১ হে আমার লোকরা, আমার শিক্ষামালা শোন। আমি যা বলছি তা শোন।
২ আমি তোমাদের এই গল্প বলবো। আমি তোমাদের এই প্রাচীন গল্পটি বলবো।
৩ এই গল্প আমরাও শুনেছি। এই গল্পটা আমরা খুব ভালোভাবে জানি। আমাদের পিতা-পিতামহরা এই গল্প বলেছেন।
৪ এই গল্প আমরাও ভুলে যাবো না। আমাদের লোকরা শেষ প্রজন্মকে পর্য়ন্ত এই গল্প বলতে থাকবে। আমরা সবাই প্রভুর প্রশংসা করবে এবং প্রভু য়ে সব আশ্চর্য়্য় কার্য়্য় করেছেন তা বলবো।
৫ প্রভু যাকোবের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছেন। ইস্রায়েলকে ঈশ্বর একটা বিধি দিয়েছিলেন। আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর আজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের বলেছেন তারা য়েন তাদের উত্তরপুরুষদের সেই বিধি সম্পর্কে শিক্ষাদান করে।
৬ নতুন শিশুরা জন্ম নেবে। তারা আস্তে আস্তে বড় হবে। তারা তাদের ছেলেমেযেদের এই গল্পগুলো বলবে। এই ভাবে শেষ প্রজন্মের মানুষ পর্য়ন্ত এই বিধি জানতে পারবে।
৭ তাই ঐসব লোকরাই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করবে। ঈশ্বর কি করেছেন তা তারা ভুলবে না। ওরা খুব যত্ন করে তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করবে।
৮ যদি লোকরা তাদের শিশুদের ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো সম্পর্কে শিক্ষা দেয় তাহলে ওই শিশুরা ওদের পূর্বপুরুষদের মত হবে না। ওদের পূর্বপুরুষরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে গিয়েছিলো। তারা তাঁকে মানতে অস্বীকার করেছিলো। ঐসব লোক প্রচণ্ড একগুঁযে ছিলো। ওরা ঈশ্বরের আত্মার প্রতি নিষ্ঠাবান ছিল না।
৯ ইফ্রযিমের লোকেরা অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত ছিল কিন্তু তারা য়ুদ্ধক্ষেত্র থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেল।
১০ তারা ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের চুক্তি রক্ষা করে নি। তারা তাঁর শিক্ষামালা মান্য করতে অস্বীকার করেছিলো।
১১ ঈশ্বর য়ে সব আশ্চর্য়্য় কার্য়্য় করেছিলেন, ইফ্রযিমের লোকরা তা ভুলে গিয়েছিলো। তিনি য়ে সব আশ্চর্য়্য় কার্য়্য় ওদের দেখিয়েছিলেন, তা তারা ভুলে গিয়েছিলো।
১২ ঈশ্বর ওদের পিতৃপুরুষদের মিশরের সোযনে, তাঁর পরাক্রম প্রদর্শন করে দেখিয়েছিলেন।
১৩ ঈশ্বর লোহিত সাগরকে দুভাগ করেছিলেন এবং লোকদের সাগর পার করিয়েছিলেন। সেই জল দুধারে একটি শক্তি দেওয়ালের মত দাঁড়িয়েছিলো।
১৪ প্রতিদিন প্রলম্বিত মেঘের দ্বারা ঈশ্বর ওদের পথ দেখিয়েছিলেন। প্রতিটি রাত্রে আগুনের আলো দিয়ে ঈশ্বর ওদের পথ দেখিয়ে ছিলেন।
১৫ ঈশ্বর মরুভূমির পাথরকে দ্বিধাবিভক্ত করেছেন। মাটির গভীর অতল থেকে ওই সব লোকদের তিনি জলও দিয়েছেন।
১৬ পাথর থেকে আগত ঝর্ণার জলকে ঈশ্বরই নদীর প্রবাহ দিয়েছেন!
১৭ কিন্তু লোকরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ কাজ অব্যাহত রেখেছিল। পরাত্পরের বিরুদ্ধে তারা মরুভূমিতে পর্য়ন্ত বিদ্রোহ করেছে।
১৮ তারা যখন তাদের ইচ্ছা পূর্ণ করবার জন্য খাবার চাইল তখন তারা তাদের মনে মনে ঈশ্বরকে পরীক্ষা করল।
১৯ ওরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অভিয়োগ করে বলেছিলো, “ঈশ্বর কি আমাদের এই মরুভূমিতে খাবার এনে দিতে পারবেন?”
২০ তিনি পাথরে আঘাত করলেন এবং বন্যার মতো জলধারা বেরিয়ে এলো। নিশ্চয়ই তিনি আমাদের কিছু রুটি এবং মাংস দিতে পারেন!”
২১ ওই লোকগুলো কি বলছে, প্রভু তা শুনলেন। যাকোবের ওপর ঈশ্বর প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হলেন। ইস্রায়েলের ওপর ঈশ্বর প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হলেন।
২২ কেন? কারণ লোকরা তাঁকে বিশ্বাস করে নি। ঈশ্বর য়ে ওদের রক্ষা করতে পারেন, তা ওরা বিশ্বাস করে নি।
২৩ এর পর ঈশ্বর মেঘকে উন্মুক্ত করে দিলেন এবং খাদ্যের জন্য ওদের ওপরে মান্না বর্ষিত হল। এ য়েন আকাশের দ্বার খুলে গেল এবং স্বর্গের ভাণ্ডার থেকে শস্য়রাশি পড়তে লাগলো।
২৪
২৫ লোকরা দেবদূতদেরসেই খাবার খেয়েছিলো। ওদের সন্তুষ্ট করার জন্য ঈশ্বর প্রচুর খাবার পাঠিয়েছিলেন।
২৬ ঈশ্বর পূর্বদিক থেকে একটা ঝোড়ো বাতাস প্রবাহিত করলেন এবং ওদের কাছে একধরণের পাখি বৃষ্টির মত পড়তে লাগলো। ঈশ্বর তেমানের দিক থেকে সেই বাযুকে প্রবাহিত করালেন এবং য়ে নীল আকাশের দিকটায প্রচুর পাখি ছিল সেই দিকটা অন্ধকারময় হয়ে গেল।
২৭
২৮ ওদের তাঁবুর ঠিক মাঝখানে, ওদের তাঁবুর চারপাশে পাখিগুলো পড়ে গিয়েছিল।
২৯ তাদের কাছে বিরাট খাদ্যের ভাণ্ডার ছিল। কিন্তু তাদের ক্ষুধা তাদের পাপকার্য়্য়ে প্ররোচিত করেছিল।
৩০ তারা তাদের ভোজন নিযন্ত্রিত করে নি। তাই পাখীগুলোর দেহ থেকে রক্ত বেরিয়ে আসার আগেই তারা পাখীগুলোকে খেয়ে ফেলেছিল। অতএব, খাবার যখন তাদের মুখের মধ্যে তখনও ছিল তখন ঈশ্বর ওইসব লোকের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুদ্ধ হলেন এবং ওদের অনেককে মেরে ফেললেন। ঈশ্বর বহু স্বাস্থ্য়বান তরুণের মৃত্যুর কারণ হলেন।
৩১
৩২ ওইসব লোকরা আবার পাপ করলো! ঈশ্বর য়ে সব আশ্চর্য়্য় কার্য়্য় করতে পারেন তার ওপর নির্ভর করলো না।
৩৩ তাই ওদের মূল্যহীন জীবনগুলোতে ঈশ্বর দুর্বিপাক এনে শেষ করে দিলেন।
৩৪ যখনই ঈশ্বর ওদের কাউকে হত্যা করেছেন, অন্যরা তাঁর কাছে ফিরে এসেছেন। ওরা ছুটে ছুটে ঈশ্বরের কাছে ফিরে এসেছে।
৩৫ তখন এই সব লোকরা স্মরণ করবে য়ে ঈশ্বরই ছিলেন তাদের শিলা। ওরা তখন মনে করবে য়ে পরাত্পরই একমাত্র ওদের মুক্তিদাতা।
৩৬ ওরা বলেছিলো, ওরা তাঁকে ভালোবাসে কিন্তু ওরা মিথ্যা কথা বলেছিলো। ওই সব লোক একেবারেই আন্তরিক ছিলো না।
৩৭ প্রকৃতপক্ষে ওদের হৃদয় ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলো না। চুক্তির প্রতি ওরা একেবারেই বিশ্বস্ত ছিলো না।
৩৮ কিন্তু ঈশ্বর করুণাময় ছিলেন। তিনি ওদের সব পাপ ক্ষমা করে দিলেন, তিনি কিন্তু ওদের ধ্বংস করেন নি। বহুবার ঈশ্বর তাঁর ক্রোধ সংবরণ করেছেন। তিনি নিজেকে কখনই অতিরিক্ত ক্রুদ্ধ হতে দেন নি।
৩৯ ঈশ্বর মনে রেখেছিলেন য়ে ওরা ন্যায়পরায়ণ মানুষ। লোকরা বাতাসেরই মত, যারা বয়ে যায় এবং চলে যায়।
৪০ ওঃ, কতবার ঐ লোকগুলো মরুভূমিতে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে! ওরা তাঁকে কত দুঃখই দিয়েছে!
৪১ ওই লোকগুলো বার বার ঈশ্বরের ধৈর্য়্য় পরীক্ষা করেছে। ইস্রায়েলের পবিত্র একজনকে ওরা সত্যই ক্রুদ্ধ করেছে।
৪২ ওই লোকরা ঈশ্বরের পরাক্রমের কথা ভুলে গিয়েছিলো। ঈশ্বর য়ে বহুবার শত্রুদের হাত থেকে ওদের রক্ষা করেছিলেন, তা ওরা ভুলে গিয়েছিলো।
৪৩ মিশরে ঈশ্বর য়ে সব চমত্কার কাজগুলি করেছিলেন তার কথা ওরা ভুলে গিয়েছিলো, সোযন প্রান্তরের চমত্কার কাজের কথা ওরা ভুলে গিয়েছিলো।
৪৪ ঈশ্বর নদীগুলিকে রক্তে পরিণত করেছিলেন! মিশরবাসীরা সেই জল পান করতে পারলো না।
৪৫ ঈশ্বর ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি পাঠালেন যারা মিশরবাসীদের কামড় দিলো, তিনি অগনিত ব্যাঙ পাঠালেন যারা মিশরবাসীর জীবন ধ্বংস করে দিলো।
৪৬ ওদের শস্য়কে ঈশ্বর গঙ্গা ফড়িংযের কবলে এবং ওদের বৃক্ষ লতাকে পঙ্গপালের কবলে করে দিলেন।
৪৭ ঈশ্বর শিলাবৃষ্টির দ্বারা ওদের দ্রাক্ষাক্ষেত নষ্ট করলেন। শিলাবৃষ্টির দ্বারা তিনি ওদের বৃক্ষরাজি ধ্বংস করলেন।
৪৮ শিলাবৃষ্টি দিয়ে তিনি ওদের পশুদের মারলেন এবং বজ্র-বিদ্য়ুত্ দিয়ে গবাদি পশুদের মারলেন।
৪৯ ঈশ্বর মিশরের লোকদের তাঁর ক্রোধ দেখালেন। ওদের বিরুদ্ধে তিনি তাঁর বিধ্বংসকারী দূতদের পাঠালেন।
৫০ ক্রোধ প্রদর্শনের জন্য ঈশ্বর একটা রাস্তা পেয়েছিলেন। ওদের একটা লোককেও তিনি বাঁচতে দিলেন না। এক মহামড়কের মধ্যে দিয়ে তিনি ওদের মরতে দিলেন।
৫১ মিশরের প্রত্যেকটি প্রথমজাত সন্তানকে ঈশ্বর হত্যা করলেন। হাম পরিবারের প্রত্যেকটি প্রথম জাতককে তিনি হত্যা করলেন।
৫২ তারপর একজন মেষপালকের মত তিনি ইস্রায়েলকে পথ দেখিয়েছিলেন। একজন মেষপালকের মত তিনি তাঁর লোকেদের, মেষপালকের মত জনহীন প্রান্তরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
৫৩ ঈশ্বর তাঁর লোকদের নিরাপদে চালনা করেছিলেন। তাঁর লোকদের ভয় করার মত কিছু ছিল না। তাদের শত্রুদের তিনি লোহিত সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন।
৫৪ তাঁর পবিত্র ভূখণ্ডে ঈশ্বর তাঁর লোকদের পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর লোকদের নিজ ক্ষমতা বলে পাওয়া সেই পর্বতে য়েটা তিনি রূপ দিয়েছিলেন সেটাতে নিয়ে গেলেন।
৫৫ ঈশ্বর অন্যান্য জাতিদের সেই ভূখণ্ডের থেকে বাইরে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। প্রত্যেকটি পরিবারকে বাধ্য করিয়েছেন। প্রত্যেকটি পরিবারকে ঈশ্বর সে ভূখণ্ডের অংশ দিয়েছেন। এখান বাস করার জন্য ইস্রায়েলের প্রত্যেকটি পরিবারগোষ্ঠীকে ঈশ্বর সেই ভূখণ্ডে ঘর দিয়েছেন।
৫৬ কিন্তু ওরা পরাত্পর ঈশ্বরকে পরীক্ষা করেছিলো এবং তাঁকে দুঃখী করেছিলো। ওই সব লোক ঈশ্বরের আজ্ঞা মান্য করে নি।
৫৭ ওরা ঠিক ওদের পূর্বপুরুষদের মতই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলো। ওরা একটি বঞ্চক ধনুকের মতদিক পরিবর্তন করেছিলো।
৫৮ ইস্রায়েলের লোকরা উচ্চস্থান তৈরী করেছিলো এবং ঈশ্বরকে ক্রুদ্ধ করেছিলো। তারা মূর্ত্তিসমূহ তৈরী করেছিলো এবং ঈশ্বরকে অত্যন্ত ঈর্ষান্বিত করে তুলেছিল।
৫৯ এই সব শুনে ঈশ্বর ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন। ঈশ্বর ইস্রায়েলকে তীব্রভাবে অস্বীকার করেছিলেন!
৬০ ঈশ্বর পবিত্র তাঁবুটি শীলোতে রেখেছিলেন। সাধারণ লোকদের মধ্যে ঈশ্বর সেই তাঁবুতে থাকতেন।
৬১ ঈশ্বর অন্য জাতিকে তাঁর লোকদের অধিকার করতে দিয়েছেন। শত্রুরা ঈশ্বরের “সুন্দরতম রত্ন” নিয়ে গিয়েছিলো।
৬২ ঈশ্বর তাঁর লোকদের বিরুদ্ধে ক্রোধ প্রকাশ করলেন। তিনি তাদের যুদ্ধে হত হতে দিলেন।
৬৩ তরুণরা সব পুড়ে মারা গেল এবং য়ে মেযেদের ওরা বিয়ে করবে ভেবেছিলো তারা কেউই বিয়ের গান গাইছিলো না।
৬৪ যাজকরা মারা গেল কিন্তু তাদের বিধবারা ওদের জন্য কাঁদে নি।
৬৫ শেষ কালে, য়েমন করে একজন লোক ঘুম থেকে ওঠে, প্রচুর দ্রাক্ষারস পান করে য়েমন একজন সৈনিক ওঠে, তেমন করে আমাদের প্রভু উঠলেন।
৬৬ ঈশ্বর তাঁর শত্রুদের জোর করে হঠিযে দিয়ে ওদের পরাজিত করালেন। ঈশ্বর তাঁর শত্রুদের পরাজিত করে চিরদিনের জন্য ওদের অসম্মানিত করলেন।
৬৭ তারপর ঈশ্বর য়োষেফের তাঁবুটিকেবাতিল করলেন এবং ইফ্রযিমের শাসন ক্ষমতা কেড়ে নিলেন।
৬৮ তারপর ঈশ্বর যিহূদা জাতিকে শাসক জাতি হিসেবে মনোনীত করলেন এবং তাঁর প্রিয জেরুশালেমকে মন্দির নির্মাণের স্থান হিসেবে বেছে নিলেন।
৬৯ সেই পাহাড়ের উঁচু জায়গায় ঈশ্বর তাঁর মন্দির নির্মাণ করলেন। পৃথিবীর মত তিনি তাঁর মন্দির চিরকালের জন্য স্থাপন করলেন।
৭০ ঈশ্বর তাঁর বিশেষ সেবকরূপে দায়ূদকে মনোনীত করলেন। দায়ূদ মেষ চরাচ্ছিলো, কিন্তু ঈশ্বর সেই কাজ থেকে তাকে নিয়ে এলেন।
৭১ ঈশ্বর দায়ূদকে, তাঁর লোকদের মেষপালক হওয়ার দায়িত্ব, যাকোবের লোকদের দায়িত্ব এবং ইস্রায়েলের লোকদের ও তাদের সম্পত্তির দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
৭২ দায়ূদ পবিত্র মনে তাদের নেতৃত্ব দিলেন। তিনি খুব প্রজ্ঞার সঙ্গে তাদের পরিচালিত করলেন।