১
গুপ্তিপাড়ার কাছে এমন গো-হারান হারতে হবে, এটা নবু স্বপ্নেও ভাবেনি। গুপ্তিপাড়ার খেলুড়েরা মারকুট্টা বটে, গায়েগতরেও তারা ভাল। কিন্তু ফুটবলের কূটকৌশলে তারা একেবারেই আনাড়ি। গতবারেও গদাধর লিগে তাদের গুনে-গুনে তিন গোল দিয়েছিল বিদ্যাধরপুর। আর বলতে কী, এ বছর বিদ্যাধরপুরের টিম খুবই চনমনে। লিগের চারটি খেলার সব কটাতেই তিন-চার গোলে জিতেছে। আজ যে এমন ল্যাজেগোবরে হতে হবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল। গুপ্তিপাড়া আজ ল্যাং মারামারি করে খেলেনি। সত্যি কথা বললে বলতে হয়, গুপ্তিপাড়া আজ বেশ ঠান্ডা মাথার ফুটবলই খেলেছে। তবু এঁটে উঠতে পারত না, যদি না পাঁচু নামে একটা নতুন প্লেয়ার আজ ওরকম সাঙ্ঘাতিক খেলত। যেমন পায়ের কাজ, তেমনই হরিণের মতো দৌড়, তেমনই মারাত্মক শটের জোর আর হেডের কেরামতি। ওই একটা ছেলেই আজ বিদ্যাধরপুরকে ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দিল।
দেবেন ঘোষ একজন পাকা ফুটবল কোচ বিদ্যাধরপুর টিমকে তিনিই গত তিন বছর তালিম দিয়ে এমন দুর্ধর্ষ করে তুলেছেন। গত তিন বছরই বিদ্যাধরপুর গদাধর লিগে চ্যাম্পিয়ন। তার মধ্যে গতবার তে তারা একটা ম্যাচেও হারেনি। সেই দেবেন ঘোষ পর্যন্ত স্বীকার করেছেন যে, হ্যাঁ, ওই পাচু ছোকরার মতো খেলোয়াড় তিনি খুব কমই দেখেছেন।
অস্বীকার করে লাভ নেই, নবুর একটু গুমোর ছিল। সে গতবার বেস্ট প্লেয়ারের প্রাইজ পেয়েছে। এ বছরও লিগের শুরু থেকেই সে ভাল খেলছে এবং লোকে ধরেই নিয়েছে যে, এবারও সে বেস্ট প্লেয়ার হবে। কিন্তু আজ বুঝে গেল, আশা নেই।
বলতে গেলে বিদ্যাধরপুর আর গুপ্তিপাড়া পাশাপাশি গ্রাম। মাঝখানে শুধু একটা ঝিল আর একটা জঙ্গল। একটা কাক যদি গুপ্তিপাড়া থেকে উড়তে-উড়তে বিদ্যাধরপুরের দিকে যায়, তা হলে ঘড়ি ধরে তার পৌঁছতে দু মিনিট লাগবে। আর কাকের মুখেই গুপ্তিপাড়ার খবর বিদ্যাধরপুরে ছড়ায় আর বিদ্যাধরপুরের খবর গুপ্তিপাড়ায়। দুই গাঁয়ে আকচা-আকচিও লেগেই আছে। শুরুটা হয়েছিল বছর পঞ্চাশেক আগে যখন গুপ্তিপাড়ার জমিদার মহিম ঘোষাল রবীন্দ্রজয়ন্তীতে এক কাবুলিওয়ালাকে ধরে এনে তাকে দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এর জবাবে কী করা যায়, তা নিয়ে বিদ্যাধরপুরে জরুরি মিটিং বসে গেল। শোনা যায়, অবশেষে হরিসভার আসরে একজন চিনেম্যানকে দিয়ে কীর্তন গাওয়ানো হয়েছিল। সোজা কথা, দুই গাঁয়ের সম্পর্ক হল, এ জিভ ভ্যাঙচালে ও বক দেখায়। সেবার বিদ্যাধরপুরের মেয়ে রুক্মিণী হালদার মাধ্যমিকে পঞ্চম হয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল। গুপ্তিপাড়ায় তখন হাহাকার। কিন্তু হার মানলে তো চলবে না। বগলাপতি মেমোরিয়াল স্কুলের ক্লাস টেন-এর ফাস্ট বয় দুলাল কুণ্ডুর উপর সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল, “তোকে স্যান্ড করতেই হবে।”
দুলালের জন্য নানা জায়গা থেকে বাঘা-বাঘা শিক্ষকদের টেনে আনা হল স্পেশাল কোচিংয়ের জন্য। দিনরাত পড়ার চাপে দুলাল চিঁ চিঁ করতে লাগল। তবে গ্রামের মুখরক্ষা করতে রক্ত আমাশা নিয়েও পরীক্ষা দিয়ে সে মাধ্যমিকে শেষ অবধি থার্ড হয়ে গ্রামের মান বঁচিয়েছিল। তাই গদাধর লিগে গত তিন বছর ধারাবাহিক হেরে আসাটা যে গুপ্তিপাড়া সহ্য করবে না, এটা জানাই ছিল।
বলা বাহুল্য, দুই গায়ের বেশ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আড়কাঠি আছে। এ গাঁয়ের আড়কাঠি ও গাঁয়ের গুপ্ত খবর সংগ্রহ করে আনে, তো ও গায়ের আড়কাঠি এ গায়ের তত্ত্বতলাশ নিয়ে যায়।
দু’গাঁয়েই দু’জন পিশাচসিদ্ধ তন্ত্রসাধক আছেন। বিদ্যাধরপুরে দুলালখাপা আর গুপ্তিপাড়ায় সনাতন সিদ্ধাই দু’জনের কেউ কারও মুখদর্শন করেন না। কিন্তু তাদের মধ্যে একটা অঘোষিত যুদ্ধ আছে। দু’জনের মধ্যে কে বেশি শক্তিমান তান্ত্রিক, তা এখনও সাব্যস্ত হয়নি। কখনও এর দর ওঠে তো কখনও ওর দর। এই যে গত তিন বছর ধরে বিদ্যাধরপুর গদাধর লিগ জিতে আসছে, তার পিছনে নাকি দুলালখ্যাপার হাত আছে। তিনি যোগবলে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের পদবন্ধন করে দেন বলেই বিদ্যাধরপুর হেলায় তাদের হারায়। কথাটা উঠতেই গুপ্তিপাড়ার সনাতন সিদ্ধাইয়ের ভক্তরা বলে, “আমাদের বাবাঠাকুর পায়ের মতো হীন অঙ্গ নিয়ে মাথা ঘামান না। তার অনেক বড়-বড় কাজ আছে। এলেবেলে তান্ত্রিকদেরই নিচু নজর।”
মড়া পোড়ানোর সময় শ্মশানবন্ধুরা যেমন গোমড়া মুখ করে বসে থাকে, তেমনি ভাবেই বিদ্যাধরপুরের মহেন্দ্রপ্রতাপ স্মৃতি পাঠাগারের রিডিংরুমে কয়েকজন বসে আছেন। কারও মুখেই কথা নেই। শুধু মাঝে-মাঝে কাঁদুনে করালী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গলা কাঁপিয়ে শাজাহানের মতো আর্তনাদ করে উঠছেন, “এ কী হল রে!”
করালীবাবুর এই আর্তনাদ অবশ্য নতুন কিছু নয়। যৌবনে তিনি ‘শাজাহান’-এ শাজাহান, সিরাজ-উদ-দৌলা’য় সিরাজ-উদ-দৌলা, টিপু সুলতান’-এ টিপু সুলতান এবং কেদার রাজা’য় কেদার রাজার পার্ট বিস্তর করেছেন।
এখনও তাঁর হাঁটাচলা, কথার্বাতা, ভাবভঙ্গিতে সর্বদাই কখনও শাজাহান, কখনও টিপু, কখনও কেদার, কখনও সিরাজ এসে পড়ে। আসল করালী কেমন, তা লোকে ভুলেই গিয়েছে। এর জন্য কাঁদুনে করালীকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। মহড়া দিয়ে-দিয়েই তার এই অবস্থা।গুপ্তিপাড়ার নয়ন মল্লিক, না বিদ্যাধরপুরের কাঁদুনে করালী, কে বড় অভিনেতা, তার মীমাংসা আজও হয়নি।
রাঘববাবুর চেহারা যেমন, মেজাজও তেমন। ফরসা টকটকে রং, চওড়া কাঁধ, মুগুরের মতো দু’খানা হাত। বাঘের মতো জ্বলজ্বলে চোখ। পড়তি জমিদারবংশের ছোট তরফ। সকলে তাকে সামলে চলে। ঘরে নিস্তব্ধতা ভেঙে তিনিই প্রথম গর্জনটা করলেন, “কী ভেবেছে কী ওরা? বেআইনি ভাবে বাইরের প্লেয়ার খেলিয়ে পার পেয়ে যাবে? দেশে আইন নেই? সংবিধান নেই? আমরা অবজেকশন দিয়ে কমিটিতে চিঠি লিখব।”
ইনফর্মার বা আড়কাঠি উমেশ ন্যাড় দরজার পরে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কথা কইতে ঠিক সাহস হচ্ছিল না বলে খুক করে একটু কেশে নিজেকে জানান দিল মাত্র। পাম্পসেটের মিস্ত্রি হওয়ার সুবাদে তাকে পাঁচটা জায়গায় যেতে হয়। তার উপর গুপ্তিপাড়া তার শ্বশুরবাড়িও বটে। রাঘববাবু তার দিকে চেয়ে ফের গর্জন করলেন, “তোর কাছে কী খবর আছে?”
উমেশ ন্যাড় মাথা চুলকে বলে, “খবরটা খুব গোলমেলে।”
“কী রকম?”
“আজ্ঞে, পাঁচু ছোড়ার ভোটার কার্ড আছে। কিন্তু সে রাশিয়ান ভাষায় কথা কয়।”
“রাশিয়ান!” ভ্ৰ কুঁচকে রাঘববাবু বললেন, “তুই বুঝলি কী করে? তুই কি রুশ ভাষা জানিস?”
মাথা নেড়ে উমেশ বলে, “আজ্ঞে না।”
“তা হলে?”
“আজ্ঞে ওই রকমই যেন মনে হল।”
আর একজন আড়কাঠি গন্ধেশ্বর বণিক এতক্ষণ ঘরের এক কোণে একটা টুলের উপর বসে ছিল। ঘরের শোকার্ত আবহাওয়ায় কথা কওয়ার ফুরসত হয়নি। সেও গলাখাকারি দিয়ে নিজেকে একটু জানান দিল। তারপর আমতা-আমতা করে বলল, “আজ্ঞে বিদ্যাধরপুরে বিশ্বেশ্বর হাওলাদারের পাশেই আমার মাসির বাড়ি। সেখানেই শুনেছি, পাঁচু নাকি পাঁচ সেকেন্ডে একশো মিটার দৌড়য়, দশ ফুট হাইজাম্প দিতে পারে, মোটা নাইলনের দড়ি দু হাতে টেনে ছিড়ে ফেলতে পারে!”
মৃদুভাষী মৃদুলবাবু গলা তুলে বলে ফেললেন, “ওরে, থাম-থাম, গাঁজা টেনে এসেছিস নাকি? পাঁচ সেকেন্ডে একশো মিটার কি ছেলের হাতের মোয়া? উসেন বোল্টের বিশ্বরেকর্ড কত জানিস?”
মাথা নেড়ে গন্ধেশ্বর বলল, “আজ্ঞে না, আমাদের জ্ঞানগম্যি আর কত দূর! যা শুনি তাই বলি আজ্ঞে। বিশ্বেশ্বর হাওলাদার বলে বেড়াচ্ছে পাঁচু নাকি তার ভাইপো। এতদিন ফুলবেড়িয়ায় ছিল। এখন থেকে পাকাপাকি গুপ্তিপাড়াতেই থাকবে।” সুফল নন্দী ভ্ৰু কুঁচকে বললেন, “বিশ্বেশ্বর হাওলাদার তো সনাতন সিদ্ধাইয়ের নাতি। তাই না?”
“যে আজ্ঞে।”
কোচ দেবেন ঘোষ একাধারে মুখ চুন করে অপরাধীর মতো বসে আছেন। কোচের চাকরিটা এবার যায় কিনা কে জানে! রাঘববাবু তার দিকে বাঘা চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “পাঁচু ছোড়ার খেলা দেখে আপনার কী মনে হল? সে কত জোরে দৌড়য়?”
দেবেন ঘোষ খুব চিন্তান্বিত মুখে বললেন, “আজ্ঞে পাঁচ সেকেন্ডে একশো মিটার কোনও মানুষের পক্ষেই দৌড়নো সম্ভব নয়। তবে পাঁচুর দৌড় খুবই ভাল।”
“ড্রিবলিং?”
কী বললে রাঘববাবু রেগে যাবেন না, তা ভাবতে-ভাবতে উদ্বিগ্ন গলায় দেবেন ঘোষ বললেন, “আজ্ঞে, ড্রিবলিং মন্দ নয়।”
“ঝেড়ে কাশুন মশাই। ‘মন্দ নয়’ থেকে কিছু বোঝা যায় না। আমাদের নবু কি খারাপ ড্রিবলিং করে?”
ফাঁপড়ে পড়ে দেবেন ঘোষ আমতা-আমতা করে বলেন, “এই নবুর মতোই। উনিশ-বিশ হতে পারে।”
“উনিশ-বিশ হলে ওই একটা ছেলে আপনাদের এমন ঘোল খাওয়াল কী করে? শুনেছি, সেকেন্ড হাফে কিছুক্ষণ খেলার পরই ওরা পাঁচুকে তুলে নেয়। অর্থাৎ পাঁচু মাঠে থাকলে আপনারা আরও কয়েকটা গোল খেতেন, তাই না?”
দেবেন ঘোষ আর্তনাদের গলায় বললেন, “না-না। আমরা ডিফেন্সকে রি-অরগানাইজ করে নিয়েছিলাম। গোল আর বাড়ত না।”
“ও কথা আমি বিশ্বাস করি না।”
দেবেন ঘোষ সশ্রদ্ধভাবে চুপ করে রইলেন।
উমেশের দিকে চেয়ে রাঘববাবু গম্ভীর গলায় বললেন, “ওই ছোঁকড়াটা সম্পর্কে ভাল করে খোঁজ নিয়ে পাকা খবর আনতে হবে। যদি প্রমাণ হয় যে, ও ভূমিপুত্র নয়, তা হলে ম্যাচটা বাতিল হয়ে যাবে। দু’ পয়েন্ট আমাদেরই হবে।”
হস্তদন্ত হয়ে এসে ঘরে ঢুকল গদাই ঢাং। সে কাঠের মিস্ত্রি। গুপ্তিপাড়ায় তার দিব্যি যাতায়াত। বলল, “আমি কথাটথা কয়ে দেখেছি কিন্তু। পাঁচু নির্যশ কেরলের ছেলে।”
রাঘববাবু অবাক হয়ে বলেন, “কেরল! কথা কয়ে দেখলি?”
“যে আজ্ঞে। বিশ্বেশ্বর হাওলাদারের ইদানীং পয়সা হয়েছে খুব। সেগুন কাঠের একটা খাটের বরাত দিল। সেটা যখন বানাচ্ছিলুম, তখন ছোকরার সঙ্গে আলাপ হল। খাটি তামিল ভাষা।”
“তুই আবার তামিল শিখলি কবে?”
“শিখিনি তো! সে তার মতো কথা কয়ে গেল, আমি আমার মতো।”
“তামিল কেরলের ভাষা নয়, তামিলনাডুর।”
“আমি যে ভাষাটা বুঝতে পারি না, সেটাকেই তামিল মনে হয়।”
রাঘববাবু বললেন, “ভাষা তো বুঝিসনি বুঝলাম, হাবেভাবে কিছু বুঝতে পারলি?”
“তেমন কিছু নয়। রোগা প্যাংলা চেহারার ছেলে। দেখে তো মনে হয় পেটের রোগে ভোগে।”
“রোগাভোগা হলে এত জোরে দৌড়য় কী করে, শটেরই বা অত জোর কোত্থেকে আসে?”
“আজ্ঞে, সেইটেই চিন্তার কথা। বিশ্বেশ্বরবাবুর শোওয়ার ঘরে একটা ভারী ছ্যাঁচা লোহার সিন্দুক আছে। খাটটা পাতবার সময় দেখা গেল, সিন্দুকটা অন্তত হাতদু’য়েক না সরালে খাট পাতা যাবে না। তা অত বড় আর ভারী সিন্দুক নড়াতে অন্তত পাঁচ-ছয়জন জোয়ান লোকের দরকার। আট-দশ মণ ওজনের নিরেট জিনিস। তা সেই কথা বিশ্ববাবুকে বলে ফিরে এসে দেখি, উফ সে ঘটনা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হওয়ার নয়।”
“কী দেখলি বাবা?”
“দেখি, ছোকরা কোমরে দুটো হাত রেখে দাঁড়িয়ে কোনও কসরত না করে, গা না ঘামিয়ে স্রেফ ডান হাঁটুর আলতো ঠেলায় সিন্দুকটাকে হড়হড় করে তিন হাত সরিয়ে দিল।”
“দুর ব্যাটা! গুলগাপ্পার আর জায়গা পেলি না।”
“মা কালীর নামে কিরে কেটে বলছি কর্তা। চোখে না দেখলে পেত্যয় হয় না।”
“বেহ্মদত্যি নাকি রে?”
“তা জানি না কর্তা। যা চোখে দেখেছি, বললাম। পেত্যয় না হলে বিশ্বেশ্বর হাওলাদারের বাড়ির কাজের লোকদের জিজ্ঞেস করে দেখুন গে।”
মৃদুভাষী মৃদুলবাবু এবার বললেন, “রাঘববাবু, গায়েগঞ্জে এরকম বহু কাল্পনিক গল্পের রটনা হয়। ও সবে গুরুত্ব না দেওয়াই ভাল।”
মহেশ মহাপাত্র পান চিবোতে-চিবোতে বললেন, “বোঝা গেল যে, ছোকরার কিছু এলেম আছে। তাই নিয়েই এই সব গালগল্প তৈরি হচ্ছে।”
যারা দুলালখ্যাপাকে ধরে আনতে গিয়েছিল, তারা তাকে নিয়ে এসে হাজির হল। দুলালখাপা লম্বাচওড়া মানুষ, কালো দাড়িগোঁফ, কালো বাবরি, পরনে রক্তাম্বর। একটু সঙ্কুচিত ভাব। একটা অস্পষ্ট স্বস্তিবাচন আউড়ে বসলেন।
রাঘব জিজ্ঞেস করলেন, “কী হে তান্ত্রিক, তোমার জারিজুরি কোথায়?”
“আজ্ঞে, আমাশা হওয়াতে প্রক্রিয়ায় কিছু বিঘ্ন ঘটেছে।”
“আমাশা! তোমার আমাশা কীসের? যোগবলে সারাতে পারলে না?”
“সাধারণ আমাশা তো নয়, এ যে প্রায়শ্চিত্ত।”
“কীসের প্রায়শ্চিত্ত হে?”
“ওই রথীনবাবুকে জিজ্ঞেস করুন। উনিই দায়ী। রিষ্টি কাটানোর জন্য আমাকে গিয়ে ধরে পড়েছিলেন। তা আমি গণনা করে নিদান দিয়েছিলাম, মা কালীকে নিখুঁত কালো একটা পাঠা উচ্ছু করতে। তা উনি কালো একটা পাঠা নিয়েও এলেন। কিন্তু চান করাতে গিয়ে দেখা গেল সেটার গা থেকে রং উঠছে। শেষে কটাসে রং বেরিয়ে পড়ল। আমি রাজি ছিলাম না। কিন্তু রথীনবাবুর চাপাচাপিতে সেই কটাসে রঙের পাঠাই বলি দিতে হল। সেই থেকে আমাশা।”
ঠিক এই সময়ে কাঁদুনে করালী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গলা কাঁপিয়ে আর্তনাদ করলেন, “এ কী হল রে?”