২
গোলোকবাবু ছোট্ট, দুষ্টু একটা অঙ্কের পিছনে ছুটে-ছুটে হয়রান হচ্ছিলেন। কিছুতেই ধরতে পারছেন না। গাছপালার ফাঁকে-ফাঁকে ইঁদুরের মতো ছুটছে অঙ্কটা। এক-একবার নাগালে আসছে বটে। কিন্তু যেই গোলোকবাবু খপ করে ধরতে হাত বাড়াচ্ছেন, অমনই ঠিক সুট্ করে সরে যাচ্ছে গোলোকবাবু হাঁপাতে-হাঁপাতে আর ঘামতে-ঘামতে মাঝে-মাঝে কাতরকণ্ঠে মিনতি করছিলেন, “ওরকম দুষ্টুমি করে না রে। এবার ধরা দিয়ে ফ্যাল বাবা! আর কত খাটাবি বাবা আমায়! তোর সঙ্গে কি আমার শক্রতার সম্পর্ক রে! তোকে যে বড় ভালবাসি।” কিন্তু কে শোনে কার কথা। ছোট্ট মিষ্টি অঙ্কটা দেখা দিয়েই ফের গা ঢাকা দিচ্ছে। জঙ্গলের আলোয় ছায়ায় তাকে ঠাহর করাই মুশকিল। গোলোকবাবু ঠিক করলেন আর দৌড়ঝাঁপ না করে এক জায়গায় ঘাপটি মেরে থাকবেন। তাতে অঙ্কটা ভাববে তিনি ক্ষান্ত হয়েছেন। একটা ঝোপের আড়ালে সত্যিই ঘাপটি মেরে ওত পেতে রইলেন গোলোকবাবু এবং একটু পরেই টের পেলেন, ছোট্ট, মিষ্টি অঙ্কটা ঝোপের ওপাশে ইঁদুরছানার মতো তুড়তুড় করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শরীরটা অঙ্ক দিয়ে তৈরি। চারটে পা যেন চারটে দুই, লেজটা যেন এক, চোখ দুখানা দুটো শূন্য, কান দু’খানা যেন দুটো পাঁচ। ভারী আহ্বাদের সঙ্গে সন্তৰ্পণে হাত বাড়ালেন গোলোকবাবু। লেজটা ধরেও ফেললেন। কিন্তু অঙ্কটা হঠাৎ কুটুস করে তার হাতে এমন কামড় দিল যে, গোলোকবাবু “উঃ, ” বলে চেঁচিয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসলেন। ঘুমটা ভেঙে যাওয়ায় একটু হতাশই হলেন তিনি। স্বপ্নই দেখছিলেন বটে, তবে বড় সুখের স্বপ্ন। অঙ্কের স্বপ্নের মতো স্বপ্নই হয় না। ইস, যদি ছোট্ট অঙ্কটাকে ধরতে পারতেন, তা হলে কী মজাই না হত।
গোলোকবিহারীর শয়নে, স্বপনে, জাগরণে শুধুই অঙ্ক। তার জগৎটাই অঙ্কময়। লোকে তার নাম দিয়েছে গুপ্তিপাড়ার রামানুজম। সব সময়ে অঙ্কের ঘোরে থাকেন বলে খিদে তেষ্টাও টের পান না। কিন্তু মাঝরাতে আজ ঘুমটা ভেঙে যাওয়ায় পাশের টুলে রাখা ঢাকা গ্লাসের জলটা ঢকঢক করে খেয়ে ফেললেন। এরকম স্বপ্ন অবশ্য তিনি প্রায়ই দেখে থাকেন। কখনও দেখেন, তিনি পুলিশ আর অঙ্ক হচ্ছে একজন ধূর্ত চোর। সেই চোর-অঙ্ককে পাকড়াও করার জন্য তিনি ছুটছেন, লাফাচ্ছেন, ঝাপাচ্ছেন। আর চোর-অঙ্কও তাকে নাকে দড়ি দিয়ে নাকাল করে ঘুরিয়ে মারছে। আবার কখনও দেখতে পান, তিনি এবং অঙ্ক যেন দুই কুস্তিগির। মল্লভূমিতে তাদের দু’জনের লড়াই হচ্ছে। কখনও তিনি অঙ্ককে পটকে দিয়ে চিত করে ফেলছেন, কখনও অঙ্কই তাকে ক্যাঁক করে ধরে পেড়ে ফেলে বুকে হাটু গেড়ে বসছে। এমনও দেখেছেন, একটা অঙ্ক যেন কাটা ঘুড়ির মতো আকাশে ভেসে-ভেসে যাচ্ছে। আর তিনি সেটা ধরার জন্য লগি হাতে পিছু-পিছু ছুটছেন। তবে সেদিন একটা স্বপ্ন দেখে ভয়ে তার বুক হিম হয়ে গিয়েছিল। দেখেন, রাতে বসে নিবিষ্টভাবে অঙ্ক কষছেন। হঠাৎ টের পেলেন, তখন যেন তিনি আকাশে উঠে গিয়েছেন। তার টেবিল ভেসে আছে, চেয়ার ভেসে আছে, তিনি দিব্যি চাঁদের আলোয় অঙ্ক কষে যাচ্ছেন। হঠাৎ ভীষণ অবাক হয়ে দেখলেন, ঠিক তার উলটোদিকে আর একটা চেয়ারে একজন নীলচোখো সাহেব বসে তাঁকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে। সাহেবের মাথায় বিশাল টাক, অল্পস্বল্প দাড়িগোঁফ আছে আর পরনে আলখাল্লার মতো একটা পোশাক।
গোলোকবাবু হকচকিয়ে যেতেই সাহেব একটা দুর্বোধ্য ভাষায় কী যেন বলল। ভাষাটা গোলোকবাবু একেবারেই বুঝতে পারলেন না। তবে ইংরেজি যে নয়, তা হলফ করে বলতে পারেন। গোলোকবাবুর মনে হয়, লোকটা প্রশ্ন করছে, “তুমি খুব অঙ্ক ভালবাস বুঝি?”
গোলোকবাবু ভয়ে কাঁপতে-কাঁপতে বললেন, “হ্যাঁ সাহেব, আমি অঙ্ক বড্ড ভালবাসি।”
সাহেব তার বাংলা কথা বুঝতে পারল কিনা, তা গোলোকবিহারী জানেন না। কিন্তু সাহেব একটু গম্ভীর হয়ে গেল। তারপর তার দিকে আঙুল তুলে ফের কটরমটর করে কী সব যেন বলে গেল। যার এক বর্ণও গোলোকবাবুর মাথায় সেঁধল না। কিন্তু তার মনে হল, যেন সাহেব তাঁকে অঙ্ক কষার জন্য বকাঝকা করছে। যেন বলছে, “অঙ্কের তোমরা কী জান হে বাপুঃ অঙ্ক কি ছেলের হাতের মোয়া?”
ভয়ের চোটে গোলোকবিহারীর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। সেই ঠান্ডায় গলা এমন বসে গেল যে স্বর বেরতে চায় না। চিঁচিঁ করে কোনওক্রমে বললেন, “আজ্ঞে, নাকে খত দিচ্ছি। আর অঙ্ক করব না। এবারটা মাপ করে দিন আজ্ঞে।”
সাহেব ভ্রু কুঁচকে তাঁর দিকে একটু চেয়ে হাত নেড়ে তাঁকে বিদায় দিল। আর তিনি ওই অত উচু থেকে ধাই করে নীচে পড়ে গেলেন। ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসে তিনি সেদিনও টের পেলেন যে, অত্যন্ত বিপজ্জনক একটা স্বপ্নই দেখছিলেন তিনি।
আসল কথা হল, ঘুমে বা জাগরণে গোলোকবাবুকে সর্বদাই ঘিরে থাকে নানারকম অঙ্ক। বিটকেল অঙ্ক, বিদঘুটে অঙ্ক, জটিল অঙ্ক, অসম্ভব অঙ্ক। ক্ষণজন্মা অঙ্কবিদ হিসেবে পাঁচটা গাঁয়ে তার নাম আছে। গুপ্তিপাড়ার যে স্কুলে তিনি পড়ান, সেখানেও তার খুব খাতির। ছাত্ররা তাকে সমীহ করে চলে। গাঁয়ের লোকও তাকে মান্যগণ্য করে। বাজারে গেলে মাছওয়ালা বা সবজিওয়ালা কেজিতে দু-পাঁচ টাকা দাম কমিয়ে দেয়। সভা-সমিতিতে তাঁকে প্রায়ই প্রধান বা বিশেষ অতিথি করে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা তার কাছে ভিজিট নেয় না। অঙ্কে গোলোকবাবুর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো উপযুক্ত একজন অঙ্ক বিশারদকে বহুদিন ধরেই খুঁজছে বিদ্যাধরপুর। কিন্তু আজও তেমন বাঘা অঙ্কের পণ্ডিত পাওয়া যায়নি।
নেংটি ইঁদুরের মতো ছোট্ট, দুষ্টু অঙ্কটার কামড় খেয়ে ঘুম ভাঙার পর গোলোকবাবু আর ঘুমোলেন না। রাত সাড়ে তিনটে বাজে। এ হল ব্রাহ্ম মুহুর্ত। গোলোকবাবু জানেন এবং বিশ্বাস করেন যে, শূন্যে, আকাশে-বাতাসে হাজার-হাজার অঙ্ক বিচরণ করে বেড়াচ্ছে। ভোরবেলায় পরিষ্কার মাথায় খোলা জায়গায় পায়চারি করলে সেই সব অঙ্ক মাথায় ঢুকে পড়ে। বাইরে আজ একটু ক্ষয়াটে জ্যোৎস্নাও আছে। তাই গোলোকবাবু শয্যাত্যাগ করে ছাদে উঠে এলেন। খোলা ছাদে হু-হু বাতাসে তার মনটা বড্ড ভাল হয়ে গেল। তিনি পদচারণা করতে করতে একটা আরামের শ্বাস ছেড়ে বললেন, “অঙ্কই হল অক্সিজেন!” ঠিক এই সময়ে ছাদের এক কোণে, যেখানে চিলেকোঠার ছায়া পড়েছে, সেখান থেকে কে যেন একটু মৃদু গলাখাকারি দিয়ে উঠল। গোলোকবাবু ভারী অবাক হলেন। এই অসময়ে বাড়ির ছাদের কারও তো থাকার কথা নয়! অন্য কোনও লোক হলে আঁতকে উঠত। কিন্তু গোলোকবিহারী সর্বদা অঙ্কে বিহার করেন বলেই বাস্তব পৃথিবীর ঘটনাগুলো বুঝে উঠতে তাঁর একটু দেরি হল। এই তো কিছুদিন আগে সকালের দিকে একটা লোক এসে তাকে বলল, “বাবু, গোরু কিনবেন? ভাল দুধেল গোরু বিক্রি আছে।” গোলোকবাবু ভ্ৰ কুঁচকে একটু চিন্তিত মুখে বললেন, “গোরু? তা কত করে সের?” লোকটা ঘোড়েল। বলল, “তা সের দরে যদি কিনতে চান, তাও দিতে পারি। সস্তাতেই দিয়ে দেব’খন।” গাববু যে তার ছেলে, এটা গোলোকবাবু ভালই জানেন। তবু সেদিন গাববুকে অঙ্ক করাতে বসিয়ে সোজা-সোজা অঙ্ক ভুল হচ্ছে দেখে ভারী রেগে গিয়ে বললেন, “তোমার তো দেখছি অঙ্কে একেবারেই মন নেই। এরকম হলে তো তোমার বাবাকে জানিয়ে দিতে আমি বাধ্য হব।”
গোলোকবাবু দেখতে পেলেন, চিলেকোঠার ছায়ায় একজন লোক যেন একটু আবডাল হয়ে দাঁড়িয়ে রেলিংয়ে ভর দিয়ে দূরের জঙ্গলটার দিকে তাকিয়ে আছে। গোলোকবাবু কয়েক পা এগিয়ে গিয়েই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। তার বুকটা ধড়াস করে উঠল। সর্বনাশ! এ যে সেই টেকো সাহেব! স্বপ্নে দেখা সাহেব যে সত্যি হয়ে দেখা দিতে পারে এ যে তার কল্পনার বাইরে। ভয়ে গোলোকবাবুর হাত-পা শক্ত হয়ে এল। শিরদাড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে যেতে লাগল। তিনি থরথর করে কাঁপতে লাগলেন।
স্নান জ্যোৎস্নার আলোয় দেখা গেল সাহেব খুব ধীরে-ধীরে তার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। আবছা আলোতেও ধকধক করছে দু’খানা নীল চোখ। সেই রুখু দাড়ি, সেই জোকবা, সেই টাক!
বুকটা দু হাতে চেপে ধরে বসে পড়লেন গোলোকবিহারী। হার্ট ফেল হয়ে যাবে কিনা তা বুঝতে পারছিলেন না তিনি।
সাহেব ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে এল। লোকটার বিশাল লম্বা এবং কুস্তিগিরের মতো চেহারা। সামান্য আলোতেও ফরসা রং যেন ধপধপ করছে।
গোলোকবাবু হয়তো অজ্ঞানই হয়ে যেতেন। কিন্তু যেতে-যেতেও গেলেন না। সাহেব তার দিকে একটা খাতা আর পেনসিল বাড়িয়ে দিয়ে তেমনি দুর্বোধ্য ভাষায় কী যেন বলল।
কিছু না বুঝেও কাঁপা হাতে খাতা আর পেনসিলটা নিলেন গোলোকবাবু। অবাক হয়ে দেখলেন সাদা পাতায় একটা ইকোয়েশন দেওয়া রয়েছে।
বজ্ৰগম্ভীর গলায় সাহেব একটা আদেশ করল। তার মনে হল, সাহেব তাকে অঙ্কটা কষতে বলছে। মুহুর্তে গোলোকবাবুর ভয়ডর কেটে গিয়ে হাত-পা স্বাভাবিক হয়ে গেল। অঙ্ক! অঙ্ক কষতে বলছে সাহেব! তা হলে আর ভয়টা কীসের? অঙ্ক তো তার অক্সিজেন! আশ্চর্য এই যে, এই অতিশয় স্নান আলোতেও গোলোকবাবু দিব্যি খাতায় লেখা ইকোয়েশনটা দেখতে পাচ্ছিলেন। বাবু হয়ে বসে উপুড় হয়ে তিনি খসখস করে অঙ্কটা কষে যেতে লাগলেন। মনটা আনন্দে আর উত্তেজনায় ভরে গেল। কারণ, ইকোয়েশনটা অত্যন্ত জটিল এবং বেজায় খটোমটো। আর অঙ্ক যত জটিল আর কঠিন হয়, ততই গোলোকবিহারীর আনন্দ।
বোধ হয় ঘণ্টাখানেক সময় লাগল গোলোকবাবুর। কঠিন ইকোয়েশনটা তিনি সাত-আট পাতা ধরে কষে গেলেন। শেষ হওয়ার পর ভারী সঙ্কোচের সঙ্গে সাহেবের দিকে খাতাটা এগিয়ে দিলেন। সাহেব এতক্ষণ ভ্ৰ কুঁচকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকে লক্ষ করছিল, তিনি টের পাচ্ছিলেন। সেই ভ্ৰ কুঁচকেই অঙ্কটা দেখল সাহেব। বেশ খুঁটিয়েখুঁটিয়ে প্রতিটি পাতা ভাল করে দেখে সাহেব যে শব্দটা উচ্চারণ করল তা বুঝতে গোলোকবাবুর অসুবিধে হল না। সাহেব বলল, “হু।”
গোলোকবাবু বুঝতে পারলেন, অঙ্কটা হয়েছে। সাহেব বোধ হয় খুশি হল। খাতা আর পেনসিলটা জোববার প্রকাণ্ড পকেটে পুরে তার দিকে চেয়ে সাহেব খটরমটর করে কী যেন বলে গেল। ভাষাটা জার্মান, গ্রিক বা লাতিন হতে পারে, আবার তামিল, তেলুগু হওয়াও বিচিত্র নয়। সে যাই হোক, ভাষা বোধগম্য না হলেও গোলোকবাবু আন্দাজ করলেন সাহেব বলতে চাইছে, “তুমি অঙ্কটা কষতে পেরেছ বলে আমি তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছি।”
গোলোকবাবু কাতর কণ্ঠে বললেন, “দরকার হলে আমি তোমাকে আরও অঙ্ক কষে দেব সাহেব। তোমাকে একদিন স্বপ্নে দেখে খুব ভয় পেয়েছিলাম। ফের চর্মচক্ষে দেখেও ভয় লাগছে। তুমি আসলে কে সাহেব? ভূত-প্রেত নও তো!”
সাহেব চিন্তিত মুখে ফের গ্যাটম্যাট করে কথা কইতে লাগল। গোলোকবাবু এবার যেন কথাগুলোর একটা আঁচ পাচ্ছিলেন, যা বুঝলেন তার মানে দাঁড়ায়, “সেদিন তুমি যা দেখেছিলে, তা সবটাই স্বপ্ন নয়। তোমাকে আমি সত্যিই দেখা দিয়েছিলাম। আমরা মানুষের স্বপ্ন ভেদ করে ঢুকে যেতে পারি। আর আজ যাকে দেখছ, এই আমিও আবার পুরোপুরি সত্য নই, খানিকটা সত্যমাত্র। আমরা একজন পলাতককে খুঁজছি। সে কোথায় আছে, তা আমরা জানি না। সে নানা জটিল অঙ্কের আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তার নাগাল পেতে হলে আমাদের আরও অনেক অঙ্ক কষতে হবে। আজ তোমাকে যে অঙ্কটা কষতে দিয়েছিলাম, সেটা ওই সব অঙ্কেরই একটা। তবু সে এখনও অনেক দূরে, আমাদের কোনও সেন্সরেই তার অস্তিত্ব ধরা পড়ছে না।”
গোলোকবাবুর মাথা ঝিমঝিম করছিল। তিনি কি সত্যিই লোকটার কথা বুঝতে পারছেন? নাকি আগড়ম বাগড়ম কল্পনা করে নিচ্ছেন পাগলের মতো? তিনি ভাষাবিদ নন, তা হলে ওই অজানা ভাষার মর্মোদ্ধার করছেন কী করে?
সাহেব আবার তার বিচিত্র ভাষায় কথা বলছিল এবং গোলোকবাবুও তার মানে বুঝতে পারছিলেন। লোকটা বলছে, “তুমি সত্যিই একজন অঙ্কের মানুষ। এরকম কঠিন অঙ্কের সমাধান করা সহজ কাজ নয়। তোমাদের অনুন্নত মস্তিষ্কের পক্ষে তো নয়ই। তুমি আমাকে অবাক করেছ।”
গোলোকবাবু মাথা চেপে ধরে বসে রইলেন। না, না, তিনি আসলে কিছুই বুঝতে পারেননি। বোধ হয় মাথাটা তার বিগড়েই গিয়েছে।
সাহেব যেন তাকে আশ্বস্ত করেই বলল, “না, তুমি ঠিকই আছ, পাগল হওনি।”
আস্তে-আস্তে গোলোকবাবুর চোখের সামনে আস্ত সাহেবটা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছিল। গোলোকবাবু অবাক হয়ে বললেন, “এটা কী হচ্ছে সাহেব ? এ কি ভূতুড়ে কাণ্ড ?”
“তোমাকে তো বলেছি আমি পুরোপুরি সত্য নই। আমি আছি, আবার নেইও।”
“ভূত নও তো।”
“ভূত কাকে বলে আমি জানি না। তুমি তো অঙ্ক জান, মনে করো আমি অঙ্কের মতোই অ্যাবস্ট্রাক্ট।”
সাহেব হাওয়ায় গায়েব হয়ে গেল। অবিশ্বাসের চোখে সামনের ফাঁকা জায়গাটার দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে রইলেন গোলোকবিহারী। নাঃ, তিনি ফের স্বপ্নই দেখছেন, এসব তো আর সত্যি হতে পারে না।
চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিলেন। ভূতে তিনি বিশ্বাস করেন না ঠিকই, কিন্তু আজ কেন যেন ধন্দ লাগছে। মাথাটা বড্ড গরম। বুকের ধড়ফড়ানিটাও আছে। কয়েক গ্লাস জল খেয়েও তেষ্টা যেন ঠিক মিটছে না।
লেখাপড়া করার টেবিলে এসে গোলোকবাবু ফের হা! কে যেন একটা সাদা কাগজ টেবিলে রেখে গিয়েছে। তাতে নতুন একটা ইকোয়েশন।