বেলাতেই খোলে।
দালানটিতে যখন ঢুকল ওরা, কাউকে দেখল না। নিঃশব্দে ডবল ফ্রন্ট ডোরের পাশে জায়গা নিল সবাই। পাশের জানালাগুলো দিয়ে স্কয়্যারের সামান্য এক কোনা বাদে সবই দেখা যায়।
ক’মিনিট পরে, ফিসফিসে কণ্ঠে ডন বলল, ‘ওই দেখো!’
কালো হ্যাট আর রেইনকোট পরা এক লোক প্রবেশ করলেন স্কয়্যারে। বগলদাবা করে বড়সড় এক খাম এনেছেন।
‘খামের ভেতরে কী কে জানে,’ বলে উঠল কিশোর। ‘নির্ঘাত টাকা,’ বলল ডন।
ভদ্রলোক চারপাশে চোখ বুলিয়ে, হাতঘড়ি দেখে নিয়ে পায়চারী শুরু করলেন।
‘সিম্ফনি হয়তো আসবেন না,’ বলল মুসা। ওর কণ্ঠে আশার ছোঁয়াটুকু কারও কান এড়াল না।
ঠিক তখনই, উদয় হলেন সিম্ফনি। শশব্যস্তে এগিয়ে গেলেন ভদ্রলোকের দিকে। করমর্দন করে সংক্ষিপ্ত আলাপ সারলেন দু’জনে।
‘ওঁরা কী বলছেন যদি শোনা যেত!’ বলল রবিন।
‘দরকার নেই তো,’ বলল কিশোর। ‘দেখতে থাকো!’
সিম্ফনি ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে ধরিয়ে দিলেন লোকটির হাতে। তার বদলে, সিম্ফনিকে নিজের খামটা দিলেন তিনি।
‘উনি লোকটার কাছে স্বরগ্রামটা বিক্রি করছেন!’ ডন স্থিরনিশ্চিত কণ্ঠে ঘোষণা করল।