সময়

সময়

মানুষ বাঁচে সময়কে খুন করে। কেউ মারা গেছে, এর অর্থ হলো তার হাতে আর খুন করার মতো সময় অবশিষ্ট নেই। কারও জীবন ব্যর্থ হয়ে গেছে, এটি দিয়ে বুঝায়— লোকটি সময়কে খুব বেশি হত্যা করতে পারছে না।

এ জন্য সফলতাকে আমি বলি সময়ের লাশ, যেরকম ঘিকে বলি দুধের লাশ। এক গ্লাস ঘি পেতে আমাদের হত্যা করতে হয় অনেক গ্লাস দুধ, আর একটি সফল বছর কাটাতে আমাদের হত্যা করতে হয় অনেক বছর সময়।

কম সময়ে বেশি সময় খুন করার জন্য মানুষ উদ্ভাবন করেছে বিমান ও মোটরগাড়ি, ইন্টারনেট ও কম্পিউটার। মানুষ এখন আগের চেয়ে অধিক দ্রুতগতিতে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছুতে পারছে।

সময় সবসময় সমান যায় না। ডাইনোসরদের সময়ে পৃথিবীতে বছর হতো ৩৭০ দিনে, কিন্তু এখন হয় ৩৬৫ দিনে। সময়ের কোনো বাজারমূল্য নেই, কারণ সময় কেউ কেনে না। তবে সময়কে কাজে রূপান্তর করে তা বেচে আদায় করা যেতে পারে মূল্য। কিন্তু সবার সময়ের মূল্য এক নয়। একজন হিটলার এক যুগে ধ্বংস করতে পারেন বহু যুগের ভবিষ্যৎ। একজন শ্রমিক এক বছরে উৎপাদন করতে পারেন বহু বছরের শোষণ।

সবাই একই সময়ে একই দূরত্ব অতিক্রম করে না। মানুষ পৌনে এক কিলোমিটার হাঁটতে যে-সময় নেয়, সে-সময়ে সূর্য থেকে আলো, পনেরো কোটি কিলোমিটার হেঁটে পৃথিবীতে চলে আসে। একই সময়ে স্বাধীন হওয়া দুটি দেশ, সমান সময়ে সমান উন্নতি নাও করতে পারে। একটি পরিণত হতে পারে উদ্যানে, অপরটি ভরে উঠতে পারে কারাগারে।

চিকিৎসক হিশেবে সময়ের সুনাম আছে। সময় সারিয়ে তুলতে পারে শরীর ও মনের অনেক অচিকিৎস্য অসুখ। তবে রূপের সাথে সময়ের শত্রুতা পুরোনো। ২০২০ সালে যিনি রূপসী, ২০৩০ সালে তার রূপ নাও থাকতে পারে।

সময় অদৃশ্য, কিন্তু সময়ের কামড়ের দাগ সহজে মুছা যায় না। যার গায়ে কোনো কলঙ্ক নেই, তারও গালজুড়ে থাকতে পারে সময়ের গোপন আঁচড়ের চিহ্ন। আমরা সবাই মেখে আছি সময়ের অমোচনীয় কালি।

সময় খাওয়া যায় না, তবে সময়ের সাথে ঘাম মিশিয়ে তাকে পরিণত করা যায় খাদ্যে। কোথাও বেকার সমস্যা বেড়ে গেছে, এর অর্থ হলো- ওই এলাকার মানুষ সময়ের সাথে ঘাম মেশানোর কৌশল ভুলে গেছে।

সময় থেকে শিক্ষা লাভ করেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। শিক্ষক হিশেবে সময়ের নিষ্ঠুরতা অতুলনীয়। সময়ই একমাত্র শিক্ষক, যিনি পাঠদান শেষে তার ছাত্রদের মেরে ফেলেন।