সাত
একুশে আগস্ট। স্বচ্ছ কাঁচের মত রোদ ঝলমলে সকাল। লা হাউতে শৈলনেয়ার- এর দুর্গ। পাঁচতলার একটা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ঢেউখেলানো পাহাড় সারির দিকে তাকিয়ে আছে রানা। যতদূর দৃষ্টি যায়, সবকিছু অনড়, অচঞ্চল। চারদিক প্রশান্ত, সৌম্য। আঠারো কিলোমিটার দূরে ঈগলটন শহরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলছে পুলিস, সে-ব্যাপারে কিছুই জানা নেই ওর।
জানালার দিকে পিছন ফিরল রানা। ব্যারনের স্টাডি রুম এটা। রোজ এখান থেকেই ফোন করে ও প্যারিসে। ছয়তলায় ঘুমিয়ে আছে ব্যারনেস সিবা, দেখে এসেছে ও।
অপরপ্রান্তে ফোন তুলল রূপা।
‘নারা,’ উত্তেজিত গলায় বলছে রূপা, ‘ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে আবার। ওরা তোমার গাড়ি খুঁজে পেয়েছে…’
দুই মিনিট চুপচাপ শুনে গেল রানা। দ্রুত প্রশ্ন করল কয়েকটা। রিসিভার রেখে দিয়ে ফিরল জানালার দিকে। সিগারেট আর লাইটারের খোঁজে পকেট হাতড়াচ্ছে। রূপার কথায় সব ওলোটপালট হয়ে গেছে। প্ল্যান বদল করা ছাড়া উপায় নেই। আরও দুটো দিন এই দুর্গে থাকতে চেয়েছিল ও। এখন তা আর সম্ভব নয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালাতে হবে এখান থেকে।
কি একটা ব্যাপারে খুঁত খুঁত করছে মনটা। ফোন করার সময় কিছু একটা ঘটেছে, কিন্তু ধরতে পারছে না ব্যাপারটা।
সিগারেটে শেষ টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে ও, এমন সময় আপনা থেকেই ব্যাপারটা ধরা পড়ল ওর কাছে। ফোনের রিসিভার তোলার পরপরই মৃদু একটা ক্লিক শব্দ ঢুকেছিল কানে। মন খুঁত খুঁত করার সেটাই কারণ। গত তিন দিন ধরে এখান থেকে ফোন করছে ও, এর আগে এ-ধরনের কিছু ঘটেনি। বেডরূমে এক্সটেনশন ফোন একটা আছে বটে, কিন্তু সিবাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে এসেছে
নিঃশব্দ, দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে ছয়তলায় উঠল রানা। খোলা রয়েছে বেডরুমের দরজা। পর্দা সরিয়ে ঢুকল ও।
ক্রাডলে রেখে দেয়া হয়েছে ফোনের রিসিভার। ওয়ারড্রোবটা হা হা করছে। সুটকেস তিনটে মেঝেতে, সবগুলো খোলা। ওর চাবির রিঙটাও পড়ে রয়েছে কার্পেটের উপর। জিনিসপত্রের গাদার মধ্যে হাঁটু মুড়ে বসে রয়েছে সিবা অনিন্দ্যসুন্দর মুখে বিস্ময় আর ভীতি ফুটে উঠেছে তার। চোখ দুটো বিস্ফারিত তার সামনে স্টীল টিউবগুলো পড়ে রয়েছে। একটা টিউব থেকে বের করে ফেলেছে সে টেলিস্কোপ সাইটটা, তার সামনে দেখা যাচ্ছে টিউব-মুক্ত সাইলেন্সার। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে নিজের হাতের দিকে। তার হাতে রাইফেলের ব্যারেল আর ব্রীচ।
কয়েক সেকেন্ড কেউই কথা বলল না। ধাক্কাটা প্রথম সামলে উঠল রানাই। ‘আড়ি পেতে শুনছিলে তুমি।’
‘আমি…কৌতূহল চেপে রাখতে পারিনি…রোজ সকালে কাকে তুমি ফোন করো…’
‘আমি ভেবেছিলাম তুমি ঘুমাচ্ছ…’
‘তোমার জীবনে কোন বড় ঘটনা আছে,’ ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল সিবা, আমি অনেক আগেই অনুমান করেছিলাম। কি যেন চিন্তা করো সব সময়। কেউ তোমাকে আঘাত দিয়েছে, তাই দুঃখ পুষে রেখেছ মনের ভিতর-এই রকম ভেবেছিলাম। দুঃখের কারণটা জানার জন্যে…’ সিবা কার্পেটে ছড়িয়ে থাকা স্টীল টিউবগুলো দেখাল আঙুল দিয়ে, ‘কিন্তু এগুলো কি? একটা রাইফেল। তাই না? তুমি কে, অ্যালেক্স?’
রানা চুপ। সিবাকে কিছু বলার কোন মানে হয় না। বুঝবে না সে। হয়তো বিশ্বাস করবে না। কিন্তু এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত উৎকট সঙ্কট, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে সে যদি চলে যায়, সিবার মনে একজন খুনী হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে সে। এবং একজন খুনীকে ধরিয়ে দেবার জন্যে সে যদি পুলিসকে সাহায্য করে তাতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই, কিন্তু শঙ্কিত হওয়ার অনেক কিছু রয়েছে। এ-ধরনের কিছু ঘটতে দিতে পারে না ও।
‘কাউকে খুন করতে চাও? তুমি একজন খুনী?’ আতঙ্কে একেবারে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে সিবার চেহারা। ‘না!’ এগিয়ে এসে খপ্ করে রানার হাতের কব্জি চেপে ধরল সে। ‘অসম্ভব! আমার মন বলছে, কোন অন্যায় কাজ তোমার দ্বারা হবার নয়। কিন্তু তাহলে…’
নিঃশব্দে এদিক ওদিক মাথা নাড়ল রানা।
বলবে না? বলার মত নয় তা? বুঝেছি!’ রানার মুখের কাছে আরও এগিয়ে এল সিবার মুখ ‘…কিন্তু একটা কথা তোমাকে বলতেই হবে। শুধু বলো, অন্যায় কিছু করতে যাচ্ছ না তুমি? তোমার মুখের কথাই যথেষ্ট আমার জন্যে, সেটাই সত্য বলে বিশ্বাস করব। বলো, অন্যায় কিছু…
‘আত্মরক্ষা করা কি অন্যায়?’ পাল্টা প্রশ্ন করল রানা।
‘না।’
‘তাহলে আমি অন্যায় কিছু করছি না,’ বলল রানা। কিন্তু তোমাদের সরকার আমাকে ভুল বুঝছে। তাদের এ ভুল ভাঙাবার সাধ্য এই মুহূর্তে কারও নেই। সব কথা খুলে না বললে তুমি পরিস্থিতিটা বুঝবে না। অথচ সব কথা বলার সময় নেই। শুধু এইটুকু জেনে রাখো, গোটা ফ্রান্স জুড়ে তন্ন তন্ন করে খোঁজা হচ্ছে আমাকে।’
চমকে উঠল সিবা। ‘তার মানে যে-কোন মুহূর্তে এখানেও এসে পড়তে পারে পুলিস?’
‘হ্যাঁ,’ বলল রানা। ‘কিন্তু কয়েক ঘণ্টা যদি সময় পাই, যদি এই কয়েক ঘণ্টা আমার সম্পর্কে পুলিসকে কেউ কিছু না জানায়, ধরতে পারবে না ওরা আমাকে।’
কি যেন ভাবছে সিবা। ‘আমি কথা দিচ্ছি…’ হঠাৎ রানার হাত ছেড়ে দিল সিবা। দাঁড়াও, এক্ষুণি আসছি আমি…’ কথা শেষ করে ছুটল সিবা। বাধা দেবার কোন অবকাশই পেল না রানা, ছুটে কামরা থেকে বেরিয়ে গেল ব্যারনেস। সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নেমে যাচ্ছে তার পদশব্দ, শুনতে পাচ্ছে ও।
কোথায় গেল সিবা? ফোন করতে যায়নি তো? পুলিসকে? দূর, এতবড় বেঈমানী করবে বলে মনে হয় না…
দশ মিনিট পর ফিরে এল সিবা। ‘জিনিসপত্র গোছগাছ করে নাও।’
ভুরু কুঁচকে উঠল রানার। একটা হাত রাখল সিবার কাঁধে। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে কেন, সিবা? ভয় পেয়েছ?’
হাসছে সিবা। ‘তোমাকে আমি ধরিয়ে দেব না—এ ব্যাপারে তোমার কাছে সম্পূর্ণ সন্দেহ-মুক্ত থাকতে চাই আমি। তাই ঘুমের ওষুধ ইঞ্জেক্ট করেছি। এক্ষুণি ঘুমিয়ে পড়ব।’ রানার বুকে ধাক্কা মারল সিবা। ‘জিনিসপত্র স-সব বের করে নি- নিজের কামরায় চলে যাও, এ ঘ-ঘরের দরজা ভি-ভিতর থেকে ব-বন্ধ করে দেব। জানালা দিয়ে ওরা দে-দেখবে আমি ঘুমাচ্ছি…’
কত সি. সি. নিয়েছ? ডোজ বেশি হয়ে যায়নি তো?’
‘না-না। তু-তুমি যাও! ঘু-ঘুমে…’
দ্রুত সব সুটকেসে ভরে নিয়ে বেরিয়ে এল রানা। ভিতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিল সিবা। মেয়েটার প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ করছে রানা।
নিজের কামরায় ফিরে এসে দরজা বন্ধ করল রানা। খালি টিউবগুলোয় রাইফেলের যন্ত্রাংশ ভরল দ্রুত। মার্ক রোডিনের নোংরা পোশাক আর মিলিটারি গ্রেটকোটের সাথে সুটকেসে সাজিয়ে রাখল টিউবগুলো। হাত দিয়ে সুটকেসটার লাইনিং স্পর্শ করে দেখল, কাগজপত্রগুলো জায়গামতই আছে। বন্ধ করে তালা মেরে দিল সুটকেসটায়। দ্বিতীয় সুটকেসে ডেনিশ ধর্মযাজকের কাপড়চোপড় রয়েছে। সিবা এটা খুললেও ঘাঁটাঘাঁটি করেনি।
বাথরূমে ঢুকে পাঁচ মিনিট কাটাল রানা মুখ হাত ধুয়ে দাড়ি কামাতে। তারপর কাঁচি বের করে লম্বা সোনালী চুলগুলোকে পিছন দিকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে সতর্কতার সাথে ইঞ্চি দূয়েক ছোট করে ফেলল। দশ মিনিট পেরিয়ে গেল কাজটা সারতে। এরপর যথেষ্ট পরিমাণ কলপ ব্যবহার করে চুলের রঙ নারকেলের ছোবড়ার মত লালচে করে তুলল। ধর্মযাজক বেনসনের ফটোটা বাথরূম শেলফে রেখে তার চুলের সাথে নিজের চুলটা মিলিয়ে সন্তুষ্ট হলো ও। সবশেষে নীলচে কন্ট্যাক্ট লেন্স জোড়া পরল চোখে।
ওয়াশ বেসিন থেকে প্রতিটি চুল আর কলপের ক্ষীণতম দাগ অতি যত্নের সাথে সরাল রানা। দাড়ি কামাবার সমস্ত সরঞ্জাম তুলে নিয়ে ফিরে এল বেডরূমে।
কোপেনহেগেন থেকে কেনা ভেস্ট, প্যান্ট, মোজা এবং শার্ট পরল রানা। কালো বিবটা গলায় জড়িয়ে নিয়ে তার উপর চড়াল ধর্মযাজকের ডগ কলার। সবশেষে পরল কালো স্যুট এবং ওয়াকিং ও জোড়া। গোল্ডরিমের চশমাটা উপরের পকেটে ঢুকিয়ে নিল ও। দাড়ি কামাবার সরঞ্জাম ভরল হ্যান্ডগ্রিপে, ফ্রেঞ্চ ধর্মমন্দির সম্পর্কে ডেনিশ ভাষায় লেখা বইটাও রাখল এতে। স্যুটের ভিতরের পকেটে জায়গা পেল ধর্মযাজকের পাসপোর্টটা, এর সাথেই থাকল এক তাড়া কড়কড়ে নোট।
ইংলিশ পোশাকের অবশিষ্টগুলো তৃতীয় সুটকেসে ফিরে গেল। তারপর বন্ধ করে তালা মেরে দেয়া হলো এটাতেও।
রিস্টওয়াচ দেখল রানা। আটটা বাজতে চলেছে। সকালের কফি নিয়ে এক্ষুণি উঠে আসবে নেস্তাইন। সিঁড়িতে রয়েছে হয়তো সে। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে জানালার সামনে দাঁড়াল রানা। সাইকেল চালিয়ে দুর্গের গেটের দিকে আসছে কে যেন। কাছাকাছি আসতে লোকটাকে চিনতে পারল রানা। নেস্তাইনের স্বামী লনসন, বাজার নিয়ে ফিরছে। পিছনে, দরজায় নক হলো এই সময়। ‘মশিয়ে, আপনার কফি।’
দ্রুত চিন্তা করল রানা। তারপর ঘুম জড়ানো গলায় বলল, ‘রেখে যাও। আর শোনো, এইমাত্র ঘুমিয়েছেন মাদাম, তাঁকে বিরক্ত কোরো না।
ভুরু জোড়া কপালে তুলে সবজান্তার ভঙ্গিতে মাথা দোলাল নেস্তাইন। পাশাপাশি দুটো বেডরূমের দরজায় দুটো কফির ট্রে রেখে সিঁড়ি বেয়ে ছুটে নামছে সে। ব্যারনেস ইংরেজ ভদ্রলোকের সাথে শুয়েছে, মুখরোচক খবরটা স্বামীকে শোনাতে হয় তাহলে, ভাবছে সে।
কিচেনে স্বামী স্ত্রী ফিসফাস করছে, এই সময় সুটকেসগুলো কাঁধে আর হাতে নিয়ে নিঃশব্দ পায়ে নেমে এল রানা। ওরা কেউ টেরই পেল না। কিন্তু ব্যারনেস সিবার ছোট্ট রেনোয়া গাড়িটা স্টার্ট নিতেই চমকে উঠল দু’জন। জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখল গেট পেরিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে গাড়ি!
‘মশিয়ে, পাহাড়ে চড়তে যাচ্ছেন বুঝি?’
স্বামীকে সমর্থন করল নেস্তাইন, ‘তাই হবে।’
.
ব্রেকফাস্টের একটু পর হেলিকপ্টারে করে প্যারিসে ফিরে এলেন ক্লড র্যাঁবো। পরে অফিসে পৌঁছে একান্ত সচিব চার্লস ক্যারনকে তিনি জানালেন, গ্রামবাসীদের মনোভাব অসহযোগিতামূলক হলেও কমিশেয়ার ভ্যালমি প্রশংসনীয় সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন কাজে। ঈগলটনের একটা কাফেতে সকালের নাস্তা সেরেছিল অরগ্যান, এবং ওখান থেকেই সন্ধান নিয়েছিল একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারের, শেষ রাতের দিকে এই মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করেছে সে। কমিশেয়ার ভ্যালমি যোগ্য, উদ্যমী এবং বিশ্বস্ত লোক বুঝতে পেরে তিনি তাকে প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে একটু আভাস দিয়ে এসেছেন। ভ্যালমি এখন ঈগলটনের চারপাশের বিশ কিলোমিটার এলাকা ঘেরাও করার কাজে ব্যস্ত। দুপুরের মধ্যে শেষ হবে কাজটা। এর মধ্যে অরগ্যান যদি থাকে, বেরিয়ে যাবার আর কোন উপায় নেই তার।
হাউতে শেলনেয়ার থেকে পাহাড়ী রাস্তা ধরে মত্ত ষাঁড়ের মত ছুটে চলেছে রেনোয়া দক্ষিণের তুল-এর দিকে। মনে মনে হিসাব কষে বুঝে নিয়েছে রানা, আলফা যেখানে পাওয়া গেছে সেখান থেকে চতুর্দিকে ক্রমশ বিস্তৃত পুলিসী অনুসন্ধান আজ সকালের মধ্যেই ঈগলটন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কাফের বারম্যানের কাছ থেকে কথা আদায় করবে পুলিস, ট্যাক্সি ড্রাইভারকে খুঁজে বের করবে—কোন সন্দেহ নেই বিকেলের মধ্যে ওরা পৌঁছে যাবে দুর্গে।
ভয়ের কিছু নেই, ভাবছে রানা। পুলিস একজন সোনালী চুলের ইংরেজকে খুঁজছে। কিন্তু এখন সে ইংরেজ নয়। তার চুলও এখন সোনালী নয়। অরগ্যানকে কোথাও এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। সে এখন ডেনিশ ধর্মযাজক বেনসন।
কিন্তু, তবু, ধাওয়া করতে করতে খুব কাছাকাছি চলে এসেছে ওরা। একটু ভুল হলে শোধরাবার সময় পাওয়া যাবে না, তার আগেই ধরে ফেলবে খপ করে।
পাহাড়ী পথ থেকে আর-এন এইটিনে উঠে এল গাড়ি। ঈগলটনের দক্ষিণ পশ্চিমের এই রাস্তা সোজা চলে গেছে তুল-এর দিকে। তুল এখনও বিশ কিলোমিটার দূরে। রিস্টওয়াচ দেখল রানা। দশটা বাজতে কুড়ি মিনিট বাকি।
ধনুকের মত বেঁকে গেছে রাস্তাটা। বাঁকটা নিয়ে রেনোয়া অদৃশ্য হয়ে যেতেই একটা সাইড রোড থেকে ঝড় তুলে মেইন রোডে উঠে এল একটা পুলিস কনভয়। সামনে একটা স্কোয়াড কার, পিছনে দুটো চারদিক ঢাকা ভ্যান। ধনুকের মত বাঁকা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়াল কনভয়টা। ঝপাঝপ লাফ দিয়ে নামল এক ডজন পুলিস। ভ্যান থেকে ধরাধরি করে ষ্টীলের রোড ব্লক সরঞ্জাম নামাচ্ছে তারা।
চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে পড়ল মহিলার। বাড়িতে পুলিসের ঘন ঘন আসা যাওয়া এবং স্বামীর ফিরতে অস্বাভাবিক দেরি দেখে ঘাবড়ে গেছে সে। তার উপর উচ্চপদস্থ পুলিস অফিসারের কড়া ধমক-ধামক খেয়ে কলজে শুকিয়ে গেছে তার।
কমিশেয়ার ভ্যালমি অবশেষে নরম হলো। বলল, ‘তোমার স্বামী কোন অন্যায় করেনি। তাকে আমরা অন্য ব্যাপারে খুঁজছি। বলতে পারো, শুক্রবারে কোন আরোহীকে ট্যাক্সিতে তুলেছিল কিনা?’
ড্রাইভারের স্ত্রী খানিকটা আশ্বস্ত হয়ে বলল, ‘স্টেশন থেকে খালি ট্যাক্সি নিয়ে ফিরে এসেছিল ও। ওই সময় খবর আসে কাফে থেকে কেউ ট্যাক্সি খুঁজছে। মেরামতের কাজের জন্যে হুইলটা খুলে রেখেছিল ও, তাড়াহুড়োর সাথে সেটা লাগিয়ে নিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে কাফেতে চলে যায়। ভাড়ার টাকা নিয়ে ফিরে এসেছিল ও, কিন্তু আরোহীকে কোথায় পৌঁছে দিয়েছে তা সে জানায়নি।’
কাঁধ ঝাঁকাল ভ্যালমি। দু’জন কনস্টেবলকে নির্দেশ দিল ট্যাক্সি ড্রাইভারের বাড়িতে অপেক্ষা করার জন্যে। একজন সার্জেন্টকে পাঠাল স্টেশনে। চৌরাস্তা এবং কাফেতেও দু’জন করে কনস্টেবল পাঠাল সে।
.
তুল থেকে ছয় মাইল এদিকের একটা চওড়া নালায় সমস্ত ইংলিশ পোশাক এবং আলেকজান্ডার অরগ্যানের পাসপোর্টটা ফেলে দিল রানা। ঝপাৎ করে পানিতে পড়ে ডুবে গেল সুটকেসটা।
তুলকে চক্কর দিয়ে স্টেশনটাকে খুঁজে বের করল ও, তিন রাস্তা দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দুটো সুটকেস আর হ্যান্ডগ্রিপ নিয়ে আধ মাইল হেঁটে পৌঁছল রেলওয়ে বুকিং অফিসে
‘প্যারিসের একটা সিঙ্গেল টিকেট দরকার আমার। সেকেন্ড ক্লাস, প্লীজ। কাঁচের দেয়ালের উপর দিয়ে কেরানীর দিকে তাকিয়ে আছে রানা। ‘কত দিতে হবে?’
নতুন সাতানব্বই ফ্র্যাঙ্ক, মশিয়ে।’
‘পরবর্তী ট্রেন ক’টার সময় বলুন তো?’
‘এগারোটা পঞ্চাশে, মশিয়ে। প্রায় একঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে। প্ল্যাটফর্মের শেষ মাথায় একটা রেস্তোরাঁ আছে। প্ল্যাটফর্ম ওয়ানে থাকতে হবে প্যারিসের যাত্রীদেরকে।
লাগেজ তুলে নিয়ে গেটের দিকে এগোল রানা। গেটকীপার ওর কাছে টিকেট চাইল। টিকেটে একটা সীল মারল লোকটা। গেট পেরিয়ে খানিকদূর এগিয়েছে, ধক করে উঠল ওর বুক। পথ রোধ করে দাঁড়াল নীল ইউনিফর্ম পরা একজন লোক। সুরেত-এর চার শাখার এক শাখা Corps Republ।ca।n de Secur।te-এর ইউনিফর্ম এটা, দেখেই চিনল রানা। গলা শুকিয়ে গেছে ওর। ঝিম ঝিম করছে মাথার ভিতর।
কাঁধ থেকে সাব-মেশিনগানটা নামাচ্ছে সি.আর.এস-এর লোকটা। বয়স অল্প। বুক ফুলিয়ে দাঁড়াবার ভঙ্গিতে বেপরোয়া ভাব ফুটে আছে। স্মিত হাসল রানা। চোখ ইশারায় একপাশে সরে যেতে বলল লোকটাকে। ভুরু কুঁচকে উঠল লোকটার। নড়ল না সে। রানা ব্যাপারটা লক্ষ না করার ভান করে নিজেই সরে গেল লোক চলাচলের জায়গা ছেড়ে একপাশে, তারপর হাতের লাগেজগুলো নামাল। পকেটে হাত ভরছে ও, এমন সময় সরে এসে ওর সামনে দাঁড়াল লোকটা দু’পা ফাঁক করে।
পকেট থেকে ডেনিশ পাসপোর্টটা বের করল রানা। ওর হাত থেকে ছোঁ মেরে সেটা কেড়ে নিল লোকটা। পাতাগুলো ওল্টাচ্ছে সে। মুখে ভাবের কোন প্রকাশ নেই। আসলে একটা হরফও বুঝতে পারছে না সে। ইংরেজিই জানে না, ডেনিশ তো অনেক পরের ব্যাপার।
দ্রুত পাসপোর্টটা বন্ধ করে রানার হাতে গুঁজে দিল লোকটা। হড়বড় করে একগাদা দুর্বোধ্য শব্দ উচ্চারণ করে হাত ইশারায় কেটে পড়তে বলল রানাকে। আরেকজন লোক এগিয়ে আসছে দেখে বুট জুতোর আওয়াজ তুলে সেদিকে ছুটল ব্যস্ততার সাথে।
এত সহজে ছাড়া পাবে, ভাবেনি রানা। সুটকেসগুলো তুলে নিয়ে দ্রুত এগোল ও। পিছন ফিরে একবারও তাকাল না।
.
স্বামীকে বাধ্য করল নেস্তাইন ব্যারনেসের শোবার ঘরের উঁচু জানালায় উঠতে।
একটা টেবিলের উপর চেয়ার দাঁড় করানো হলো, সেই চেয়ারে দাঁড়িয়ে লনসন জানালার পর্দা সরিয়ে নিচে তাকাল। দেখল ব্যারনেস চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
অত্যন্ত সাবধানে চেয়ার থেকে টেবিলে, টেবিল থেকে করিডরের মেঝেতে নামল লনসন। ফিস ফিস করে স্ত্রীকে বলল, ‘শরীরের ওপর দিয়ে সারারাত খুব ধকল গেছে কিনা, ব্যারনেস তাই অনেক বেলা অবধি ঘুমাচ্ছে। চিন্তার কিছু নেই।
.
প্যারিসের ট্রেন পৌঁছতে বেশ খানিকটা দেরি করল। বেলা বারোটায় তুল স্টেশনে এসে ‘থামল সেটা। আরোহী হিসাবে যারা চড়ল এতে তাদের মধ্যে একজন প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মযাজকও রয়েছে। দেখেশুনে এমন একটা কম্পার্টমেন্টে উঠল সে যেটায় মাত্র দু’জন মধ্যবয়স্কা মহিলা রয়েছে। একধারের একটা আসনে বসল সে। গোল্ডরিমের চশমাটা চোখে পরে ডেনিশ ভাষায় লেখা মস্ত একটা বই পড়ছে আপন মনে। ইতোমধ্যে খোঁজ নিয়ে জানা হয়ে গেছে তার, ট্রেনটা প্যারিসে পৌঁছবে আটটা দশে।
.
ট্যাক্সি ড্রাইভার ববেট তার অচল গাড়ির পাশে রাস্তার মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে আছে অসহায় ভাবে। বারবার ঘড়ি দেখছে সে আর নিজের ফাটা কপালকে গালমন্দ করছে। দেড়টা বাজে, খিদেয় চোঁ চোঁ করছে পেট। ঈগলটন আর নামাজের মাঝখানে এই রাস্তার দশ মাইলের মধ্যে কোন শহর বা গ্রাম নেই। আর থাকলেই বা কি, গাড়ি ছেড়ে সাহায্যের জন্যে যাওয়াও সম্ভব নয়। যদি যায়, ফিরে এসে গাড়িটাকে দেখতে পাবে না সে। চোর-ছ্যাচড়রা একবার দেখলে হয়, ঠেলে নিয়ে গিয়ে চোরাকারবারীর কাছে পানির দামে বেচে দেবে। না, গাড়ি ছেড়ে কোথাও সে যাবে না। সন্ধ্যার মধ্যে এক-আধটা ট্রাক নিশ্চয়ই এ রাস্তায় আসবে। যতক্ষণ না আসে, অপেক্ষা করবে সে। শুক্রবারে সেই ইংরেজ আরোহীর দেয়া সেই বোতলে লাল মদের কিছুটা অবশিষ্ট আছে এখনও। গাড়িতে উঠে গলায় সেটুকু ঢালল বটে, তারপর সীটে হেলান দিয়ে চোখ বুজল। ঘুমিয়ে পড়তে দেরি হলো না তার।
.
‘এর মানে কি! ফিরে আসেনি এখনও…লোকটা গেল কোথায়?’ রাগে চেঁচিয়ে উঠল কমিশেয়ার ভ্যালমি। টেলিফোনে ট্যাক্সি ড্রাইভারের বাড়িতে অপেক্ষারত একজন পুলিস কনস্টেবলের সাথে কথা বলছে সে। খটাশ করে রিসিভারটা নামিয়ে রেখে কলিং বেল বাজাল সে। তাঁবুতে ঢুকল একজন কনস্টেবল।
‘একুশ নম্বর স্কোয়াড কারকে হাইওয়ে ধরে ঈগলটন ছাড়িয়ে বিশ মাইল ঘুরে আসতে বলো। ট্যাক্সি নিয়ে ড্রাইভার ফেরেনি এখনও। বলবে, কোন খোঁজ পাওয়া মাত্র রেডিও মেসেজ পাঠাতে হবে।’
দ্রুত বেরিয়ে গেল কনস্টেবল।
সকাল থেকে লাঞ্চ আওয়ার পর্যন্ত একের পর এক অসংখ্য রেডিও রিপোর্ট এসে পৌঁচেছে। প্রতিটি রিপোর্টের সারমর্ম এক: অমুক জায়গায় ব্লক করা হয়েছে রোড। ঈগলটনের বিশ কিলোমিটার চৌহদ্দির মধ্যে এমন একজনকেও দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত যার সাথে দীর্ঘদেহী ইংরেজ অরগ্যানের চেহারাগত মিল আছে। লোকটা লুকাল কোথায়, ভাবছে কমিশেয়ার ভ্যালমি। বাতাসে মিলিয়ে তো আর যেতে পারে না, নিশ্চয়ই কোথাও গা ঢাকা দিয়ে আছে সে। কিন্তু কতক্ষণ? বেরোতে তাকে হবেই। তার মানে প্রহরা আরও জোরদার করে অপেক্ষায় থাকতে হবে, বেরনো মাত্র যাতে ধরা যায়।
.
সাড়ে ছয়টায় প্যারিস থেকে ক্লড র্যাঁবো ফোন করলেন ভ্যালমিকে।
মিশিয়ে, দুঃখের সাথে জানাচ্ছি,’ ভ্যালমি বলল, ‘এখনও কোন সুখবর পাইনি আমি। তবে এইটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি, এলাকা থেকে বেরিয়ে যাবার প্রতিটি রাস্তায় কড়া প্রহরার যে ব্যবস্থা করেছি তাতে এতটুকু খুঁত নেই। এই বৃত্তের মধ্যে যদি সে থাকে, ধরা তাকে পড়তেই হবে।’
‘ট্যাক্সি ড্রাইভার লোকটা…?
‘বাতাসে মিলিয়ে গেছে লোকটা। আপনার অরগ্যান কোথায় লুকিয়ে আছে, এ তথ্য পাওয়া যেত ড্রাইভারের কাছ থেকে। ওর স্ত্রী শুধু এইটুকু জানে যে শুক্রবারে একজন ইংরেজকে কোথাও পৌঁছে দিয়েছিল সে। কোথায়, তা সে তার স্ত্রীকে বলেনি।…হ্যাঁ, তার খোঁজে গাড়ি পাঠানো হয়েছে…এক মিনিট ধরুন, মশিয়ে, আরেকটা রিপোর্ট আসছে।’
ভ্যালমি অপরপ্রান্তে চুপ হয়ে গেছে। ক্লড র্যাঁবো অস্পষ্টভাবে অন্য এক লোকের চঞ্চল কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছেন। একটু পরই আবার কথা বলল ভ্যালমি। ‘মশিয়ে, গোদের ওপর বিষফোঁড়া!’
‘মানে?’
‘খুন, মশিয়ে,’ বলল ভ্যালমি। ‘মার্ডার!’
‘কোথায়?’ দ্রুত আগ্রহ প্রকাশ করলেন ক্লড র্যাঁবো।
হাউতে শেলনেয়ারের একটা দুর্গে। একজন ভদ্রমহিলা খুন হয়েছেন। এক মিনিট ধরুন, ..মাই গড়, খুন হয়েছেন ব্যারনেস সিবা!’
একান্ত সচিব চার্লস ক্যারন দেখছে চীফ ক্লড র্যাঁবোর মুখ রক্তশূন্য ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে।
‘ভ্যালমি, মন দিয়ে শোনো। এ তার কাজ। নিশ্চয়ই তার কাজ। সে কি দুর্গ থেকে কেটে পড়েছে?’
ঈগলটনের অস্থায়ী পুলিস হেডকোয়ার্টারে আরেক দফা আলোচনা হলো। তারপর ভ্যালমি ক্লড র্যাঁবোকে জানাল, ‘হ্যাঁ, মশিয়ে। ব্যারনেসের গাড়ি নিয়ে আজ সকালেই চলে গেছে সে। ছোট একটা রেনোয়া। দুর্গের চাকরানী আর তার স্বামী লাশ আবিষ্কার করেছে খানিক আগে। অনেক ডাকাডাকি করেও ব্যারনেসের ঘুম ভাঙাতে না পেরে জানালা ভেঙে ভিতরে ঢোকে ওরা। স্থানীয় ডাক্তার পরীক্ষা করে জানিয়েছে মৃত্যুর কারণ ঘুমের ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ডোজ। ব্যারনেসের বাহুতে সূচের দাগ পাওয়া গেছে। সম্ভবত ঘুমাচ্ছিলেন ব্যারনেস, এই সময় অরগ্যান তাঁকে ওভারডোজ ইঞ্জেকশন দিয়েছে।’
‘গাড়ির বর্ণনা আর নাম্বার পেয়েছ?
‘হ্যাঁ।’
‘গুড। গোপনীয়তার আর কোন প্রয়োজন নেই। প্রকাশ্যে ব্যাপক অনুসন্ধান চালাবার জন্যে যা কিছু করার সব করো। ইটস এ স্ট্রেইট মার্ডার হান্ট নাউ। সমগ্র দেশব্যাপী প্রতিটি থানা, স্কোয়াড কার, পুলিস স্টেশন, রেডিও কারকে সতর্ক করে দিচ্ছি এখান থেকে আমি। তবে, অকুস্থলে গিয়ে ওখান থেকে সূত্র ধরে লোকটার পিছু নেয়া যায় কিনা, চেষ্টা করে দেখো তুমি। যে-পথে পালিয়েছে বা তার পালাবার সম্ভাব্য পথগুলোয় দ্রুতগামী পুলিস ভ্যান পাঠাও। সশস্ত্র লোক ছাড়া কেউ যেন তাকে ধাওয়া না করে। রক্তের স্বাদ পাওয়া হিংস্র জানোয়ার সে, স্বাধীন থাকার স্বার্থে একের পর এক খুন করে যাবে এখন। সাবধান!’
‘মশিয়ে…’
‘বলো।’
‘আমার লোকদের কি নির্দেশ দেব, দেখামাত্র গুলি করতে হবে তাকে?’
ঝাড়া পনেরো সেকেন্ড কথা বললেন না কুন্ড র্যাঁবো। ভাবছেন। অ্যাকশন সার্ভিস তাঁকে জানিয়েছে, অরগ্যানকে তারা জীবিত ধরতে চায়, কারণ হিসেবে একটা যুক্তিও দেখিয়েছে তারা। কিন্তু অরগ্যান এখন সাধারণ মানুষের জন্যেও মস্ত বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। যে-কোন সামান্য কারণে সে খুন করবে এখন।
‘হ্যাঁ,’ দৃঢ় কণ্ঠে বললেন ফ্রান্সের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী পুলিস অফিসার। ‘অবশ্যই। দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছি আমি। পায়ে। তবে অবস্থা বেগতিক দেখলে বুকে এবং মাথাতেও গুলি করা চলবে। জীবিত ধরতে না পারলে আমি তার লাশ দেখতে চাই।’
রিসিভার নামিয়ে রেখে ক্লড র্যাঁবো তাঁর একান্ত সচিবের দিকে তাকালেন। নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা দোলালেন তিনি। বয়েস বাড়ার সাথে সাথে বুদ্ধি কমে যাচ্ছে আমার, বুঝলে? হোটেল দু সার্ফের বোর্ডার তালিকায় ব্যারনেস সিবার নাম ছিল, অরগ্যানের নামের ঠিক নিচেই। তখনই ব্যাপারটা খেয়াল করা উচিত ছিল আমার।’
তুল। সাড়ে সাতটা। টহলরত একজন পুলিস পেল গাড়িটাকে। সাতটা পঁয়তাল্লিশে পুলিস স্টেশনে খবর দিল সে। পুলিস স্টেশন যোগাযোগ করল ভ্যালমির সাথে। অভার্ন-এর কমিশেয়ার ভ্যালমি ক্লড র্যাঁবোকে ফোন করল আটটা পাঁচে সে।
রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় পাঁচশো মিটার দূরে,’ ক্লড র্যাঁবোকে জানাল
‘তোমার কাছে এই মুহূর্তে রেলওয়ে টাইম-টেবল আছে?’
‘থাকার কথা। দেখি।.. হ্যাঁ আছে।’
‘তুল থেকে সকালের প্যারিসগামী ট্রেন ক’টায় ছাড়ে? এবং গার ডি’ অস্টারলিজে কখন পৌঁছায়? কুইক, ফর গডস সেক, কুইক!’
কয়েক সেকেন্ড বিরতির পর ভ্যালমি জানান, ‘সারাদিনে মাত্র দুটো ট্রেন ছাড়ে তুল থেকে। এগারোটা পঞ্চাশে ছাড়ে সকালের ট্রেন, প্যারিসে পৌঁছায় · আটটা দশে…।’
রিসিভারটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তড়াক করে উঠে দাঁড়ালেন ক্লড র্যাঁবো। তাঁকে অনুসরণ করার জন্যে চার্লস ক্যারনকে নির্দেশ দিলেন চিৎকার করে। ঝড়ের বেগে বেরিয়ে যাচ্ছেন বাইরে।
.
দীর্ঘ একটানা সিটি বাজিয়ে আটটা দশের এক্সপ্রেস ট্রেন প্যারিসের গার ডি’ অস্টারলিঙ্গ স্টেশনে রাজকীয় ভঙ্গিতে ঠিক সময়ে এসে পৌঁছল। এখনও পুরোপুরি থামেনি ট্রেনটা, চকচকে গা থেকে সার সার দরজাগুলো ঝটপট খুলে যাচ্ছে, আরোহীরা দ্রুত নামছে প্ল্যাটফর্মে। বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের খুঁজছে অনেকে, বাকিরা মেইন হলে ঢুকছে দল বেঁধে, এটা সেটা কেনাকাটা করছে। এদের মধ্যে অনেকে মেইন হলের অপর দরজা দিয়ে বেরিয়ে সোজা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে চলে যাচ্ছে। এই শেষোক্ত দলটার পথম সারিতে রয়েছে একজন ডেনিশ ধর্মযাজক। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে সবার আগে পৌঁছল সে। একটা মার্সিডিজে দুটো সুটকেস আর হ্যান্ডগ্রিপটা নিয়ে উঠল। মিটার ডাউন করে দিয়ে ট্যাক্সিতে স্টার্ট দিল ড্রাইভার। একটা বিরাট টার্ন নিয়ে স্টেশনের গেটের দিকে ঘুরিয়ে নিল গাড়ির নাক গেট পেরিয়ে বেরিয়ে এল যানবাহন ঠাসা রাস্তায়।
রাস্তায় বেরিয়েই বিস্ময়ের একটা ধাক্কা খেল ড্রাইভার। একসাথে দুটো জিনিস লক্ষ করল সে। এক, সাইরেনের তীক্ষ্ণ শব্দ এগিয়ে আসছে। দুই, রাস্তার দু’ধারে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য যানবাহন। রাস্তা পেরিয়ে সে-ও তার ট্যাক্সিকে একটা লাইনের শেষে দাঁড় করাল।
রাস্তার মাঝখান দিয়ে বিদ্যুৎ বেগে ছুটে আসছে একটা কনভয়। সামনে একটা খোলা জীপ। জীপে দু’জন লোক দাঁড়িয়ে। একজন প্রৌঢ়, সুন্দর ফ্রেঞ্চকাট লালচে দাড়ি তাঁর মুখে। দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে আছেন একটা চুরুট। কিন্তু নিভে গেছে সেটা। ক্লড র্যাঁবোর কাঁচাপাকা চুল পিছন দিকে উড়ছে প্রচণ্ড বাতাসে। তাঁর পাশে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে চার্লস ক্যারন। বিকট শব্দ উঠল জীপের চাকার সাথে রাস্তার ঘর্ষণে। বাঁক নিয়ে স্টেশনের চতুরে ঢুকছে কনভয়টা। জীপের পিছনে দুটো পুলিস ভ্যান। সাব-মেশিন কারবাইনধারী অনেক পুলিস দেখা যাচ্ছে।
‘ব্যাপার গুরুতর মনে হচ্ছে,’ বলল ড্রাইভার। ‘কেউ বোধহয় ঠোলাদের লেজ মাড়িয়ে দিয়েছে। কোথায় যাবেন, মৌলানা সাহেব?’
কোয়াই দেস গ্রান্ডস অগাস্টিন এলাকার ছোট্ট একটা হোটেলের ঠিকানা বলল ড্রাইভারকে রানা।
.
রাত ন’টা। ঝড়ো কাকের মত চেহারা নিয়ে নিজের অফিসে ফিরে এলেন ক্লড র্যাঁবো। টেবিলে বসতে না বসতে তুল থেকে ফোন এল কমিশেয়ার ভ্যালমির।
‘গাড়ি থেকে হাতের ছাপ নেয়া হয়েছে?’ জানতে চাইলেন ক্লড র্যাঁবো। খাতা পেন্সিল নিয়ে নোট করছেন তিনি।
‘জ্বী, মশিয়ে। দুর্গের দুটো বেডরূম থেকেও সংগ্রহ করা হয়েছে। কয়েকশো সেট, সব মিলছে।’
‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাঠিয়ে দাও এখানে,’ বললেন ক্লড র্যাঁবো। তোমার লোকজনদের ক্ষান্ত হতে বলো। সে এখন আমাদের এলাকায়। এখান থেকেই তার বিরুদ্ধে যা করার করছি আমরা।’
‘কোন সন্দেহ নেই তো, মশিয়ে, ডেনিশ ধর্মযাজকই আমাদের সেই লোক?’
‘কোন সন্দেহ নেই। একটা সুটকেস কম রয়েছে এর কাছে, কিন্তু হাউতে শেলনেয়ার এবং তুলের মাঝখানে নদী-নালায় খোঁজ করলেই সেটা পেয়ে যাবে তুমি। বাকি তিনটের বর্ণনার সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে ডেনিশ পাদ্রীর লাগেজগুলো। সে-ই, সন্দেহের অবকাশ নেই।’ রিসিভার রেখে দিলেন তিনি।
‘বুদ্ধিমান, আগেই বলেছি,’ একান্ত সচিবের দিকে তাকিয়ে তিক্ত কণ্ঠে বললেন তিনি। বৈছে বেছে এমন একটা ছদ্মবেশ নিয়েছে, কার বাপের সাধ্যি সন্দেহ করে কেউ পাদ্রী, ডেনিশ ধর্মযাজক।
‘কিন্তু, চীফ, আমাদের ব্যর্থতার সংখ্যাও কম নয়…’
‘রাইট, মাই বয়। সি-আর-এস-এর লোকটা বলছে পাসপোর্ট চেক করেছে সে, কিন্তু নামটা মনে নেই তার। ঈগলটনে কি ঘটল? নির্জন রাস্তায় নষ্ট গাড়িতে বসে ঘুমিয়ে সময় কাটাল একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার। সময় মত এর দেখা পেলে কেল্লা ফতে হয়ে যেত কখন! দুর্গে কি ঘটল? মনিব দশ বারো ঘণ্টা অতিরিক্ত ঘুমাচ্ছে, অথচ টনক নড়ছে না চাকরবাকরদের। একটা কথা জেনে রাখো, মাই বয়, এটাই আমার শেষ কেস। বয়স বেশি হয়ে গেছে আমার। এ বয়সে একটা কাজই সাজে আমাকে। রসুনের আচার তৈরি করে পোয়াতী মেয়েদেরকে উপহার দেয়া। তাই করব, বুঝলে? এখন, যাও, গাড়ি রেডি করো। গম চুলোয় সেদ্ধ হতে যাবার সময় হয়ে গেছে।’
.
টান টান ধনুকের ছিলার মত শিরদাঁড়া খাড়া করে চল্লিশ মিনিট বসে রইল সবাই কনফারেন্স রূমে। স্বভাবসুলভ মৃদু গলায় এক এক করে সমস্ত ঘটনা বলে গেলেন ব্লুড র্যাঁবো, ঈগলটনের জঙ্গলে সূত্র প্রাপ্তি, ট্যাক্সি ড্রাইভার-যে জানত অরগ্যান কোথায় উঠেছে, তার অনুপস্থিতি, দুর্গে অনুষ্ঠিত হত্যাকাণ্ড, ভুল থেকে প্যারিস এক্সপ্রেসে দীর্ঘদেহী পক্ককেশ ডেনিশ ধর্মযাজকের আরোহণ—সবই রিপোর্ট করলেন তিনি।
‘মোদ্দা ব্যাপার দাঁড়াল,’ ক্লড র্যাঁবো থামতে সুরেত-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর কর্নেল প্যাপন ঝাঁঝের সাথে বলল, ‘খুনী এখন নতুন নাম, নতুন চেহারা নিয়ে এই প্যারিসেই অবস্থান করছে। আমাদের কারও বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না, মশিয়ে ক্লড, র্যাঁবো, আপনি আবার ব্যর্থ হয়েছেন, এবং সব গুবলেট করে ফেলেছেন।
‘সমালোচনা পরে হবে,’ বাধা দিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। তারপর প্রশ্ন করলেন, ‘প্যারিসে আজ রাতে বিদেশী পাদ্রীর সংখ্যা কত হতে পারে?’
সম্ভবত, কয়েকশো, মশিয়ে,’ মৃদু গলায় বললেন ক্লড র্যাঁবো।
‘সবাইকে চেক করা সম্ভব?’
‘সকালে সম্ভব,’ বললেন ক্লড র্যাঁবো। ‘সকাল ন’টার মধ্যে সমস্ত হোটেলের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ডি-এস-টি-এর হেডকোয়ার্টারে পৌঁছে যাবার কথা।
কর্নেল প্যাপন তার বক্তব্যের গুরুত্ব বাড়াবার তাগিদে মস্ত শরীর নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, তারপর জলদ গম্ভীর স্বরে বলল, ‘প্যারিসের সমস্ত হোটেলে মাঝরাতে, রাত দুটোয় এবং রাত চারটের সময় সশস্ত্র পুলিসকে দিয়ে হামলা পরিচালনা করার অনুমতি দেয়া হোক আমাকে। সে একজন ধর্মযাজক, পেশা প্রসঙ্গে একথা নিশ্চয়ই উল্লেখ করতে হয়েছে তাকে, হোটেলের খাতায় এ তথ্য পাওয়া-ও যাবে। সুতরাং তাকে খুঁজে পাওয়া এখন পানির মত সহজ, যদি দায়িত্বটা আমাকে দেয়া হয়।
কনফারেন্স রূমে উপস্থিত সবার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল
মৃদু হেসে অসহায়ভাবে মাথা নাড়লেন ক্লড র্যাঁবো। ‘সহজ লোক নয় সে, দয়া করে এ-কথাটা কেউ ভুলবেন না। তার প্রতিটি কাজে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার ছাপ দেখতে পেয়েছি আমি। আলোচ্য প্রসঙ্গেও এ-ধরনের হাস্যকর ভুল সে করবে বলে ভাবতে অনুমতি দিই না, আমি নিজেকে। তার ডগ কলারটা সে একটা স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে নেয় যদি, কিংবা যদি গলা থেকে খুলেই ফেলে, এবং মিস্টার অমুক হিসেবে নাম লেখায় হোটেলের খাতায়—তাতে আশ্চর্য হবার কিছু আছে কি? তার পক্ষে সেটা করাই কি স্বাভাবিক নয়?’
রক্তচক্ষু মেলে কর্নেল প্যাপন তাকিয়ে আছে ক্লড র্যাঁবোর দিকে। আরও অনেককেই অসন্তুষ্ট এবং নিরাশ দেখাচ্ছে।
‘এই যখন পরিস্থিতি,’ বললেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, ‘মাত্র একটা পথ খোলা আছে আমার সামনে। মহামান্য প্রেসিডেন্টের সাথে আবার সাক্ষাৎ করার অনুমতি প্রার্থনা করব আমি। তাঁকে অনুরোধ করব তিনি যেন জনসাধারণ্যে দেখা দেবার সমস্ত প্রোগ্রাম এই মুহূর্ত থেকে বাতিল করে দেন, যতক্ষণ না এই দুর্ধর্ষ, বিপজ্জনক লোকটা ধরা পড়ে। ইতিমধ্যে, মশিয়ে ক্লড র্যাঁবো; আপনি নিজস্ব পদ্ধতি অনুযায়ী লোকটাকে ধরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। আমি চাই আগামীকাল সকালে প্যারিসে অবস্থানরত প্রত্যেক ধর্মযাজককে ব্যক্তিগতভাবে চেক করা হোক। এ ব্যাপারে সুরেতের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর কর্নেল প্যাপনকেও দায়িত্ব দিতে চাই আমি।’
‘ধন্যবাদ, মশিয়ে,’ চর্বি ভর্তি প্রকাণ্ড মুখে হাসি ফুটল কর্নেল প্যাপনের।
এরপরই সভা ভেঙে গেল।
.
‘লোকটার ক্যালিবার সম্পর্কে কিছু ভেবেছ?’ অফিসে ফিরে এসে নরম সুরে একান্ত সচিবকে প্রশ্নটা করলেন ক্লড র্যাঁবো। উত্তরের জন্যে অপেক্ষায় না থেকে নিজেই আবার বললেন তিনি, ‘ফেরেশতা বা শয়তান পর্যায়ের লোক সে, বুঝলে, খুবই উঁচু ক্যালিকং: রর লোক। ভাগ্য যত না, তারচেয়ে বুদ্ধি বেশি সাহায্য করছে তাকে। আর আমাদের কপাল মন্দ, তার সাথে যোগ হয়েছে ভুল ভ্রান্তি। ভুলগুলো সব আমার। কিন্তু এসবের সাথে আরেকটা বিরুদ্ধ শক্তির অস্তিত্ব অনুভব করছি আমি দু’বার তাকে আমরা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ধরতে পারিনি। একবার সে শেষ মুহূর্তে ফস্কে গেল গাড়িতে নতুন রঙ চড়িয়ে। দ্বিতীয়বার কি হলো? আলফা রোমিওর সন্ধান পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রেমিকাকে খুন করে দুর্গ ত্যাগ করল সে। দু’বারই এ-ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে রাতের মীটিংয়ে যখনই আমি ঘোষণা করেছি যে তাকে আমরা কোণঠাসা করে ফেলেছি, বারো ঘণ্টার মধ্যে ঝোলায় ভরতে পারব। অথচ পারিনি। কারণ কি, বলো দেখি? কেউ কি সাবধান করে দিচ্ছে তাকে?’
চোখ দুটো বিস্ময়ে বিস্ফারিত হয়ে উঠেছে চার্লস ক্যারনের।
‘মাই ডিয়ার ফেলো,’ গম্ভীর ক্লড র্যাঁবো বললেন, ‘সীমাহীন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আমাকে, সেটা এখন ব্যবহার করতে যাচ্ছি আমি। কিভাবে? শার্লক হোমস টাইপের কিছু কৌশল খাটাব, এই আর কি।’
‘আড়ি পাতার যন্ত্র ব্যবহার করবেন…?’
‘অহেতুক প্রশংসা করছি না,’ মৃদু হেসে বললেন ক্লড র্যাঁবো, ‘ভবিষ্যতে তুমি উন্নতি করবে। ঠিকই ধরেছ। হ্যাঁ, আড়ি পাতব।’
নতুন একটা চুরুট ধরিয়ে এগিয়ে গিয়ে খোলা জানালার সামনে দাঁড়ালেন তিনি। অদূরে তরল রুপোর স্রোতের মত বয়ে যাচ্ছে শ্যেন নদীর পানি। আর একটু দূরে ল্যাটিন কোয়ার্টারের উজ্জ্বল আলোকমালা প্রতিবিম্বিত হচ্ছে নদীতে। নারী কণ্ঠের সুর-ঝঙ্কার ভাসছে আলোকিত পানির উপর। তিনশো গজ দূরে আরেক লোক তার জানালার সামনে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে উজ্জ্বল মিনার বিশিষ্ট নটর ডেম-এর বাঁ দিকে ভারিক্কি চেহারার পুলিস জুডিশেয়ার-এর দালানটার দিকে। লোকটার পরনে কালো ট্রাউজার, পায়ে ওয়াকিং শু, গায়ে পোলো সিল্ক সোয়েটার, সেটাকে ঢেকে রেখেছে সাদা শার্ট এবং কালো বিব। তার ঠোঁটে ঝুলছে একটা কিং সাইজ ইংলিশ ফিলটার সিগারেট। মুখটা তাজা, কিন্তু মাথার চুলগুলো বিবর্ণ।
নদীর দু’দিক থেকে দু’জন দু’জনের দিকে তাকাল। চোখাচোখি হতেই প্যারিসের সব গির্জায় ঢং ঢং করে বাজতে শুরু করল রাত বারোটার ঘণ্টাধ্বনি।
শুরু হলো বাইশে অক্টোবরের প্রথম প্রহর