সোলায়মান আহমেদ ও মহাজাগতিক প্রাণী
আপনি বলতে চাইছেন আপনাকে মহাজাগতিক কোনো প্রাণী ধরে নিয়ে গিয়েছিল?
দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি সোলায়মান আহমেদ মাইক্রোফোনের সামনে ঝুঁকে পড়ে স্পষ্ট গলায় বললেন, হ্যাঁ।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত প্রায় চল্লিশ জন সাংবাদিকের অনেকেই এক ধরনের অস্পষ্ট শব্দ করলেন। কয়েকজনের ক্যামেরার ফ্লাশ জ্বলে উঠল এবং আরো কিছু ছবি নেওয়া হল। বিশিষ্ট শিল্পপতি সোলায়মান আহমেদের একেবারে হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি সংবাদপত্রে যেরকম আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল হঠাৎ করে ফিরে এসে এই ধরনের একটি ব্যাখ্যা দেওয়া নিশ্চিতভাবেই তার থেকে অনেক বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করবে।
আপনাকে কীভাবে মহাজাগতিক প্রাণী ধরে নিয়ে গিয়েছিল সেটি কি একটু বলবেন?
সোলায়মান আহমেদ একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, পুরো ব্যাপারটি আমার কাছে এক ধরনের আবছা এবং ধোঁয়াটে। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি আমার গ্রামের বাড়িতে নদীতীরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, হঠাৎ এক ধরনের ভোঁতা শব্দ শুনতে পেলাম। শব্দটা কোথা থেকে আসছে দেখার জন্য মাথা ঘুরিয়েছি তখন দেখি আমার পিছনে গোলাকার মসৃণ একটা কিছু দশ–বারো ফুট উপরে ভেসে আছে। সেখান থেকে নীল রঙের আলো বের হয়ে এল তারপর আমার কিছু মনে নাই। যখন জ্ঞান হল আমি দেখলাম আমি ভেসে আছি।
সোলায়মান আহমেদ চুপ করলেন এবং সাংবাদিকেরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। শেষ পর্যন্ত একজন জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় ভেসে আছেন?
ভরশূন্য পরিবেশে। একটা গোলাকার জানালা ছিল সেখান দিয়ে আমি পৃথিবীকে দেখতে পেয়েছি। পূর্ণিমার চাঁদের মতো দেখাচ্ছিল তবে নীল এবং সাদা রঙের।
আপনি কেমন করে বুঝলেন সেটা পৃথিবী? অন্য কোনো গ্রহও তো হতে পারত।
আমি আফ্রিকা মহাদেশটি দেখেছি। কাজেই আমি নিশ্চিতভাবে জানি সেটা পৃথিবী।
মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ গলা উঁচিয়ে বললেন, আপনি কি কোনোভাবে প্রমাণ করতে পারবেন যে আপনাকে মহাজাগতিক প্রাণী ধরে নিয়ে গিয়েছিল?
সোলায়মান আহমেদ মাথা নাড়লেন, বললেন, না। যা ঘটেছে আমি শুধু সেটা বলতে পারি। আপনারা আমার কথা বিশ্বাস করবেন কি না সেটা আপনাদের ইচ্ছে।
আপনার কাছে কি কোনো প্রমাণ নেই? সেই মহাকাশযানের কোনো জিনিস, কোনো ছবি, কোনো তথ্য?
সোলায়মান আহমেদ খানিকক্ষণ চিন্তা করে বললেন, না। আমাকে তারা পরীক্ষা করেছে, আমার শরীরে কিছু প্রবেশ করিয়েছে কি না দেখতে হবে। আমার কাছে কোনো তথ্য নেই, তবে আমার পকেটে যে নোট বই ছিল সেই নোট বইয়ে আমার বল পয়েন্ট কলম দিয়ে আমি সেই মহাজাগতিক প্রাণীর একটা ছবি এঁকেছিলাম। ভরশূন্য অবস্থায় ভাসছিলাম বলে ছবিটা ভালো হয় নি। কিন্তু সেটা একমাত্র তথ্য।
বেশ কয়েকজন সাংবাদিক একসাথে সেই ছবিটি দেখতে চাইলেন। সোলায়মান আহমেদ পকেট হাতড়ে একটা নোট বই খুঁজে বের করে তার মাঝখানে আঁকা মহাজাগতিক প্রাণীর ছবিটি দেখালেন। বড় মাথা, ছোট ছোট হাত–পা, গোল চোখ। সাংবাদিকরা আবার নোট বই হাতে সোলায়মান আহমেদের ছবি তুলতে লাগলেন।
সাগর তার বাবার হাত ধরে টান দিয়ে বলল, আব্বু চল যাই।
সাগরের আব্বা একটু বিরক্ত হয়ে চাপা গলায় বললেন, কয়েক মিনিট চুপ করে থাকতে পারিস না? আমি একটা প্রেস কনফারেন্স কাভার করছি দেখছিস না?
লোকটা মিথ্যা কথা বলছে আর তোমরা বসে বসে শুনছ?
সাগরের গলার স্বর হঠাৎ করে একটু উঁচু হয়ে যাওয়ায় অনেকে তার দিকে ঘুরে তাকাল। সাগরের আব্বা খুব অপ্রস্তুত হয়ে কীভাবে সাগরকে আড়াল করবেন সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন কিন্তু কয়েকজন সাংবাদিক তার দিকে ঝুঁকে পড়লেন। একজন গলা উঁচিয়ে বললেন, তুমি কে খোকা? তুমি কেমন করে জান সোলায়মান সাহেব মিথ্যা কথা বলছেন?
সাগরের আব্বা খুব বিব্রত হয়ে বললেন, ওর কথায় কান দেবেন না। বাচ্চা ছেলে কী বলতে কী বলেছে! স্কুল আগে ছুটি হয়ে গেছে বলে আমি সাথে নিয়ে এসেছি। আমি খুব দুঃখিত।
সাংবাদিকটি নাছোড়বান্দার মতো বললেন, কিন্তু তুমি কেন বলছ সোলায়মান সাহেব মিথ্যা কথা বলছেন?
এবার হঠাৎ করে সব সাংবাদিক সাগরের দিকে ঘুরে তাকালেন, সাগর কেমন ভয় পেয়ে যায়। শুকনো গলায় বলল, ঐ যে ইনি বললেন, বল পয়েন্ট কলম–
কী হয়েছে বল পয়েন্ট কলমে?
ভরশূন্য জায়গায় বল পয়েন্ট কলম দিয়ে লেখা যায় না। কালিটা নিচে চুঁইয়ে আসতে হয়–খাড়া দেয়ালেও লেখা যায় না– আসলে উল্টো করে ধরলেও লেখা যায় না—মানে– সাগর হঠাৎ ভয় পেয়ে থেমে গেল।
একসাথে অনেকগুলো ক্যামেরা ক্লিক করে ওঠে এবং ক্যামেরার ফ্লাশের আলোতে সাগরের চোখ ধাঁধিয়ে গেল।
একজন সাংবাদিক হঠাৎ উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করে ওঠেন, সোলায়মান সাহেব কোথায় গেলেন?
কম বয়সী একজন বললেন, মহাজাগতিক প্রাণী ধরে নিয়ে গেছে!
চল্লিশ জন সাংবাদিকের উচ্চৈঃস্বরে হাসির শব্দ সোলায়মান সাহেব তার গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ ছাপিয়েও স্পষ্ট শুনতে পেলেন।