পরদিন ভোরের আলো ফুটতেই তাঁবু গুটিয়ে ধ্বংসাবশেষ খোঁজা শুরু হল। সেই মূর্তির আশপাশে আরও কয়েকটা স্তম্ভের চিহ্ন খুঁজে পেলেও ঘণ্টাখানেক ধরে সে অঞ্চলে সন্ধান চালিয়ে মন্দির জাতীয় কোনো কিছুর চিহ্ন পেল না তাঁরা।
হেরম্যান বললেন, ‘চলো, আমরা যেমন এগোচ্ছিলাম, তেমনি এগোব। সম্ভবত রক্ষীমূর্তিটা এখানকার মন্দিরের বাইরের কোনো অংশ ছিল। আগে অনেক ক্ষেত্রে মন্দির বা নগরীর পাঁচ-দশ মাইল বেড় দিয়ে পাঁচিল তৈরি করা হত। এটা তেমনই কিছু হবে।’ সুদীপ্তরা আবার চলতে শুরু করল। এবারের যাত্রাপথে অনেক পাখি চোখে পড়তে লাগল। এক জায়গায় মোষের মতো কয়েকটা প্রাণীকে দূর থেকে দেখতে পেল সুদীপ্তরা। প্রাণীগুলো মনে হয় বেশ লাজুক। সুদীপ্তদের দেখামাত্রই বনের আড়ালে চলে গেল।
সুদীপ্ত প্রশ্ন করল, ‘ওগুলো কি বুনো মহিষ
হেরম্যান বললেন, ‘না। আমি এই প্রথম দেখলেও ওদের ছবি আগে দেখেছি। গোরু ও মোষের মাঝামাঝি প্রাণী। শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই দেখা মেলে। অদ্ভুত নাম ওদের, ‘হোয়াট টু সি’ অর্থাৎ ‘কী দেখব’?’
এসব দেখতে পেলেও প্রাচীন মন্দিরের কোনো চিহ্ন ধরা দিল না তাঁদের চোখে। সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর, তখন একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁরা বসলেন।
হেরম্যান বললেন, ‘দেড়দিন তো কেটে গেল। কাল সন্ধের মধ্যে তো আবার তাঁবুর কাছে ফিরতে হবে। আমাদের আগে সেই মন্দিরটার কাছে পৌঁছনো দরকার। তেমন হলে আজ সারা রাত চলব আমরা।’
সুদীপ্ত বলল, ‘রিচার্ড যখন লিখেছেন, তখন মন্দির নিশ্চয়ই কোথায় আছে।’ হেরম্যান এগোবার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমার ধারণা, সোনার ড্রাগনও নিশ্চয়ই সেখানে আছে।’
আবার চলা শুরু হল তাঁদের। কিছুক্ষণ পর তাঁরা হাজির হলেন জঙ্গলের মধ্যে একটা ফাঁকা জমিতে। তার ওপাশে জঙ্গল আরও ঘন। বলা যেতে পারে, ফাঁকা জমিটা দুটো জঙ্গলের সীমারেখা। সেই জমিতে দিনের আলোয় প্রথম একটা কোমোডো দেখলেন তাঁরা। বেশ বড় ড্রাগন। সাত-আট ফুট লম্বা হবে। বলা বাহুল্য, হেরম্যানের ড্রাগন সেটা নয়। কালচে লাল তার দেহ। কিছুটা ছাই-ছাই রং। প্রাণীটা ঘাড় তুলে ওপাশের জঙ্গলের দিকে কী দেখছে আর মাঝেমধ্যে নাক তুলে বাতাস থেকে সম্ভবত গন্ধ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সুদীপ্ত ক্যামেরা বের করে বেশ কয়েকটা ফোটো তুলল প্রাণীটার। সে কিন্তু সুদীপ্তদের উপস্থিতি খেয়াল করল না। অতি ধীর পায়ে বাতাসে কিসের গন্ধ শুঁকতে-শুঁকতে ফাঁকা জমি ছেড়ে ওপাশে গিয়ে ঢুকল। সুদীপ্তরাও এর পর ফাঁকা জমি পেরিয়ে সেখানে ঢুকল। তবে সেই কোমোডোটা আর চোখে পড়ল না।
কিছুটা এগিয়েই হঠাৎ একটা গাছের গুঁড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন দুজনে। গাছের চারপাশ ঘিরে মাটির উপর জেগে আছে সার-সার নরকঙ্কাল! তারা যেন মাটি ফুঁড়ে উঠে দাঁড়াতে চাইছে। এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে বিস্ময়ের ঘোর কাটার পর হেরম্যান বললেন, ‘সম্ভবত এটা আদিম অধিবাসীদের গোরস্থান। মানুষগুলোকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল।’
সুদীপ্ত বলল, ‘কাদের গোরস্থান এটা? আপনি তো বলেছিলেন, এ দ্বীপে মানুষ থাকে না!’
তিনি বললেন, ‘তাই তো জানি। এমন হয়তো হতে পারে, আশপাশের কোনো দ্বীপ থেকে মানুষ এখানে আসে।’
হেরম্যান বললেন, ‘একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখছি। ভালো করে লক্ষ করো, অধিকাংশ কঙ্কালগুলোর কিন্তু হাত নেই। আমার ধারণা, এদের কারও স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি।’ কিছুদূর এগোতেই কোথা থেকে যেন অস্পষ্ট কথাবার্তার শব্দ কানে এসে লাগল তাঁদের, আর তারপরই গাছপালার ফাঁক দিয়ে কয়েকটা অস্পষ্ট অবয়ব দেখতে পেলেন তাঁরা। ওরা কারা? ভালো করে সেদিকে দেখার পর হেরম্যান বললেন, ‘আরে, মনে হচ্ছে মিস্টার সালুইনরা! তা হলে ওঁরাও এদিকে এসেছেন?’
হেরম্যান তাঁদের দিকে এগোলেন। একসারি বিরাট গাছের ওপাশে তাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন। সুদীপ্তরা সেই গাছের আড়ালে পৌঁছতেই কানে এল মিস্টার সালুইনের গলা, ‘তুমি ফালতু বিদেশি দুটোকে জাঙ্কে তুলতে গেলে কেন? ওদের মতলব ঠিক বুঝতে পারছি না। জার্মানটাকে বললাম, বরবুদুর মন্দিরে হাতি আর কোমোডোর লড়াইয়ের পাথরমূর্তি কী সুন্দর ! তা শুনে জার্মানটা সম্মতি জানাল। আসলে বরবুদুরে ওরকম কোনো মূর্তি নেই। লোকটা ওখানে যায়নি। যে ইতিহাসবিদ, সে ইন্দোনেশিয়ার বরবুদুর দেখবে না? ওরা নিজেদের উদ্দেশ্য গোপন করছে।’
কথাগুলো কানে যেতেই সুদীপ্তরা আর না এগিয়ে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে পড়ল। সালুইন জায়ার কাছাকাছি লু-সেনকেও এবার দেখতে পেলেন তাঁরা। তাঁর হাতে ধরা একটা রাইফেল! বুকে কার্তুজের বেল্ট ঝুলছে। জাঙ্ক থেকে নামার সময় তাঁকে সশস্ত্র অবস্থায় দেখেনি সুদীপ্তরা। ওঁরা আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনতে লাগলেন তাঁদের কথাবার্তা।
সালুইনের কথার উত্তরে লু-সেন জবাব দিল, ‘হ্যাঁ, আমারও মনে হচ্ছে লোক দুটো অন্য কোনো ধান্দায় এসেছে। আসলে জার্মানটা আমার সামনে এমনভাবে ডলারের তাড়া নাচাল যে, লোভ সামলাতে পারলাম না। গতবার ছেলেটাকে ধরার সময় আমার যে লোক দুটো জংলিদের হাতে মারা গেল, তাদের পরিবারকে ওই টাকা দিতে হবে। না হলে আমাদের এ দ্বীপে আসার ব্যাপারটা ফাঁস হয়ে যেতে পারে। তবে লোক দুটোকে নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই। তেমন হলে ওদের দ্বীপেই ছেড়ে রেখে যাব। আর খুব বেশি অসুবিধে হলে…।’ বলে হাতের রাইফেল তুলে দাঁত বের করে হাসল লু-সেন। গাছের আড়াল থেকে লু-সেনের ইঙ্গিতটা বুঝতে সুদীপ্তদের অসুবিধে হল না।
সালুইন বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করে বললেন, ‘তা তো বুঝলাম। কিন্তু এত কষ্ট করে ছেলেটাকে ধরা হল, নিয়ে গিয়ে তিনমাস ধরে খাওয়ানো হল, আবার এখানে আনা হল, কিন্তু লাভ তো কিছু হল না। আমার মনে হয়, আস্কারি দ্বীপের অন্য জংলিদের মতো মন্দিরে কোথায় সোনা লুকোনো আছে, তা ওরও জানা। অত বড় মন্দিরের সব জায়গা তো আর খোঁড়া যাবে না! গতবার তিনদিন ধরে অনেক খুঁজেছি, কোথাও পাইনি। তবে আমার স্থির বিশ্বাস, সোনা ওখানেই আছে। না হলে গতবার মন্দির চত্বরে বাচ্চাটাকে ধরার সময় যে জংলিটাকে আমরা মারলাম, তার কাছে সোনার গুঁড়ো এল কীভাবে? ওই মন্দির চত্বরের কোমোডোদের জংলিরা নিছক পুজো করতে আসে না, মন্দিরে নজর রাখতেও আসে।’
এরপর তিনি বললেন, ‘দ্যাখো, কোনোভাবে ছেলেটাকে ভয় দেখিয়ে আকারে-ইঙ্গিতে কথা বের করতে পারো কি না??
লু-সেন বলল, ‘ভাষাটাই তো বড় সমস্যা। তিনমাস ধরে চেষ্টা করেও বিন্দুবিসর্গ কথা বুঝতে পারছি না। তবে কোমোডো ধরার টোপ হিসেবে ও কিন্তু দারুণ! সোনা না পাই, গোটা দশেক চামড়া পেলেই একটা জাঙ্ক কেনা যাবে।’ কথাগুলো বলেই বেশ উত্তেজিতস্বরে একটু চাপা গলায় লু-সেন সামনের দিকে সালুইন জায়াকে কী যেন দেখিয়ে বলল, ‘আরে, ওই দেখুন, বাঁদরের রক্তের গন্ধে ঠিক হাজির হয়েছে একটা।’
লু-সেন সালুইনকে কী দেখাচ্ছে তা দেখার জন্য গাছের গুঁড়ির আড়াল থেকে আর-একটু মাথা বের করতেই একটা অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়ল। সালুইনরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন তার সামনে জঙ্গলঘেরা বেশ বড় একটা নেড়া মাঠ। পাথর আর মাটি ভরা জায়গা। ঘাসের চিহ্ন নেই। মাঠের প্রান্তে দুপুর রোদে উবু হয়ে পাথরের মূর্তির মতো হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে আছে সেই ছেলেটা। তার কোমরের দড়ির এক দিক একটা খোঁটায় বাঁধা। ছেলেটার গায়ে কালচে ধরনের কী যেন মাখানো। দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছে তাকে ঘিরে মাছি জাতীয় পোকা ভনভন করছে। আর এর পরই অদ্ভুত ব্যাপারটা চোখে পড়ল। জঙ্গলের এক প্রান্ত থেকে বেরিয়ে ছেলেটার দিকে এগোচ্ছে একটা কোমোডো ড্রাগন! খুব ধীর গতিতে সতর্ক ভঙ্গিতে সে এগোচ্ছে। মাঝে-মাঝে থেমে নাক উঁচু করে বাতাসে কিসের গন্ধ নিচ্ছে! ছেলেটাই যে তার শিকার তা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না। তবে সালুইন বা গাছের আড়ালে সুদীপ্তরা যেদিকে দাঁড়িয়ে আছেন, সেদিকে নজর নেই প্রাণীটার।
সুদীপ্তরা লক্ষ করল লু-সেন ধীরে-ধীরে রাইফেল ওঠাচ্ছে। ড্রাগনটাও ক্রমশ এগোচ্ছে ছেলেটার দিকে। আর মাত্র ফুট দশেকের ব্যবধান।
হেরম্যান বললেন, ‘আর দেরি করা ঠিক নয়। কোমোডো বা রাইফেলের গুলি যে-কারও হাতে ও মারা যেতে পারে!’
হেরম্যান গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে মাথার উপর রিভলভার তুলে ব্লাঙ্ক ফায়ার করলেন। তার পরই লু-সেন রাইফেল চালাল। পরপর দুটো আগ্নেয়াস্ত্রের শব্দে খানখান হয়ে গেল বনভূমির নিস্তব্ধতা। রিভলভারের শব্দে মনে হয় হাত কেঁপে গিয়েছিল লু-সেনের। তার গুলি কোথায় লাগল বোঝা গেল না, শুধু ছেলেটার কাছাকাছি মাটিতে সামান্য ধুলো ছিটকে উঠল। আতঙ্কে চিৎকার করে উঠে দাঁড়াল ছেলেটা। ড্রাগনটাও যেন একটু লাফিয়ে মুহূর্তের মধ্যে শরীরটাকে মোচড় দিয়ে বাঁক নিয়ে বিদ্যুৎগতিতে জমি পেরিয়ে জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে গেল। এর পরেই লু-সেনের রাইফেলের নল ঘুরে গেল পিছন দিকে। সালুইনের হাতে উঠে এল রিভলভার। জাঙ্কের অন্য লোকগুলোও কোত্থেকে যেন ছুটে এল, তারাও প্রত্যেকেই সশস্ত্র। উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্রের ঘেরা টোপে বন্দি হলেন তাঁরা দুজন।
সালুইনই এগিয়ে এসে বললেন, ‘আপনাদের সঙ্গে দেখা হয়ে ভালোই হল। আপনাদের এ দ্বীপে আসার আসল উদ্দেশ্য কী বলুন তো? আপনি যে আমাদের মিথ্যে পরিচয় দিয়েছেন তা আমি বুঝতে পেরেছি।’
হেরম্যান বললেন, ‘মিথ্যে পরিচয় আপনিও দিয়েছেন। আপনিও গাছের ব্যাপারে জঙ্গলে আসেননি। কেন এসেছি তা আপনাকে বলতে বাধ্য নই।’
লু-সেন বলল, ‘আলবাত বাধ্য, নইলে আর ফেরা হবে না।
হেরম্যান বললেন, ‘ফেরা হবে না মানে? তোমাকে আমরা টাকা দিয়েছি।’ লু-সেন বলল, ‘দিয়েছেন বলে কি মাথা কিনে নিয়েছেন? আপনাকে জাঙ্কে তুলব কি না সেটা আমার মর্জির ব্যাপার!’
সে আরও কী যেন বলতে যাচ্ছিল, হঠাৎ সালুইনদের একটা লোক চেঁচিয়ে বলল, ‘আরে, ছেলেটা পালাচ্ছে! দড়ি ছিঁড়ে গিয়েছে।’
ছেলেটার অস্তিত্ব যেন ভুলেই গিয়েছিলেন সকলেই। মাঠের দিকে তাকালেন সকলে, ছেলেটা উলটো দিকের জঙ্গলে দিকে ছুটতে শুরু করেছে।
সালুইন বললেন, ‘ওকে পালাতে দেওয়া যাবে না। পায়ে গুলি করো।’ লু-সেন ঘুরে দাঁড়িয়ে রাইফেল তাক করল। হেরম্যান বাধা দেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন লু-সেনের উপর। তাঁরা দুজনেই মাটিতে পড়ে গেলেন। একটা লোক দৌড়ল ছেলেটাকে ধরার জন্য। সুদীপ্ত হেরম্যানকে সাহায্য করার জন্য এগোতে যাচ্ছিল। কিন্তু পিছন থেকে একজন বন্দুকের কুঁদো দিয়ে তার মাথায় আঘাত করল। মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগে সুদীপ্ত দেখতে পেল সেই ছেলেটা মিলিয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের মধ্যে।
সুদীপ্তর জ্ঞান ফিরতে দেখল, তাকে বেঁধে ফেলেছে লু-সেনের লোকজন। পাশেই আছেন হেরম্যান। তাঁর সাদা দাড়িতে লাল রক্তের ছোপ।
কিছুটা তফাতে দাঁড়িয়ে আছেন সালুইন জায়া, লু-সেন। একজন লোক জঙ্গল থেকে বেরিয়ে তাঁদের কাছে এসে দাঁড়াল। হাতে একটা দড়ির টুকরো। সে বলল, ‘না, পাওয়া গেল না।’
লু-সেন তার হাতের দড়িটা নিয়ে পরখ করে বলল, ‘কোমোডোটাকে মারতে গিয়ে যে গুলি চালিয়ে ছিলাম, তাতেই ছিঁড়েছে।’
সালুইন বললেন, ‘সময় নষ্ট করা যাবে না। ছেলেটাকে খুঁজতে হবে। ও সাঁতরে আস্কারি দ্বীপে পৌঁছলেই সর্বনাশ! একটা কাজ করা যাক লু-সেন, তোমার লোকেরা ছেলেটার পিছু ধাওয়া করুক, আমি আর তুমি যাব যেদিকে যাওয়ার কথা সেদিকে। তবে তার আগে এদের ব্যবস্থা করা যাক।’
তাঁদের কাছে এসে সালুইন কর্কশ গলায় বললেন, ‘দুজনকেই শেষবারের মতো জিজ্ঞেস করছি, আপনাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য কী?’
সুদীপ্ত বলল, ‘আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আপনাদের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টিও আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আর যাই হোক সোনাটোনার সন্ধানে আমরা আসিনি, পুলিশের লোকও নই। আমাদের দড়ি খুলে দিন।’
সালুইন বললেন, ‘আমার প্রশ্নের জবাব এটা নয়। কেন এসেছেন এখানে?’ হেরম্যান বললেন, ‘আগেই তো বলেছি, তার উত্তর দেব না।’
সালুইন হেরম্যানকে বললেন, ‘এর ফল ভুগতে হবে আপনাদের।’
হেরম্যান বললেন, ‘আমরা যে তোমাদের জাঙ্কে চেপেছি তা অনেকেই দেখেছে, আমাদের কিছু হলে পুলিশ তোমাদের ছাড়বে না।’
সালুইন বললেন, ‘ও নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনার রিভলভার তো আমার কাছে রইলই। এটা পুলিশকে জমা দিয়ে বলব, আপনি রিভলভার দেখিয়ে আস্কারি দ্বীপে জাঙ্ক ভেড়াতে বাধ্য করেছিলেন। দ্বীপে নেমে আপনারা জংলিদের হাতে ধরা পড়েছেন।’
সালুইনের কথা শুনে সকলে হেসে উঠল ।
সুদীপ্তদের হাজির করা হল সেই গাছটার তলায়, যেখানে তাদের দেখা নরকঙ্কালগুলো আছে। সুদীপ্ত আর হেরম্যানের পা দুটো বাঁধা হল, তারপর মোটা দড়ি দিয়ে দুজনকে গাছের গুঁড়ির সঙ্গে এমনভাবে বাঁধা হল, যাতে কেউ নড়তে না পারে।
একাজ শেষ হওয়ার পর সালুইন হেরম্যানকে বললেন, ‘গোঁয়ার্তুমির ফল ভোগ করুন।
আস্কারি দ্বীপের শাস্তিদানের জায়গা এটা। জংলিরা তাদের শত্রুদের এখানে এনে হাত-পা বেঁধে দাঁড়ানো অবস্থায় মাটিতে অর্ধেক পুঁতে রাখে। তারপর তাদের দুটো হাত কেটে দেয়। সামান্য রক্তের গন্ধও দূর থেকে টের পায় জীবন্ত ড্রাগন। গন্ধ অনুসরণ করে একে-একে হাজির হয় এখানে। প্রতীক্ষা করে কখন সেই মানুষটা ক্ষুধা-তৃষ্ণা- রক্তপাতে অবসন্ন হয়ে পড়ে। আর তারপর…। তবে পচা মাংসও ওরা খুব তৃপ্তি করে খায়!’ হেরম্যান চিৎকার করে বললেন, ‘শয়তান…!’
সালুইন দলবল নিয়ে এগোলেন জঙ্গলের দিকে।