সপ্তম গর্ভের কন্যা
সপ্তম গর্ভের কন্যা, কেন এলি যে বাড়িতে
উনুন জ্বলে না?
পুকুরের জলে ভাসছে ছোট্ট দেহখানি
চারপাশের গাছপালা মুখ ঝুঁকিয়ে বলছে দ্যাখো দ্যাখো,
মেয়েটার চোখ মুখে ঠিক তার মায়ের আদল
মা কোথায়? সে এখনও আঁতুড়ে পাথর হয়ে আছে
তার হাতে রক্ত, তার স্তনদুটি খটখটে ধুঁধুল
খিদের উত্তাপে সব মায়া-দয়া বাষ্প হয়ে উপে গেছে কবে!
ভাঙা কুঁড়েটার সামনে এইমাত্র থামল খুব ব্যস্ত জিপ গাড়ি
শুনুন দারোগাবাবু, একটা প্রশ্নের আপনি উত্তর দেবেন?
বাচ্চারা না খেয়ে মরলে সমাজ বা পুলিশ আসে না
আজ কেন এসেছেন শত কাজ ফেলে?
ওরে বাবা, এ যেন খুন, পরিষ্কার গলা-টেপা কেস!
দেশটায় একী হল, মায়েরাও খুনি হয়ে গেল!
দু’-চারটে চড়-চাপড় দিয়ে মাকে তোলা হল কয়েদ গাড়িতে
প্রতিবেশী মুখ লুকোয়, গাছগুলো বলল, ধিক, ধিক
গারদে আছড়ে ফেলে সদ্য প্রসূতিকে হল আজকের
কাজ সমাপন!
দারোগা রাত্তিরে যান অভিযানে ঝাঁপ ফেলা সোনার দোকানে
তাঁর পত্নী বনবালা ক্রিম পমেটম মেখে সাজেন গোজেন
ছেলেরা ক্যারাম খেলে, মেয়েরা দুধের বাটি ঠেলে ফেলে দেয়
নদীপথে নৌকো যায়, পাটাতন ভর্তি অস্ত্র, পিস্তল-কার্তুজ
ঈষৎ রঙিন চোখে মধ্যরাতে বড়বাবু-বনবালা হন গলাগলি
পোশাক লুটোয় মেঝে, রতিক্রিয়া চলতে থাকে হাপুস হুপুস
সপ্তম গর্ভের কন্যা, ফিরে আয়, এই ফাঁকা গর্ভে ঢুকে পড়
উনুন নেভে না কভু এ বাড়িতে, জননীর বুকে দুই দুধভরা ঘটি
কেন দাবি ছাড়বি তুই, শূন্যতার চেয়ে মর্তভূমি ঢের ভালো।