শুঁটকি শত্রু – পরিচ্ছেদ ৮

০৮.

 খপ করে কে যেন চেপে ধরল কিশোরের কব্জি। চেয়ে দেখে মানি। হাসছে কান অবধি।

হাত ছাড়িয়ে নিল কিশোর। পাণ্ডা বার আইসক্রীমের ছবিটা দেখিয়ে বলল, ওটা এল কোত্থেকে?

গর্বের হাসি হাসল মানি।

কেনের প্রদর্শনীতে সুযোগ পেয়ে ঢুকে পড়লাম।

তোমার পছন্দ হয়েছে? পেনি জিজ্ঞেস করল।

 না, সাফ জবাব দিল কিশোর। চেরি ভ্যানিলা পাণ্ডা বার হলে পছন্দ হত।

পরস্পর মুখ তাকালাকি করল যমজরা। চোখে হতাশা।

ওটা তো আইসক্রীমের দাগ, তাই না? গোয়েন্দাপ্রধানের কণ্ঠে কৈফিয়ত তলবের সুর।

না তো! ফস করে বলে দিল মানি।

 তা হলে কী ওটা? মুসার জিজ্ঞাসা।

উম…মেরু ভালুক, পেনি জানাল।

 কাদা-ধসের মধ্যে পড়ে গেছে, জোগান দিল মানি।

 কিশোর কালো ভেলভেটের দিকে আঙুল তাক করল।

বুঝলাম, কিন্তু ওই কালো ভেলভেট এল কোত্থেকে?

 এটাই তো সেই ফ্যাশন হাউজের কোটের কাপড়টা, জোর দিয়ে বলল রবিন।

যমজরা গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়াল। চোখে-মুখে আতঙ্ক।

মানি, পেনি, ফালতু প্রশ্নের জবাব দেয়ার দরকার নেই। হঠাৎ শোনা গেল পরিচিত এক কণ্ঠ।

চরকির মত ঘুরে দাঁড়াল কিশোর। পিছনে দাঁড়িয়ে শুঁটকি টেরি স্বয়ং।

সবাই জানে কিশোর পাশা কোটটা কেটেছে, বলল গোটা শহরে রটে গেছে এ কথা।

তোমার সৌজন্যে, ফোড়ন কাটল রবিন।

শুঁটকি প্লাস্টিকের মানিব্যাগ বের করল।

ছবিটা কিনব আমি। বিছানার পাশে ঝুলিয়ে রাখব।

খবরদার! গর্জে উঠল মুসা। তুমি ছবিটা কিনতে পারবে না। তুমি চাইছ সরাই যাতে মনে করে তোমার কথাই ঠিক-কিশোরই কোটটা কেটেছে। তোমার শয়তানী আমাদের বুঝতে বাকি নেই, শুঁটকি

কী সব উল্টোপাল্টা বকছ! বলে উঠল শুঁটকি।

মানি হাত পেতে দিল শুঁটকির সামনে।

পঞ্চাশ সেন্ট।

একমাত্র প্রমাণ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখে বিচলিত হয়ে পড়ল রবিন। অসহায়ের মত চেয়ে রয়েছে কিশোরের মুখের দিকে।

গটগট করে এসময় কেন শিপটনের কাছে পৌঁছে গেল মুসা।

ওটা দাও দেখি, বলে ছোঁ মেরে জারটা কেড়ে নিল ওর হাত থেকে।

আরে, করো কী? হাহাকার করে উঠল কেন। বিলি আমাদের শোয়ের সুপারস্টার। মোনালিসার মত।

অ্যাই, শুঁটকি, জারটা তুলে ধরে বলল মুসা। বিলিকে হ্যালো বলো। নইলে দেব গায়ে ছেড়ে।

বি-বি-বিলি? তোতলাচ্ছে রীতিমত শুঁটকি।

কিশোর আর রবিন ওর পিছনে দাঁড়ানো।

বিলি সারা সপ্তা জারের ভিতর রয়েছে, বলে ঢাকনা খুলতে শুরু করল। মনে হয় পাণ্ডা বার আইসক্রীম চাখতে ওর খারাপ লাগবে না।

শুঁটকি বিলির দিকে চেয়ে রয়েছে। চিবুক কাঁপতে শুরু করল হঠাৎ। পাণ্ডা বার পেইন্টিংটা খসে পড়ল হাত থেকে। পরমুহূর্তে বাপরে বলে চিৎকার করে উঠল।

দাঁড়াও, দাঁড়াও। শুঁটকিকে লেজ গুটিয়ে পালাতে দেখে চেঁচিয়ে উঠল মানি। ছবি কিনবে না?

ইতোমধ্যে কেন শিপটন এসে জারটা নিয়ে নিয়েছে মুসার হাত থেকে। কিশোর যমজদের কাঁধ জড়িয়ে ধরল।

ব্যাপারটা কী বলো তো, ভাইয়ারা, আদরের সুরে বলল। সত্যি কথা বললে তোমাদেরকে আইসক্রীম কিনে দেব।

মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল যমজদের। কিশোরকে ওরা বিশ্বাস করে।

বলছি, বলল মানি। মিরা ম্যাডাম মিনি ফ্রিজে পাণ্ডা বর রাখতে বলেছিল। কিন্তু আমাদের মাথায় শয়তানী চাপল কোটটা আইসক্রীম মাখিয়ে নষ্ট করব।

তারপর? তাগিদ দিল কিশোর।

সবাই যখন লাল কার্পেটে প্র্যাকটিস করছে, আমরা স্টকরূমে ফিরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে পাণ্ডা বার বের করি, বলল মানি।

তারপর কোটে আইসক্রীম ঘসে দাও, বলল মুসা।

হ্যাঁ, পেনি বলল। পরে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে আমরা কাঁচি দিয়ে কোটটা কেটে দিই।

কিশোর বলল, যাতে কোটে আইসক্রীম লেগে থাকতে দেখে কেউ তোমাদের ধরতে না পারে! এমনকী গন্ধও যেন না পায়।

হ্যাঁ, বলল মানি। টুকরোটা আমি প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখি। সেজন্যেই এখন কাপড়টার গায়ে দাগ দেখতে পাচ্ছ।

কেন শিপটনের দিকে ঘুরে দাঁড়াল কিশোর।

তুমি জানতে তোমার ভাইরা এ কাজ করেছে?

নাহ, কথাটা স্রেফ উড়িয়ে দিল কেন। আমি ভেবেছি ওটা ফিঙ্গার পেইন্টিং।

যমজদের হাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি হানল কিশোর। রঙিন চকের গুঁড়ো লেগে রয়েছে আঙুলে আর তালুতে।

তোমরা দেয়ালে আমার সম্পর্কে আজেবাজে কথা লিখেছ, ঠিক না?  

মাথা নিচু করে ফেলল যমজরা।

বিশ্বাস করো, বলল মানি, টেরির কথায় আমরা তোমার নামে ওসব লিখেছি। যাতে তোমার ওপর সবার সন্দেহ আরও বেশি করে পড়ে। আমাদের কোন দোষ নেই।

তোমাদের খেল খতম, কঠিন গলায় বলল মুসা। এখনই মিরার কাছে গিয়ে সব খুলে বলবে তোমরা?

তা হলে তো আর কখনও মডেল হতে পারব না! পেনি ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে উঠল।

মানি হাত নেড়ে কথাটাকে উড়িয়ে দিল।

তাতে বয়েই গেল। ওই সোয়েটারগুলো ভীষণ কুটকুট করে।

তিন গোয়েন্দা যমজদেরকে সোজা ফ্যাশন হাউজে নিয়ে এল। দুই অপরাধী মিরার সামনে দাঁড়িয়ে অকপটে সব স্বীকার করল।

তোমরা তো দোষ করেছই, বলল মিরা। আমিও কম দায়ী না। খামোকা কিশোরকে সন্দেহ করেছি। তাছাড়া আমার উচিত ছিল সর্বক্ষণ ঘরটা পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

মাফ-টাফ চেয়ে নিল যমজরা। তারপর কিশোরের কাছ থেকে আইসক্রীমের পয়সা নিয়ে এক ছুটে বেরিয়ে গেল দোকান ছেড়ে।

এত সুন্দর কোটটা নষ্ট হয়ে গেল, বলল রবিন, খারাপ লাগছে!

ভেবো না, বলল মিরা। রকি বীচে অমন কোট অনেক দেখতে পাবে তোমরা।

তাই? কিশোর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

মৃদু হাসল মিরা।

হ্যাঁ, ফ্যাশন শো-র পরে পাঁচটা কোটের অর্ডার পেয়েছি। ফুটো ছাড়া অবশ্য।

হেসে ফেলল তিন গোয়েন্দা।

দোকান থেকে বেরিয়ে এল ওরা। স্বস্তি বোধ করছে কিশোর। মস্ত বড় এক পাথর যেন নেমে গেছে বুকের উপর থেকে।

শুঁটকিকে ফোন করে এখনই সব জানানো দরকার, বলল রবিন। যাতে আজেবাজে লেখা বন্ধ করে।

প্রস্তাবটা নিয়ে দুমুহূর্ত ভাবল গোয়েন্দাপ্রধান। তারপর মাথা নেড়ে নিষেধ করল।

দরকার কী, বলল। মিথ্যে যদি বাতাসের বেগে রটতে পারে, তবে সত্যিটাও জানাজানি হতে দেরি হবে না।

আজকের দিনটা পিযা প্যালেসে সেলিব্রেট করবে ঠিক করল ওরা।

কিন্তু তার আগে ড্যাশিং ডগ থেকে বাঘাকে নিয়ে আসি চলো, বলল রবিন।

ড্যাশিং ডগের দিকে হাঁটা দিল তিন গোয়েন্দা।