সাবধান কলম
যখন মধ্যপ্রাচ্যে একটি নৃশংস, বর্বর যুদ্ধ চলে, তখন কি নেহাত ব্যক্তিগত সুখদুঃখের অনুভূতি নিয়ে কবিতা লেখা যায়? তখন কি যুদ্ধ নিয়েই তুমি লিখবে কিছু? অবিরাম গোলাবর্ষণ, গুচ্ছ গুচ্ছ বোমা। আকাশ পর্যন্ত পুড়ে যাচ্ছে লেলিহান আগুনে। এদিকে ওদিকে লাশ, মায়ের কোলে রক্তাক্ত শিশু, গাছের ডালে আটকে আছে ছিন্ন ভিন্ন হাত-পা, বাতাস কাঁপছে কত শেষ নিশ্বাসে, এই সব দৃশ্যের কাছে কবিতার সব শব্দই অসহায় মনে হবে না?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনেরও একটা স্রোত আছে। আজ এখানে সব পেট্রল পাম্প বন্ধ, এক জায়গায় রাস্তা জুড়ে বসে আছে পদাতিকরা, কারা যেন দোকানের কাচ ভাঙছে, দুপুরবেলা কামান গর্জনের মতন বজ্রগর্ভ মেঘের ডাক, ভিখিরিরা ইটের উনুন জ্বালিয়ে ভাত চাপিয়েছে ফ্লাই ওভারের নীচে, কবিতা এই সব জায়গায় উঁকি মেরেই সরে যাচ্ছে দ্রুত, কলম হাতে চুপ করে বসে আছে কবি, তার খিদে পেয়েছে, খালি পেটে সিগারেট টেনে যাচ্ছে অনবরত, বারান্দায় একটা কাক ডেকে চলেছে বিশ্রী ভাবে, হুস হুস করলেও সে যায় না, হঠাৎ বৃষ্টির ঝাপটা এসে তাকে উড়িয়ে দিল!… পৃথিবীর থামবার উপায় নেই, প্রতিটি বিকেল গড়িয়ে যাবেই সন্ধের দিকে, মুছে যাবে আকাশের রং।
রবীন্দ্র জয়ন্তীতে লিটল ম্যাগাজিনের পৃষ্ঠাগুলি খালি থাকবে না, তুমি কী লিখবে? বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাবে এক ঠিকানাহীন কিশোরী? তার পাশেই এক ভিখারিনি হাত বাড়িয়েছে গাড়ির জানলায়, ওকে তুমি বাদ দেবে? আজকের মতন সব কবিতা নারী বর্জিতও তো হতে পারে। দুনিয়ায় কত দুঃখী মানুষ, তাদের প্রতি সহমর্মিতায়… কিন্তু খুঁজে নিতে হবে সঠিক ভাষা, যেদিন কলম ভাষা-হারা, সেদিনও কি তুমি ক্রোধ বা দুঃখের বশে লিখবে? রেলিং-এরকাকটা আবার ফিরে এসেছে, সাবধান কলম, যেন এই সব সময় ভাষার বিশুদ্ধতা না হারায়।