সমর সেন
তখন লক্ষ লক্ষ তলোয়ারের মতো রোদ
ঝলসাত কলকাতার আকাশে। যে সমস্ত সৈনিক
পুরুষেরা পানিপথ, হলদিঘাট, ফতেপুর সিক্রির ধুলোয়
স্বেদ আর শাণিত ঝরিয়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে, তাদের
হাতিয়ারের ধারে জ্বলত কলকাতার রোদ উনিশশো
চল্লিশে। পার্কের ঘাসে পিঠ দিয়ে শুয়ে থাকত সমর সেন।
স্পষ্ট দেখা যায় সেই কিশোর-প্রতিম যুবাকে।
হরিদ্রা বর্ণের চামড়ার নীচে হাজার বছরের পুরোনো মদের
মতো তীব্র ঝাঝালো রক্তস্রোত, হঠাৎ মনে হত একখণ্ড
বাঁকা রোদ হয়তো শুয়ে আছে, স্পষ্ট
দেখা যায় সেই কিশোর প্রতিম যুবাকে।
কৃপণের মতো সংশয়ী বিশ্বাসে জীবন খুঁটে খুঁটে আনতে পথ চলতি
হাজার মানুষের মধ্য থেকে। তারা কেউ
মানুষ নয়, এক একটি শব্দ, দৃশ্য, এক
একটি কবিতার লাইন যারা আগে কখনও আসেনি
এই রাস্তায়, হাঁটেনি আমাদের অনুভূতির জগতে। ছন্দ
ছুড়ে দিয়েছিলে রবীন্দ্রনাথ এবং অন্যান্যদের দিকে। তখন ভাবিনি
তুমি নিজেই কোনওদিন
সত্যেন দত্তের মতো নির্ভেজাল মাত্রাবৃত্ত কিংবা ত্রিপদী হয়ে যাবে!
হাতের বাঁকা অক্ষরগুলো সোজা হবার আগেই তুমি
মাতামহের উদাত্ত নিশ্চিন্ততায় প্রত্যহ
আড়াই বোতল আসক্তি পান করে আঙুলের
ডগাগুলো পর্যন্ত ভোঁতা করে ফেললে।
এখন জানুয়ারির শীতে রাশিয়ায় তুষার-ভল্লুকীর পেটের
কাছের উষ্ণতার জন্য ঘুরছ লোভী শৃগালের মতো।
চকচক করছে মাথার চুল আর পায়ের জুতোর পালিশ—
ইতিমধ্যে নিশ্চয়ই কিছু রপ্ত হয়েছে সেই পর-ভাষা, সুতরাং
সান্ধ্য নিমন্ত্রণে রমণীদের অন্তঃস্থলে ভোঁতা আঙুল বসাবার
আপ্রাণ চেষ্টাই বা মন্দ কী।
এদিকে কলকাতার শো-কেসে তোমার মরা মুখ দেখে প্রত্যহ
আড়চোখে তোমার সহযাত্রীরা। আর কুকুরের লেজের মতো
কুণ্ডলী পাকিয়ে য়ুনিভারসিটির লনে বালক-বালিকারা
কখনও কখনও উচ্ছিষ্ট স্তোক স্তুতি উচ্চারণ করে।