তেরো
ছেলে-মেয়েরা যার-যার স্যাক লাঞ্চ নিয়ে পার্কে গেল। সিভিক সেন্টারের ঠিক পাশেই ওটা। সবুজ ঘাসে ছাওয়া এক টিবির ওপর নীল রঙের এক টেবিলক্লথ বিছাল রবিন। ডন ওর প্রিয় গোলাপীরঙা পুরানো, ফাটা কাপটা এনেছে।
‘আচ্ছা,’ বলল রবিন। ‘রহস্যটার কি আদৌ সমাধান হবে?’
‘নিশ্চয়ই হবে,’ অভয় দিল গোয়েন্দাপ্রধান। ‘এসো, প্রথম থেকে আমরা আলোচনা করি।’
‘প্রথমে স্বরগ্রামটা হারিয়ে যায়,’ শুরু করল সু কি।
‘হেক্টর ওটা হোটেলে নিয়ে যান,’ মুসা বলল।
‘দুটো ভুয়া চিরকুট, বলল রবিন। ‘আর দুটো লণ্ডভণ্ড কামরা।’
‘সিম্ফনি আর সেই রহস্যময় লোকটার কথাও মনে রেখো, ‘ জুগিয়ে দিল ডন।
কিশোরের মন খারাপ হয়ে গেল।
‘ঘুরেফিরে সেই সিম্ফনির কথাই এসে যায়, তাই না?’
‘খাইছে, সিম্ফনির কী দোষ?’ বলল মুসা। ‘চিরকুট দুটোয় তো অন্য কেউ ওঁর নাম সই করেছে।’
‘অন্তত আমাদের তা-ই ধারণা আরকী,’ বন্ধুকে মনে করিয়ে দিল নথি।
মুখের চেহারা উজ্জ্বল হলো ডনের।
‘পেয়েছি। ওগুলো সিম্ফনিরই সই কিন্তু উনি আমাদের মিথ্যে বলেছেন।’
‘অসম্ভব নয়,’ সায় জানাল কিশোর।
‘খাইছে, কিন্তু হোটেলের কামরা তছনছ করল কে?’ মুসার প্রশ্ন।
‘হ্যাঁ,’ সহমত হলো সু কি। ‘সিম্ফনি করেননি। তিনি আমাদের সাথে সিভিক সেন্টারে ছিলেন।’
শ্রাগ করল কিশোর।
‘তাঁর কোন পার্টনার করে থাকতে পারে।’
‘সেই লোকটা! সে-ই ঘর দুটো লণ্ডভণ্ড করেছে,’ সোৎসাহে বলে উঠল ডন।
মুসা লাঞ্চ স্যাকটা দলামোচা পাকিয়ে সটান সিধে হলো। ‘সিম্ফনি এর কোনটাই করেননি!’ গটগটিয়ে হাঁটা ধরল সেন্টারের উদ্দেশে।
‘মুসাভাই, দাঁড়াও, দাঁড়াও!’ পেছন থেকে চেঁচাল ডন। ‘আমরা তো বলিনি উনি করেছেন—উনি করে থাকতে পারেন আরকী।’
কিন্তু মুসা দুপদাপ পা ফেলে ইতোমধ্যেই বাড়িটায় ঢুকে পড়েছে।
কাঁধজোড়া ঝুলে পড়ল ডনের। মুসাভাইকে দুঃখ দিতে চায়নি ও।
‘এখন?’ অন্যদের জিজ্ঞেস করল।
‘চলো, ভেতরে গিয়ে অর্কেস্ট্রার রিহার্সাল শুনি,’ জবাব দিল কিশোর।
মুসাকে প্রথম সারিতে পেল ওরা, ওর পাশে বসল।
হেক্টর মঞ্চে ব্যাটন উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে, এখুনি আরম্ভ করবেন। ‘মুসাভাই, আমি—’ ডন শুরু করেছিল।
‘শশশ!’ বলল মুসা।
বাজনা আরম্ভ হতেই, পার্শ্ব দরজা দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকলেন ক্রিস গেইল। ছেলে-মেয়েদেরকে দেখামাত্র এগিয়ে এলেন।
রবিনের কাছাকাছি এসে, ফিসফিসিয়ে বললেন, ‘তুমি কি আমার একটা কাজ করে দেবে?’•
‘অবশ্যই দেব,’ পাল্টা ফিসফিসাল নথি। ‘কী কাজ?’
ক্রিস হাতছানি দিয়ে তাঁকে অনুসরণ করতে ইশারা করলেন। ‘ক্রিস আমাকে একটা কাজ করে দিতে বলছেন,’ অন্যদেরকে বলল রবিন। ‘শীঘ্রি ফিরব।’ আইল ধরে পা চালাল ও।
‘আমিও যাব তোমার সাথে,’ প্রস্তাব করল ডন। কিশোরের ওপর দিয়ে গুড়ি মেরে রবিনের পিছু নিল।
লবিতে পৌঁছনোর পর ক্রিস ওদেরকে বললেন, ‘রুমে ভুলে চশমাটা ফেলে এসেছি। ডেস্কের ওপর আমার ব্রিফকেসটা পাবে, ওর ভেতরে রয়েছে। নিজেই যেতাম, কিন্তু এমুহূর্তে এখান থেকে নড়ার উপায় নেই। অনেক কাজ।’
‘কোন চিন্তা করবেন না, আমরা এখুনি নিয়ে আসছি,’ বলল রবিন।
‘ধন্যবাদ,’ বললেন ক্রিস। রবিনকে কামরার চাবি দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলেন।
হোটেলরুমের ডেস্কের ওপর ছিল ক্রিসের ব্রিফকেসটা। ডন আগে গেল ওটার কাছে। ব্রিফকেসটার ল্যাচ বন্ধ। ডন খোলার জন্য নাড়াচাড়া করল।
‘দাঁড়াও, ডন, আমি দেখছি-!’ রবিন বলল বটে, তবে দেরি হয়ে গেছে।
ব্রিফকেসটা সশব্দে মেঝেতে পড়ল এবং ভেতরের সব কিছু চারদিকে ছড়িয়ে গেল।
ডনের মুখের চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। জিনিসপত্রগুলো কুড়োতে লাগল ও। ‘এই যে, চশমাটা।’
ডেস্কের ওপর সব গাদা করে রাখো,’ নির্দেশ দিল রবিন। ‘কাগজগুলো ব্রিফকেসে রাখার কোন মানে নেই। সব এলোমেলো হয়ে গেছে।
ওরা চলে যাবে, এসময় ডেস্ক চেয়ারের নিচে কিছু একটা পড়ে থাকতে দেখল ডন। ও হাঁটু গেড়ে বসে হাত বাড়াল ওটার দিকে।
‘প্লেনের টিকিট,’ বলে, গোড়ালীর ওপর বসে, ওটা নিরীখ করতে লাগল। একটু পরে, রবিনের হাতে দিল।
‘প্লেনের টিকিটই তো,’ বলে, ডেস্কের ওপর টিকিটটা রাখল রবিন।
‘কোথাকার?’ ডনের প্রশ্ন। ‘প্যারিস মনে হলো।’
এক ঝলকে ওটা দেখে নিল নথি।
‘হ্যাঁ,’ খুঁটিয়ে পরখ করল টিকিটটা। ‘প্যারিস তো ফ্রান্সে, তাই না?’
মাথা ঝাঁকাল রবিন।
‘কাল বিকেলের ফ্লাইটের টিকিট।’ রীতিমত হতচকিত ও। ‘আজব না?’ বলল ডন। ‘কনসার্ট কাল রাতে। অথচ ক্রিস তার আগেই চলে যাচ্ছেন কেন?’
মাথা নাড়ল রবিন।
‘জানি না, ডন। হয়তো পরের কনসার্টের আয়োজন করতে আগেভাগেই চলে যেতে হচ্ছে তাঁকে।’
‘কিন্তু অর্কেস্ট্রা তো এরপর প্যারিস যাচ্ছে না,’ ওকে স্মরণ করাল ডন। ‘যাচ্ছে ক্লিভল্যাণ্ডে!’