শুঁটকি শত্রু – পরিচ্ছেদ ৬

০৬.

করো কী! করো কী! চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বাঘাকে নানা রঙে রঙিন করার খেলায় মেতে গেল যেন দুভাই। শীঘি সবুজ, লাল, হলদে ডোরা আঁকা হয়ে গেল বাঘার সারা গায়ে।

হয়েছে, হয়েছে! বলে মুসা যমজদের টেনে সরিয়ে দিল।

কিশোর কেন শিপটনের পেইন্টিংটা কেড়ে নিয়ে শূন্যে তুলে ধরল।

দিয়ে দাও বলছি! কেন গর্জে উঠল।

আগে বলো কালো কাপড়টা কোথায় পেয়েছ, বলল কিশোর।

বলছি, বলছি, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল কেন। এত যখন শোনার শখ।

কালো জিনিসটা তুলে নিল কেন। ঝাড়া দিল বার কয়েক। অসংখ্য ফুটো দেখা গেল ওটার মধ্যে।

এটা ছিল আমার জাদুকরের আলখেল্লা, বলল ও। যখন আমি গ্রেট ম্যাজিশিয়ান হতে চাইতাম।

কাটলে কেন? রবিনের প্রশ্ন।

রেখে কী লাভ? বলল কেন। আমি তো এখন বড় শিল্পী।

কিশোর ভাল মত স্পর্শ করে দেখল কাপড়টা। ভেলভেট নয়। হতাশ হয়ে পড়ল ও।

এবার দয়া করে আমাকে একটু কাজ করতে দাও, বলল কেন শিপটন। কালকে বিকেলে আমার প্রথম আর্ট শো কিনা।

শিয়োর, বিমর্ষ কণ্ঠে বলল কিশোর।

আমরা তোমাকে আর বিরক্ত করব না, বলল মুসা।

বাঁচালে, হাঁফ ছেড়ে বলল কেন শিপটন।

কেন আর যমজদের কাছ থেকে বিদায় নিল তিন গোয়েন্দা। বাইরে বেরিয়ে এল।

কেন শিপটন একদম পরিষ্কার, বলে বাঘার দিকে চাইল কিশোর। কিন্তু বাঘা নয়। শুঁটকি শত্রু

এখন বাকি থাকলেন শুধু মিসেস হগার্ড, বলল রবিন।

এখনই যাব আমরা, কিশোর? মুসা জিজ্ঞেস করল।

মাথা নাড়ল গোয়েন্দাপ্রধান।

কালকে যাই, প্রস্তাব করল। বাঘাকে গোসল করাতে হবে তো।

নোংরা একটা থাবা মাথায় রাখল বাঘা, তারপর জোরে বার দুয়েক হুফ-হুঁফ করে উঠল।

.

একদম নড়বি না, চুপ করে বসে থাক! ইয়ার্ডে বাঘার গা ঘষছে কিশোর, চলে গেছে বাসায়।

বিশাল মেটাল বেসিনটা থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে এল বাঘা। সারা গায়ে সাবা, মাখা।

হতাশ হয়ে মাথা নাড়ল কিশোর। লাল-হলুদ-সবুজ রং এখনও লেগে রয়েছে বাঘার লোমে।

ঠিক আছে, বাঘা, আমাকে গোসল করাতে দিলি না তো, বলল কিশোর, কালকে তোকে ড্যাশিং ডগ পেট সেলুনে নিয়ে যাব। তারপর দেখব বিদঘুঁটে রং নিয়ে ঘুরিস কী করে।

এই কথা শুনে বাঘা গা ঝাড়া দিল। ছিটকে সরে গেল কিশোর।

আর এসময় কার যেন তীক্ষ্ণ চিৎকার ওর কানে এল। মুখ তুলে চেয়ে দেখে সাবান-পানির ছিটে মেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে রুডি মার্শ।

রুডি!

থ্যাংকস আ লট, কোনমতে আওড়াল রুডি। দিলে তো ধোয়া কাপড়টার বারোটা বাজিয়ে।

বাঘা আসলে বুঝতে পারেনি, সাফাই গাইল কিশোর।

কিন্তু তুমি পেরেছিলে,কাটখোট্টা জবাব দিল রুডি।

তারমানে?

তুমি বুঝেশুনে ঠাণ্ডা মাথায় কালো কোটটা কেটে দিয়েছিলে, বলল রুডি। কেননা তুমি ওটা পরতে পারেনি। রকি বীচের সব ছেলে-মেয়েরা এই কথাই বলছে।

চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল কিশোরের। গুজবটা এভাবে বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়বে ভাবতে পারেনি ও।

ওরা ফালতু কথা বলছে, রুডি, বলল ও মৃদু কণ্ঠে। আমি কখনোই অমন ছোটলোকি কাজ করব না।

অথচ করেছ, চিবুক বাড়িয়ে দিয়ে বলল রুডি। এবং একাজে অন্যদের সাহায্যও নিয়েছ।

এক কপি ভেজা ডয়েল নিউজ তুলে ধরল রুডি।

পড়ে দেখো!

গসিপ ছাপা হয়েছে প্রথম পৃষ্ঠায়। জোরে জোরে পড়ল কিশোর: প্রিয় বন্ধুর জন্য কারা সব কিছু করতে প্রস্তুত? সূত্র দিচ্ছি: সাদা-কালো।

কান গরম হয়ে গেল গোয়েন্দাপ্রধানের। রবিন আর মুসার প্রতি ইঙ্গিত করেছে শুঁটকি।

একদম বাজে কথা! দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করল ও। কিন্তু রুডি মার্শ ততক্ষণে দুপ দাপ পা ফেলে গেটের দিকে চলেছে।

কিশোর হাঁটু গেড়ে বসে বাঘার ভেজা শরীরে হাত বুলোতে লাগল।

রহস্যটার কিনারা না করলেই নয়, মনে মনে বলল। শুঁটকি আমার প্রিয় বন্ধুদের ঘাড়েও দোষ চাপিয়েছে!

.

সে রাতে চাচা-চাচীর সঙ্গে ডিনারে বসে প্রসঙ্গটা তুলল কিশোর।

চাচা, শুঁটকি একটার পর একটা মিথ্যে গুজব রটাচ্ছে। কী করব আমি?

তোর উচিত মাথা গরম না করা, পরামর্শ দিলেন চাচা। চিকেনে গোলমরিচের গুঁড়ো ছিটালেন। সত্য কখনও চাপা থাকে না।

তোর চাচা ঠিক কথাই বলেছে, বললেন মেরি চাচী। দেখিস, মিথ্যে বেশিদিন টিকবে না।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোর। ষড়যন্ত্রের জাল যত শীঘি ছিন্ন হয় ততই মঙ্গল।

.

পরদিন সকালে মুসা আর রবিনের সঙ্গে দেখা করল ও। বাঘাকে নিয়ে ড্যাশিং ডগ পেট সেলুনের উদ্দেশে রওনা হলো ওরা।

শুঁটকির এতদূর বাড় বেড়েছে যে সাদা-কালোর কথা পর্যন্ত তুলে ফেলেছে ক্রুJদ্ধ কণ্ঠে বলে উঠল রবিন।

ওর যা খুশি বলুক,বন্ধুকে শান্ত করার জন্য বলল মুসা। আমাদের কী?

মেইন স্ট্রীট দিয়ে হাঁটছে ওরা। সাইডওয়কে রঙিন চকে লেখা একটা মেসেজ চোখে পড়ল কিশোরের। লিখেছে; কিশোর পাশার নাম এখন থেকে কোট-কাটা কিশোর।

কিশোরকে মাথা নাড়তে দেখে ওর হাত চেটে দিল বাঘা।

 গুজবটা ওরা মেইন স্ট্রীটেও পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছে!

ড্যাশিং ডগে গিয়ে ঢুকল ছেলেরা।

কিশোর আগে এখানে আসেনি। গোলাপি রঙের আসবাব দিয়ে সাজানো সেলুনটা। সুন্দর সব কুকুরের ছবি সেঁটেছে দেয়ালে।

হ্যালো। আমার নাম রয়, ডেস্কের পিছনে বসা লোকটি বলল। কী দরকার বলো।

ইঙ্গিতে বাঘাকে দেখাল কিশোর।

লোকটি বহুবর্ণ বাঘার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল।

 এসময় দরজা খুলে গেল।

 আরে, মিসেস হগার্ড যে! বলে উঠল লোকটা। আসুন, আসুন।

 চরকির মত ঘুরে দাঁড়াল কিশোর।

দরজার কাছে, কোলে খুদে কুকুর দুটো নিয়ে দাঁড়িয়ে মিসেস হগার্ড।

কুকুর দুটোর গায়ে ছোট লাল কোট-আর গলায় দামি চকচকে কালো ভেলভেটের কলার!