শেষ মুহূর্তে – ৪

বাহাত্তর ইঞ্চি পাইপের মতো ঢোলা প্যান্ট আর ঝলমলে কোট গায়ে রতিকান্ত ভক্ত হনুমানের মতো হাতজোড় করে বসে আছে। নড়েও না, চড়েও না।

ইন্সপেক্টর কল্যাণ বোস তার সামনে এগিয়ে এসে বললে, কি হে, বোবা হয়ে গেলে নাকি? সিধে সত্যি কথা বলো, কী মতলবে আমার নামে টাকা জমা দিতে গিয়েছিলে?

মরা ইলিশের মতো গোল গোল চোখ মেলে তাকিয়ে রইল রতিকান্ত।

কল্যাণ এবার চিবিয়ে চিবিয়ে বললে, মুখে কথা নেই কেন? দাওয়াই দিতে হবে, না সোজাসুজি বলবে?

এবার নড়ে উঠল ভক্ত হনুমান। করজোড়েই বললে, একজন আমায় জমা দিতে বলেছেলো, তাই গিসলুম আজ্ঞে। কেন, তা জানিনে—রামকেষ্টর দিব্যি!

আমি কিন্তু জানি রতিকান্ত। বলব?—কল্যাণ বললে, তুমি লাখ টাকা জালিয়াতি কেসের আসামি। আমার অ্যাকাউন্টে তুমি পাঁচ হাজার টাকা দিলে, সেটাকে অনায়াসেই ঘুষ বলে প্রমাণ করা যাবে। তাহলেই আমার চাকরি খতম, আর তোমার পোয়াবারো! তাই না?

মরা ইলিশ—চোখে চেয়ে রতিকান্ত বললে, তাই হবে আজ্ঞে।

নিজের চেয়ারে ফিরে গিয়ে কল্যাণ বললে, এখন বলো তো, এই প্ল্যানটি কার? কে তোমাকে ব্যাঙ্কে পাঠিয়েছিল?

বলব আজ্ঞে? বললে আমাকে ছেড়ে দেবেন তো? দু’হাত কচলে রতিকান্ত প্রশ্ন করলে।

কল্যাণ খানিকটা আশ্বাস দিয়ে বললে, বেশ, সত্যি কথা যদি বলো, তাহলে ভেবে দেখব।

তবে শুনুন আজ্ঞে। রতিকান্ত শুরু করলে : আমাকে ব্যাঙ্কে পাঠিয়েছেলো মৃগাঙ্ক মজুমদার। কাল রাতে আমার বাসায় এসে চুপি চুপি ডাকলে। পাঁচ হাজার টাকার নোটের তাড়া দিয়ে বললে, টাকাটা গোয়েন্দা ইন্সপেক্টর কল্যাণ বোসের নামে জমা দিয়ে এসো গে। এতে তোমার মামলার ভাল হবে।

সে ভাল হবে বলল, আর অমনি তাই বিশ্বাস করে তুমি জমা দিতে গেলে! তুমি কি কচি খোকা?

রতিকান্ত আমতা আমতা করে বললে, আমার মনে একদম কুটিলতা নেই আজ্ঞে—ভারি সরল কিনা, তাই—

চোপ!—ধমক দিয়ে কল্যাণ বললে, কত টাকা খেয়েছ মৃগাঙ্ক মজুমদারের কাছ থেকে?

নাক—কান ছুঁয়ে রতিকান্ত বললে, মিছে কথা বলব না আজ্ঞে, হাজার টাকা খেয়েছি।

হুঁ! তোমার জামিনের দশ হাজার টাকা কে দিয়েছে?

ওই মজুমদারই দিয়েছে আজ্ঞে। দেবে না? সে—ই তো লালা ভগৎরামের সই জাল—করা চেক দিয়ে আমাকে গয়নার দোকানে পাঠিয়েছেলো। তখন অত—শত বুঝিনি আজ্ঞে। মনে আমার একদম কুটিলতা নেই কিনা—

থামো! কল্যাণ বললে, বেশ তো চানাচুরের প্যাকেট বেচছিলে, জাল—জোচ্চচুরির রাস্তা ধরলে কেন? মরবার পাখা গজিয়েছে বুঝি?

রতিকান্ত এবার কাঁদো—কাঁদো হয়ে বললে, চানাচুর বেচে কি এ বাজারে সংসার চলে আজ্ঞে? ঘরে সাত—সাতটা নেড়ি—গেঁড়ি কিলবিল করছে! তার ওপর গেল মাসে মাগি আবার একটা ভূতের ছ্যানা বিইয়েচে!

ফের বাজে বকছ!—আবার ধমকালে কল্যাণ। বললে, মৃগাঙ্কই যদি তোমাকে গয়না দোকানে পাঠিয়ে থাকে, সেকথা পুলিশকে বা আদালতে জানাওনি কেন?

বাপরে, তা কি পারি? বেইমানি করলে তার ফল ভুগতে হবে না?

কিন্তু তোমার মামলার ফলটা কি হবে ভেবে দেখেছ?

ভালই হবে আজ্ঞে! মজুমদার বলেছে, যত টাকা লাগে লাগুক, আমাকে খালাস করিয়ে আনবেই। জড়োয়ার গয়নাগুলো তার হাতে শুধু শুধু দিয়েছি নাকি?

কল্যাণ বুঝতে পারলে, মূর্খ রতিকান্ত মূর্খের স্বর্গেই বাস করছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মৃগাঙ্ক মজুমদার লোকটা রীতিমতো ধুরন্ধর। চেহারাটা যত সম্ভ্রান্ত হোক না কেন, সমাজের চোরাগলি—পথেই তার চলাফেরা। অতএব—

কল্যাণ ডাকলে, সার্জেন্ট দত্ত!

ইয়েস স্যার!—মনসিজ এসে দাঁড়াল।

রতিকান্তর কান বাঁচিয়ে কল্যাণ কি যেন বললে মনসিজকে।

‘রাইট স্যার’ বলে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে গেল সার্জেন্ট দত্ত।

রতিকান্ত একবার দেওয়াল ঘড়ির দিকে দেখলে। তারপর হাত কচলে বললে, যদি অনুমতি করেন তো আসি আজ্ঞে—এখনো আমার পুজো—অহ্নিক হয়নি কিনা—

তুমিও পুজো—আহ্নিক করো নাকি? ভুরু কুঁচকে কল্যাণ জিজ্ঞেস করলে।

রতিকান্ত বললে, শত হলেও হিঁদুর ছেলে. . . করি বইকি আজ্ঞে।

ঠাকুর—দেবতার খুবই দুর্ভাগ্য দেখছি!—বসো, এত সহজে তোমায় ছাড়া হবে না।

আধঘণ্টার মধ্যেই সার্জেন্ট দত্ত ফিরে এল। সঙ্গে মৃগাঙ্ক মজুমদার। দীর্ঘ দেহে সেই গলাবন্ধ প্রিন্সকোট, হাতে রুপো—বাঁধানো মলাক্কা বেতের লাঠি। ঘরে ঢুকেই মৃগাঙ্ক বললে, কি ব্যাপার মিস্টার বোস? হঠাৎ তলব করেছেন যে!

রতিকান্তকে দেখিয়ে কল্যাণ বললে, দেখুন তো, এই লোকটিকে আপনি চেনেন কিনা—

মৃগাঙ্ক একটু অবাক হয়ে বললে, জীবনে দেখিনি।

কল্যাণের মুখ আরো গম্ভীর হয়ে উঠল। রুক্ষ গলায় বললে, মিথ্যে বলে লাভ নেই। স্বীকার করুন একে আপনি ভাল করেই চেনেন।

মৃগাঙ্কর ফর্সা মুখলাল হয়ে উঠল। তিক্ত—বিরক্ত গলায় বললে, এ আপনি কী বলছেন! যাকে জীবনে দেখিইনি, তাকে চিনব কেমন করে?

কিন্তু এ লোকটি আপনাকে চেনে—ভাল করেই চেনে। কি রতিকান্ত, তুমি এঁকে নিশ্চয় চেনো?

রতিকান্ত এতক্ষণ হতবাক হয়ে তাকিয়েছিল মৃগাঙ্কর দিকে। ঘাড় নেড়ে বললে, না আজ্ঞে, ওনাকে তো চিনি নে!

চালাকি কোরো না রতিকান্ত! সত্যি কথা বল।

রামকেষ্টর দিব্যি—আমিও ওনাকে জীবনে দেখি না আজ্ঞে!

রতিকান্তের মুখের দিকে তাকিয়ে কল্যাণের অভিজ্ঞ গোয়েন্দা—চোখ বুঝতে পারল, সে বোধ করি মিথ্যে বলছে না। কল্যাণ এবার নিজেই ধাঁধায় পড়ে গেল। মৃগাঙ্কর দিকে আঙুল দেখিয়ে বললে, তুমি কি বলতে চাও, এ লোক মৃগাঙ্ক মজুমদার নয়?

রতিকান্ত বললে, কী মুশকিল! ইনি মৃগাঙ্ক মজুমদার হবেন কেন? সে তো অন্য লোক।

মৃগাঙ্ক এবার রীতিমতো চটে উঠল : ননসেন্স! মৃগাঙ্ক মজুমদার আমি নই তো কে? সবটাই দেখছি হেঁয়ালি!

কল্যাণ কিছুটা নরম গলায় তাঁকে বললে, এ একটা অদ্ভুত কেস! যাকগে, আপনাকে কষ্ট দিলাম—কিছু মনে করবেন না। আপনি এখন যেতে পারেন।

মালাক্কা বেতের লাঠির আওয়াজ তুলে বেরিয়ে গেলেন মৃগাঙ্ক।

কল্যাণ এবার চেয়ারে বসে পড়ে একটা সিগারেট ধরালে। চুপচাপ গোটা দুই—তিন টান দিয়ে প্রশ্ন করলে, আচ্ছা রতিকান্ত, তোমার চেনা মৃগাঙ্ক মজুমদার দেখতে কেমন? যিনি এসেছিলেন, কতকটা তাঁর মতো কি?

রতিকান্ত বললে, না আজ্ঞে, দেখতে ঠিক উল্টো। অত ঢ্যাঙাও নয়, অত বয়সও নয়। পালোয়ানের মতো ষণ্ডা চেহারা, ঘাড় আর পিঠ যেন এক, মাথার চুলগুলো মুড়িয়ে কাটা, মুখে কোঁকড়ানো দাড়ি—

সে আরো কি সব বলে গেল, কল্যাণের কানে তার একটা কথাও ঢুকল না। তার হাতের সিগারেট হাতেই পুড়তে লাগল।

আশ্চর্য—আশ্চর্য—ভয়ানক আশ্চর্য! রতিকান্তের ব্যাপারেও সেই জার্মান—ছাঁট মাথা, ঘাড়ে—গর্দানে ষণ্ডা চেহারা! দুনিয়ার সমস্ত অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে কি ওই লোকটিই বসে আছে! অথচ ধরাছোঁয়ার বাইরে!

যদি অনুমতি করেন আজ্ঞে, তো এখন আমি—

রতিকান্ত হাত কচলে অনুনয় করলে।

কল্যাণ বললে, হ্যাঁ, এসো। কিন্তু খবরদার, আমার বিরুদ্ধে আর লাগতে যেও না—তাহলে কড়া দাওয়াই দেব।

‘যে আজ্ঞে’ বলে রতিকান্ত ভিজে বেড়ালের মতো গুটি গুটি বেরিয়ে গেল।

 * * *

গোয়েন্দা—দপ্তরের ছোটকর্তা সুরজিৎ গুপ্ত বললেন, ক্রিমিন্যালের চেহারার যে বর্ণনা পাওয়া গেছে, সেই বর্ণনা জানিয়ে ইন্ডিয়ার সমস্ত বড় বড় শহরের পুলিশের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছিলাম। বলেছিলাম, তাদের কাছে দাগি ক্রিমিন্যালদের যে ফোটো—অ্যালবাম আছে, তার মধ্যে এরকম চেহারার কেউ থাকলে, সেই ফোটোর একটা কপি যেন আমাকে ইমিডিয়েটলি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কাল দিল্লির পুলিশ এই ফোটোখানা পাঠিয়েছে।

ড্রয়ার থেকে একখানা ফোটো বার করে সুরজিৎ গুপ্ত ইন্সপেক্টর বোসের সামনে রাখলেন। কল্যাণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল ছবিখানা। আন্দাজ বছর তিরিশ বয়সের একটি যুবা। মুখের গড়ন চৌকো, চোখ ছোট, কিন্তু তীক্ষ্ন জ্বলজ্বলে। মজবুত কাঁধ দুটো ফোলা ফোলা, গলাটা খাটো। কুস্তিগীরের মতো মাথার চারপাশ থেকে ক্লিপ চালিয়ে চুলগুলো একেবারে ছোট করে ছাঁটা, কেবল মাথার সামনে একগোছা চুল একটু বড়। দাড়ি—গোঁফ কামানো পরিষ্কার মুখ।

ফোটোখানা ষাট সাল অর্থাৎ পনেরো বছর আগের। ফোটোর সঙ্গে ক্রিমিন্যালের পরিচয়পত্র আঁটা। কল্যাণ পড়তে লাগল :

নাম আবু রশিদ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল ছাত্র। দিল্লির টপ সার্কেলে মেলামেশা করত। কিন্তু জাল—জোচ্চচুরির দায়ে বার দুয়েক ধরা পড়ে। তারপর এক বিবাহিতা মহিলাকে খুন করে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়।

পাইপ ধরিয়ে সুরিজৎ গুপ্ত জিজ্ঞেস করলেন, দেখে কি মনে হচ্ছে? আমাদের ক্রিমিন্যালের সঙ্গে কোনো মিল আছে?

কল্যাণ বললে, কিছু কিছু মিল আছ বইকি স্যার। কিন্তু যে ভাল করে চেনে—সামনাসামনি দেখেছে, ফোটোখানা তাকে দেখানো দরকার। রতিকান্তকে একবার ডেকে পাঠাতে হবে।

তাকে হাজারবার ডাকলেও সে আর আসবে না স্যার।

ছোট কর্তার ঘরে ঢুকতে ঢুকতে সার্জেন্ট দত্ত বললে।

কেন বল তো?

কাল রাতে রতিকান্ত পাল মারা গেছে।

মারা গেছে!—কল্যাণ যেন একটা ধাক্কা খেল। বললে, কি করে মারা গেল?

মনসিজ বললে, কাল রাত সওয়া এগারোটা নাগাদ রতিকান্ত ওয়েলেসলি স্ট্রিট ধরে হাঁটছিল। বোধ হয় ব্লু ডায়মন্ড বার থেকে ফিরছিল। ইলিয়ট রোডের কাছ বরাবর হঠাৎ একখানা কালো অ্যাম্বাসাডর পেছন থেকে তার দেহটাকে দলা পাকিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। রতিকান্ত স্পট ডেড!

কয়েক সেকেন্ড গুম হয়ে থেকে কল্যাণ বললে, জাল মৃগাঙ্ক মজুমদার তাহলে রতিকান্তর ওপর শোধ নিল!

সুরজিৎ গুপ্ত বললেন, ফোটোখানা আর কেউ দেখলে চিনতে পারবে কি?

এখানা আমার কাছেই থাক স্যার। দেখি, কি করা যায়। বলে কল্যাণ নিজের কামরায় চলে এল। দেখলে, পল্টু বসে আছে তারই অপেক্ষায়। কল্যাণ কি যেন ভেবে আবু রশিদের ফোটোখানা পল্টুর সামনে মেলে ধরলে। বললে, দেখো তো একে কখনো দেখেছ কিনা।

মনোযোগ দিয়ে দেখে পল্টু বললে, না স্যার, দেখেছি বলে তো মনে হচ্ছে না।

কোথাও দেখোনি?

উঁহু। লোকটা কে স্যার?

সেকথার জবাব না দিয়ে কল্যাণ নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল। অন্যমনস্কের মতো কলমটা তুলে নিয়ে প্রশ্ন করলে, তারপর পল্টু, কিছু খবর আছে?

আছে স্যার।

বলো।—কল্যাণ আনমনে কলম দিয়ে আঁকিবুকি কাটতে লাগল।

পল্টু শুরু করলে : পরশু রাতে ক্যামাক স্ট্রিটের সেই বাড়ি থেকে সেই দাড়িওয়ালা ঘাড়ে—গর্দানে লোকটা বেরিয়ে এল। তার সঙ্গে নেমে এল সাদা সিল্কের শাড়ি—পরা একটি মহিলা। রাত তখন সাড়ে বারোটা। আমি গা—ঢাকা দিয়ে দেখতে লাগলাম। দু’জনে কি সব কথা হল, ঠিক শুনতে পেলাম না। মহিলার একটা কথাই কানে এল : আজ থাক, কাল যাব ‘খন। লোকটা তার মোটরে উঠে স্টার্ট দিলে। আমার এক দোস্তের অস্টিনখানা আগেই চেয়ে এনেছিলাম, সঙ্গে সঙ্গে আমিও স্টার্ট দিয়ে কালো অ্যাম্বাসাডরের পিছু নিলাম।

আনমনে আঁকিবুকি কাটতে কাটতে কল্যাণ বললে, তুমি ড্রাইভিং জানো নাকি?

আরে বা, পাঁচ বছরের পুরানো লাইসেন্স আমার!

ও। তারপর বলো।

ফলো তো করলাম, কিন্তু স্যার ব্যাড লাক! ক্যামাক স্ট্রিট থেকে দিব্যি পিছু পিছু যাচ্ছিলাম, টালিগঞ্জের রাস্তা ধরে অ্যাম্বাসাডর বাঁয়ে আনোয়ার শা রোডে বেঁকল। আমার অস্টিনও বেঁকল। দুটো গাড়ির মধ্যে ধরুন একশো—সওয়াশো গজের তফাত। হঠাৎ এক কারখানার গেট খুলে মাল—বোঝাই এক শালা লরি সরু রাস্তার ওপর হুস করে বেরিয়ে এল। আর, বেরিয়েই স্টার্ট বন্ধ! আমার অস্টিন রাম—আটকান আটকে গেল! আমি তো চটে খিস্তি জুড়ে দিলাম। ‘মার হ্যান্ডেল’ ‘মার হ্যান্ডেল’ করে শালা আবার যখন স্টার্ট নিলে, কালো অ্যাম্বাসাডর তখন নিপাত্তা! মন—মরা হয়ে ফিরে এলাম স্যার।

মুখ না তুলে কল্যাণ বললে, যাক, আবার চেষ্টা করো।

পল্টু বললে, আর চেষ্টা বোধ হয় করতে হবে না স্যার। কাল রাতে আর একটা কাজ করেছি।

কাজটা কি?

কালও ক্যামাক স্ট্রিটে গিয়ে নজর রেখেছিলাম। রাত তখন সাড়ে ন’টা। লোকটা তখনো আসেনি। দেখলাম, সেই সাদা সিল্কের শাড়ি—পরা মহিলাটি বেরিয়ে এসে একটা নীল রঙের হেরাল্ড গাড়িতে উঠল। ড্রাইভার স্টার্ট দিলে। লোকটাকে আবার ফলো করব বলে কালও আমি অস্টিনখানা এনেছিলাম। ভাবলাম, দেখাই যাক না মহিলা কোথায় যায়? চললাম তার পিছু পিছু। খানিক দূর যেতেই স্যার বুঝতে পারলাম, সেই একই রাস্তায় সে চলেছে। সেই আনোয়ার শা রোডেই তার গাড়ি বেঁকল। মা কালীর দয়ায় কাল আর কোনো বাধা পড়েনি স্যার। আনোয়ার শা রোড থেকে যাবদপুর—গড়িয়া—গড়িয়া ছাড়িয়ে আরও আধ মাইলটাক গিয়ে একটা জংলা জমি। সেখানে বড় বড় গাছপালার অন্ধকারে একটা পুরনো ধাঁচের দোতলা বাড়ি। হেরাল্ড গাড়িখানা তার সামনে গিয়ে থামল। মহিলা ভেতরে ঢুকে যাবার পর আমার গাড়ি তফাতে রেখে, পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম। গিয়ে কি দেখলাম জানেন স্যার?

কি দেখলে?

দেখলাম, বাড়িটার সামনে আরেকটা মোটর দাঁড়িয়ে আছে। সেই কালো অ্যাম্বাসাডার—

কালো অ্যাম্বাসাডার!

কল্যাণ এবার স্প্রিংয়ের পুতুলের মতো মুখ তুলে চাইল।

পল্টু বললে, হ্যাঁ স্যার। কিন্তু এ গাড়ির নাম্বারের সঙ্গে ক্যামাক স্ট্রিটের সেই গাড়ির নাম্বারের মিল নেই। কোনটা আসল নাম্বার, কোনটা ফলস, কে জানে!

কল্যাণ বললে, দুটো নাম্বারই ফলস হতে পারে। যাক, জায়গাটা আর বাড়িটা ভাল করে চিনে এসেছ তো?

সে আর ভুল হবে না স্যার।—পল্টু বললে।

ভেরি ওয়েল! ভারি কাজের ছেলে তুমি!—বলতে বলতে কল্যাণ চেয়ার ছেড়ে পল্টুর সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর ফোটোখানা তার সামনে ধরে বললে, এবার দেখো তো পল্টু, এ মুখ তোমার দেখা কিনা।

এক নজর দেখেই লাফিয়ে উঠল পল্টু : আই বাপ! এই তো সেই ক্যামাক স্ট্রিটের মাল! সেই মুখ! কোঁকড়ানো দাড়িটা খাসা এঁকেছেন স্যার! এবার তাহলে—

জাল গুটোতে হবে।—ধীরে ধীরে কল্যাণ উচ্চারণ করলে।

.

কিন্তু জাল গুটোবার আগে কল্যাণ নিজেই জালে পড়ে গেল।

স্বামী যার গোয়েন্দা, সেই স্ত্রীর কপালে গাঢ় ঘুম নেই। কেননা, স্বামী রাতে কখন ঘরে ফিরবে, তার কিছু ঠিকঠিকানা থাকে না। তাই ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও তাকে সজাগ থাকতে হয়।

বীথিরও সেই অভ্যাস।

হেমন্তের মাঝ—রাত। ধোঁয়াশার মশারি ফেলে শহর ঘুমিয়ে আছে। ঘরে ঘরে তুলে রাখা লেপ কম্পল বেরিয়েছে। বীথির পাতলা ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎ। কি যেন একটা শব্দ হল কোথায়! ঘুমের মধ্যে কল্যাণ কি পাশ ফিরল? না, সে—শব্দ নয়, মোটর—ইঞ্জিনের মতো মৃদু ঝিকঝিক আওয়াজ। তাদেরই বাড়ির সামনে এসে থেমে গেল। এত রাতে কেউ এল নাকি?

বিছানায় উঠে বসল বীথি। তারপর কম্বলের তলা থকে মশারি তুলে অন্ধকারে নেমে পড়ল খাট থেকে। কল্যাণের দোতলার ফ্ল্যাট একেবারে রাস্তার ধারে। বীথি জানলার কাছে এগিয়ে বাইরে উঁকি দিল। ছানি—পড়া চোখের মতো রাস্তার একটা বাতি মিটমিট করে জ্বলছে। ধোঁয়াশার অস্পষ্টতা সত্ত্বেও সেই মিটমিটে আলোয় বীথি দেখতে পেল, একখানা কালো রঙের মোটর ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। মোটর থেকে নামল জোয়ান চেহারার এক ছায়ামূর্তি। আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে সদর দরজার কাছে কি যেন দেখলে, তারপর আবার ফিরে গেল মোটরের কাছে।

ব্যাপারটা কি? লোকটা কেন এসেছে? বীথির কৌতূহলী চোখ একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল।

মোটরের ক্যারিয়ার খুলে একটা জিনিস বার করলে লোকটা। সেটাকে বয়ে আনলে সদর দরজার কাছে। বীথি এবার বুঝতে পারলে, সেটা একটা ধাতব সিলিন্ডার, ফুট তিনেক লম্বা, গায়ে নল জড়ানো। অচেনা লোকটা সিলিন্ডারের গা থেকে নল খুলে নিয়ে, তার একটা মুখ সদর দরজার কাটা অংশের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলে। কাটা অংশটা বাইরে থেকে চিঠিপত্র ভেতরে ফেলবার জন্য। একটু পরেই অতি মৃদু হিস—স—স শব্দ শোনা যেতে লাগল।

এবার বীথির কৌতূহলের সঙ্গে সন্দেহ আর আশঙ্কা মিশল। ভাবলে, কল্যাণকে একবার ডাকবে। কিন্তু মশারির কাছে এসে কল্যাণের গাঢ় নিশ্বাসের আওয়াজে তার মায়া হল। না থাক, সারাদিন খেটেখুটে অনেক রাত করে ফিরেছে বেচারি! কাজ নেই তার ঘুম ভাঙিয়ে। কিন্তু ব্যাপারটা কি হচ্ছে দেখা দরকার।

ন’বছর গোয়েন্দা—স্বামীর ঘর করে বীথির ভিতু স্বভাব অনেকখানি কেটে গেছে। শোবার ঘরের দরজা খুলে সে বেরিয়ে এল সিঁড়ির সামনে। আর, সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠল বীথি।

অন্ধকার সিঁড়িময় একটা বিশ্রী কটু গন্ধ! পেট্রোল—গ্যাসের গন্ধ!

একটা ভয়ঙ্কর আশঙ্কায় বীথির বুকের ভেতরটা শুকিয়ে উঠল। সিঁড়ির ঠিক সামনেই তার ফ্ল্যাটের দরজা। যদি একটা দেশলায়ের কাঠি—

হলও তাই। ছোট্ট একটা আগুনের শিখা সদর দরজার কাটা অংশের মধ্য দিয়ে ভেতরে এসে পড়তেই, একটা হিংস্র আগুনের ঢেউ নিচে থেকে ছুটে এল দোতলার সিঁড়ি বেয়ে।

চোখের পলকে বীথি ঘরে ঢুকে দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিলে। তারপর ঘরের বাতি জ্বেলে পাগলের মতো চিৎকার করে উঠল, ওগো, ওঠো—ওঠো, শিগগির ওঠো!

ধড়মড় করে উঠে বসল কল্যাণ। বললে, কি? কি হয়েছে?

বাড়িতে আগুন লেগেছে!

আগুন! কেমন করে লাগল?

ভয়ে আর উত্তেজনায় হাঁপাতে হাঁপাতে বীথি শুধু টুকরো টুকরো কয়েকটা কথা বলতে পারলে, একটা কালো রঙের মোটর—অন্ধকারে কে একটা লোক—সদর দরজায় চিঠি ফেলার ফাঁক দিয়ে পেট্রোল—গ্যাস—

বেশি বলার দরকার ছিল না, শোনারও দরকার ছিল না। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে যেন পাথর হয়ে গেল কল্যাণ!

বীথি হঠাৎ আতঙ্কে কেঁদে উঠল, ওগো, ওই দেখো!

দেখা গেল, শোবার ঘরের দরজার নিচে এক ইঞ্চি ফাঁক। তারই ভেতর দিয়ে জ্বলন্ত পেট্রোল—গ্যাস হু হু করে ঘরে ঢুকে পড়েছে। দরজার পর্দাটা জ্বলছে, প্লাই—উডের পাল্লাতেও আগুন ধরেছে! সদ্য ঘুম—ভাঙা চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল কল্যাণ। কিন্তু সে দু’চার সেকেন্ডের জন্যে। তারপরেই সারা দেহে একটা ঝাঁকানি দিয়ে, বিছানা থেকে লাফিয়ে নামল। রুদ্ধশ্বাসে বীথিকে বললে, বাবুয়াকে নিয়ে ওপাশের বারান্দায় চলে যাও—

বনে আগুন লাগলে পাখি—মা যেমন তার বাচ্চচাদের ডানায় ঢেকে নেয়, তেমনি করে বীথি তার ঘুমন্ত ছেলেকে বুকে তুলে আঁচলে ঢেকে নিলে। তারপর ওপাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল বারান্দায়।

কল্যাণ বাথরুমে ঢুকে কলের তলায় বালতি রেখে, কল খুলে দিলে। কিন্তু বড় আশায় ছাই পড়ল কল্যাণের। কল থেকে জল বেরোল সুতোর মতো সরু হয়ে। তার মানে, রিজার্ভার ট্যাঙ্কে জল নেই বললেই চলে! অস্থির হয়ে কল্যাণ ফিরে এল শোবার ঘরে। ততক্ষণে ঘরের দরজা দাউ দাউ করে জ্বলছে। আগুনের ঢেউ এগিয়ে এসে বিছানার গদি ছুঁয়েছে—মশারি পুড়ছে! হেমন্তের ঠান্ডা রাতেও অসহ্য উত্তাপ ঘরময়। ইস, একটা ফোন যদি সে করতে পারত ফায়ারব্রিগেড স্টেশনে! পাশের ঘরে টেলিফোন, অথচ উপায় নেই—লকলকে আগুন যমদূতের মতো দরজা আগলে রয়েছে!

বাঁচানো গেল না—আর বাঁচানো গেল না অনেক সুখ, অনেক স্বপ্ন দিয়ে গড়া এই ছোট্ট বাসাটিকে! অসহায় চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে, এক পা এক পা করে কল্যাণ চলে গেল ওপাশের খোলা বারান্দায়। যেখানে অন্ধকার আকাশের তলায় ছেলেকে বুকে নিয়ে বীথি ফুঁপিয়ে উঠছে।

.

দমকল এল শেষ—রাতে। অন্য ফ্ল্যাটের কে একজন বাসিন্দা ফোন করেছিলেন। আগুন নিভিয়ে তারা যখন চলে গেল, পুবের আকাশ তখন ফর্সা হচ্ছে।

ছেলেকে নিয়ে বীথি ঘরের মাঝে এসে দাঁড়াল। থই থই জলের মধ্যে কালো কালো কতগুলো পোড়া স্তূপ ছড়িয়ে রয়েছে। এই তার নিজের হাতে সাজানো সুখের সংসার! কান্নায় ভেঙে পড়ল সে।

আর, পূর্বাকাশের পানে চেয়ে কল্যাণ অজানা শত্রুর উদ্দেশে মনে মনে বললে, ঠিক আছে বন্ধু! তুমি যতই চতুর হও না কেন, তোমার এই অমানুষিক শত্রুতার শোধ কল্যাণ বোস নেবেই!

 * * *

ছোটকর্তা সুরজিৎ গুপ্ত কিছুদিনের ছুটি দিতে চেয়েছিলেন, কল্যাণ বলে পাঠাল, না।

পরদিনই তাকে হেডকোয়ার্টার্সে দেখা গেল। সুরজিৎ তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, তোমার এই মারাত্মক বিপদের খবর আমাকে ভীষণ আপসেট করেছিল বোস। মগনলালের পরে একমাত্র তোমারই ওপর আমার বেশি ভরসা, জানো তো? ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, ঠিক সময়ে তোমার স্ত্রীর ঘুম ভেঙে গিয়েছিল!

মনসিজ জিজ্ঞেস করলে কল্যাণকে, আপনার কি মনে হয়, মগনলালকে যে খুন করেছে, সেই লোকই আপনাকে খতম করার প্ল্যান করেছিল?

মোটিভ যখন এক, তখন তাই মনে হয় না কি?—কল্যাণ বললে।

কিন্তু লোকটা কে হতে পারে? আবু রশিদ, না অশ্বিনী লাহা?

এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় এখনো হয়নি।

গুপ্তসাহেব বললে, লোকটা যেই হোক, সে অসাধারণ বুদ্ধি ধরে। এ ধরনের ক্রাইম ভারতবর্ষে আর কখনও হয়েছে বলে আমার জানা নেই। যেমন করেই হোক, তাকে ধরতেই হবে বোস। আর কি সাহায্য তোমার চাই বলো।

শান্তভাবে কল্যাণ বললে, আর কোনও সাহায্য চাই না স্যার, আর একটু সময় চাই।

পাইপে তামাক ঠাসতে ঠাসতে গুপ্তসাহেব বললেন, বেশ, সময় নাও। হ্যাঁ, গতকাল একজন মহিলা টেলিফোনে দু’তিনবার তোমাকে খুঁজেছিলেন। নামটা বললেন স্বরূপা ঘোষ।

ও!

তুমি অফিসে এলে তাঁকে ফোন করতে বলেছেন। বিশেষ জরুরি কথা আছে।

আচ্ছা।

ছোটকর্তার কামরা থেকে বেরিয়ে কল্যাণ ভাবতে ভাবতে চলল নিজের কামরায়। স্বরূপা তাকে ফোনে খুঁজেছিল! একবার নয়, বারবার। পুরুলিয়ার রূপা নয়, ক্যামাক স্ট্রিটের স্বরূপা—একটা বিজাতীয় ক্রিমিন্যালের রক্ষিতা! সেই ঘৃণাটা নতুন করে আবার পাক দিয়ে উঠল মনের মধ্যে। বলেছে, বিশেষ জরুরি কথা নাকি আছে! কোন কথা? পুরুলিয়ার সেই পুরানো কাসুন্দি? না, ক্যামাক স্ট্রিটের হুইস্কি—ভেজানো ন্যাকা ন্যাকা প্রেম? জাহান্নমে যাক স্বরূপা ঘোষ!

তবু কল্যাণের ডিটেকটিভ—বুদ্ধি বললে, স্বরূপাও তো পুলিশের সন্দেহভাজন একজন সাসপেক্ট—দেখাই যাক না টোকা দিয়ে। তার একরাশ মিথ্যের মাঝে যদি একটাও সত্য কুড়িয়ে পাওয়া যায়, তা মন্দ কি?

কিন্তু কল্যাণকে ফোন করতে হল না, তার আগেই ফোন বেজে উঠল। রিসিভার তুলে বললে, ডি. ডি. হেডকোয়ার্টার্স!. . . ইয়েস, স্পিকিং!

অপর দিক থেকে শোনা গেল : কল্যাণ, আমি স্বরূপা।

কি খবর?—কল্যাণের গলার স্বর ঠান্ডা।

কেমন একটা অস্বাভাবিক ব্যাকুলতা নিয়ে স্বরূপা বললে, কাগজে তোমার ঘরে আগুন লাগার খবর পড়ে আমি স্থির থাকতে পারলাম না! জানো, কে তোমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল?

কে?

তুমি যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছ, সেই অশ্বিনী লাহা।

অশ্বিনী লাহা! কল্যাণের কপালে গভীর রেখা পড়ল। বললে, তুমি তাহলে জানতে?

বিশ্বাস করো, জানতাম না। জানলে তোমাকে আগেই সাবধান করে দিতাম। পুরুলিয়ার রূপা আজ অনেক দিন হল মরে গেছে, তবু তোমার অনিষ্ট সে কোনোদিন চায়নি—চাইতে পারে না!

স্বরূপার ভেজা—ভেজা গলা কেঁপে গেল। এক মুহূর্ত থেমে সে আবার বললে, শোনো, অশ্বিনীকে তুমি অ্যারেস্ট করো—যত শিগগির পারো ওকে ধরো, নইলে আর ধরতে পারবে না! দু’একদিনের মধ্যেই ও করাচিতে পালিয়ে যাবে!

এ খবর তুমি কি করে জানলে?

আজ তোমার কাছে কিছুই লুকোব না কল্যাণ। অশ্বিনী আমার কে জানো? আমার স্বামী! কেমন করে আমাদের বিয়ে হয়েছিল, সেকথা আজ আর তুলে লাভ নেই। শুধু এইটুকু জেনে রাখো, তার মতো জানোয়ারকে আমি ছাড়তে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে আমাকে ছাড়েনি—আজও আমাকে ডায়ভোর্স দেয়নি।

তুমি কি আমাকে গল্প শোনাচ্ছ, স্বরূপা?

আজ তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারবে না জানি। তবু বলছি, একটা কথাও আমার মিথ্যে নয়। তুমি তৈরি থেকো কল্যাণ, যদি আজ রাতে অশ্বিনী আমার এখানে—

হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল কথা। রিসিভার ধরে কল্যাণ বললে, কি হল? স্বরূপা! স্বরূপা! হ্যালো! হ্যালো!

কোনও সাড়া নেই!

ভয়ানক একটা সন্দেহে কল্যাণের মনটা অস্থির হয়ে উঠল। রিসিভারটা রেখে সে সার্জেন্ট দত্তকে বললে, এসো।

তারপর ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল।

.