০৭.
চিৎকার করে উঠল কিশোর।
ঘৃণায় মুখ বাঁকাল রবিন।
ভীষণ চমকে গিয়ে টাকিও চেঁচিয়ে উঠল। হাঁ হয়ে গেছে কডি আর বাকি তিনজন।
টেরির দিকে ফিরে চোখটা এ গাল-গাল করতে থাকল মুসা।
হাসতে শুরু করল টেরি। অন্য হাতটা নামিয়ে আনল চোখের ওপর থেকে।
ঠোঁট ফাঁক করে জিভের ডগায় চোখটা বসিয়ে সামনে ঠেলে দিল মুসা।
টাকি হাসল। হাসতে লাগল কডি, নিটু আর হ্যারল্ড।
মুখ থেকে চোখটা হাতের তালুতে ফেলে দিল মুসা। ছুঁড়ে দিল টেরির দিকে। দেখতে একেবারে আসল চোখের মত। প্ল্যাস্টিকের। মলের কার্ড স্টোর থেকে কিনেছ, তাই না? আজই দেখে এলাম, সকাল বেলা। হ্যালোউইন ডিসপ্লেতে সাজিয়ে রেখেছিল।
হ্যাঁ, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল টাকি।
কিশোরের দিকে তাকাল টেরি। পেপার টাওয়েল আছে? নকল রক্তটা মুখ থেকে মুছে ফেলতাম। ফোঁটা পড়ে কাপড় নষ্ট হচ্ছে।
কিশোর চলে গেল পেপার টাওয়েল আনতে।
ফিরে এল মিনিটখানেকের মধ্যে। বড় একটা কাগজের দলা তুলে দিল টেরির হাতে। দেখলে তো? আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেলাম, কিন্তু চোখের পাপড়িটাও একবার কাঁপেনি মুসার। তা, এটাই তোমার দুই নম্বর চ্যালেঞ্জ নাকি? বললাম না, মুসাকে ভয় দেখাতে হলে সত্যিকারের ভয়াল জিনিস দরকার।…যাও, আজও নেব না টাকা। এত সহজ কাজের জন্যে টাকা নিতে নিজের কাছেই খারাপ লাগে।
চোখটা টোকা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলল টেরি। কিশোরের কাঁধে বাড়ি খেয়ে কার্পেটে পড়ল সেটা।
এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ নয়, শার্লক পাশা, টাকি বলল, সামান্য রসিকতা করলাম তোমাদের সঙ্গে। দেখলাম চেষ্টা করে মু-ম্মুসা রাক্ষসটার রাতের খাওয়াটা মাটি করতে পারি কিনা।
বরং খিদেটা আরও বাড়িয়ে দিলে ওর, টাকি মাছ! কিশোর বলল। টাকি মাছের ভর্তা খাওয়ার জন্যে প্রাণ এখন আনচান করতে থাকবে ওর।
ভাবছে মুসা, কি সাংঘাতিক বাঁচা বেঁচে গেছে। ভাগ্যিস মলে দেখে এসেছিল চোখটা। নইলে বমি করে ভাসিয়ে ফেলত এতক্ষণে।
মাটি থেকে চোখটা তুলে নিয়ে হ্যারল্ডের দিকে ছুঁড়ে মারল কডি। হ্যারল্ড আবার মারল নিটুকে। ঘরের মধ্যে চোখ ছোঁড়াছুঁড়ি খেলা শুরু করে দিল ওরা।
মুখ থেকে লাল রঙ মুছে ফেলল টেরি। কাগজটা দলা পাকিয়ে আচমকা টোকা দিয়ে ছুঁড়ে দিল মুসার মুখ লক্ষ্য করে।
বোধহয় সেদিকে নজর থাকাতেই চোখটা ধরতে মিস করুল কডি। একটা ল্যাম্পের ওপর গিয়ে পড়ল সেটা। নড়ে উঠল ল্যাম্পটা, কিন্তু পড়ল না।
কি করছ! ধমকে উঠল কিশোর। সামান্য ভদ্রতাটাও শেখনি নাকি? চাচা-চাচী এসে পড়বে এক্ষুণি। তোমাদের এ সব করতে দেখলে খুশি হবে না। টেরির দিকে ফিরল সে, তারমানে সাপ তুমি আননি?
মাথা নাড়ল টেরি। না, পরে ভেবে দেখলাম, ঠিকই বলেছ তুমি, সাপ জিনিসটা ভয়াল কিছু না। যে কেউ হাতে নিতে পারে।…ভাগ্যক্রমে আবারও জিতে গেলে তুমি হিরো মিয়া। মুসার কাঁধে চাপড় দিল সে। তবে তোমাকে আমি মু-ম্মুসা না বানিয়ে ছেড়েছি তো আমার নাম টেরিয়ার ডয়েল নয়।
ভালই হবে, কিশোর বলল। শেষ পর্যন্ত বাপের দেয়া নামটা বদলে আমাদের দেয়া নামটাই ব্যবহার করতে হবে তোমাকে-টকি টেরি।…কিন্তু হেরে গিয়েও অত বড় বড় কথা কেন? মুসাকে ভয় পাওয়ানো তোমাদের কমো নয়। বাজি আর তোমরা কোন কালেই জিততে পারলে না।
তাই নাকি? মুখ বাঁকাল টাকি। টেরির প্ল্যান কি, কল্পনাও করতে পারবে না তোমরা। বাজির টাকাটা আগেভাগেই দিয়ে রাখতে পারো আমার কাছে। হেরে তোমরা যাবেই।
তোমাদের আসলে লজ্জা-শরম একেবারেই নেই, নিমের তেতো ঝরল কিশোরের কণ্ঠে। দুই-দুইবার টাকা মাপ করে দিলাম, আর এখন টাকা দেয়ার কথা তুলছ। জেতার বেলায় নাম নেই, আগেই টাকা দিই, তাই না। যাও, টাকা আমরা নেবই না। বাজি হবে অন্যভাবে। টেরি বলেছে, মুসাকে হারাতে না পারলে তার নাম টেরিয়ার ডয়েল নয়। খুব ভাল কথা। এবারের বাজি, হারলে আমরা যে নামে ডাকব ওকে, সেটা বহাল করতে হবে। ওর নাম হবে স্রেফ শুঁটকি। সারা স্কুলে ছড়িয়ে চাউর করে দেব সেটা আমরা।
তা দিও, পারলে, দমল না টাকি। ওর প্ল্যানটা জানলে এখনই প্যান্ট খারাপ করে বাথরূমে দৌড়াত তোমাদের মু-ম্মুসা মিয়া।
কি প্ল্যান? দুর্বল কণ্ঠে জানতে চাইল মুসা।
টেরির তিলে-পড়া মুখে মুচকি হাসি ফুটল। আগাম ইঙ্গিত চাইছ তো? বেশ বলছি। আমাদের একটা ফিউনরল পারলার আছে, জানো তো?
জানি, জবাবটা দিল কিশোর। তাতে কি?।
হাসি ছড়িয়ে পড়ল টেরির সারা মুখে। তাতে? নিজের বুদ্ধির তো খুব বড়াই করো। আন্দাজ করে নাও।