শোকসভায় এক সন্ধ্যা
এইখানে বসবে এসো, অবিনাশ, বেদনার পাশের চেয়ারে
সাবধান, ছুঁয়ো না ওকে, ও বড় নশ্বর স্রোতে ভেসে যেতে চেয়ে
রূপালি আলোর চোখে থমকে আছে, উন্মোচিত চুলে
ক্ষণিক আঙুল রেখে ও যেন রক্তাক্ত সন্ধ্যা
দৃশ্যমান করে
ওর দৃষ্টি, আমি জানি, বড় ভয়ঙ্কর লক্ষ্যভেদী। সরে এসো,
অবিনাশ, স্পর্শ করো না, সাবধান!
সভাপতি বড় ক্রুদ্ধ, দেশ কাল বাণিজ্য সন্ততি
হুড়োহুড়ি করে মঞ্চে, সিগারেট খেতে উঠে গেল তিনজন
গত রাত্রে ঝড়ে ভাঙা গোলাপের ডাল থেকে ফুলগুলি ছিঁড়ে
কে শূন্যে রেখেছে গেঁথে? ফুলে বড় বিস্মরণ আসে
কে কোথায় জেগে আছে সকাল না গোধূলির শিয়রের
কাছে, ভুল হয়; চোখে ভাসে সহস্ৰ নিয়তি।
(প্রতিটি বক্তার জন্য পুনরায় শোকসভা করে যেতে হবে একদিন)
চলে আমরা বাইরে যাই, অবিনাশ, আমাদের মত্ত কণ্ঠস্বরে
অজস্র গভীর মুখে বিয় রেখা ফোটে।
বেদনা ওখানে থাক, একান্তব্ধ, স্বপ্নদষ্ট, স্থির
ওর এত উৰ্ণ রূপ, অমন উজ্জ্বল শাড়ি আজ আমাদের সঙ্গে
বড় বেমানান
তার চেয়ে শনিবার ওকে নিয়ে পেনেটিতে স-উপকরণ
বেলেল্লা নষ্টামি করে কিছুক্ষণ কাটবে চমৎকার।
চলে আমরা বাইরে যাই শঙ্কিত শোভায়, অন্ধকারে
হলুদ সর্ষের ক্ষেতে ভ্ৰমে বদ্ধ কৃষকের মতো
বহুদিন ভূমিকম্পে কাঁপেনি ধরিত্রী তাই মাথার উপরে
কেঁপে ওঠে চকিত আকাশ—
চতুর্দিকে গর্জমান লক্ষ লক্ষ জীবিত নিশ্বাস
কেমন উদভ্ৰান্ত করে, একদা উদভ্ৰান্ত হয়েছিল
আমাদের সঙ্গে যেতে ঠিক এই পথে হিরন্ময়।
হিরগ্নয়, হিরন্ময়, নাম ধরে ডেকে ওঠে
আমাদের বিপন্ন বিস্ময়।
দন্তশূলে কষ্ট পেলে লোকে বড় পরিহাস করে
তার চেয়ে মৃত্যু আরও লঘু মনে হয়।